ভারতের উত্তরাখণ্ডে

হিমবাহ ধসে নিখোঁজ ২ শতাধিক

১৮ জনের লাশ উদ্ধার

ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চামোলি জেলার জোশিমঠে গত রোববার হিমবাহ ধসের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ১৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অন্তত ছয় জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখনও ২০০ জনেরও বেশি নিখোঁজ রয়েছেন। ২০১৯ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে ২১ শতক শুরু হওয়ার পর থেকে হিমালয়ের হিমবাহগুলো দ্বিগুণ গতিতে গলছে। জলবায়ু পরিবর্তন হিমালয়ের হিমবাহগুলোকে দ্রুত সংকুচিত করে তুলছে, ফলে সংলগ্ন দেশগুলোর শত শত কোটি মানুষের পানি সরবরাহ হুমকির মধ্যে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।

ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত রোববারের হিমবাহ ধসের ঘটনায় অলকনন্দা ও ধউলিগঙ্গা নদীতে প্রবল বান দেখা দেয়। পানির তোড়ে পাঁচটি ঝুলন্ত সেতু ভেসে যায়, ঘরবাড়ি ও নিকটবর্তী এনটিপিসি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগস্ত হয়, ঋষিগঙ্গার কাছে একটি ছোট জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রও ধ্বংস হয়।

ঘটনাস্থলে জাতীয় ও রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ভারত-তিব্বত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কয়েকটি টিমও মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ৬০০ সৈন্য ও দেশটির নৌবাহিনী সাতটি ডুবুরি দল পাঠিয়েছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, যে ২০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন তাদের মধ্যে এনটিপিসির ১৪৮ জন ও ঋষিগঙ্গার ২২ জন কর্মী, আরেকটি সুড়ঙ্গে আরও প্রায় ৩০ জন আটকা পড়ে রয়েছেন।

আনন্দবাজার জানিয়েছে, চামোলি জেলার তপোবনের কাছে একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের সুড়ঙ্গের মধ্যে কাজ করছিলেন ১৬ জন শ্রমিক, বানের সঙ্গে আসা কাদা ও পাথরে ওই সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তাদের বেঁচে থাকার সম্ভবনা নিয়ে প্রবল আশঙ্কার মধ্যেই তল্লাশি অভিযান শুরু করেন ভারত-তিব্বত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় এক একে তাদের সবাইকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়। প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ ওই সুড়ঙ্গ থেকে তাদের উদ্ধারে রাতভর কাজ করে উদ্ধারকারী দলগুলো।

নিকটবর্তী আরেকটি সুড়ঙ্গে আরও প্রায় ৩০ জন শ্রমিক আটকা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে শেষ খবর পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। এ পর্যন্ত ১৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অন্তত ছয় জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে

রোববার স্থানীয় সময় রাতে ভারতের জাতীয় সংকট ব্যবস্থাপনা কমিটি (এনসিএমসি) এক বৈঠকের পর জানায়, কেন্দ্রীয় পানি কমিশন থেকে পাওয়া তথ্যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, এই মুহূর্তে নদীর নিম্নপ্রবাহে বন্যার আশঙ্কা নেই। নদীর বেড়ে যাওয়া পানির উচ্চতাও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

আশপাশের গ্রামগুলোও আর বিপদের ঝুঁকিতে নেই বলে বৈঠকের পর জানিয়েছে এনসিএমসি।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। জোশিমঠে ৩০ শয্যার একটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি শ্রীনগর, ঋষিকেশ, জলিগ্রান্ট ও দেরাদুনের হাসপাতালগুলোকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।

ঋষিকেশ ও হরিদ্বারে লোকজনকে গঙ্গা নদীর তীরে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। এখানে দুটি বাঁধের সব পানি ছেড়ে দিয়ে হড়পা বানের তোড় মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালে উত্তরখণ্ডের কেদারনাথে কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টির পর বিশাল হড়কা বান ও ভূমিধসের ঘটনায় পাঁচ হাজার ৭০০ লোকের মৃত্যু ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ২০০৪ সালের প্রলয়ঙ্করী সুনামির পর এটি ছিল ভারতের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ ঘটনায় তিন হাজার ৫৮১ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত বিখ্যাত কেদারনাথ মন্দিরে একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৬ মাঘ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ভারতের উত্তরাখণ্ডে

হিমবাহ ধসে নিখোঁজ ২ শতাধিক

১৮ জনের লাশ উদ্ধার

সংবাদ ডেস্ক |

image

হিমবাহের ধসে নিহতদের উদ্ধার করা হচ্ছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছে আরও দু’শতাধিক মানুষ

ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চামোলি জেলার জোশিমঠে গত রোববার হিমবাহ ধসের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ১৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অন্তত ছয় জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখনও ২০০ জনেরও বেশি নিখোঁজ রয়েছেন। ২০১৯ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে ২১ শতক শুরু হওয়ার পর থেকে হিমালয়ের হিমবাহগুলো দ্বিগুণ গতিতে গলছে। জলবায়ু পরিবর্তন হিমালয়ের হিমবাহগুলোকে দ্রুত সংকুচিত করে তুলছে, ফলে সংলগ্ন দেশগুলোর শত শত কোটি মানুষের পানি সরবরাহ হুমকির মধ্যে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।

ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত রোববারের হিমবাহ ধসের ঘটনায় অলকনন্দা ও ধউলিগঙ্গা নদীতে প্রবল বান দেখা দেয়। পানির তোড়ে পাঁচটি ঝুলন্ত সেতু ভেসে যায়, ঘরবাড়ি ও নিকটবর্তী এনটিপিসি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগস্ত হয়, ঋষিগঙ্গার কাছে একটি ছোট জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রও ধ্বংস হয়।

ঘটনাস্থলে জাতীয় ও রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ভারত-তিব্বত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কয়েকটি টিমও মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ৬০০ সৈন্য ও দেশটির নৌবাহিনী সাতটি ডুবুরি দল পাঠিয়েছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, যে ২০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন তাদের মধ্যে এনটিপিসির ১৪৮ জন ও ঋষিগঙ্গার ২২ জন কর্মী, আরেকটি সুড়ঙ্গে আরও প্রায় ৩০ জন আটকা পড়ে রয়েছেন।

আনন্দবাজার জানিয়েছে, চামোলি জেলার তপোবনের কাছে একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের সুড়ঙ্গের মধ্যে কাজ করছিলেন ১৬ জন শ্রমিক, বানের সঙ্গে আসা কাদা ও পাথরে ওই সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তাদের বেঁচে থাকার সম্ভবনা নিয়ে প্রবল আশঙ্কার মধ্যেই তল্লাশি অভিযান শুরু করেন ভারত-তিব্বত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় এক একে তাদের সবাইকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়। প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ ওই সুড়ঙ্গ থেকে তাদের উদ্ধারে রাতভর কাজ করে উদ্ধারকারী দলগুলো।

নিকটবর্তী আরেকটি সুড়ঙ্গে আরও প্রায় ৩০ জন শ্রমিক আটকা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে শেষ খবর পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। এ পর্যন্ত ১৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অন্তত ছয় জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে

রোববার স্থানীয় সময় রাতে ভারতের জাতীয় সংকট ব্যবস্থাপনা কমিটি (এনসিএমসি) এক বৈঠকের পর জানায়, কেন্দ্রীয় পানি কমিশন থেকে পাওয়া তথ্যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, এই মুহূর্তে নদীর নিম্নপ্রবাহে বন্যার আশঙ্কা নেই। নদীর বেড়ে যাওয়া পানির উচ্চতাও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

আশপাশের গ্রামগুলোও আর বিপদের ঝুঁকিতে নেই বলে বৈঠকের পর জানিয়েছে এনসিএমসি।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। জোশিমঠে ৩০ শয্যার একটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি শ্রীনগর, ঋষিকেশ, জলিগ্রান্ট ও দেরাদুনের হাসপাতালগুলোকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।

ঋষিকেশ ও হরিদ্বারে লোকজনকে গঙ্গা নদীর তীরে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। এখানে দুটি বাঁধের সব পানি ছেড়ে দিয়ে হড়পা বানের তোড় মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালে উত্তরখণ্ডের কেদারনাথে কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টির পর বিশাল হড়কা বান ও ভূমিধসের ঘটনায় পাঁচ হাজার ৭০০ লোকের মৃত্যু ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ২০০৪ সালের প্রলয়ঙ্করী সুনামির পর এটি ছিল ভারতের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ ঘটনায় তিন হাজার ৫৮১ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত বিখ্যাত কেদারনাথ মন্দিরে একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।