মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ বিক্ষোভে এবার ভিক্ষুরা

সেনাশাসনের প্রতিবাদ ও নির্বাচিত নেতা অং সান সু চিসহ অন্যদের মুক্তির দাবিতে মিয়ানমারে টানা তৃতীয় দিনের মতো প্রতিবাদ হলো দেশটির বিভিন্ন শহর ও নগরগুলোতে। এ দিনের বিক্ষোভে শ্রমিক-ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বৌদ্ধভিক্ষুরা। দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে প্রতিবাদ মিছিলে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গেরুয়া পোশাক পরা বৌদ্ধভিক্ষুরাও যোগ দিয়েছেন এবং তারা সামনের সারিতে রয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) লাল ব্যানারের পাশাপাশি মিছিলে তারা বহুরঙা বৌদ্ধ পতাকাও উড়িয়েছেন।

মিছিলের একজনের হাতে উঁচু করে ধরা এক কাগজে লেখা ছিল, ‘আমাদের নেতাদের মুক্তি দাও, আমাদের ভোটকে শ্রদ্ধা কর, সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান কর।’ অন্য সাইনগুলোতে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র রক্ষা কর’, ‘স্বৈরতন্ত্রকে না বল’। অনেক প্রতিবাদকারী কালো পোশাক পরা ছিলেন। রয়টার্স

মায়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বাচিত নেতাদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের ঠিক এক সপ্তাহ পর দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়। ১ ফেব্রুয়ারির সেনা-অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে অসহযোগ আন্দোলন দিনে দিনে ব্যাপক আকার ধারণ করছে। সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) পতাকার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে লাল পতাকা হাতে মিছিল করে অন্য বিক্ষোভকারীরা। মিছিলে ‘আমাদের নেতাদের মুক্তি দাও, আমাদের ভোটের প্রতি সম্মান জানাও, সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান করো’ ব্যানারের পাশাপাশি ‘গণতন্ত্র রক্ষা করো’, ‘স্বৈরতন্ত্রকে না বলো’ ব্যানারও দেখা যায়।

২০০৭ সালে বৌদ্ধভিক্ষুদের নেতৃত্বাধীন ‘গেরোয়া বিপ্লবের’ পর মিয়ানমারজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। গেরোয়া বিপ্লব দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করে। সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করায় ভিপিএন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ই থিনজার নামের এক কর্মী ফেসবুকে জনগণকে মিছিলে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ইয়াঙ্গুনের জনগণ, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভে অংশ নিন।’ ইয়াঙ্গুনের সব এলাকার মিছিলকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে আসুন ও জনগণের সমাবেশে যোগ দিন। দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর ডাউইয়ে কয়েক হাজার লোক অভ্যুত্থান বিরোধী মিছিল করেছে। উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যের রাজধানী মায়িতকিনায় প্রতিবাদকারীরা সারা শরীর কালো পোশাকে ঢেকে জান্তা বিরোধী বিক্ষোভ করেছে। এ পর্যন্ত সব প্রতিবাদই শান্তিপূর্ণ ছিল। গত রোববার রাতে সামরিক বাহিনীর একটি ট্রাকবহরকে ইয়াঙ্গনের রাস্তা ধরে যেতে দেখা গেছে, এ সময় কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বিক্ষোভের বিষয়ে সামরিক সরকারের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ওই কর্মসূচিও সম্প্রচার করেনি। সামরিক সরকার রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনব্যাপী ইন্টারনেটের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল। দুইজন আন্দোলনকারী ফেসবুকে তাদের পেইজে জানান, পুলিশ তাদের খোঁজে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে, কিন্তু তখন তারা বাড়িতে ছিলেন না এবং তারা এখনও মুক্ত আছেন। রাস্তায় প্রতিবাদের পাশাপাশি একটি আইন অমান্য আন্দোলনও শুরু হয়েছে। প্রথমে চিকিৎসকরা এটি শুরু করলেও পরে কিছু শিক্ষক ও অন্যান্য সরকারি কর্মচারীরাও এতে যোগ দিয়েছেন। ‘সব বিভাগের সরকারি কর্মচারীদের সোমবার থেকে কাজে যোগ না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি আমরা’- বলেছেন প্রবীণ আন্দোলনকারী মিন কো নায়িং। ১৯৮৮ সালে তাদের দেখানো বিক্ষোভই সু চিকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তুলেছিল।

মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৬ মাঘ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ বিক্ষোভে এবার ভিক্ষুরা

image

ইয়াঙ্গুনে প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেয় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা -রয়টার্স

সেনাশাসনের প্রতিবাদ ও নির্বাচিত নেতা অং সান সু চিসহ অন্যদের মুক্তির দাবিতে মিয়ানমারে টানা তৃতীয় দিনের মতো প্রতিবাদ হলো দেশটির বিভিন্ন শহর ও নগরগুলোতে। এ দিনের বিক্ষোভে শ্রমিক-ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বৌদ্ধভিক্ষুরা। দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে প্রতিবাদ মিছিলে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গেরুয়া পোশাক পরা বৌদ্ধভিক্ষুরাও যোগ দিয়েছেন এবং তারা সামনের সারিতে রয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) লাল ব্যানারের পাশাপাশি মিছিলে তারা বহুরঙা বৌদ্ধ পতাকাও উড়িয়েছেন।

মিছিলের একজনের হাতে উঁচু করে ধরা এক কাগজে লেখা ছিল, ‘আমাদের নেতাদের মুক্তি দাও, আমাদের ভোটকে শ্রদ্ধা কর, সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান কর।’ অন্য সাইনগুলোতে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র রক্ষা কর’, ‘স্বৈরতন্ত্রকে না বল’। অনেক প্রতিবাদকারী কালো পোশাক পরা ছিলেন। রয়টার্স

মায়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বাচিত নেতাদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের ঠিক এক সপ্তাহ পর দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়। ১ ফেব্রুয়ারির সেনা-অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে অসহযোগ আন্দোলন দিনে দিনে ব্যাপক আকার ধারণ করছে। সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) পতাকার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে লাল পতাকা হাতে মিছিল করে অন্য বিক্ষোভকারীরা। মিছিলে ‘আমাদের নেতাদের মুক্তি দাও, আমাদের ভোটের প্রতি সম্মান জানাও, সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান করো’ ব্যানারের পাশাপাশি ‘গণতন্ত্র রক্ষা করো’, ‘স্বৈরতন্ত্রকে না বলো’ ব্যানারও দেখা যায়।

২০০৭ সালে বৌদ্ধভিক্ষুদের নেতৃত্বাধীন ‘গেরোয়া বিপ্লবের’ পর মিয়ানমারজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। গেরোয়া বিপ্লব দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করে। সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করায় ভিপিএন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ই থিনজার নামের এক কর্মী ফেসবুকে জনগণকে মিছিলে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ইয়াঙ্গুনের জনগণ, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভে অংশ নিন।’ ইয়াঙ্গুনের সব এলাকার মিছিলকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে আসুন ও জনগণের সমাবেশে যোগ দিন। দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর ডাউইয়ে কয়েক হাজার লোক অভ্যুত্থান বিরোধী মিছিল করেছে। উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যের রাজধানী মায়িতকিনায় প্রতিবাদকারীরা সারা শরীর কালো পোশাকে ঢেকে জান্তা বিরোধী বিক্ষোভ করেছে। এ পর্যন্ত সব প্রতিবাদই শান্তিপূর্ণ ছিল। গত রোববার রাতে সামরিক বাহিনীর একটি ট্রাকবহরকে ইয়াঙ্গনের রাস্তা ধরে যেতে দেখা গেছে, এ সময় কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বিক্ষোভের বিষয়ে সামরিক সরকারের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ওই কর্মসূচিও সম্প্রচার করেনি। সামরিক সরকার রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনব্যাপী ইন্টারনেটের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল। দুইজন আন্দোলনকারী ফেসবুকে তাদের পেইজে জানান, পুলিশ তাদের খোঁজে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে, কিন্তু তখন তারা বাড়িতে ছিলেন না এবং তারা এখনও মুক্ত আছেন। রাস্তায় প্রতিবাদের পাশাপাশি একটি আইন অমান্য আন্দোলনও শুরু হয়েছে। প্রথমে চিকিৎসকরা এটি শুরু করলেও পরে কিছু শিক্ষক ও অন্যান্য সরকারি কর্মচারীরাও এতে যোগ দিয়েছেন। ‘সব বিভাগের সরকারি কর্মচারীদের সোমবার থেকে কাজে যোগ না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি আমরা’- বলেছেন প্রবীণ আন্দোলনকারী মিন কো নায়িং। ১৯৮৮ সালে তাদের দেখানো বিক্ষোভই সু চিকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তুলেছিল।