শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললেও অবাধে চলছে কোচিং সেন্টার

করোনা মহামারীকালে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই বরিশাল মহানগরীতে অর্ধ শতাধিক কোচিং সেন্টারে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান চালাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি কোচিং সেন্টারেই সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বেশিরভাগ কোচিং সেন্টারেই এক বেঞ্চে ৩-৪ জন পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী বসে ক্লাস করছে। অথচ গত বছর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলোও বন্ধের নির্দেশ জারি করে সরকার। যা এখনও বহাল রয়েছে।

বরিশাল মহানগরীর প্রায় প্রতিটি কোচিং সেন্টারই রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার লাগিয়ে এবং নানা মাধ্যমে ভর্তির প্রচারণাও অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি অদ্যাবধি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আশপাশেই ২৩টি কোচিং সেন্টার চালু রয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরাই প্রকাশ্যে এসব কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসনের কয়েক দফা অভিযানেও এসব কোচিং সেন্টার বন্ধ হয়নি। এমনকি মানহীন অনেক কোচিং সেন্টার নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যেও উদ্বেগও রয়েছে। বরিশাল জিলা স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের বাসায়ও প্রাইভেট পড়ানোর নামে কোচিং সেন্টার পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।

জিলা স্কুলের শিক্ষক জাকির হোসেনের বাসায় চলছে কোচিং সেন্টার। পাশেই রয়েছে সহিদ ও মিজানুর রহমানের কোচিং সেন্টার।

এছাড়া সৃজন কোচিং সেন্টারের রুবেল, আকাশ হোসেনের লাইসিয়াম, সুমনের দি ব্রাইট একাডেমি, মো. ইদ্রিস হোসেনের বায়োলজি একাডেমি, ইঞ্জিনিয়ার তানজিল খানের সাইন্স একাডেমি, নাহিদ আল বাশারের বিজ্ঞান একাডেমি, মো. তাইজুল ইসলামের কোচিং সেন্টার, জেনন মিয়ার এবিসি একাডেমি, ড্যাফোডিল একাডেমিক কোচিং সেন্টার, সৈকত আহমেদের সোল একাডেমি, কবির হোসেন ও দেলোয়ারের ফিজিক্স একাডেমি, কেএম. জালাল রুমীর জালাল একাডেমি, আনিচের অথেনটিক, রাইট একাডেমি, আইকন, ইউসিসি, সিপিটি একাডেমি, প্রাইমেট, ইংলিশ টিউটেরিয়াল হোম, ম্যারিয়ান চাইল্ড অ্যান্ড কোচিং সেন্টারের মতো আরও অনেক সেন্টারে শিক্ষার্থীদের ভিড় এখন ওপেন-সিক্রেট। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের অনেক শিক্ষকই কোনরকম সাইনবোর্ড না টানিয়ে বসতঘরেই কোচিং সেন্টার খুলেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৯ সালে সরকারি ও বেসরকারি সব স্কুল এবং কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের জারি করা নীতিমালাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের সে আদেশ মানছেন না বরিশাল মহানগরীর অনেক কোচিং সেন্টারের মালিকরা। অভিভাবিকা সোনিয়া ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শ্রেণীকক্ষে যদি শিক্ষকরা ঠিকমত পাঠদান করত তাহলে ছেলেমেয়েদের আর কোচিং করাতে হতো না। প্রতি মাসে আমার মেয়ের কোচিং ফি বাবদ অনেক টাকা খরচ হলেও আমরা অসহায়। একই বক্তব্য পাওয়া গেছে আরও একাধিক অভিভাবকের কাছ থেকে।

তবে এসব বিষয়ে একাধিক কোচিং সেন্টারের মালিকের সঙ্গে আলাপ করা হলে প্রায় সবাই ছাত্রছাত্রী ভর্তির কথা স্বীকার করলেও কোন ক্লাস শুরু হয়নি বলে দাবি করেন। অথচ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীত গলিতে কোচিং সেন্টারগুলো শুরু ও ছুটির সময় সাধারণ মানুষের চলাফেরাই বন্ধ হয়ে যায় ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ে।

বরিশালে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দারের সঙ্গে তার সেল ফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান- ‘এ ব্যপারে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।

মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৬ মাঘ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

করোনার কারণে

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললেও অবাধে চলছে কোচিং সেন্টার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

করোনা মহামারীকালে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই বরিশাল মহানগরীতে অর্ধ শতাধিক কোচিং সেন্টারে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান চালাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি কোচিং সেন্টারেই সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বেশিরভাগ কোচিং সেন্টারেই এক বেঞ্চে ৩-৪ জন পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী বসে ক্লাস করছে। অথচ গত বছর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলোও বন্ধের নির্দেশ জারি করে সরকার। যা এখনও বহাল রয়েছে।

বরিশাল মহানগরীর প্রায় প্রতিটি কোচিং সেন্টারই রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার লাগিয়ে এবং নানা মাধ্যমে ভর্তির প্রচারণাও অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি অদ্যাবধি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আশপাশেই ২৩টি কোচিং সেন্টার চালু রয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরাই প্রকাশ্যে এসব কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসনের কয়েক দফা অভিযানেও এসব কোচিং সেন্টার বন্ধ হয়নি। এমনকি মানহীন অনেক কোচিং সেন্টার নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যেও উদ্বেগও রয়েছে। বরিশাল জিলা স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের বাসায়ও প্রাইভেট পড়ানোর নামে কোচিং সেন্টার পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।

জিলা স্কুলের শিক্ষক জাকির হোসেনের বাসায় চলছে কোচিং সেন্টার। পাশেই রয়েছে সহিদ ও মিজানুর রহমানের কোচিং সেন্টার।

এছাড়া সৃজন কোচিং সেন্টারের রুবেল, আকাশ হোসেনের লাইসিয়াম, সুমনের দি ব্রাইট একাডেমি, মো. ইদ্রিস হোসেনের বায়োলজি একাডেমি, ইঞ্জিনিয়ার তানজিল খানের সাইন্স একাডেমি, নাহিদ আল বাশারের বিজ্ঞান একাডেমি, মো. তাইজুল ইসলামের কোচিং সেন্টার, জেনন মিয়ার এবিসি একাডেমি, ড্যাফোডিল একাডেমিক কোচিং সেন্টার, সৈকত আহমেদের সোল একাডেমি, কবির হোসেন ও দেলোয়ারের ফিজিক্স একাডেমি, কেএম. জালাল রুমীর জালাল একাডেমি, আনিচের অথেনটিক, রাইট একাডেমি, আইকন, ইউসিসি, সিপিটি একাডেমি, প্রাইমেট, ইংলিশ টিউটেরিয়াল হোম, ম্যারিয়ান চাইল্ড অ্যান্ড কোচিং সেন্টারের মতো আরও অনেক সেন্টারে শিক্ষার্থীদের ভিড় এখন ওপেন-সিক্রেট। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের অনেক শিক্ষকই কোনরকম সাইনবোর্ড না টানিয়ে বসতঘরেই কোচিং সেন্টার খুলেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৯ সালে সরকারি ও বেসরকারি সব স্কুল এবং কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের জারি করা নীতিমালাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের সে আদেশ মানছেন না বরিশাল মহানগরীর অনেক কোচিং সেন্টারের মালিকরা। অভিভাবিকা সোনিয়া ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শ্রেণীকক্ষে যদি শিক্ষকরা ঠিকমত পাঠদান করত তাহলে ছেলেমেয়েদের আর কোচিং করাতে হতো না। প্রতি মাসে আমার মেয়ের কোচিং ফি বাবদ অনেক টাকা খরচ হলেও আমরা অসহায়। একই বক্তব্য পাওয়া গেছে আরও একাধিক অভিভাবকের কাছ থেকে।

তবে এসব বিষয়ে একাধিক কোচিং সেন্টারের মালিকের সঙ্গে আলাপ করা হলে প্রায় সবাই ছাত্রছাত্রী ভর্তির কথা স্বীকার করলেও কোন ক্লাস শুরু হয়নি বলে দাবি করেন। অথচ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীত গলিতে কোচিং সেন্টারগুলো শুরু ও ছুটির সময় সাধারণ মানুষের চলাফেরাই বন্ধ হয়ে যায় ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ে।

বরিশালে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দারের সঙ্গে তার সেল ফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান- ‘এ ব্যপারে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।