প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপবৃদ্ধি ও শিক্ষা উপকরণ ভাতা বিতরণ শুরু

ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ ভাতা বিতরণ শুরু হয়েছে। গতকাল প্রথম দফার বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তিনি আরও জানান, বিদ্যালয় খুললে জামা-জুতা কেনার অর্থও পাবে শিক্ষার্থীরা।

নিজ মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভাতা ও উপবৃত্তি বিতরণের উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। এ সময় অন্যদের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম, ডাক বিভগের মহাপরিচালক সিরাজ উদ্দিন এবং নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম পর্যায়ে গতকাল ছয় জেলার ৬৫৫টি স্কুলের ৮৬ হাজার ৪৫২ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের নগদ অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তি এবং শিক্ষা উপকরণ ভাতার টাকা পাঠানো হয়। চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নগদের মাধ্যমে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে ভাতা ও উপবৃত্তি দেবে। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে বৃত্তি বিতরণে এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘটনা বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, বিতরণ পদ্ধতির অস্বচ্ছতা ও অনিয়মের কারণে প্রায় এক বছর উপবৃত্তি এবং শিক্ষা উপকরণ ভাতা বিতরণ বন্ধ ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গত ১৩ ডিসেম্বর নগদ’-এর সঙ্গে চুক্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। নগদের মাধ্যমে বিতরণের ফলে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং সরকারের খরচ এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসবে। চুক্তি অনুসারে, শিক্ষার্থীর জন্মসনদ ও শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ নতুন করে তাদের ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিবন্ধন করা হয়। ফলে ভাতা বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের নগদ অ্যাকাউন্টে সেটি চলে যাচ্ছে। ভাতার সঙ্গে সঙ্গে তা ক্যাশ-আউট করার খরচও পেয়ে যাচ্ছেন অভিভাবক। তাদের বাড়তি কোন খরচ হবে না।

গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরায় খুললে জামা-জুতা কেনার অর্থ পাবে শিক্ষার্থীরা। কিডস অ্যালাউন্স হিসেবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এক হাজার টাকা করে দেয়া হবে।

উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরণের কারণেই ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮ শতাংশ কমে গেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তবে আগে যে অপারেটরের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ করা হচ্ছিল, সেখানে অনেক সুক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে বলে আমরা দেখতে পাই। অনিয়ম, দুর্নীতিও ছিল। সে কারণে তাদের বদলে আমরা সরকারের একটি অপারেটরকে বেছে নিয়েছি। একে তো নগদ আমাদের ডাক বিভাগের প্রতিষ্ঠান, তার ওপর আমাদের অনেক টাকা খরচ বাঁচবে। সুতরাং নগদকে বেছে না নেয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না।’

জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আগে যত্রতত্র সিম ব্যবহার করা হতো। এর টাকা ও তুলে নিত। দেয়া হতো না। এখন মায়েদের নাম্বার থাকতে হবে। বাচ্চার জন্মনিবন্ধন থাকতে হবে। ‘নগদ’ আমাদের ডাক বিভাগের প্রতিষ্ঠান। তার ওপর আমাদের অনেক টাকা খরচ বাঁচবে।’

‘শিওর ক্যাশ’-এর নামে নানা অনিয়মের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। আমাদের এসব তথ্য উপাত্তের কারণে সম্ভব হচ্ছে।’

এখনও শতভাগ স্কুলে জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে পারেনি, এসব শিশু উপবৃত্তির সুবিধা পাবে কিনা প্রশ্নে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সব শিক্ষার্থী উপবৃত্তির সুবিধা পাবে। আমরা যেগুলো দিতে পারিনি সেগুলো দ্রুত করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।

মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৬ মাঘ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

‘নগদ’-এর মাধ্যমে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপবৃদ্ধি ও শিক্ষা উপকরণ ভাতা বিতরণ শুরু

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ ভাতা বিতরণ শুরু হয়েছে। গতকাল প্রথম দফার বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তিনি আরও জানান, বিদ্যালয় খুললে জামা-জুতা কেনার অর্থও পাবে শিক্ষার্থীরা।

নিজ মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভাতা ও উপবৃত্তি বিতরণের উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। এ সময় অন্যদের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম, ডাক বিভগের মহাপরিচালক সিরাজ উদ্দিন এবং নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম পর্যায়ে গতকাল ছয় জেলার ৬৫৫টি স্কুলের ৮৬ হাজার ৪৫২ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের নগদ অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তি এবং শিক্ষা উপকরণ ভাতার টাকা পাঠানো হয়। চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নগদের মাধ্যমে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে ভাতা ও উপবৃত্তি দেবে। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে বৃত্তি বিতরণে এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘটনা বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, বিতরণ পদ্ধতির অস্বচ্ছতা ও অনিয়মের কারণে প্রায় এক বছর উপবৃত্তি এবং শিক্ষা উপকরণ ভাতা বিতরণ বন্ধ ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গত ১৩ ডিসেম্বর নগদ’-এর সঙ্গে চুক্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। নগদের মাধ্যমে বিতরণের ফলে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং সরকারের খরচ এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসবে। চুক্তি অনুসারে, শিক্ষার্থীর জন্মসনদ ও শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ নতুন করে তাদের ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিবন্ধন করা হয়। ফলে ভাতা বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের নগদ অ্যাকাউন্টে সেটি চলে যাচ্ছে। ভাতার সঙ্গে সঙ্গে তা ক্যাশ-আউট করার খরচও পেয়ে যাচ্ছেন অভিভাবক। তাদের বাড়তি কোন খরচ হবে না।

গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরায় খুললে জামা-জুতা কেনার অর্থ পাবে শিক্ষার্থীরা। কিডস অ্যালাউন্স হিসেবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এক হাজার টাকা করে দেয়া হবে।

উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরণের কারণেই ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮ শতাংশ কমে গেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তবে আগে যে অপারেটরের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ করা হচ্ছিল, সেখানে অনেক সুক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে বলে আমরা দেখতে পাই। অনিয়ম, দুর্নীতিও ছিল। সে কারণে তাদের বদলে আমরা সরকারের একটি অপারেটরকে বেছে নিয়েছি। একে তো নগদ আমাদের ডাক বিভাগের প্রতিষ্ঠান, তার ওপর আমাদের অনেক টাকা খরচ বাঁচবে। সুতরাং নগদকে বেছে না নেয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না।’

জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আগে যত্রতত্র সিম ব্যবহার করা হতো। এর টাকা ও তুলে নিত। দেয়া হতো না। এখন মায়েদের নাম্বার থাকতে হবে। বাচ্চার জন্মনিবন্ধন থাকতে হবে। ‘নগদ’ আমাদের ডাক বিভাগের প্রতিষ্ঠান। তার ওপর আমাদের অনেক টাকা খরচ বাঁচবে।’

‘শিওর ক্যাশ’-এর নামে নানা অনিয়মের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। আমাদের এসব তথ্য উপাত্তের কারণে সম্ভব হচ্ছে।’

এখনও শতভাগ স্কুলে জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে পারেনি, এসব শিশু উপবৃত্তির সুবিধা পাবে কিনা প্রশ্নে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সব শিক্ষার্থী উপবৃত্তির সুবিধা পাবে। আমরা যেগুলো দিতে পারিনি সেগুলো দ্রুত করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।