পুলিশ ক্যাডার থেকে থানায় ওসি নিয়োগ চেয়ে দুদকের সুপারিশ

পুলিশ ক্যাডার থেকে থানার ওসি নিয়োগ এবং সব পদোন্নতিতে পরীক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়া সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদন নিয়ে গতকাল ভার্চুয়াল ব্রিফে এ কথা জানান দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, এমনটা হলে দুর্নীতি অর্ধেক কমে যাবে। মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত, দুর্নীতি বিদ্যমান এতে কোন সন্দেহ নেই। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কালো টাকা সাদার নামে ঘুষের টাকা বৈধ করা গ্রহণযোগ্য নয়। ২০১৯ সালে দুদকে মোট অভিযোগ আসে ২১ হাজার ৩৭১টি। এরমধ্যে অনুসন্ধানের জন্য নেয়া হয় ১ হাজার ৭১০টি। একই বছর ২৬৩ মামলা এবং চার্জশিট হয়েছে ২৬৭টি। ওই বছর সাজার হার ৬৩ শতাংশ।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতি রয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই দুর্নীতি প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রয়াস দরকার। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৯ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি সভ্যতার প্রাচীনতম অপরাধের মধ্যে অন্যতম। এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। এই অপরাধ বৈশ্বিক। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, সরকারি পরিষেবা সর্বোপরি মানুষের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের সংক্ষিপ্ত কোন পথ হয়তো নেই। তবে কোনভাবেই দুর্নীতির কাছে পরাজিত হওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম চিহ্নিত করে তা রোধে কমিশন বিভিন্ন সময়ে সুপারিশ করার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ট্যাক্স দেয়ার জটিলতার কারণে দুর্নীতি বাড়ছে। কেননা ট্যাক্স দেয়ার পদ্ধতি সহজ করতে হবে। এটি আমরা সংশ্লিষ্টদের বলেছি। কিন্তু তারপরও তা সহজ হয়নি। অনলাইনে ট্যাক্স দেয়ার পদ্ধতি চালু করলে সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে ট্যাক্স দিবে, এতে দুর্নীতি কমে আসবে। সিস্টেমের মধ্যে সেবা দিলে মানুষ সহজে সেবা পাবে। এতে তদবির করা বন্ধ হয়ে যাবে। ২৮টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে গবেষণা করে দেখা গেছে, একটি স্থায়ী সংস্কার সার্ভিস কমিশন করা যেতে পারে। এটি সরকার বিবেচনা করে দেখবে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতসহ কয়েকটি খাতের কথা উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সিভিল সার্ভিস কর্মচারীদের নিয়োগ-বদলিতে দুর্নীতি হয়। বিদেশে প্রশিক্ষণে সমতা নিশ্চিত করা হয় না। বিভিন্ন খাতের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিও আমরা দেখিয়ে দিয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি রোধে আমরা কিছু সুপারিশ করেছি। কিন্তু কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। শিক্ষা খাত কিছুটা গুরুত্ব দিলেও অন্য খাতে দৃশ্যমান কিছু দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে উন্নতি না হলে ‘টেকসই উন্নয়ন’ সম্ভব নয়। দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হলে প্রাইমারি ও হাইস্কুলের শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে হবে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

গত রোববার ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করে দুদক। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯ সালে দুদকে মোট অভিযোগ আসে ২১ হাজার ৩৭১টি, অনুসন্ধানের জন্য নেয়া হয় এক হাজার ৭১০টি, একই বছর মোট মামলা হয়েছে ২৬৩টি, চার্জশিট দেয়া হয়েছে ২৬৭টির, সাজার হার ছিল ৬৩ শতাংশ। আর গত বছর দুদকের সাজার হার ৭৭ শতাংশ। আগের তুলনায় কাজের গতি বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৬ মাঘ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

পুলিশ ক্যাডার থেকে থানায় ওসি নিয়োগ চেয়ে দুদকের সুপারিশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

পুলিশ ক্যাডার থেকে থানার ওসি নিয়োগ এবং সব পদোন্নতিতে পরীক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়া সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদন নিয়ে গতকাল ভার্চুয়াল ব্রিফে এ কথা জানান দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, এমনটা হলে দুর্নীতি অর্ধেক কমে যাবে। মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত, দুর্নীতি বিদ্যমান এতে কোন সন্দেহ নেই। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কালো টাকা সাদার নামে ঘুষের টাকা বৈধ করা গ্রহণযোগ্য নয়। ২০১৯ সালে দুদকে মোট অভিযোগ আসে ২১ হাজার ৩৭১টি। এরমধ্যে অনুসন্ধানের জন্য নেয়া হয় ১ হাজার ৭১০টি। একই বছর ২৬৩ মামলা এবং চার্জশিট হয়েছে ২৬৭টি। ওই বছর সাজার হার ৬৩ শতাংশ।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতি রয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই দুর্নীতি প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রয়াস দরকার। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৯ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি সভ্যতার প্রাচীনতম অপরাধের মধ্যে অন্যতম। এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। এই অপরাধ বৈশ্বিক। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, সরকারি পরিষেবা সর্বোপরি মানুষের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের সংক্ষিপ্ত কোন পথ হয়তো নেই। তবে কোনভাবেই দুর্নীতির কাছে পরাজিত হওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম চিহ্নিত করে তা রোধে কমিশন বিভিন্ন সময়ে সুপারিশ করার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ট্যাক্স দেয়ার জটিলতার কারণে দুর্নীতি বাড়ছে। কেননা ট্যাক্স দেয়ার পদ্ধতি সহজ করতে হবে। এটি আমরা সংশ্লিষ্টদের বলেছি। কিন্তু তারপরও তা সহজ হয়নি। অনলাইনে ট্যাক্স দেয়ার পদ্ধতি চালু করলে সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে ট্যাক্স দিবে, এতে দুর্নীতি কমে আসবে। সিস্টেমের মধ্যে সেবা দিলে মানুষ সহজে সেবা পাবে। এতে তদবির করা বন্ধ হয়ে যাবে। ২৮টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে গবেষণা করে দেখা গেছে, একটি স্থায়ী সংস্কার সার্ভিস কমিশন করা যেতে পারে। এটি সরকার বিবেচনা করে দেখবে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতসহ কয়েকটি খাতের কথা উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সিভিল সার্ভিস কর্মচারীদের নিয়োগ-বদলিতে দুর্নীতি হয়। বিদেশে প্রশিক্ষণে সমতা নিশ্চিত করা হয় না। বিভিন্ন খাতের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিও আমরা দেখিয়ে দিয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি রোধে আমরা কিছু সুপারিশ করেছি। কিন্তু কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। শিক্ষা খাত কিছুটা গুরুত্ব দিলেও অন্য খাতে দৃশ্যমান কিছু দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে উন্নতি না হলে ‘টেকসই উন্নয়ন’ সম্ভব নয়। দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হলে প্রাইমারি ও হাইস্কুলের শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে হবে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

গত রোববার ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করে দুদক। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯ সালে দুদকে মোট অভিযোগ আসে ২১ হাজার ৩৭১টি, অনুসন্ধানের জন্য নেয়া হয় এক হাজার ৭১০টি, একই বছর মোট মামলা হয়েছে ২৬৩টি, চার্জশিট দেয়া হয়েছে ২৬৭টির, সাজার হার ছিল ৬৩ শতাংশ। আর গত বছর দুদকের সাজার হার ৭৭ শতাংশ। আগের তুলনায় কাজের গতি বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।