চাকরির নামে একের পর এক প্রতারণা

নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানার বাফলা গ্রামের যুবক মমিনুর রহমান। ফেসবুকে পরিচয় হয় আশরাফুল ইসলাম দিপু নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। দিপু নিজেকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা’র (এনএসআই) পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেয়। মমিনুরকেও এনএসআই সহকারী পরিচালক পদে চাকরি দিবে বলে আশ্বাস দেয় দিপু। এমন আশ্বাসে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দিপুকে ৩১ লাখ টাকা দেন মমিনুর। পরে মমিনুরের গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় ডাকযোগে সরকারি সিল সম্বলিত একটি চিঠি যায়। যাতে মমিনুরের জন্য নিয়োগপত্রও ছিল। কিন্তু মমিনুর চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারেন, ওই নিয়োগপত্র ভুয়া। তিনি প্রতারিত হয়েছেন। কিন্তু প্রতারিত হয়েও তিনি থানায় যাননি, মামলাও করেননি।

তবে প্রতারক দিপু ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম কর্তৃক গ্রেপ্তারের খবরে গত ৩ ফেব্রয়ারি ডিবি কার্যালয়ে ছুটে আসেন মমিনুর। মাত্র দুই দিনে ঢাকা মহানগর ডিবি কার্যালয়ে এসে দিপুর বিরুদ্ধে ২০ জন ভুক্তভোগী অভিযোগ তোলেন। এই ২০ জনের কাছ থেকে শুধুমাত্র একজন প্রতারকই প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

শুধু মমিনুর কিংবা দিপুর প্রতারণার শিকার হয়ে ডিবি অফিসে আসা ২০ জন ভুক্তভোগীই নয়, এদের মতো লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার যুবক চাকরির আশায় বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা কোম্পানিকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। পড়াশোনা শেষ করে দীর্ঘদিন ধরে বেকার জীবনযাপন করা হতাশাগ্রস্ত অধিকাংশ যুবকরাই প্রতারকদের প্রতারণার ফাঁদে পা বাড়াচ্ছে। তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সরকারি চাকরি পেতে পড়াশোনা করে একটি সিস্টেমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু যেসব চাকরিপ্রার্থীরা তা না করে শর্টকাট উপায়ে চাকরি নিতে বিভিন্ন প্রতারকদের টাকা দিয়ে প্রতারিত হচ্ছে, একই অপরাধে ওইসব ভুক্তভোগীদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত। তবে সেটা সতর্ক কিংবা জানানোর জন্য।

সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন টার্মিনাল-৩ এ দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক ও সুপারভাইজর পদে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে একটি চক্রের অন্তত ১৫০ জনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টার্মিনাল-৩ নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার এ ধরনের নিয়োগের কোন বিজ্ঞপ্তিই গণমাধ্যমে দেননি। তাহলে কিভাবে এমন নিয়োগের কথা জানতে পারলেন চাকরিপ্রার্থীরা? প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা বলছেন, তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। ভুয়া নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিক পদে চাকরি দিতে ৫০ হাজার এবং সুপারভাইজর পদের জন্য এক লাখ টাকা ‘ঘুষ’ দাবি করে। টাকা দিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রতারণার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গত ২২ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেয়ার ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। যারা অর্থ দিয়ে প্রতারিত হয়েছে, ভুল করেছে তাদের সতর্ককরণ কিংবা জানানোর জন্য আইনের আওতায় আনা যেতে পারে। তবে যারা চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা না হলে প্রতারণা সমাজে বজায় থাকবে। সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে যারা মানুষকে প্রতারিত করেছে, তাদের কতো সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে তা হচ্ছে বিবেচ্য বিষয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে শহর ও গ্রাম সবখানেই নানাভাবে প্রতারণা চলছে। এরমধ্যে চাকরিপ্রত্যাশীরা সবচেয়ে বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত চক্রের পকেটে ঢুকেছে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা। মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই একই সময়ে সারাদেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দুই হাজার ৪৭৭টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন সাতটি মামলা হয়েছে। র‌্যাব পুলিশ ও সিআইডির তথ্য মতে, গত এক বছরে প্রতারকচক্রের অন্তত এক হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাকরির নামে বা অন্যভাবে প্রতারণার শিকার বেশিরভাগ ভুক্তভোগী মামলা করতে চান না। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, প্রতারণার ঘটনায় পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ জিডি নেয়। ফলে কার্যত কোন তদন্তই হয় না। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এসব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো চেষ্টা করছে।

সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে দিতে বয়স শেষ করা অনেক চাকরিপ্রত্যাশী যুবক আক্ষেপ করে বলেন, এখন শুধু মেধা থাকলেই চাকরি হয় না। অথবা মামা-খালুও থাকা লাগে। তা না হলে মেধাবী হয়েও শেষ বয়সে একটা পিয়নের চাকরিও কপালে জুটে না। চাকরি দেয়ার কথা বলে এমন প্রতারণার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, গত বছরের মার্চের শুরুতে দেশে করোনা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব এবং এরপর সরকারি সাধারণ ছুটির কারণে সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। চাকরিপ্রার্থীরা পড়ে যান অনিশ্চয়তায়। বর্তমানে এটি চালু হলেও প্রতারণাও চলছে পাল্লা দিয়ে।

এবিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শেখ ওমর ফারুক বলেন, বর্তমানে প্রতারকচক্রের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিআইডিতে এমন অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের মার্চের তুলনায় গত বছরের মার্চে চাকরির বিজ্ঞাপন ৩৫ শতাংশ কম ছিল। আর এপ্রিলে ছিল আগের বছরের তুলনায় ৮৭ শতাংশ কম। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, বেশিরভাগ বিজ্ঞাপন দেখা যায় পোশাক খাত, উৎপাদনমুখী শিল্প, স্বাস্থ্য ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতের। সম্প্রতি আবার নিয়োগ শুরু হলেও তার হার স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম। ফলে যেখানেই চাকরির বিজ্ঞাপন দেখছেন বা খোঁজ পাচ্ছেন, সেখানেই ছুটছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, যারা বুঝে-শুনে প্রতারণায় যুক্ত হয়, ওইসব চাকরিপ্রার্থীদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত। তাহলে হয়তো প্রতারকদের পকেট আর ভারি হবে না। শিক্ষিত বেকার ও অভিভাবকদের ভিটে-মাটি বিক্রি করতে হবে না।

মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৬ মাঘ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

চাকরির নামে একের পর এক প্রতারণা

মাসুদ রানা

নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানার বাফলা গ্রামের যুবক মমিনুর রহমান। ফেসবুকে পরিচয় হয় আশরাফুল ইসলাম দিপু নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। দিপু নিজেকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা’র (এনএসআই) পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেয়। মমিনুরকেও এনএসআই সহকারী পরিচালক পদে চাকরি দিবে বলে আশ্বাস দেয় দিপু। এমন আশ্বাসে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দিপুকে ৩১ লাখ টাকা দেন মমিনুর। পরে মমিনুরের গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় ডাকযোগে সরকারি সিল সম্বলিত একটি চিঠি যায়। যাতে মমিনুরের জন্য নিয়োগপত্রও ছিল। কিন্তু মমিনুর চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারেন, ওই নিয়োগপত্র ভুয়া। তিনি প্রতারিত হয়েছেন। কিন্তু প্রতারিত হয়েও তিনি থানায় যাননি, মামলাও করেননি।

তবে প্রতারক দিপু ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম কর্তৃক গ্রেপ্তারের খবরে গত ৩ ফেব্রয়ারি ডিবি কার্যালয়ে ছুটে আসেন মমিনুর। মাত্র দুই দিনে ঢাকা মহানগর ডিবি কার্যালয়ে এসে দিপুর বিরুদ্ধে ২০ জন ভুক্তভোগী অভিযোগ তোলেন। এই ২০ জনের কাছ থেকে শুধুমাত্র একজন প্রতারকই প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

শুধু মমিনুর কিংবা দিপুর প্রতারণার শিকার হয়ে ডিবি অফিসে আসা ২০ জন ভুক্তভোগীই নয়, এদের মতো লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার যুবক চাকরির আশায় বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা কোম্পানিকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। পড়াশোনা শেষ করে দীর্ঘদিন ধরে বেকার জীবনযাপন করা হতাশাগ্রস্ত অধিকাংশ যুবকরাই প্রতারকদের প্রতারণার ফাঁদে পা বাড়াচ্ছে। তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সরকারি চাকরি পেতে পড়াশোনা করে একটি সিস্টেমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু যেসব চাকরিপ্রার্থীরা তা না করে শর্টকাট উপায়ে চাকরি নিতে বিভিন্ন প্রতারকদের টাকা দিয়ে প্রতারিত হচ্ছে, একই অপরাধে ওইসব ভুক্তভোগীদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত। তবে সেটা সতর্ক কিংবা জানানোর জন্য।

সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন টার্মিনাল-৩ এ দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক ও সুপারভাইজর পদে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে একটি চক্রের অন্তত ১৫০ জনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টার্মিনাল-৩ নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার এ ধরনের নিয়োগের কোন বিজ্ঞপ্তিই গণমাধ্যমে দেননি। তাহলে কিভাবে এমন নিয়োগের কথা জানতে পারলেন চাকরিপ্রার্থীরা? প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা বলছেন, তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। ভুয়া নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিক পদে চাকরি দিতে ৫০ হাজার এবং সুপারভাইজর পদের জন্য এক লাখ টাকা ‘ঘুষ’ দাবি করে। টাকা দিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রতারণার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গত ২২ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেয়ার ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। যারা অর্থ দিয়ে প্রতারিত হয়েছে, ভুল করেছে তাদের সতর্ককরণ কিংবা জানানোর জন্য আইনের আওতায় আনা যেতে পারে। তবে যারা চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা না হলে প্রতারণা সমাজে বজায় থাকবে। সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে যারা মানুষকে প্রতারিত করেছে, তাদের কতো সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে তা হচ্ছে বিবেচ্য বিষয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে শহর ও গ্রাম সবখানেই নানাভাবে প্রতারণা চলছে। এরমধ্যে চাকরিপ্রত্যাশীরা সবচেয়ে বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত চক্রের পকেটে ঢুকেছে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা। মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই একই সময়ে সারাদেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দুই হাজার ৪৭৭টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন সাতটি মামলা হয়েছে। র‌্যাব পুলিশ ও সিআইডির তথ্য মতে, গত এক বছরে প্রতারকচক্রের অন্তত এক হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাকরির নামে বা অন্যভাবে প্রতারণার শিকার বেশিরভাগ ভুক্তভোগী মামলা করতে চান না। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, প্রতারণার ঘটনায় পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ জিডি নেয়। ফলে কার্যত কোন তদন্তই হয় না। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এসব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো চেষ্টা করছে।

সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে দিতে বয়স শেষ করা অনেক চাকরিপ্রত্যাশী যুবক আক্ষেপ করে বলেন, এখন শুধু মেধা থাকলেই চাকরি হয় না। অথবা মামা-খালুও থাকা লাগে। তা না হলে মেধাবী হয়েও শেষ বয়সে একটা পিয়নের চাকরিও কপালে জুটে না। চাকরি দেয়ার কথা বলে এমন প্রতারণার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, গত বছরের মার্চের শুরুতে দেশে করোনা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব এবং এরপর সরকারি সাধারণ ছুটির কারণে সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। চাকরিপ্রার্থীরা পড়ে যান অনিশ্চয়তায়। বর্তমানে এটি চালু হলেও প্রতারণাও চলছে পাল্লা দিয়ে।

এবিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শেখ ওমর ফারুক বলেন, বর্তমানে প্রতারকচক্রের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিআইডিতে এমন অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের মার্চের তুলনায় গত বছরের মার্চে চাকরির বিজ্ঞাপন ৩৫ শতাংশ কম ছিল। আর এপ্রিলে ছিল আগের বছরের তুলনায় ৮৭ শতাংশ কম। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, বেশিরভাগ বিজ্ঞাপন দেখা যায় পোশাক খাত, উৎপাদনমুখী শিল্প, স্বাস্থ্য ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতের। সম্প্রতি আবার নিয়োগ শুরু হলেও তার হার স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম। ফলে যেখানেই চাকরির বিজ্ঞাপন দেখছেন বা খোঁজ পাচ্ছেন, সেখানেই ছুটছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, যারা বুঝে-শুনে প্রতারণায় যুক্ত হয়, ওইসব চাকরিপ্রার্থীদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত। তাহলে হয়তো প্রতারকদের পকেট আর ভারি হবে না। শিক্ষিত বেকার ও অভিভাবকদের ভিটে-মাটি বিক্রি করতে হবে না।