ইতিহাস কথা কয়

রণেশ মৈত্র

পাবনা ‘অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি’ শতাধিক বছর আগে নির্মাণ করেছিলেন তাঁতীবন্দের জমিদারেরা। উদ্দেশ্য, পাবনার মানুষ সেখানে বসে দেশ-বিদেশের নানা বই পুস্তক পড়বেন, পত্রপত্রিকা পড়বেন, কমিটি নির্বাচিত করবেন; যারা ওই লাইব্রেরি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব পাবেন। তখনকার গঠনতন্ত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট-জেলা প্রশাসকেরা হতেন পদাধিকার বলে সভাপতি। বাদবাকি সবাই সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত। এতে সুবিধা-অসুবিধা দু’রকমই হতো। অসুবিধাই বেশি, কারণ সভাপতি কিছু বললে মতভিন্নতা থাকলেও অপরাপর সদস্যদের চোখ বুঁজে তা মেনে নিতে হতো।

তাই ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরে এক সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্রে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক থাকার বিধান বাতিল করে যে কোন সদস্যই নির্বাচনের মাধ্যমে ওই পদে আসীন হওয়ার বিধান করা হয়।

তখন ভোটার হতে পারতেন সব সাধারণ সদস্যই। তিন ক্যাটাগরিতে সদস্য হওয়ার ব্যবস্থা তখন ছিল। প্রথম ক্যাটাগরির সদস্যের মাসিক চাঁদার হার বেশি থাকতো; বিনিময়ে তিনি এক সাথে তিনখানা যে কোন ধরনের বই লাইব্রেরি থেকে ইস্যু করিয়ে বাড়ি নিতে পারতেন নির্দিষ্ট সময় পর ফেরত দেওয়ার শর্তে; দ্বিতীয় ক্যাটাগরি দুইখানা এবং তৃতীয় ক্যাটাগরিতে নিতে পারতেন একখানা বই। স্থায়ী সদস্য হতে ৫০০ টাকা এককালীন দিতে হতো। এই সদস্যরা বেশি বই নিতে পারতেন। তবে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সব ক্যাটাগরির সদস্য-সদস্যাই চাঁদা পরিশোধ থাকলে ভোটার হতে ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন।

বহু বছর আগে নির্মিত হওয়ায় লাইব্রেরির দালানটি ভগ্নদশা পেলে জনৈক এমপি আজ থেকে ২০-২৫ বছর পূর্বে একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিল্পপতিকে দালানটি পুনঃনির্মাণের অনুরোধ জানালে তিনি তার ছোট ছেলেকে কাজটি করে দেওয়ার দায়িত্ব দেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে দালানটি বহুতল বিশিষ্ট করে লাইব্রেরির গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে শুধুমাত্র স্থায়ী সদস্যরাই ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন এমন বিধান করা হলো। আর স্থায়ী সদস্য হতে এককালীন এক লাখ টাকা চাঁদার বিধানও করা হলো। একই সাথে গঠনতন্ত্রে ওি পরিবর্তনের মুখে তাদের কারখানার অনেককে স্থায়ী সদস্য করা হলো ৫০০ টাকা এককালীন চাঁদার বিনিময়ে।

ফলে লাইব্রেরির পরিচালনা কমিটি চলে গেল ওই ছোট ছেলেটির পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। তিনি অঘোষিতভাবে স্থায়ী সভাপতি হয়ে গেলেন এবং কমিটিও নির্বাচিত হয় তার মতানুযায়ী। ফলে অতীতের বিজ্ঞ ও লাইব্রেরির অনুষ্ঠানাদির পরিচালক সদস্যরা স্থায়ীভাবেই লাইব্রেরির প্রতি আগ্রহ হারালেন।

পাবনাতে একটি বিখ্যাত নাট্যমঞ্চ আছে, যার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বনওয়ারীনগর তাড়াশের জমিদার রায় বনমালী রায় বাহাদুর। মঞ্চটি নির্মিত হয়েছিলো টিনের ছাদবিশিষ্ট বিশাল এক দালান ঘরে। সেখানে উপর-নিচ দিয়ে ৭০০-৮০০ লোক আসন গ্রহণ করতে পারতেন। এ প্রতিষ্ঠানের নাম বনমালী ইনস্টিটিউট। বহু নাটক এখানে মঞ্চস্থ হতো স্থানীয় ও বহিরাগত নাট্য সংগঠনগুলোর দ্বারা। শতবর্ষ পেরিয়ে যাওয়ায় এটিরও ভগ্নদশাপ্রাপ্ত হয়। তত্ত্বাবধায় সরকার ২০০৬-০৭ সালে এটি পুনঃনির্মাণের জন্য কয়েক কোটি টাকা মঞ্জুর করেন। নির্মাণ কাজ যতারীতি শুরু হয় কিন্তু এক পর্যায়ে বাড়তি কিছু টাকার প্রয়োজন হওয়ায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক (যিনি পদাধিকার বলে সভাপতি ছিলেন) ওই শিল্পপতির সন্তানকে অনুরোধ জানালে তিনি আরও কতিপয় ধনাঢ্য ব্যক্তির সহায়তায় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়ে তা সমাপ্ত করেন। ইতোমধ্যে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে পদাধিকার বলে কারও সভাপতি সহ-সভাপতি থাকার পুরাতন বিধান বাতিল করা হয় এবং তিনি ঐ প্রতিষ্ঠানেরও স্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত হন ও তার মনোনীত ব্যক্তিরা নানা পদে নির্বাচিত হন। একটি সাধারণ সভা ডেকে তার ইচ্ছানুযায়ী ‘বনমালী ইনস্টিটিউট’ এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বনমালী শিল্প কেন্দ্র’। বনমালী ইনস্টিটিউট নামের যে গৌরবান্বিত ইতিহাস ছিল তা অঘোষিতভাবে অবলুপ্ত হয়।

শত সহস্র গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা ও ইতিহাসের ধারক পাবনা টাউন হল। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজী সুভাষ বসুর ভাই শরৎ বসু, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কমরেড মনি সিং, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, বেগম সেলিনা বানু, পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য প্রমুখ জাতীয় ও বরণীয় নেতারা ভাষণ দিয়েছেন। স্থানীয় ছাত্র যুব নেতারাও এখানে ভাষণ দিতেন। এখানেই প্রথম ’৭১-এর মার্চে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এক কথায় পাবনা টাউন হলই ছিল পাবনার গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল সূতিকাগার।

পৌর কর্তৃপক্ষ এটির দৈন্যদশা দূর করার জন্য শিল্পপতির শরণাপন্ন হলেন। তিনি সেই দায়িত্ব নিয়ে টাউন হল ভেঙে চূরমার করে দিয়ে তার কোন চিহ্ন না রেখে চতুর্দিকে প্রাচীর ও দক্ষিণদিকে বিশাল একটা মঞ্চ নির্মাণ করে নাম রাখলেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম স্বাধীনতা চত্বর’। বিদায় দেওয়া হলো শত শত বছরের গৌরবের ইতিহাসকে।

এ কর্মকা-গুলোকে কেন্দ্র করে সর্বস্তরের মানুষের মনে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। কিন্তু শিল্পপতির অসংখ্য স্তাবক তাকে তা জানতে দেয়নি। ক্ষোভ চাপা থাকায় তিনি তা জানতেও পারেননি। অপ্রকাশ্যে শিল্পপতিটির নাম হয়ে দাঁড়ায় দখলদার শিল্পপতি। তার কারখানার স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়নও নেই, যেটি আছে সেটি মালিক নিয়ন্ত্রিত, মালিক মনোনীত।

বিগত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পাবনা পৌর নির্বাচনে তিনি কেন্দ্র থেকে মেয়র পদে এই ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন এনে দেন নৌকা প্রতীকে। মানুষের ক্ষোভ এই নির্বাচনে ফেটে পড়ল। নির্বাচনও হলো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। ক্ষোভ এতই যে, ওই মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ভোটে পরাজিত হলেন।

এভাবেই পাবনার মানুষ নতুন করে জানান দিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘ইতিহাস কথা কয়’। বিজয়ী হন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এক নেতা হিসেবে ভিন্ন প্রতীকে।

[লেখক : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ]

raneshmaitra@gmail.com

মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৬ মাঘ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ইতিহাস কথা কয়

রণেশ মৈত্র

পাবনা ‘অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি’ শতাধিক বছর আগে নির্মাণ করেছিলেন তাঁতীবন্দের জমিদারেরা। উদ্দেশ্য, পাবনার মানুষ সেখানে বসে দেশ-বিদেশের নানা বই পুস্তক পড়বেন, পত্রপত্রিকা পড়বেন, কমিটি নির্বাচিত করবেন; যারা ওই লাইব্রেরি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব পাবেন। তখনকার গঠনতন্ত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট-জেলা প্রশাসকেরা হতেন পদাধিকার বলে সভাপতি। বাদবাকি সবাই সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত। এতে সুবিধা-অসুবিধা দু’রকমই হতো। অসুবিধাই বেশি, কারণ সভাপতি কিছু বললে মতভিন্নতা থাকলেও অপরাপর সদস্যদের চোখ বুঁজে তা মেনে নিতে হতো।

তাই ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরে এক সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্রে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক থাকার বিধান বাতিল করে যে কোন সদস্যই নির্বাচনের মাধ্যমে ওই পদে আসীন হওয়ার বিধান করা হয়।

তখন ভোটার হতে পারতেন সব সাধারণ সদস্যই। তিন ক্যাটাগরিতে সদস্য হওয়ার ব্যবস্থা তখন ছিল। প্রথম ক্যাটাগরির সদস্যের মাসিক চাঁদার হার বেশি থাকতো; বিনিময়ে তিনি এক সাথে তিনখানা যে কোন ধরনের বই লাইব্রেরি থেকে ইস্যু করিয়ে বাড়ি নিতে পারতেন নির্দিষ্ট সময় পর ফেরত দেওয়ার শর্তে; দ্বিতীয় ক্যাটাগরি দুইখানা এবং তৃতীয় ক্যাটাগরিতে নিতে পারতেন একখানা বই। স্থায়ী সদস্য হতে ৫০০ টাকা এককালীন দিতে হতো। এই সদস্যরা বেশি বই নিতে পারতেন। তবে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সব ক্যাটাগরির সদস্য-সদস্যাই চাঁদা পরিশোধ থাকলে ভোটার হতে ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন।

বহু বছর আগে নির্মিত হওয়ায় লাইব্রেরির দালানটি ভগ্নদশা পেলে জনৈক এমপি আজ থেকে ২০-২৫ বছর পূর্বে একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিল্পপতিকে দালানটি পুনঃনির্মাণের অনুরোধ জানালে তিনি তার ছোট ছেলেকে কাজটি করে দেওয়ার দায়িত্ব দেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে দালানটি বহুতল বিশিষ্ট করে লাইব্রেরির গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে শুধুমাত্র স্থায়ী সদস্যরাই ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন এমন বিধান করা হলো। আর স্থায়ী সদস্য হতে এককালীন এক লাখ টাকা চাঁদার বিধানও করা হলো। একই সাথে গঠনতন্ত্রে ওি পরিবর্তনের মুখে তাদের কারখানার অনেককে স্থায়ী সদস্য করা হলো ৫০০ টাকা এককালীন চাঁদার বিনিময়ে।

ফলে লাইব্রেরির পরিচালনা কমিটি চলে গেল ওই ছোট ছেলেটির পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। তিনি অঘোষিতভাবে স্থায়ী সভাপতি হয়ে গেলেন এবং কমিটিও নির্বাচিত হয় তার মতানুযায়ী। ফলে অতীতের বিজ্ঞ ও লাইব্রেরির অনুষ্ঠানাদির পরিচালক সদস্যরা স্থায়ীভাবেই লাইব্রেরির প্রতি আগ্রহ হারালেন।

পাবনাতে একটি বিখ্যাত নাট্যমঞ্চ আছে, যার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বনওয়ারীনগর তাড়াশের জমিদার রায় বনমালী রায় বাহাদুর। মঞ্চটি নির্মিত হয়েছিলো টিনের ছাদবিশিষ্ট বিশাল এক দালান ঘরে। সেখানে উপর-নিচ দিয়ে ৭০০-৮০০ লোক আসন গ্রহণ করতে পারতেন। এ প্রতিষ্ঠানের নাম বনমালী ইনস্টিটিউট। বহু নাটক এখানে মঞ্চস্থ হতো স্থানীয় ও বহিরাগত নাট্য সংগঠনগুলোর দ্বারা। শতবর্ষ পেরিয়ে যাওয়ায় এটিরও ভগ্নদশাপ্রাপ্ত হয়। তত্ত্বাবধায় সরকার ২০০৬-০৭ সালে এটি পুনঃনির্মাণের জন্য কয়েক কোটি টাকা মঞ্জুর করেন। নির্মাণ কাজ যতারীতি শুরু হয় কিন্তু এক পর্যায়ে বাড়তি কিছু টাকার প্রয়োজন হওয়ায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক (যিনি পদাধিকার বলে সভাপতি ছিলেন) ওই শিল্পপতির সন্তানকে অনুরোধ জানালে তিনি আরও কতিপয় ধনাঢ্য ব্যক্তির সহায়তায় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়ে তা সমাপ্ত করেন। ইতোমধ্যে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে পদাধিকার বলে কারও সভাপতি সহ-সভাপতি থাকার পুরাতন বিধান বাতিল করা হয় এবং তিনি ঐ প্রতিষ্ঠানেরও স্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত হন ও তার মনোনীত ব্যক্তিরা নানা পদে নির্বাচিত হন। একটি সাধারণ সভা ডেকে তার ইচ্ছানুযায়ী ‘বনমালী ইনস্টিটিউট’ এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বনমালী শিল্প কেন্দ্র’। বনমালী ইনস্টিটিউট নামের যে গৌরবান্বিত ইতিহাস ছিল তা অঘোষিতভাবে অবলুপ্ত হয়।

শত সহস্র গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা ও ইতিহাসের ধারক পাবনা টাউন হল। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজী সুভাষ বসুর ভাই শরৎ বসু, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কমরেড মনি সিং, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, বেগম সেলিনা বানু, পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য প্রমুখ জাতীয় ও বরণীয় নেতারা ভাষণ দিয়েছেন। স্থানীয় ছাত্র যুব নেতারাও এখানে ভাষণ দিতেন। এখানেই প্রথম ’৭১-এর মার্চে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এক কথায় পাবনা টাউন হলই ছিল পাবনার গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল সূতিকাগার।

পৌর কর্তৃপক্ষ এটির দৈন্যদশা দূর করার জন্য শিল্পপতির শরণাপন্ন হলেন। তিনি সেই দায়িত্ব নিয়ে টাউন হল ভেঙে চূরমার করে দিয়ে তার কোন চিহ্ন না রেখে চতুর্দিকে প্রাচীর ও দক্ষিণদিকে বিশাল একটা মঞ্চ নির্মাণ করে নাম রাখলেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম স্বাধীনতা চত্বর’। বিদায় দেওয়া হলো শত শত বছরের গৌরবের ইতিহাসকে।

এ কর্মকা-গুলোকে কেন্দ্র করে সর্বস্তরের মানুষের মনে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। কিন্তু শিল্পপতির অসংখ্য স্তাবক তাকে তা জানতে দেয়নি। ক্ষোভ চাপা থাকায় তিনি তা জানতেও পারেননি। অপ্রকাশ্যে শিল্পপতিটির নাম হয়ে দাঁড়ায় দখলদার শিল্পপতি। তার কারখানার স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়নও নেই, যেটি আছে সেটি মালিক নিয়ন্ত্রিত, মালিক মনোনীত।

বিগত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পাবনা পৌর নির্বাচনে তিনি কেন্দ্র থেকে মেয়র পদে এই ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন এনে দেন নৌকা প্রতীকে। মানুষের ক্ষোভ এই নির্বাচনে ফেটে পড়ল। নির্বাচনও হলো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। ক্ষোভ এতই যে, ওই মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ভোটে পরাজিত হলেন।

এভাবেই পাবনার মানুষ নতুন করে জানান দিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘ইতিহাস কথা কয়’। বিজয়ী হন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এক নেতা হিসেবে ভিন্ন প্রতীকে।

[লেখক : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ]

raneshmaitra@gmail.com