শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি, শিক্ষকদের টিকা নেয়ার নির্দেশ 

যেকোনো সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এজন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্রুত করোনার টিকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কথা জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেছেন, ‘শিক্ষকদের টিকা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আমরা যেকোন সময়.... আজ থেকে সাতদিনের মধ্যে টিকা দেয়া শেষ করব।’ প্রতিমন্ত্রী গতকাল সকালে সচিবালয় ক্লিনিকে করোনার টিকা নেয়ার পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

স্কুল-কলেজ খুলে দিতে প্রস্তুত মাউশি

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শীত মৌসুমও বিদায় নিচ্ছে। এই অবস্থান টিকাদান কর্মসূচিতেও ভালো সাড়া মিলেছে। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে মার্চের প্রথম দিকেই দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কলেজ ও প্রশাসন পরিচালক প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী গতকাল সংবাদকে জানান, স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা তারা পাননি। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাণবন্ত করা অর্থাৎ শ্রেণী কার্যক্রম ফেরাতে তাদের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে।

যেকোন সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য মাউশি’র প্রস্তুতি রয়েছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম যেন সবাই ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রাখেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিতে ৩২ পৃষ্ঠার একটি ‘গাইডলাইন’ প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠিয়েছি। আমাদের সব প্রতিষ্ঠানেই এখন শ্রেণী কার্যক্রমের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে।’

সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে জানিয়ে শাহেদুল কবির চৌধুরী আরও বলেন, ‘করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এগুলোর অবকাঠামো কেমন রয়েছে, চেয়ার-টেবিল ও শ্রেণীকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান... সবকিছুই বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। সবার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। যাতে সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গেই স্কুলগুলো খুলে দেয়া যায়।’

মাউশি’র অধীনে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার সরকারি ও বেসরকারি নি¤œমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ সিন্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে। করোনায় প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর পর্যন্ত প্রায় পৌনে চার কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের টিকা নেয়ার আহ্বান গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর

এক প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) গতকাল এবং এর আগেও আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন, ‘তোমার সব শিক্ষককে টিকা দিয়ে নাও, আমরা যেকোন সময় স্কুল খুলে দেব, যাতে আমার কোন শিক্ষক আওতার বাইরে না থাকে।’

দেশে বর্তমানে ৬৩ হাজার ৮৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক আছেন। করোনার টিকা নেয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হলো, আমরা অন্যান্য যে ইনজেকশন নেই তার চেয়ে আমার কাছে অনেক আরামদায়ক মনে হলো। আমাদের সচিবসহ সবাই নিয়েছেন। তাদের কোনরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আমার এলাকায়ও নিয়েছেন।’

শিক্ষকদের সবাইকে টিকা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার শিক্ষকদের, যারা টিকার আওতায় পড়বেন, চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের সবাইকে টিকা নেয়ার জন্য করছি। শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই যেন যথাসময়ে টিকা নিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এগিয়ে আসেন। আর মাস্ক ব্যবহার করতে হবে সবাইকে।’

বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৭ মাঘ ১৪২৭, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি, শিক্ষকদের টিকা নেয়ার নির্দেশ 

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

যেকোনো সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এজন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্রুত করোনার টিকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কথা জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেছেন, ‘শিক্ষকদের টিকা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আমরা যেকোন সময়.... আজ থেকে সাতদিনের মধ্যে টিকা দেয়া শেষ করব।’ প্রতিমন্ত্রী গতকাল সকালে সচিবালয় ক্লিনিকে করোনার টিকা নেয়ার পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

স্কুল-কলেজ খুলে দিতে প্রস্তুত মাউশি

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শীত মৌসুমও বিদায় নিচ্ছে। এই অবস্থান টিকাদান কর্মসূচিতেও ভালো সাড়া মিলেছে। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে মার্চের প্রথম দিকেই দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কলেজ ও প্রশাসন পরিচালক প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী গতকাল সংবাদকে জানান, স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা তারা পাননি। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাণবন্ত করা অর্থাৎ শ্রেণী কার্যক্রম ফেরাতে তাদের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে।

যেকোন সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য মাউশি’র প্রস্তুতি রয়েছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম যেন সবাই ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রাখেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিতে ৩২ পৃষ্ঠার একটি ‘গাইডলাইন’ প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠিয়েছি। আমাদের সব প্রতিষ্ঠানেই এখন শ্রেণী কার্যক্রমের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে।’

সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে জানিয়ে শাহেদুল কবির চৌধুরী আরও বলেন, ‘করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এগুলোর অবকাঠামো কেমন রয়েছে, চেয়ার-টেবিল ও শ্রেণীকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান... সবকিছুই বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। সবার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। যাতে সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গেই স্কুলগুলো খুলে দেয়া যায়।’

মাউশি’র অধীনে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার সরকারি ও বেসরকারি নি¤œমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ সিন্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে। করোনায় প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর পর্যন্ত প্রায় পৌনে চার কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের টিকা নেয়ার আহ্বান গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর

এক প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) গতকাল এবং এর আগেও আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন, ‘তোমার সব শিক্ষককে টিকা দিয়ে নাও, আমরা যেকোন সময় স্কুল খুলে দেব, যাতে আমার কোন শিক্ষক আওতার বাইরে না থাকে।’

দেশে বর্তমানে ৬৩ হাজার ৮৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক আছেন। করোনার টিকা নেয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হলো, আমরা অন্যান্য যে ইনজেকশন নেই তার চেয়ে আমার কাছে অনেক আরামদায়ক মনে হলো। আমাদের সচিবসহ সবাই নিয়েছেন। তাদের কোনরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আমার এলাকায়ও নিয়েছেন।’

শিক্ষকদের সবাইকে টিকা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার শিক্ষকদের, যারা টিকার আওতায় পড়বেন, চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের সবাইকে টিকা নেয়ার জন্য করছি। শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই যেন যথাসময়ে টিকা নিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এগিয়ে আসেন। আর মাস্ক ব্যবহার করতে হবে সবাইকে।’