কবে খুলবে রহস্যের জট

৭৮ বার পিছিয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ 

সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আর একদিন পর। এ দীর্ঘ সময়েও হত্যারহস্যের জট খোলেনি। একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন। বদলায়নি মামলার তদন্তের গতি। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দকৃত আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের পর্যায়েই আটকে আছে তদন্ত। ৭৮ বার পেছানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। যদিও র‌্যাবের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো দাবি করা হচ্ছে, মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতোই কোনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি। নিহতদের স্বজন বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে। হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, রহস্যের জট খুলবে আর কবে।

মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, হত্যার পর থেকে এখন পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা কোনো অগ্রগতির তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি।

রোমান আরও বলেন, ঘটনার পর তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘন্টার সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। অবশ্যই তিনি কনক্রিট কিছুর উপর ভিত্তি করে ওই সময় নিয়েছিলেন। যেটা ধাপাচাপা পড়ে গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা যিনিই আসছেন, আদালত থেকে বার বার সময় নিচ্ছেন। ৯ বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই, আর কবে হবে। কোনো অগ্রগতি হবে না। আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু এতটুকু বলতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে কাজ করছেন না। আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিবছর তারা নিয়ম মাফিকভাবে বলে আসছেন, দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতও যেখানে বার বার সময় দিচ্ছেন, সেখানে আমাদের আর কি বলার আছে! তবে, জট খোলার চেষ্টা না করলে জট খুলবে না, এটাই স্বাভাবিক।

মামলার অগ্রগতির বিষয়ে মন্তব্য করবে রাজি হননি তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিকুল আলম। পরে জানতে চাইলে র‌্যাব সদরদপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা অন্যতম একটি স্পর্শকাতর ঘটনা। আমরা অভিজ্ঞ কর্মকর্তা দিয়ে মামলাটির তদন্ত করিয়ে আসছি। ইতিমধ্যে বেশকিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। যা যথাসময়ে যথাযথ উপায়ে উপস্থাপন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, পুরো বিষয়টি বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে। এ অবস্থায় অগ্রগতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরের দিন রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। তবে এর দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় র‌্যাবকে। সেই থেকে ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।

বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৭ মাঘ ১৪২৭, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

কবে খুলবে রহস্যের জট

৭৮ বার পিছিয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ 

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আর একদিন পর। এ দীর্ঘ সময়েও হত্যারহস্যের জট খোলেনি। একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন। বদলায়নি মামলার তদন্তের গতি। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দকৃত আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের পর্যায়েই আটকে আছে তদন্ত। ৭৮ বার পেছানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। যদিও র‌্যাবের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো দাবি করা হচ্ছে, মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতোই কোনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি। নিহতদের স্বজন বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে। হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, রহস্যের জট খুলবে আর কবে।

মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, হত্যার পর থেকে এখন পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা কোনো অগ্রগতির তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি।

রোমান আরও বলেন, ঘটনার পর তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘন্টার সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। অবশ্যই তিনি কনক্রিট কিছুর উপর ভিত্তি করে ওই সময় নিয়েছিলেন। যেটা ধাপাচাপা পড়ে গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা যিনিই আসছেন, আদালত থেকে বার বার সময় নিচ্ছেন। ৯ বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই, আর কবে হবে। কোনো অগ্রগতি হবে না। আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু এতটুকু বলতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে কাজ করছেন না। আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিবছর তারা নিয়ম মাফিকভাবে বলে আসছেন, দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতও যেখানে বার বার সময় দিচ্ছেন, সেখানে আমাদের আর কি বলার আছে! তবে, জট খোলার চেষ্টা না করলে জট খুলবে না, এটাই স্বাভাবিক।

মামলার অগ্রগতির বিষয়ে মন্তব্য করবে রাজি হননি তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিকুল আলম। পরে জানতে চাইলে র‌্যাব সদরদপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা অন্যতম একটি স্পর্শকাতর ঘটনা। আমরা অভিজ্ঞ কর্মকর্তা দিয়ে মামলাটির তদন্ত করিয়ে আসছি। ইতিমধ্যে বেশকিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। যা যথাসময়ে যথাযথ উপায়ে উপস্থাপন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, পুরো বিষয়টি বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে। এ অবস্থায় অগ্রগতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরের দিন রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। তবে এর দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় র‌্যাবকে। সেই থেকে ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।