অপরাধে জড়িয়ে দণ্ডিত সিএমপির ৫০ পুলিশ 

নানা অপরাধ জড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সদস্যরা। কখনও মাদক বেচাকেনায়, কখনও অস্ত্র বেচাকেনায় আবার কখনও সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়, সবই করছেন এসব পুলিশ সদস্যরা। গত এক বছরেই অপরাধে জড়িয়ে চাকরিচ্যুতসহ শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন অন্তত ৫০ সদস্য। তবে ঘটনা প্রকাশ্যে এলে শাস্তির মুখোমুখি হন হাতেগোনা কয়েক জন। বাকিরা পার পেয়ে যান বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমেই। ফলে নিয়মিত বিরতিতেই অপরাধে জড়াচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার শপথ নিয়ে পুলিশে আসা সদস্যরা।

মূলত রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে অনেকেই নানাভাবে দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে, আবার অনেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে বেপরোয়া হয়ে নানা অপরাধ করছে? রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ, পোস্টিং ও পদোন্নতির কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু গত এক বছরেই নিজেদের তদন্তে অপরাধে জড়িত প্রমাণিত হওয়ায় চাকরিচ্যুতসহ শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন অন্তত ৫০ সদস্য। এর মধ্যে স্থায়ীভাবে চাকরি হারিয়েছেন ১০ জন আর গুরুদণ্ড পেয়েছেন আরও ৪০ সদস্য। তবে এসব অপরাধে জড়িতদের র‌্যাংক কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টরেই সীমাবদ্ধ। ৫০ জনের কেউই নেই সিনিয়র পদে।

এক হিসেবে দেখা গেছে, প্রতিমাসে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে মাসে দশটির বেশি অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। অনেকে সাহস করে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও বেশিরভাগই ভয়ে সেই পথে পা মাড়ায় না। এসবের মধ্যে কয়েকটির সত্যতা মিললেও বেশিরভাগই অভিযোগকারীর সঙ্গে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আপোষ হয়ে যায়।

এদিকে গত রোববার আনোয়ারা থানার এক ব্যক্তিকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ডিবি পরিচয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা আদায়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ছয় সদস্য। তারা হলেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের বডিগার্ড মোরশেদ বিল্লাহ, নগর পুলিশের উপ-কমিশনার গোয়েন্দা (পশ্চিম ও বন্দর) মনজুর মোরশেদের বডিগার্ড মো. মাসুদ, দামপাড়া রিজার্ভ ফোর্স অফিসে কর্মরত শাকিল খান ও এস্কান্দর হোসেন, সিএমপির সহকারী কমিশনার কর্ণফুলী কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর মনিরুল ইসলাম ও ডিবিতে (উত্তর) কর্মরত আবদুল নবী। তারা সবাই কনস্টেবল পদে কর্মরত। পরে তাদের চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ছয় পুলিশ সদস্যকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় ছয়জনকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালত।

এর আগে গত বছরের ১৬ জুলাই রাতে নগরের আগ্রাবাদ বাদামতলী বড় মসজিদ গলিতে যান এসআই হেলাল খান। সেখানে দশম শ্রেণীপড়ুয়া কিশোর সালমান ইসলাম ওরফে মারুফের সঙ্গে সোর্সসহ পুলিশ কর্মকর্তার কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তারা। সালমানের পরিবারের দাবি, টাকার জন্য এসেছিলেন এসআই হেলাল। এক লাখ টাকা দাবি করেন। না হলে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। ভয়ে তারা ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। এর মধ্যে সালমানের মা-বোনের সঙ্গেও পুলিশ ও সোর্স ধস্তাধস্তি শুররু করেন। তাতে সালমানের বোন অচেতন হয়ে পড়েন। এ সময় তারা সালমানের বোন ও মাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এতে সালমানের ধারণা হয়, পুলিশ তার মা ও বোনকে থানায় নিয়ে গেছে। পরিবারের অভিযোগ, এতে ক্ষোভে সালমান বাসায় আত্মহত্যা করে। এ ঘটনার সত্যতা পেয়ে এসআই হেলাল খানকে বরখাস্ত করে চাকরিচ্যুত করা হয়। এছাড়া গতবছরের ২৫ ডিসেম্বর অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) সৌরভ বড়ুয়াকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের সামনে থেকে ওই দিন তাকে গ্রেপ্তার করা মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়। তার কাছ থেকে বিদেশি রিভলবার উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বরখাস্ত হয়ে তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। সৌরভ চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশে কর্মরত ছিলেন। ওই ঘটনার এক দিন আগে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে করা মামলায় সীতাকুণ্ড থানার এসআই সাইফুল ইসলাম ও কনস্টেবল সাইফুল ইসলামকে কারাগারে পাঠান আদালত।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, আমরা পর্যবেক্ষণে দেখতে পাই, এখন এমন কোন অপরাধ নেই যাতে পুলিশ জড়িয়ে পড়ছে না। এটার ব্যাপ্তি খুব গভীর, বিস্তৃত এবং সব পর্যায়ে। কেউ কেউ যেমন সততার দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছেন, তাদের সংখ্যা কম আবার অবস্থানও দুর্বল হয়ে আসছে। ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, একদিকে যেমন ব্যক্তিগতভাবে নৈতিক অবক্ষয়ের ঘটনা আছে। অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহার করার যে প্রবণতা, সেখান থেকেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। দুর্নীতি এত বিস্তৃৃত হওয়ার কারণ এর সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ। এর ফলে যেমন অনেকে জবাবদিহিতার বাইরে থাকার সুযোগ পান। আবার অনেকে রাজনীতিকে উদ্দেশ্য সাধনে বাধ্য হওয়ার পর নিজেও ব্যক্তিগতভাবে অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে অর্থ উপার্জনের পথ ধরছেন।

সিএমপির উপ-কমিশনার (সদর) আমীর জাফর জানিয়েছেন, অপরাধ করে কোন পুলিশ সদস্যই পার পেয়েছে এরকম নজির নেই। আমাদের নজরে এলেই তা তদন্ত করে আইনমত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত ২০২০ সালে সিএমপির ৫০ সদস্য শাস্তির আওতায় আসছে। এদের মধ্যে দশ সদস্য চাকরিচ্যুত হয়েছে আর ৪০ জন গুরুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে। তাদের অনেকের পদাবনতি করা হয়েছে, কারও বেতনবৃদ্ধি রহিত করা হয়েছে, আবার কারও সার্ভিসবুকে ব্ল্যাক পয়েন্ট দেয়া হয়েছে। তিনি আর বলেন, আমাদের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসা মাত্রই আমরা কিন্তু তাদের শাস্তি নিশ্চিত করছি? কারো কারো ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা হচ্ছে, আবার কারো ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলাও দেয়া হচ্ছে? আমরা শাস্তির মাধ্যমে তাদের বোঝাতে চাই, অপরাধ করলে পার পাওয়া যাবে না?

জানা গেছে, গত বছর থেকে শুরু হওয়া ডোপ টেস্ট করানো হয় ৫৭ জনকে। এরমধ্যে ৭ জনের পজেটিভ আসায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৭ মাঘ ১৪২৭, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

অপরাধে জড়িয়ে দণ্ডিত সিএমপির ৫০ পুলিশ 

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম

নানা অপরাধ জড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সদস্যরা। কখনও মাদক বেচাকেনায়, কখনও অস্ত্র বেচাকেনায় আবার কখনও সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়, সবই করছেন এসব পুলিশ সদস্যরা। গত এক বছরেই অপরাধে জড়িয়ে চাকরিচ্যুতসহ শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন অন্তত ৫০ সদস্য। তবে ঘটনা প্রকাশ্যে এলে শাস্তির মুখোমুখি হন হাতেগোনা কয়েক জন। বাকিরা পার পেয়ে যান বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমেই। ফলে নিয়মিত বিরতিতেই অপরাধে জড়াচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার শপথ নিয়ে পুলিশে আসা সদস্যরা।

মূলত রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে অনেকেই নানাভাবে দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে, আবার অনেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে বেপরোয়া হয়ে নানা অপরাধ করছে? রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ, পোস্টিং ও পদোন্নতির কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু গত এক বছরেই নিজেদের তদন্তে অপরাধে জড়িত প্রমাণিত হওয়ায় চাকরিচ্যুতসহ শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন অন্তত ৫০ সদস্য। এর মধ্যে স্থায়ীভাবে চাকরি হারিয়েছেন ১০ জন আর গুরুদণ্ড পেয়েছেন আরও ৪০ সদস্য। তবে এসব অপরাধে জড়িতদের র‌্যাংক কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টরেই সীমাবদ্ধ। ৫০ জনের কেউই নেই সিনিয়র পদে।

এক হিসেবে দেখা গেছে, প্রতিমাসে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে মাসে দশটির বেশি অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। অনেকে সাহস করে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও বেশিরভাগই ভয়ে সেই পথে পা মাড়ায় না। এসবের মধ্যে কয়েকটির সত্যতা মিললেও বেশিরভাগই অভিযোগকারীর সঙ্গে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আপোষ হয়ে যায়।

এদিকে গত রোববার আনোয়ারা থানার এক ব্যক্তিকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ডিবি পরিচয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা আদায়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ছয় সদস্য। তারা হলেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের বডিগার্ড মোরশেদ বিল্লাহ, নগর পুলিশের উপ-কমিশনার গোয়েন্দা (পশ্চিম ও বন্দর) মনজুর মোরশেদের বডিগার্ড মো. মাসুদ, দামপাড়া রিজার্ভ ফোর্স অফিসে কর্মরত শাকিল খান ও এস্কান্দর হোসেন, সিএমপির সহকারী কমিশনার কর্ণফুলী কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর মনিরুল ইসলাম ও ডিবিতে (উত্তর) কর্মরত আবদুল নবী। তারা সবাই কনস্টেবল পদে কর্মরত। পরে তাদের চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ছয় পুলিশ সদস্যকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় ছয়জনকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালত।

এর আগে গত বছরের ১৬ জুলাই রাতে নগরের আগ্রাবাদ বাদামতলী বড় মসজিদ গলিতে যান এসআই হেলাল খান। সেখানে দশম শ্রেণীপড়ুয়া কিশোর সালমান ইসলাম ওরফে মারুফের সঙ্গে সোর্সসহ পুলিশ কর্মকর্তার কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তারা। সালমানের পরিবারের দাবি, টাকার জন্য এসেছিলেন এসআই হেলাল। এক লাখ টাকা দাবি করেন। না হলে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। ভয়ে তারা ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। এর মধ্যে সালমানের মা-বোনের সঙ্গেও পুলিশ ও সোর্স ধস্তাধস্তি শুররু করেন। তাতে সালমানের বোন অচেতন হয়ে পড়েন। এ সময় তারা সালমানের বোন ও মাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এতে সালমানের ধারণা হয়, পুলিশ তার মা ও বোনকে থানায় নিয়ে গেছে। পরিবারের অভিযোগ, এতে ক্ষোভে সালমান বাসায় আত্মহত্যা করে। এ ঘটনার সত্যতা পেয়ে এসআই হেলাল খানকে বরখাস্ত করে চাকরিচ্যুত করা হয়। এছাড়া গতবছরের ২৫ ডিসেম্বর অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) সৌরভ বড়ুয়াকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের সামনে থেকে ওই দিন তাকে গ্রেপ্তার করা মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়। তার কাছ থেকে বিদেশি রিভলবার উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বরখাস্ত হয়ে তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। সৌরভ চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশে কর্মরত ছিলেন। ওই ঘটনার এক দিন আগে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে করা মামলায় সীতাকুণ্ড থানার এসআই সাইফুল ইসলাম ও কনস্টেবল সাইফুল ইসলামকে কারাগারে পাঠান আদালত।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, আমরা পর্যবেক্ষণে দেখতে পাই, এখন এমন কোন অপরাধ নেই যাতে পুলিশ জড়িয়ে পড়ছে না। এটার ব্যাপ্তি খুব গভীর, বিস্তৃত এবং সব পর্যায়ে। কেউ কেউ যেমন সততার দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছেন, তাদের সংখ্যা কম আবার অবস্থানও দুর্বল হয়ে আসছে। ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, একদিকে যেমন ব্যক্তিগতভাবে নৈতিক অবক্ষয়ের ঘটনা আছে। অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহার করার যে প্রবণতা, সেখান থেকেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। দুর্নীতি এত বিস্তৃৃত হওয়ার কারণ এর সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ। এর ফলে যেমন অনেকে জবাবদিহিতার বাইরে থাকার সুযোগ পান। আবার অনেকে রাজনীতিকে উদ্দেশ্য সাধনে বাধ্য হওয়ার পর নিজেও ব্যক্তিগতভাবে অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে অর্থ উপার্জনের পথ ধরছেন।

সিএমপির উপ-কমিশনার (সদর) আমীর জাফর জানিয়েছেন, অপরাধ করে কোন পুলিশ সদস্যই পার পেয়েছে এরকম নজির নেই। আমাদের নজরে এলেই তা তদন্ত করে আইনমত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত ২০২০ সালে সিএমপির ৫০ সদস্য শাস্তির আওতায় আসছে। এদের মধ্যে দশ সদস্য চাকরিচ্যুত হয়েছে আর ৪০ জন গুরুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে। তাদের অনেকের পদাবনতি করা হয়েছে, কারও বেতনবৃদ্ধি রহিত করা হয়েছে, আবার কারও সার্ভিসবুকে ব্ল্যাক পয়েন্ট দেয়া হয়েছে। তিনি আর বলেন, আমাদের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসা মাত্রই আমরা কিন্তু তাদের শাস্তি নিশ্চিত করছি? কারো কারো ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা হচ্ছে, আবার কারো ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলাও দেয়া হচ্ছে? আমরা শাস্তির মাধ্যমে তাদের বোঝাতে চাই, অপরাধ করলে পার পাওয়া যাবে না?

জানা গেছে, গত বছর থেকে শুরু হওয়া ডোপ টেস্ট করানো হয় ৫৭ জনকে। এরমধ্যে ৭ জনের পজেটিভ আসায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।