স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ বদলি যন্ত্রপাতি কেনায় ঘুষ বাণিজ্য

স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও যন্ত্রপাতি কেনায় ঘুষ বাণিজ্য হচ্ছে। ঘুষ লেনদেনের কারণে স্বাস্থ্য খাতের অনেক অর্জনই ম্লান হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাস্থ্য খাতের এ ঘুষ বাণিজ্য প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশ করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিবেদন পেশ করেছে। গত সোমবার এ প্রতিবেদন বই আবারে প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এ রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির উৎস সম্পর্কে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি প্রভৃতিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বিদ্যমান। চিকিৎসকরা সাধারণত প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকতে চায় না। সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি এবং প্রশিক্ষণার্থী বাছাই প্রভৃতিতে কোন নীতিমালা অনুসৃত হয় না। এসব ক্ষেত্রে স্বার্থম্বেষী মহল অর্থ আদায় বা ঘুষ লেনদেন করছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কতিপয় কর্মচারী একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর কর্মরত থাকার সুবাদে স্থানীয় দালাল চক্রের সমন্বয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্রে পরিণত হয়। সাধারণ রোগী বা তাদের স্বজনদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের কাছ থেকে বেআইনিভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকে। সরকারি হাসপাতালের নির্ধারিত ফিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ঝামেলা এড়িয়ে দ্রুত সেবা পাওয়ার আশায় রোগীরা অর্থের বিনিময়ে হাসপাতালের কর্মচারী বা দালালদের শরণাপন্ন হয়ে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ক্রয় কমিটিতে অনেক ক্ষেত্রে নিপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তা সংযুক্ত না থাকায় অতি সহজেই সরকারি টাকা আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ক্রয় বা কেনাকাটা কমিটিতে নজরদারি না থাকায় ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অন্যান্য পণ্য কেনায় দুর্নীতি হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে অনেক অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়। এক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে সরকারি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট চালানোর দক্ষ জনবল নিয়োগ না দিয়ে যন্ত্রপাতি কেনা হয়। যা দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকা অবস্থায় নষ্ট হয়ে যায়। কোথাও কোথাও যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও মেরামত দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে মেরামত করা হয় না বরং সমপরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে। আর গ্রামগঞ্জ থেকে আসা গরিব রোগীদের উন্নত চিকিৎসার লোভ দেখিয়ে পছন্দের প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিয়ে যায়। বিনিময়ে তারা ক্লিনিক থেকে কমিশন পায়। এছাড়া হাসপাতালে সরকারি ওষুধ থাকা সত্ত্বেও রোগীদের দেয়া হয় না। ওই ওষুধ কালোবাজারি হয়ে যায়। এভাবে স্বাস্থ্য খাতে পদে পদে দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। দুদক কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের সব অনিয়ম বন্ধে সরকারের কাছে ২৫ দফা সুপারিশ পেশ করেছেন।

বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৭ মাঘ ১৪২৭, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ বদলি যন্ত্রপাতি কেনায় ঘুষ বাণিজ্য

বাকী বিল্লাহ

স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও যন্ত্রপাতি কেনায় ঘুষ বাণিজ্য হচ্ছে। ঘুষ লেনদেনের কারণে স্বাস্থ্য খাতের অনেক অর্জনই ম্লান হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাস্থ্য খাতের এ ঘুষ বাণিজ্য প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশ করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিবেদন পেশ করেছে। গত সোমবার এ প্রতিবেদন বই আবারে প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এ রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির উৎস সম্পর্কে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি প্রভৃতিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বিদ্যমান। চিকিৎসকরা সাধারণত প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকতে চায় না। সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি এবং প্রশিক্ষণার্থী বাছাই প্রভৃতিতে কোন নীতিমালা অনুসৃত হয় না। এসব ক্ষেত্রে স্বার্থম্বেষী মহল অর্থ আদায় বা ঘুষ লেনদেন করছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কতিপয় কর্মচারী একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর কর্মরত থাকার সুবাদে স্থানীয় দালাল চক্রের সমন্বয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্রে পরিণত হয়। সাধারণ রোগী বা তাদের স্বজনদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের কাছ থেকে বেআইনিভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকে। সরকারি হাসপাতালের নির্ধারিত ফিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ঝামেলা এড়িয়ে দ্রুত সেবা পাওয়ার আশায় রোগীরা অর্থের বিনিময়ে হাসপাতালের কর্মচারী বা দালালদের শরণাপন্ন হয়ে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ক্রয় কমিটিতে অনেক ক্ষেত্রে নিপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তা সংযুক্ত না থাকায় অতি সহজেই সরকারি টাকা আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ক্রয় বা কেনাকাটা কমিটিতে নজরদারি না থাকায় ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অন্যান্য পণ্য কেনায় দুর্নীতি হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে অনেক অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়। এক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে সরকারি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট চালানোর দক্ষ জনবল নিয়োগ না দিয়ে যন্ত্রপাতি কেনা হয়। যা দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকা অবস্থায় নষ্ট হয়ে যায়। কোথাও কোথাও যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও মেরামত দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে মেরামত করা হয় না বরং সমপরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে। আর গ্রামগঞ্জ থেকে আসা গরিব রোগীদের উন্নত চিকিৎসার লোভ দেখিয়ে পছন্দের প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিয়ে যায়। বিনিময়ে তারা ক্লিনিক থেকে কমিশন পায়। এছাড়া হাসপাতালে সরকারি ওষুধ থাকা সত্ত্বেও রোগীদের দেয়া হয় না। ওই ওষুধ কালোবাজারি হয়ে যায়। এভাবে স্বাস্থ্য খাতে পদে পদে দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। দুদক কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের সব অনিয়ম বন্ধে সরকারের কাছে ২৫ দফা সুপারিশ পেশ করেছেন।