ব্যাংক হিসাব থেকে প্রতারণা করে প্রায় দেড় কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়

আঞ্জু কাপুর গ্রেপ্তার

স্বামীর মৃত্যুর কথা গোপন রেখে ব্যাংক হিসাব থেকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রতারণা করে তুলে নেয়ার অভিযোগে আঞ্জু কাপুর (৫৪) নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। গতকাল গুলশানের বাসা থেকে আঞ্জু কাপুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতারণার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড হেফাজত নিয়ে গতকাল তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আঞ্জু কাপুর ভারতীয় নাগরিক হলেও কন্ঠশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের বড় ভাই বৈমানিক মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। মোস্তফা জগলুলের মৃত্যুর পর তার আগের পক্ষের দুই মেয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আলোচনায় আসেন।

সিআইডির পুলিশ সুপার মো. খালিদুল হক হাওলদার জানান, আঞ্জু কাপুর মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। জগলুল ওয়াহিদ ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। জগলুল ওয়াহিদের নামে গুলশান ১ নম্বরে সিটি ব্যাংক শাখায় একটি হিসাব ছিল। জগলুল ওয়াহিদ বেচে থাকাকালে তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী আঞ্জুমান ম্যান্ডেট ক্ষমতায় হিসাবটি পরিচালনা করতেন। এ সুযোগ থাকায় তিনি তার স্বামীর মৃত্যুর কথা গোপন রেখে ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী হিসাবধারী ব্যক্তি মারা গেলে তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে হয়। তখন ওই ব্যক্তির কোন ওয়ারিশ থাকলে হিসাবে থাকা অর্থ কে পাবে তা নির্ধারণ করতে হয়। নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তখন টাকা তুলতে হয়। কিন্তু জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ে ছিল আগের পক্ষের। তাদের বিষয়টি জানানো হয়নি। না জানিয়ে তিনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন।

এ ঘটনায় আগের পক্ষের ২ মেয়ের মধ্যে একজন বাদী হয়ে ১২ ডিসেম্বর গুলশান থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব আদালত থেকে সিআইডিকে দেয়া হয়। সিআইডি প্রাথমিক তদন্ত করে প্রতারণার বিষয়টি সত্য বলে প্রমাণ পায়। এরপর গতকাল সকালে অভিযান চালিয়ে আঞ্জু কাপুরকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।

সিআইডি সূত্র জানায়, আঞ্জুকে বিয়ে করার পর গুলশানের নিজ বাড়িতে থাকতেন জগলুল ওয়াহিদ। তার দুই পক্ষের মেয়ে দেশের বাইরে থাকত। গত ১০ ডিসেম্বর জগলুল ওয়াহিদ মারা যাওয়ার খবরে দুই মেয়ে দেশে ফিরে নিজ বাড়িতে উঠে। কিন্তু আঞ্জু কাপুর ওই বাড়ি তার নিজের দাবি করে দুই মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। করোনার সময় দুই মেয়ের রাস্তায় আশ্রয় হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে হাইকোর্টের নজরে আসে। স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে দুই মেয়েকে তার বাবার বাড়িতে তুলে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়। পরে আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ দুই মেয়েকে বাড়িতে তুলে নেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। এমন পরিস্থিেিত প্রতারণার ঘটনায় মামলা হলে আগের ঘটনা নিয়ে শুনানিতে আদালত প্রতারণার মামলার তদন্তের অগ্রগতির প্রসঙ্গ টানেন। এরপর সিআইডি ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে আদালতকে বিষয়টি অবগত করেন।

সিআইডি জানায়, আঞ্জু কাপুর জগলুল ওয়াহিদের ব্যাংক হিসাবের নমিনি ছিলেন না। ম্যান্ডেট (পরিচালনা) ক্ষমতায় তিনি বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতেন নিজ স্বাক্ষরে। এখণ প্রশ্ন হলো ৫০ হাজার টাকা তুলতে ব্যাংক হিসাবধারীর সঙ্গে ব্যাংক কতৃপক্ষ যোগাযোগ করে। জাতীয় পরিচয়পত্রও দিতে হয়। আঞ্জু কাপুরের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তার পাসপোর্ট ভারতীয়। সে সুবাদে তিনি ভারতীয় নাগরিক। এত টাকা উত্তোলন করা হলেও কেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হিসাবধারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সিআইডি মনে করছে এ জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তার যোগসূত্র থাকতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করবে সিআইডি। প্রয়াত মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ পেশায় একজন বৈমানিক ছিলেন। তিনি প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাই। এদিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চকে অবহিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন (উত্তর) সিআইডির উপপুলিশ পরিদর্শক রাশেদুজ্জামান। আদালতে দুই বোনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে দুই মেয়ের সৎমা আঞ্জু কাপুরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন মাসউদ আর সোবহান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। গতকাল সিআইডি তাকে ৫ দিনের রিমান্ড হেফাজতে চাওয়ার আবেদন করে। কিন্তু আঞ্জু কাপুর সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত থাকায় তাকে রিমান্ড হেফাজতে না দিয়ে জেলে পাঠানোর আদেশ দেন। রিমান্ড শুনানি পরে করা হবে বলে জানিয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৭ মাঘ ১৪২৭, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

স্বামীর মৃত্যুর কথা গোপন রেখে

ব্যাংক হিসাব থেকে প্রতারণা করে প্রায় দেড় কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়

আঞ্জু কাপুর গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

স্বামীর মৃত্যুর কথা গোপন রেখে ব্যাংক হিসাব থেকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রতারণা করে তুলে নেয়ার অভিযোগে আঞ্জু কাপুর (৫৪) নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। গতকাল গুলশানের বাসা থেকে আঞ্জু কাপুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতারণার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড হেফাজত নিয়ে গতকাল তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আঞ্জু কাপুর ভারতীয় নাগরিক হলেও কন্ঠশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের বড় ভাই বৈমানিক মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। মোস্তফা জগলুলের মৃত্যুর পর তার আগের পক্ষের দুই মেয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আলোচনায় আসেন।

সিআইডির পুলিশ সুপার মো. খালিদুল হক হাওলদার জানান, আঞ্জু কাপুর মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। জগলুল ওয়াহিদ ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। জগলুল ওয়াহিদের নামে গুলশান ১ নম্বরে সিটি ব্যাংক শাখায় একটি হিসাব ছিল। জগলুল ওয়াহিদ বেচে থাকাকালে তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী আঞ্জুমান ম্যান্ডেট ক্ষমতায় হিসাবটি পরিচালনা করতেন। এ সুযোগ থাকায় তিনি তার স্বামীর মৃত্যুর কথা গোপন রেখে ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী হিসাবধারী ব্যক্তি মারা গেলে তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে হয়। তখন ওই ব্যক্তির কোন ওয়ারিশ থাকলে হিসাবে থাকা অর্থ কে পাবে তা নির্ধারণ করতে হয়। নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তখন টাকা তুলতে হয়। কিন্তু জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ে ছিল আগের পক্ষের। তাদের বিষয়টি জানানো হয়নি। না জানিয়ে তিনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন।

এ ঘটনায় আগের পক্ষের ২ মেয়ের মধ্যে একজন বাদী হয়ে ১২ ডিসেম্বর গুলশান থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব আদালত থেকে সিআইডিকে দেয়া হয়। সিআইডি প্রাথমিক তদন্ত করে প্রতারণার বিষয়টি সত্য বলে প্রমাণ পায়। এরপর গতকাল সকালে অভিযান চালিয়ে আঞ্জু কাপুরকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।

সিআইডি সূত্র জানায়, আঞ্জুকে বিয়ে করার পর গুলশানের নিজ বাড়িতে থাকতেন জগলুল ওয়াহিদ। তার দুই পক্ষের মেয়ে দেশের বাইরে থাকত। গত ১০ ডিসেম্বর জগলুল ওয়াহিদ মারা যাওয়ার খবরে দুই মেয়ে দেশে ফিরে নিজ বাড়িতে উঠে। কিন্তু আঞ্জু কাপুর ওই বাড়ি তার নিজের দাবি করে দুই মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। করোনার সময় দুই মেয়ের রাস্তায় আশ্রয় হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে হাইকোর্টের নজরে আসে। স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে দুই মেয়েকে তার বাবার বাড়িতে তুলে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়। পরে আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ দুই মেয়েকে বাড়িতে তুলে নেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। এমন পরিস্থিেিত প্রতারণার ঘটনায় মামলা হলে আগের ঘটনা নিয়ে শুনানিতে আদালত প্রতারণার মামলার তদন্তের অগ্রগতির প্রসঙ্গ টানেন। এরপর সিআইডি ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে আদালতকে বিষয়টি অবগত করেন।

সিআইডি জানায়, আঞ্জু কাপুর জগলুল ওয়াহিদের ব্যাংক হিসাবের নমিনি ছিলেন না। ম্যান্ডেট (পরিচালনা) ক্ষমতায় তিনি বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতেন নিজ স্বাক্ষরে। এখণ প্রশ্ন হলো ৫০ হাজার টাকা তুলতে ব্যাংক হিসাবধারীর সঙ্গে ব্যাংক কতৃপক্ষ যোগাযোগ করে। জাতীয় পরিচয়পত্রও দিতে হয়। আঞ্জু কাপুরের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তার পাসপোর্ট ভারতীয়। সে সুবাদে তিনি ভারতীয় নাগরিক। এত টাকা উত্তোলন করা হলেও কেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হিসাবধারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সিআইডি মনে করছে এ জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তার যোগসূত্র থাকতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করবে সিআইডি। প্রয়াত মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ পেশায় একজন বৈমানিক ছিলেন। তিনি প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাই। এদিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চকে অবহিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন (উত্তর) সিআইডির উপপুলিশ পরিদর্শক রাশেদুজ্জামান। আদালতে দুই বোনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে দুই মেয়ের সৎমা আঞ্জু কাপুরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন মাসউদ আর সোবহান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। গতকাল সিআইডি তাকে ৫ দিনের রিমান্ড হেফাজতে চাওয়ার আবেদন করে। কিন্তু আঞ্জু কাপুর সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত থাকায় তাকে রিমান্ড হেফাজতে না দিয়ে জেলে পাঠানোর আদেশ দেন। রিমান্ড শুনানি পরে করা হবে বলে জানিয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।