ওষুধ ক্রয়ের দরপত্রের ঠিকাদার বাছাই করা হয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে

টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম আর একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। আর এতে করে এই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা দিন দিন ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। এছাড়া প্রতিবছর এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে বিভিন্ন কাজ করিয়ে নেয়া হচ্ছে। বিনিময়ে সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঠিকাদারের কাছ থেকে পাচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। এতে করে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে এই টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের খাতে।

এদিকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে এমএসআর সরবরাহের দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। কয়েকজন এমএসআর ঠিকাদার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিয়নায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মেসার্স শামছুল হক ফার্মেসির প্রোপ্রাইটর আমিনুর রহমান শাহীন, মেসার্স সাইদ মেডিকেল হলের প্রোপ্রাইটর আবু সাঈদ চৌধুরী ও মেসার্স প্রান্তিক এন্টারপ্রাইজের পরিচালক আবদুল্লাহ আলম মাসুদ।

তবে প্রতিবছর যে টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয় সেই অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করলে টাঙ্গাইল জেলাবাসীর চিকিৎসার জন্য যতেষ্ট বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তারা জানান, প্রথমে দরপত্রের পুরো টাকাই সিন্ডকেটের মাধ্যমে ভাগবাটোয়ারা করা হয়। পরে আবার আহ্বানকৃত দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় পুনরায় আবার বরাদ্দ এনে তার অর্ধেক কাজ করা হয়। এবারও ২০২০-২০২১ অর্থবছরের এমএসআর (মেডিকেল ও সার্জিক্যাল রিইকুইজিট) সামগ্রী ক্রয় করতে ওষুধপত্র, লিলেন, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, গজ ব্যান্ডেজ কটন, কেমিকেল রি-এজেন্ট এবং আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য ৬টি গ্রুপে দরপত্র আহ্বান করে। এই দরপত্রে টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্যে প্রান্তিক এন্টারপ্রাইজ, লোটাস সার্জিকাল এবং শামছুল হক ফার্মেসিসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অন্যান্য সব দরপত্র বাতিল করে হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ও ঠিকাদারের যোগসাজসে নিজেদের পছন্দমত ঠিকাদার রাফি ও সাফি মেডিকেল হক, জুয়াইরিয়া ইন্টারন্যাশনাল, ফারুক ট্রেডার্স ও মক্কা ট্রেডার্সকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে প্রস্তাব প্রেরণ করে।

যা আইনসঙ্গত হয়নি। এর আগে গত ২০১৯-২০২০ এই তিন প্রতিষ্ঠান টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে মালামাল সরবরাহে কাজ করে।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৮ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৬ বিধি ভঙ্গ করে অজ্ঞাত কারণে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা।

এ ঘটনায় তিন ভুক্তভোগী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালকের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতেই নজরে আসে কর্তৃপক্ষের। পরবর্তীতে টাঙ্গাইল থেকে পাঠানো পছন্দের ঠিকাদারের সব কাগজপত্র ফেরত পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়ার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা এবং একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তার সঙ্গে এক কোটি টাকা চুক্তি করা হয়। সে মোতাবেক নগদ টাকা, চেকের মাধ্যমে এবং অগ্রীম চেক প্রদান করা হয়। কিন্তু অন্যান্য ঠিকাদারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পছন্দের পাঁচ ঠিকাদারের কাগজপত্র ফেরত পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে করেই বেকায়দায় পড়ে যান ওই পাঁচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

এ ব্যাপারে প্রান্তিক এন্টারপ্রাইজ প্রোপাইটর কাজী আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি শিডিউলে উল্লেখিত সব শর্তাবলী পূরণ করে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন। তার সব কাগজপত্র বৈধ, কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই যাচাই বাছাইয়ে শিডিউল বাতিল করা হয়। যা আইনসঙ্গত হয়নি। তিনি আরো জানান, বারবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিলেও তা তারা গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে ডাকের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হলেও তাও ফেরত দেয়া হয়েছে। এ কারণে এর প্রতিকার চেয়ে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহপরিচালকের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তার দাবি সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ কিংবা নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হোক।

এ বিষয়ে শামছুল হক এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর আমিনুর রহমান শাহীন জানান, এই দরপত্র আহবানে ১৯টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেন। তার শিডিউলে যাবতীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে বাতিল করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) শফিকুল ইসলাম সজিব জানান, এ বিষয়ে কোন মন্তব্য মোবাইল ফোনে করতে রাজি নন। তবে তিনি কোন কিছু জানার থাকলে তার সঙ্গে অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলেন।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. সদর উদ্দিন জানান, টেন্ডারের যাচাই বাছাইয়ে কোন অনিয়ম হয়নি। তবে ঢাকা থেকে প্রেরণ করা ফাইল ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তিনি জানেন না।

বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৭ মাঘ ১৪২৭, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে

ওষুধ ক্রয়ের দরপত্রের ঠিকাদার বাছাই করা হয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে

জেলা বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম আর একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। আর এতে করে এই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা দিন দিন ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। এছাড়া প্রতিবছর এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে বিভিন্ন কাজ করিয়ে নেয়া হচ্ছে। বিনিময়ে সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঠিকাদারের কাছ থেকে পাচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। এতে করে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে এই টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের খাতে।

এদিকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে এমএসআর সরবরাহের দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। কয়েকজন এমএসআর ঠিকাদার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিয়নায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মেসার্স শামছুল হক ফার্মেসির প্রোপ্রাইটর আমিনুর রহমান শাহীন, মেসার্স সাইদ মেডিকেল হলের প্রোপ্রাইটর আবু সাঈদ চৌধুরী ও মেসার্স প্রান্তিক এন্টারপ্রাইজের পরিচালক আবদুল্লাহ আলম মাসুদ।

তবে প্রতিবছর যে টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয় সেই অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করলে টাঙ্গাইল জেলাবাসীর চিকিৎসার জন্য যতেষ্ট বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তারা জানান, প্রথমে দরপত্রের পুরো টাকাই সিন্ডকেটের মাধ্যমে ভাগবাটোয়ারা করা হয়। পরে আবার আহ্বানকৃত দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় পুনরায় আবার বরাদ্দ এনে তার অর্ধেক কাজ করা হয়। এবারও ২০২০-২০২১ অর্থবছরের এমএসআর (মেডিকেল ও সার্জিক্যাল রিইকুইজিট) সামগ্রী ক্রয় করতে ওষুধপত্র, লিলেন, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, গজ ব্যান্ডেজ কটন, কেমিকেল রি-এজেন্ট এবং আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য ৬টি গ্রুপে দরপত্র আহ্বান করে। এই দরপত্রে টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্যে প্রান্তিক এন্টারপ্রাইজ, লোটাস সার্জিকাল এবং শামছুল হক ফার্মেসিসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অন্যান্য সব দরপত্র বাতিল করে হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ও ঠিকাদারের যোগসাজসে নিজেদের পছন্দমত ঠিকাদার রাফি ও সাফি মেডিকেল হক, জুয়াইরিয়া ইন্টারন্যাশনাল, ফারুক ট্রেডার্স ও মক্কা ট্রেডার্সকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে প্রস্তাব প্রেরণ করে।

যা আইনসঙ্গত হয়নি। এর আগে গত ২০১৯-২০২০ এই তিন প্রতিষ্ঠান টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে মালামাল সরবরাহে কাজ করে।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৮ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৬ বিধি ভঙ্গ করে অজ্ঞাত কারণে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা।

এ ঘটনায় তিন ভুক্তভোগী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালকের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতেই নজরে আসে কর্তৃপক্ষের। পরবর্তীতে টাঙ্গাইল থেকে পাঠানো পছন্দের ঠিকাদারের সব কাগজপত্র ফেরত পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়ার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা এবং একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তার সঙ্গে এক কোটি টাকা চুক্তি করা হয়। সে মোতাবেক নগদ টাকা, চেকের মাধ্যমে এবং অগ্রীম চেক প্রদান করা হয়। কিন্তু অন্যান্য ঠিকাদারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পছন্দের পাঁচ ঠিকাদারের কাগজপত্র ফেরত পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে করেই বেকায়দায় পড়ে যান ওই পাঁচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

এ ব্যাপারে প্রান্তিক এন্টারপ্রাইজ প্রোপাইটর কাজী আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি শিডিউলে উল্লেখিত সব শর্তাবলী পূরণ করে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন। তার সব কাগজপত্র বৈধ, কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই যাচাই বাছাইয়ে শিডিউল বাতিল করা হয়। যা আইনসঙ্গত হয়নি। তিনি আরো জানান, বারবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিলেও তা তারা গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে ডাকের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হলেও তাও ফেরত দেয়া হয়েছে। এ কারণে এর প্রতিকার চেয়ে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহপরিচালকের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তার দাবি সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ কিংবা নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হোক।

এ বিষয়ে শামছুল হক এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর আমিনুর রহমান শাহীন জানান, এই দরপত্র আহবানে ১৯টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেন। তার শিডিউলে যাবতীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে বাতিল করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) শফিকুল ইসলাম সজিব জানান, এ বিষয়ে কোন মন্তব্য মোবাইল ফোনে করতে রাজি নন। তবে তিনি কোন কিছু জানার থাকলে তার সঙ্গে অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলেন।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. সদর উদ্দিন জানান, টেন্ডারের যাচাই বাছাইয়ে কোন অনিয়ম হয়নি। তবে ঢাকা থেকে প্রেরণ করা ফাইল ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তিনি জানেন না।