অমরতা তোমাকে ছুঁয়ে যায়
হাফিজ রশিদ খান
অমরতা সে তো তোমাকেই ছুঁয়ে যায়
যেমন মা সন্তানের গাল ছুঁয়ে দেখে মমতায়
একটা কঠোর সত্য ঘিরে-ঘিরে
তোমাকে নিয়েছে
ছাত্রজনতার মাঝখানে
ভবনের বিছানায় ঘুমহারা তুমি
বাগ্মিতায় কেঁপে ওঠে প্রাণ ময়দানে
বেদনার উৎকলন তোমার ভাষায়
বঞ্চনার তুষাগ্নি তোমাকে কেবলই তাড়ায়
প্রতিভার সূক্ষ্ম তন্তু বানিয়েছে ঋদ্ধ মসলিন
হৃদয়ের তাঁতঘরে
তোমাকে কে আর মানা করে
বাংলার চারণকবি তুমি
তোমার উপমা শস্যশ্যামলা নিবিড় মাতৃভূমি
তোমার প্রাণের সুর
রাত্রিকাটা ভোরের নূপুর
বাজে বাংলায়
সারাদিন ছন্দে, চিরঞ্জীব বন্দনায়...
প্রত্যাশিত পরিণাম
আরিফ মঈনুদ্দীন
যখন সন্ধ্যা নামে- জীবনের সন্ধ্যা-
আঙুল তুলে ডাকে একটি দিন- আরো এগিয়ে এসো
যাত্রার পদধ্বনিতে বিদায়ের বিউগল
করুণ সুর তুলে সুরের রেওয়াজ করে যায় উৎকর্ষের ইঙ্গিতে
চরম এবং পরম সুর কখন বেজে উঠবে
এই কথা আমি জানতে চাই না
আনন্দের অতিশয্যে ভুলেও যেতে চাই না সুরের সেই শেষ লগ্ন
যা আমাকে আপন করে বাহুডোরে বাঁধতে ব্যাকুল
পৃথিবীর বন্ধন শিথিল হতে হতে বাঁধা পড়বো চিরন্তর বন্ধনে
কত কিছু করেছি এই লম্বা সফরে
ভুল-ত্রুটি ভালো-মন্দ ঝগড়া-ফ্যাসাদ
কতকিছু লেগে আছে আত্মার ডিঙানো সিঁড়িতে
পরিচ্ছন্ন কর্মীর শতভাগ দক্ষতায় একদিন দেখা দেয় ঝকঝকে সিঁড়ি
নতজানু হতে হতে সমস্ত শ্রদ্ধা ঢেলে আমি উঠে দাঁড়াই
আস্বস্ত বিশ্বাসে আমি তাকিয়ে থাকি তাঁর দিকে
একটু করুণার প্রত্যাশায় যতবার হাত তুলি,
সকরুণ আমার চাহনিতে ভেসে ওঠে তোমার মুখ
শ্রদ্ধার ভক্তিপূর্ণ আবেগে বেজে ওঠে সুর
যে সুরে একাকার জগৎ সংসার ভূলোক-দ্যুলোক
ভ্রমণের শেষে ভুল শুধরে অপারগতা ভুলে
যা কিছু অর্জন ভালোবেসে হাত রাখি হাতে
সেই হাত মৃত্তিকায় মেলে দেয়া
একদিন প্রভাতে রচিত যে আমার অভিনন্দন
নতুন শুরুর জন্য কেটে গেছে পুরনো বন্ধন।
তোমার জন্য
রাখী সরদার
শর্ত মুছে সহজ হও
ভালোবাসা পাখির চোখ
তোমার জন্য সারাজীবন
অশ্রু হতে পারি
যখন তখন আকাশ ভাঙা রোদ্দুর
আমি প্রেমিক চাই...
আদ্যোপান্ত কবি চাই
স্বপ্নে স্বপ্নে তোমার প্রিয় নদী
চোখেমুখে সমুদ্রপারের টিউলিপ
...তোমার মধ্যে নিঃস্ব হতে চাই
জেদ বুঝি তোমার একার? আমিও
দেখো আগুন উত্তাপে নীল...
দেখি কীভাবে ঘুমাও
মনে পড়ে ছুটির দিনে কফি হাউস
কফির গ্লাসে উপসে পড়া চুমু,
অতি উৎসুক চোখে ঘাম মুছতে
মুছতে তুমি ভাঙছো প্লেট,
আমি তখন এক জীবনে
বহু টুকরো চাঁদ।
সবুজ শাড়ির শীত সকাল
জয়নাল আবেদীন শিবু
মনুর ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে যায় পথ নীবর স্তব্ধতায়
ঘুমিয়ে আছে শান্ত সকাল- ভোরের সূর্য এসে জাগাবে তারে
কুয়াশার প্রলেপমাখা সুনসান শীতের জনপদ- বুকে তার
সবুজ শাড়িতে আগলে নেয়া শান্ত জল-
চিনে নেয় স্নিগ্ধ চোখে আমিই আজ প্রভাতের প্রথম পথিক।
এই নদীপাড়পথ একদা হেঁটে গেছে নিতাদের বাড়ি-
সেই কবে জমারাখা ধুলোমাখা সুখ! ফাঁকির বিকেল আর
মিষ্টি লাউয়ের ফুলের মতো ফুটে ওঠা সকালগুলো...
নিতারা কেউ আর বাড়ি নেই- বদলেছে পথ
চলে গেছে কোথায়, জানে না কেউ!
এমন শীতসকালে নির্জন নদীর পাড়ে
আমিও হারিয়ে ফেলি পথ, দিকশূন্য।
বেঁচে থাকাই ভালো থাকা
নিজাম বিশ্বাস
বনকে দিলাম ছুটি
করেছি দালানকোঠা, আকাশ ছোঁয়া বাড়ি
ও পাখি, তোমার সাথে আড়ি!
বৃক্ষ তোমার নাম দিয়েছি আজব বনসাই-
ও পাখি, আসো উড়ে- গলা ছেড়ে গাই
বেঁচে থাকাই ভালো থাকা, ভালো থাকা ভাই
ঘরকে দিলাম ছুটি, ফিরবো বনে একা
তোমার সাথে হয় যদি গো আবার বনে দেখা;
আমরা দুজন জলের ধারে ব্যাঙ হবো, ব্যাঙ হবো
তোমায় ছেড়ে আর যাব না, এই কথাই কবো
মনকে দিলাম ছুটি
যেথায় খুশি যাও হারিয়ে, করো যাচ্ছেতাই;
ও পাখি, আসো উড়ে গলা ছেড়ে গাই
বেঁচে থাকাই ভালো থাকা, ভালো থাকা ভাই
সুনীলমুদ্রা
সাইয়িদ মঞ্জু
উদ্ভবপূর্ব মৃত্যুর কোলে গভীর সমুদ্রবন্দর
আশার ফানুসে তির্যক দৃষ্টি
কে যেন প্রভায় আচ্ছাদিত করে আলেয়ার গিলাফ
মায়াবী ক্ষত সোনাদিয়ার চরে রোদ পোহায়।
বাঁধভাঙ্গা জোয়ার বিশাল সমুদ্র জয়ের উৎসবে
নাচতে নাচতে বেহুঁশ, আজও কি ফিরেছে হুঁশ
বেকুব জাইল্যা রোজ ছিঁড়ে আনি ইলিশের জরায়ু।
রাশি রাশি ধন
অচেতন ঘুমেঘোরে অনন্তকাল সাগরতল রহস্যে
নীল-কল্লোলে আঁকা যেন ঐশ্বর্যের মুখ
ইশারায় ডাকছে কেমন, দেখে না দেখার চোখ।
আলস্যের খোলস ছেড়ে প্রকাশিত হই মাতৃকার টানে
অকূলসিন্ধু সেচে আনি দৌলত, নীলমুদ্রার দুয়ার খুলে
ঘাসের ঠোঁটে আয়ু
এনাম রাজু
এবং ঘাসের ঠোঁটে জমা থাকে যে আয়ু
তাতে খুঁজি জীবনের রঙ পুষ্পের সুবাস
নাকের ডগায় জমা ঘামের নামে আঁকা
নগ্ন মনের বাতাসে মেশানো জলের কণা।
মেঘে মেঘে দ্বন্দ্বে যে গর্জন পৃথিবীর কানে বাজে
তাতে থাকে প্রণয়ের সরল ধারাপাত
তবুও প্রেমের নামে ছলনার বাতাস প্রতিদিন
প্রণয়ের গভীরে মেশায় বিষের খোরাক
প্রেম হলো দিন শেষে সূর্যের দোষ দেওয়া-
রোদের আহার...
বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৮ মাঘ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২
অমরতা তোমাকে ছুঁয়ে যায়
হাফিজ রশিদ খান
অমরতা সে তো তোমাকেই ছুঁয়ে যায়
যেমন মা সন্তানের গাল ছুঁয়ে দেখে মমতায়
একটা কঠোর সত্য ঘিরে-ঘিরে
তোমাকে নিয়েছে
ছাত্রজনতার মাঝখানে
ভবনের বিছানায় ঘুমহারা তুমি
বাগ্মিতায় কেঁপে ওঠে প্রাণ ময়দানে
বেদনার উৎকলন তোমার ভাষায়
বঞ্চনার তুষাগ্নি তোমাকে কেবলই তাড়ায়
প্রতিভার সূক্ষ্ম তন্তু বানিয়েছে ঋদ্ধ মসলিন
হৃদয়ের তাঁতঘরে
তোমাকে কে আর মানা করে
বাংলার চারণকবি তুমি
তোমার উপমা শস্যশ্যামলা নিবিড় মাতৃভূমি
তোমার প্রাণের সুর
রাত্রিকাটা ভোরের নূপুর
বাজে বাংলায়
সারাদিন ছন্দে, চিরঞ্জীব বন্দনায়...
প্রত্যাশিত পরিণাম
আরিফ মঈনুদ্দীন
যখন সন্ধ্যা নামে- জীবনের সন্ধ্যা-
আঙুল তুলে ডাকে একটি দিন- আরো এগিয়ে এসো
যাত্রার পদধ্বনিতে বিদায়ের বিউগল
করুণ সুর তুলে সুরের রেওয়াজ করে যায় উৎকর্ষের ইঙ্গিতে
চরম এবং পরম সুর কখন বেজে উঠবে
এই কথা আমি জানতে চাই না
আনন্দের অতিশয্যে ভুলেও যেতে চাই না সুরের সেই শেষ লগ্ন
যা আমাকে আপন করে বাহুডোরে বাঁধতে ব্যাকুল
পৃথিবীর বন্ধন শিথিল হতে হতে বাঁধা পড়বো চিরন্তর বন্ধনে
কত কিছু করেছি এই লম্বা সফরে
ভুল-ত্রুটি ভালো-মন্দ ঝগড়া-ফ্যাসাদ
কতকিছু লেগে আছে আত্মার ডিঙানো সিঁড়িতে
পরিচ্ছন্ন কর্মীর শতভাগ দক্ষতায় একদিন দেখা দেয় ঝকঝকে সিঁড়ি
নতজানু হতে হতে সমস্ত শ্রদ্ধা ঢেলে আমি উঠে দাঁড়াই
আস্বস্ত বিশ্বাসে আমি তাকিয়ে থাকি তাঁর দিকে
একটু করুণার প্রত্যাশায় যতবার হাত তুলি,
সকরুণ আমার চাহনিতে ভেসে ওঠে তোমার মুখ
শ্রদ্ধার ভক্তিপূর্ণ আবেগে বেজে ওঠে সুর
যে সুরে একাকার জগৎ সংসার ভূলোক-দ্যুলোক
ভ্রমণের শেষে ভুল শুধরে অপারগতা ভুলে
যা কিছু অর্জন ভালোবেসে হাত রাখি হাতে
সেই হাত মৃত্তিকায় মেলে দেয়া
একদিন প্রভাতে রচিত যে আমার অভিনন্দন
নতুন শুরুর জন্য কেটে গেছে পুরনো বন্ধন।
তোমার জন্য
রাখী সরদার
শর্ত মুছে সহজ হও
ভালোবাসা পাখির চোখ
তোমার জন্য সারাজীবন
অশ্রু হতে পারি
যখন তখন আকাশ ভাঙা রোদ্দুর
আমি প্রেমিক চাই...
আদ্যোপান্ত কবি চাই
স্বপ্নে স্বপ্নে তোমার প্রিয় নদী
চোখেমুখে সমুদ্রপারের টিউলিপ
...তোমার মধ্যে নিঃস্ব হতে চাই
জেদ বুঝি তোমার একার? আমিও
দেখো আগুন উত্তাপে নীল...
দেখি কীভাবে ঘুমাও
মনে পড়ে ছুটির দিনে কফি হাউস
কফির গ্লাসে উপসে পড়া চুমু,
অতি উৎসুক চোখে ঘাম মুছতে
মুছতে তুমি ভাঙছো প্লেট,
আমি তখন এক জীবনে
বহু টুকরো চাঁদ।
সবুজ শাড়ির শীত সকাল
জয়নাল আবেদীন শিবু
মনুর ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে যায় পথ নীবর স্তব্ধতায়
ঘুমিয়ে আছে শান্ত সকাল- ভোরের সূর্য এসে জাগাবে তারে
কুয়াশার প্রলেপমাখা সুনসান শীতের জনপদ- বুকে তার
সবুজ শাড়িতে আগলে নেয়া শান্ত জল-
চিনে নেয় স্নিগ্ধ চোখে আমিই আজ প্রভাতের প্রথম পথিক।
এই নদীপাড়পথ একদা হেঁটে গেছে নিতাদের বাড়ি-
সেই কবে জমারাখা ধুলোমাখা সুখ! ফাঁকির বিকেল আর
মিষ্টি লাউয়ের ফুলের মতো ফুটে ওঠা সকালগুলো...
নিতারা কেউ আর বাড়ি নেই- বদলেছে পথ
চলে গেছে কোথায়, জানে না কেউ!
এমন শীতসকালে নির্জন নদীর পাড়ে
আমিও হারিয়ে ফেলি পথ, দিকশূন্য।
বেঁচে থাকাই ভালো থাকা
নিজাম বিশ্বাস
বনকে দিলাম ছুটি
করেছি দালানকোঠা, আকাশ ছোঁয়া বাড়ি
ও পাখি, তোমার সাথে আড়ি!
বৃক্ষ তোমার নাম দিয়েছি আজব বনসাই-
ও পাখি, আসো উড়ে- গলা ছেড়ে গাই
বেঁচে থাকাই ভালো থাকা, ভালো থাকা ভাই
ঘরকে দিলাম ছুটি, ফিরবো বনে একা
তোমার সাথে হয় যদি গো আবার বনে দেখা;
আমরা দুজন জলের ধারে ব্যাঙ হবো, ব্যাঙ হবো
তোমায় ছেড়ে আর যাব না, এই কথাই কবো
মনকে দিলাম ছুটি
যেথায় খুশি যাও হারিয়ে, করো যাচ্ছেতাই;
ও পাখি, আসো উড়ে গলা ছেড়ে গাই
বেঁচে থাকাই ভালো থাকা, ভালো থাকা ভাই
সুনীলমুদ্রা
সাইয়িদ মঞ্জু
উদ্ভবপূর্ব মৃত্যুর কোলে গভীর সমুদ্রবন্দর
আশার ফানুসে তির্যক দৃষ্টি
কে যেন প্রভায় আচ্ছাদিত করে আলেয়ার গিলাফ
মায়াবী ক্ষত সোনাদিয়ার চরে রোদ পোহায়।
বাঁধভাঙ্গা জোয়ার বিশাল সমুদ্র জয়ের উৎসবে
নাচতে নাচতে বেহুঁশ, আজও কি ফিরেছে হুঁশ
বেকুব জাইল্যা রোজ ছিঁড়ে আনি ইলিশের জরায়ু।
রাশি রাশি ধন
অচেতন ঘুমেঘোরে অনন্তকাল সাগরতল রহস্যে
নীল-কল্লোলে আঁকা যেন ঐশ্বর্যের মুখ
ইশারায় ডাকছে কেমন, দেখে না দেখার চোখ।
আলস্যের খোলস ছেড়ে প্রকাশিত হই মাতৃকার টানে
অকূলসিন্ধু সেচে আনি দৌলত, নীলমুদ্রার দুয়ার খুলে
ঘাসের ঠোঁটে আয়ু
এনাম রাজু
এবং ঘাসের ঠোঁটে জমা থাকে যে আয়ু
তাতে খুঁজি জীবনের রঙ পুষ্পের সুবাস
নাকের ডগায় জমা ঘামের নামে আঁকা
নগ্ন মনের বাতাসে মেশানো জলের কণা।
মেঘে মেঘে দ্বন্দ্বে যে গর্জন পৃথিবীর কানে বাজে
তাতে থাকে প্রণয়ের সরল ধারাপাত
তবুও প্রেমের নামে ছলনার বাতাস প্রতিদিন
প্রণয়ের গভীরে মেশায় বিষের খোরাক
প্রেম হলো দিন শেষে সূর্যের দোষ দেওয়া-
রোদের আহার...