দক্ষিণ কোরিয়ায় পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইলেন টিপু মুনশি

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার, এ বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এতে করে উভয়দেশ লাভবান হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমেরও অংশীদার দক্ষিণ কোরিয়া। বাণিজ্যমন্ত্রী গতকাল বাংলাদেশ সচিবালয়ে তার অফিস কক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জাংকিউন এর সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ সব কথা বলেন।

তৈরি পোশাক, ইলেক্ট্রনিক পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি নির্মাণ কাজেও দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রচুর সুযোগ রয়েছে। উভয়দেশ উদ্যোগ নিলে এ সুযোগকে কাজে লাগানো সম্ভব। দক্ষিণ কোরিয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে। বাংলাদেশও উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করলে রপ্তানি বাড়বে এবং উভয় দেশের বাণিজ্য ব্যবধান কমবে। বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার বন্ধু রাষ্ট্র এবং ব্যবসায়ীক বড় অংশীদার। বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক ব্যবসা ও বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকা-েও অবদান রাখছে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রচুর সুযোগ রয়েছে, এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া চট্টগ্রামে কেইপিজেড বাস্তবায়ন করছে, এখানে বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩৭০.৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে আমদানি করেছে ১৩১৫.২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে উভয় দেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. হাফিজুর রহমান এবং ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া গতকাল ভুটানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর মতবিনিময় হয়েছে।

এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ভুটান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃতিকারী দেশ। উভয় দেশের ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য আমরা ৬ ডিসেম্বর প্রিপারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) স্বাক্ষর করেছি। এটি বাংলাদেশের প্রথম পিটিএ স্বাক্ষর। ভুটান বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা পিটিএ স্বাক্ষর করেছি। যতদ্রুত সম্ভব উভয় দেশের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে পিটিএ এর সুবিধা কাজে লাগাতে চাই। এজন্য আগামী মার্চ মাসে জয়েন্ট ওয়াকিং গ্রুপের মিটিং করে উভয় দেশের প্রয়োজনীয় কাজগুলো শেষ করা যায়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভুটান থেকে নির্মাণ কাজের সামগ্রী আমদানি করে থাকে। ভুটানের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্লাইউড, মিনারেল ওয়াটার, জুস, ওষুধ, শুকনা খাবারসহ অনেক পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি পরিবহণ চালু হলে উভয় দেশ বাণিজ্যিকভাবে উপকৃত হবে।

ভুটানের রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বাক্ষরিত পিটিএ-এর সুবিধা গ্রহণের জন্য ভুটান সরকার অগ্রাধীকার ভিত্তিতে কাজ করছে। আসন্ন জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় প্রয়োজনীয় সব কাজ সম্পন্ন করা হবে। বাণিজ্য সহজ ও দ্রুত করতে বাংলাদেশের বুড়িমারি, বাংলাবান্ধা, সোনাহাট এবং আখাউড়া স্থলবন্দরের সক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তিনি পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে তৃতীয় কোন পক্ষের সহযোগিতা ছাড়াই সরাসরি বাণিজ্য করার উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, ভুটান বাংলাদেশের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় পাথর সরবরাহ করতে আগ্রহী। তিনি বাংলাদেশ থেকে কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য রাসায়নিক সার আমদানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি ভুটানের ছাত্র-ছাত্রীদের বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সুযোগ প্রদাণের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। উল্লেখ্য, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ভুটানে ৭.৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে আমদানি করেছে ৪৯.৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। পিটিএ স্বাক্ষরের ফলে আশা করা হচ্ছে আগামীতে উভয় দেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে।

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৮ মাঘ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

দক্ষিণ কোরিয়ায় পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইলেন টিপু মুনশি

image

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার, এ বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এতে করে উভয়দেশ লাভবান হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমেরও অংশীদার দক্ষিণ কোরিয়া। বাণিজ্যমন্ত্রী গতকাল বাংলাদেশ সচিবালয়ে তার অফিস কক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জাংকিউন এর সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ সব কথা বলেন।

তৈরি পোশাক, ইলেক্ট্রনিক পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি নির্মাণ কাজেও দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রচুর সুযোগ রয়েছে। উভয়দেশ উদ্যোগ নিলে এ সুযোগকে কাজে লাগানো সম্ভব। দক্ষিণ কোরিয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে। বাংলাদেশও উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করলে রপ্তানি বাড়বে এবং উভয় দেশের বাণিজ্য ব্যবধান কমবে। বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার বন্ধু রাষ্ট্র এবং ব্যবসায়ীক বড় অংশীদার। বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক ব্যবসা ও বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকা-েও অবদান রাখছে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রচুর সুযোগ রয়েছে, এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া চট্টগ্রামে কেইপিজেড বাস্তবায়ন করছে, এখানে বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩৭০.৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে আমদানি করেছে ১৩১৫.২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে উভয় দেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. হাফিজুর রহমান এবং ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া গতকাল ভুটানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর মতবিনিময় হয়েছে।

এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ভুটান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃতিকারী দেশ। উভয় দেশের ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য আমরা ৬ ডিসেম্বর প্রিপারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) স্বাক্ষর করেছি। এটি বাংলাদেশের প্রথম পিটিএ স্বাক্ষর। ভুটান বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা পিটিএ স্বাক্ষর করেছি। যতদ্রুত সম্ভব উভয় দেশের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে পিটিএ এর সুবিধা কাজে লাগাতে চাই। এজন্য আগামী মার্চ মাসে জয়েন্ট ওয়াকিং গ্রুপের মিটিং করে উভয় দেশের প্রয়োজনীয় কাজগুলো শেষ করা যায়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভুটান থেকে নির্মাণ কাজের সামগ্রী আমদানি করে থাকে। ভুটানের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্লাইউড, মিনারেল ওয়াটার, জুস, ওষুধ, শুকনা খাবারসহ অনেক পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি পরিবহণ চালু হলে উভয় দেশ বাণিজ্যিকভাবে উপকৃত হবে।

ভুটানের রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বাক্ষরিত পিটিএ-এর সুবিধা গ্রহণের জন্য ভুটান সরকার অগ্রাধীকার ভিত্তিতে কাজ করছে। আসন্ন জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় প্রয়োজনীয় সব কাজ সম্পন্ন করা হবে। বাণিজ্য সহজ ও দ্রুত করতে বাংলাদেশের বুড়িমারি, বাংলাবান্ধা, সোনাহাট এবং আখাউড়া স্থলবন্দরের সক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তিনি পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে তৃতীয় কোন পক্ষের সহযোগিতা ছাড়াই সরাসরি বাণিজ্য করার উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, ভুটান বাংলাদেশের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় পাথর সরবরাহ করতে আগ্রহী। তিনি বাংলাদেশ থেকে কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য রাসায়নিক সার আমদানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি ভুটানের ছাত্র-ছাত্রীদের বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সুযোগ প্রদাণের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। উল্লেখ্য, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ভুটানে ৭.৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে আমদানি করেছে ৪৯.৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। পিটিএ স্বাক্ষরের ফলে আশা করা হচ্ছে আগামীতে উভয় দেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে।