বেলাবতে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে দম্পতি

সৌদি আরবে লোক পাঠানো নিয়ে বিবাদ

প্রতিপক্ষের ভয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এক দম্পতি। এরইমধ্যে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা কেটে দিয়েছে তার কলা বাগান। থানায় একটি অভিযোগ ও আদালতে একটি ১০৭ ধারায় মামলা করেও আতঙ্কে কাটছে দিন। মামলার বিষয়ে অবগত হয়ে প্রতিপক্ষরা আরো হিংস্র্র হয়ে উঠেছে। যে কোন সময় প্রাণনাশের মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে পালিয়ে বেড়াচ্ছে রিটন দম্পতি জীবন কাটাচ্ছে সে।

ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চর কাশিমনগর গ্রামে। ঘটনাটি প্রতিবেশী আসাদ মিয়ার মেয়ে শ্রাবন্তী আক্তারের স্বামী সোহাগ মিয়াকে সৌদি আরব পাঠানো নিয়ে। নিয়ম মাফিক বিদেশ পাঠানোর পর কাজ পাওয়া সত্ত্বেও সোহাগ কাজ পায়নি জানায়। এতে সোহাগের শ^শুর আসাদ মিয়া ও শাশুড়ি সেলিনা বেগম রিটনের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। রিটন বিষয়টি তার এজেন্সির মালিক মো. রাশিদ মিয়াকে জানালে তিনি তার সৌদি আরবের একই কোম্পানিতে কাজ করা লোকের মাধ্যমে সোহাগ মিয়ার আকামা প্রাপ্তির বিষয়ে নিশ্চিত হন। কিন্তু সোহাগের শ্বশুর বাড়ির লোকজন বিষয়টি অস্বীকার করে রিটন মিয়াকে টাকার জন্য চাপ দেয়। গত ১৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মোটরসাইকেল যোগে বাড়িতে যাওয়ার সময় আসাদ গং রিটন মিয়াকে রাস্তায় আটক করে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় তার স্ত্রী ও মেয়ে এগিয়ে আসলে আক্রমণকারীরা তাদেরও মারধর করে। এরপর বিচারের আশায় বারবার স্থানীয় চেয়ারম্যান, থানায় ছুটোছুটি করতে থাকেন। বর্তমানে অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে রিটন। এ ব্যাপারে রিটনের স্ত্রী রোজিনা বেগম বাদী হয়ে বেলাব থানায় সোহাগের শাশুড়ি সেলিনা বেগম (৪৮), স্ত্রী শ্রাবন্তী বেগম (২২), শ্বশুর আসাদ মিয়া (৫২), আসাদের ছেলে শরীফ মিয়া (২৮) এবং তার স্ত্রী আসমা বেগমের (২২) নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ দাখিলের পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তফা গোলাপ বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু, পুলিশ চলে যাওয়ার পর তারা আরো চড়াও হয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ আক্রমণ চালায়। রিটন ও তার পরিবার বর্তমানে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গত ৯ জানুয়ারি রিটনের কলা বাগান কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। রিটনের সাথে কথা হলে সে জানায় ‘জীবন বাঁচাতে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই।’ স্ত্রী রোজিনা বেগম জানান ‘ওরা আমাদেরকে বাড়ি থেকে ধওে নিয়ে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ এ ব্যাপাওে কিছুই করছে না।’ রিটনের প্রতিপক্ষ আসাদ মিয়া জানান ‘রিটন সব মিথ্যা, বানোয়াট কথা বলছে। আমরা তার ওপর আক্রমণ করি নাই।’ আসাদের স্ত্রী সেলিনা বেগম জানায় ‘রিটন আমার মেয়ের জামাইকে ভুয়া ভিসা দিয়েছে।’ এ ব্যাপারে কথা হয় স্থানীয় অধিবাসী আব্দুর রহমানের সাথে। তিনি জানান ‘রিটনের ওপর এক প্রকার নির্যাতন করছে আসাদ ও তার পরিবার। আমরা সোহাগের কাজ প্রাপ্তির বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি। তার আকামার ছবি, তার সাথে কথা বলার ভিডিওসহ অনেক প্রমাণ পেয়েছি। এখন আবার কলা বাগান কেটে দিয়েছে এটা অন্যায়। এদের মানুষ কিছু বলতে সাহস পায় না কারণ, মহিলারা এগিয়ে আসে। ‘রাশিদ মেম্বার বলেন, আসাদ ও তার পরিবারের লোকগুলো চরম মিথ্যুক। তারা আইন কানুন মানে না। আমি এজেন্সি চালাই। আমিনি জেতার খোঁজখবর নিয়ে সোহাগের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেছি।’

এ ব্যাপারে থানার এস আই গিয়াস উদ্দীন জানান ‘আমি অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাস্তবতার মিল পেলেও চেয়ারম্যান সাহেব সমাধান করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু, এখন শুনছি এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান সাহেব কিছুই করেননি। সে যে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আমি তা জানি না। কলা বাগান কেটে নেয়ার কথা এখনই শুনলাম। বিষয়টা দুঃখজনক।’ স্থানীয় চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা গোলাপ বলেন ‘আমি ওদেরকে নিয়ে বসে মীমাংসা করতে চেষ্টা করেছি। ওরা বসতে চায়না। আমি অভিযোগটির বিষয়ে একটা সমাধান করতে চেয়েছিলাম।’ বেলাব থানার অফিসার ইনচার্জ সাফায়েত হোসেন পলাশ বলেন ‘প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো ও কলা বাগান কেটে ফেলার বিষয়টি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে আমার নিকট কোন অভিযোগ নাই। অভিযোগ পেলে কঠিন পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৮ মাঘ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বেলাবতে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে দম্পতি

সৌদি আরবে লোক পাঠানো নিয়ে বিবাদ

প্রতিনিধি, বেলাব (নরসিংদী)

প্রতিপক্ষের ভয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এক দম্পতি। এরইমধ্যে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা কেটে দিয়েছে তার কলা বাগান। থানায় একটি অভিযোগ ও আদালতে একটি ১০৭ ধারায় মামলা করেও আতঙ্কে কাটছে দিন। মামলার বিষয়ে অবগত হয়ে প্রতিপক্ষরা আরো হিংস্র্র হয়ে উঠেছে। যে কোন সময় প্রাণনাশের মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে পালিয়ে বেড়াচ্ছে রিটন দম্পতি জীবন কাটাচ্ছে সে।

ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চর কাশিমনগর গ্রামে। ঘটনাটি প্রতিবেশী আসাদ মিয়ার মেয়ে শ্রাবন্তী আক্তারের স্বামী সোহাগ মিয়াকে সৌদি আরব পাঠানো নিয়ে। নিয়ম মাফিক বিদেশ পাঠানোর পর কাজ পাওয়া সত্ত্বেও সোহাগ কাজ পায়নি জানায়। এতে সোহাগের শ^শুর আসাদ মিয়া ও শাশুড়ি সেলিনা বেগম রিটনের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। রিটন বিষয়টি তার এজেন্সির মালিক মো. রাশিদ মিয়াকে জানালে তিনি তার সৌদি আরবের একই কোম্পানিতে কাজ করা লোকের মাধ্যমে সোহাগ মিয়ার আকামা প্রাপ্তির বিষয়ে নিশ্চিত হন। কিন্তু সোহাগের শ্বশুর বাড়ির লোকজন বিষয়টি অস্বীকার করে রিটন মিয়াকে টাকার জন্য চাপ দেয়। গত ১৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মোটরসাইকেল যোগে বাড়িতে যাওয়ার সময় আসাদ গং রিটন মিয়াকে রাস্তায় আটক করে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় তার স্ত্রী ও মেয়ে এগিয়ে আসলে আক্রমণকারীরা তাদেরও মারধর করে। এরপর বিচারের আশায় বারবার স্থানীয় চেয়ারম্যান, থানায় ছুটোছুটি করতে থাকেন। বর্তমানে অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে রিটন। এ ব্যাপারে রিটনের স্ত্রী রোজিনা বেগম বাদী হয়ে বেলাব থানায় সোহাগের শাশুড়ি সেলিনা বেগম (৪৮), স্ত্রী শ্রাবন্তী বেগম (২২), শ্বশুর আসাদ মিয়া (৫২), আসাদের ছেলে শরীফ মিয়া (২৮) এবং তার স্ত্রী আসমা বেগমের (২২) নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ দাখিলের পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তফা গোলাপ বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু, পুলিশ চলে যাওয়ার পর তারা আরো চড়াও হয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ আক্রমণ চালায়। রিটন ও তার পরিবার বর্তমানে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গত ৯ জানুয়ারি রিটনের কলা বাগান কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। রিটনের সাথে কথা হলে সে জানায় ‘জীবন বাঁচাতে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই।’ স্ত্রী রোজিনা বেগম জানান ‘ওরা আমাদেরকে বাড়ি থেকে ধওে নিয়ে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ এ ব্যাপাওে কিছুই করছে না।’ রিটনের প্রতিপক্ষ আসাদ মিয়া জানান ‘রিটন সব মিথ্যা, বানোয়াট কথা বলছে। আমরা তার ওপর আক্রমণ করি নাই।’ আসাদের স্ত্রী সেলিনা বেগম জানায় ‘রিটন আমার মেয়ের জামাইকে ভুয়া ভিসা দিয়েছে।’ এ ব্যাপারে কথা হয় স্থানীয় অধিবাসী আব্দুর রহমানের সাথে। তিনি জানান ‘রিটনের ওপর এক প্রকার নির্যাতন করছে আসাদ ও তার পরিবার। আমরা সোহাগের কাজ প্রাপ্তির বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি। তার আকামার ছবি, তার সাথে কথা বলার ভিডিওসহ অনেক প্রমাণ পেয়েছি। এখন আবার কলা বাগান কেটে দিয়েছে এটা অন্যায়। এদের মানুষ কিছু বলতে সাহস পায় না কারণ, মহিলারা এগিয়ে আসে। ‘রাশিদ মেম্বার বলেন, আসাদ ও তার পরিবারের লোকগুলো চরম মিথ্যুক। তারা আইন কানুন মানে না। আমি এজেন্সি চালাই। আমিনি জেতার খোঁজখবর নিয়ে সোহাগের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেছি।’

এ ব্যাপারে থানার এস আই গিয়াস উদ্দীন জানান ‘আমি অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাস্তবতার মিল পেলেও চেয়ারম্যান সাহেব সমাধান করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু, এখন শুনছি এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান সাহেব কিছুই করেননি। সে যে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আমি তা জানি না। কলা বাগান কেটে নেয়ার কথা এখনই শুনলাম। বিষয়টা দুঃখজনক।’ স্থানীয় চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা গোলাপ বলেন ‘আমি ওদেরকে নিয়ে বসে মীমাংসা করতে চেষ্টা করেছি। ওরা বসতে চায়না। আমি অভিযোগটির বিষয়ে একটা সমাধান করতে চেয়েছিলাম।’ বেলাব থানার অফিসার ইনচার্জ সাফায়েত হোসেন পলাশ বলেন ‘প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো ও কলা বাগান কেটে ফেলার বিষয়টি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে আমার নিকট কোন অভিযোগ নাই। অভিযোগ পেলে কঠিন পদক্ষেপ নেয়া হবে।’