পর্যবেক্ষণ

রায়ে সন্তুষ্টি দীপনের স্ত্রী ও বাবার

জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় ৮ জঙ্গির প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তার বাবা আবুল কাসেম ফজলুল হক ও দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান। গতকাল দুপুরে রায় ঘোষণার পর ফজলুল হক বলেন, এটা প্রত্যাশিত রায়। তিনি বলেন, আদালত থেকে জানানো হয়েছে, ৮ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। যারা আসামি তাদের সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। সরকারি ধারায় বিচার হয়েছে। গোয়েন্দা শাখা থেকে যে চার্জশিট দেয়া হয়েছে, সেখানে যেমন বিবরণ এসেছে, সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, আসামিদের আইনজীবীরা ছিলেন, সে সবের ভিত্তিতে বিচারক বোঝার চেষ্টা করেছেন এবং রায় দিয়েছেন। আমার ধারণা সেসব সঠিকভাবে হয়েছে।

এই রায় দেশে আইনের শাসনের জন্য ভালো হবে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর যখন দীপনকে হত্যা করা হয় তখন বিভিন্ন মিডিয়ায় টেলিভিশন খুললে দেখা যেত হত্যার শিকারদের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের কান্নাকাটি। এই বিচার শূন্যতার মধ্যে দীপন যখন নিহত হলো তখন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত ও প্রচারিত হলো। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বললেন, শুধু বই প্রকাশের কারণে প্রকাশক হত্যার দৃষ্টান্ত এর আগে পাওয়া যায়নি। তিনিসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান দোষীদের। দেশেরও সব মহল থেকে দাবি ওঠে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। ওই অবস্থায় সরকারের ওপর চাপ ছিল দীপনের হত্যার বিচার তাড়াতড়ি শুরু করার। বিচার শুরু হওয়ার আগে দীর্ঘদিন মামলার তদন্ত চলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা পর্যায়ে এসে তারা হত্যাকারীদের অবশেষে ধরতে পারে এবং তাদের আসামি করে ডিবির একজন কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। জঙ্গিদের হাতে নিহত অন্যদের বিষয়েও এ ধরনের শাস্তি হওয়া উচিত কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, যদি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এরা হত্যাকারী বা হত্যার সঙ্গে যুক্ত, তবে অবশ্যই তাদের এ রকম শাস্তি হওয়া উচিৎ। দেশে আইনের শাসন তাতে ভালো হবে।

রায় শুনে কাঁদলেন দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান

দীপন হত্যা মামলার রায় শুনে কাঁদলেন তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান। দুপুর ১২টা ২ মিনিটে ৫৩ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু হয়। রায় শুনতে আদালতে দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমানসহ আরও দুই স্বজন হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষের ভেতরে প্রায় ১০ মিনিট নীরবে বসে কাঁদতে দেখা যায় দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমানকে। মুখের মাস্ক খুলে তাকে চোখের পানি মুছতে দেখা যায়। পরে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি খুব অসুস্থ, কালকে আমার মামা মারা গেছেন। আমরা এই রায় নিয়ে সন্তুষ্ট। আজকে আমরা যে রায় পেয়েছি, এটার জন্য সংশ্লিষ্ট যারা ছিলেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকদের হত্যার অংশ হিসেবে অভিজিত রায়ের বই প্রকাশের জন্য জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা হয়। যারা বই প্রকাশের দায়ে মানুষ হত্যা করতে পারে, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শক্র। ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যায় অংশগ্রহণকারীরা বেঁচে থাকলে আনসার আল ইসলামের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহী হবে। উল্লেখ্য, রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। ২ নভেম্বর তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) দক্ষিণের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলামের ৮ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরা হলো, মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, কিলিং স্কোয়াডের প্রধান মঈনুল হাসান শামীম, প্রশিক্ষক আবদুর সবুর এবং টপ অপারেটিভ খাইরুল ইসলাম, শেখ আবদুল্লাহ, আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন এবং আকরাম হোসেন। এ মামলায় ২৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান প্রত্যেক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৮ মাঘ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

পর্যবেক্ষণ

রায়ে সন্তুষ্টি দীপনের স্ত্রী ও বাবার

আদালত বার্তা পরিবেশক

image

জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় ৮ জঙ্গির প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তার বাবা আবুল কাসেম ফজলুল হক ও দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান। গতকাল দুপুরে রায় ঘোষণার পর ফজলুল হক বলেন, এটা প্রত্যাশিত রায়। তিনি বলেন, আদালত থেকে জানানো হয়েছে, ৮ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। যারা আসামি তাদের সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। সরকারি ধারায় বিচার হয়েছে। গোয়েন্দা শাখা থেকে যে চার্জশিট দেয়া হয়েছে, সেখানে যেমন বিবরণ এসেছে, সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, আসামিদের আইনজীবীরা ছিলেন, সে সবের ভিত্তিতে বিচারক বোঝার চেষ্টা করেছেন এবং রায় দিয়েছেন। আমার ধারণা সেসব সঠিকভাবে হয়েছে।

এই রায় দেশে আইনের শাসনের জন্য ভালো হবে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর যখন দীপনকে হত্যা করা হয় তখন বিভিন্ন মিডিয়ায় টেলিভিশন খুললে দেখা যেত হত্যার শিকারদের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের কান্নাকাটি। এই বিচার শূন্যতার মধ্যে দীপন যখন নিহত হলো তখন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত ও প্রচারিত হলো। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বললেন, শুধু বই প্রকাশের কারণে প্রকাশক হত্যার দৃষ্টান্ত এর আগে পাওয়া যায়নি। তিনিসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান দোষীদের। দেশেরও সব মহল থেকে দাবি ওঠে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। ওই অবস্থায় সরকারের ওপর চাপ ছিল দীপনের হত্যার বিচার তাড়াতড়ি শুরু করার। বিচার শুরু হওয়ার আগে দীর্ঘদিন মামলার তদন্ত চলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা পর্যায়ে এসে তারা হত্যাকারীদের অবশেষে ধরতে পারে এবং তাদের আসামি করে ডিবির একজন কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। জঙ্গিদের হাতে নিহত অন্যদের বিষয়েও এ ধরনের শাস্তি হওয়া উচিত কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, যদি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এরা হত্যাকারী বা হত্যার সঙ্গে যুক্ত, তবে অবশ্যই তাদের এ রকম শাস্তি হওয়া উচিৎ। দেশে আইনের শাসন তাতে ভালো হবে।

রায় শুনে কাঁদলেন দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান

দীপন হত্যা মামলার রায় শুনে কাঁদলেন তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান। দুপুর ১২টা ২ মিনিটে ৫৩ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু হয়। রায় শুনতে আদালতে দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমানসহ আরও দুই স্বজন হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষের ভেতরে প্রায় ১০ মিনিট নীরবে বসে কাঁদতে দেখা যায় দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমানকে। মুখের মাস্ক খুলে তাকে চোখের পানি মুছতে দেখা যায়। পরে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি খুব অসুস্থ, কালকে আমার মামা মারা গেছেন। আমরা এই রায় নিয়ে সন্তুষ্ট। আজকে আমরা যে রায় পেয়েছি, এটার জন্য সংশ্লিষ্ট যারা ছিলেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকদের হত্যার অংশ হিসেবে অভিজিত রায়ের বই প্রকাশের জন্য জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা হয়। যারা বই প্রকাশের দায়ে মানুষ হত্যা করতে পারে, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শক্র। ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যায় অংশগ্রহণকারীরা বেঁচে থাকলে আনসার আল ইসলামের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহী হবে। উল্লেখ্য, রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। ২ নভেম্বর তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) দক্ষিণের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলামের ৮ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরা হলো, মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, কিলিং স্কোয়াডের প্রধান মঈনুল হাসান শামীম, প্রশিক্ষক আবদুর সবুর এবং টপ অপারেটিভ খাইরুল ইসলাম, শেখ আবদুল্লাহ, আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন এবং আকরাম হোসেন। এ মামলায় ২৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান প্রত্যেক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন।