জিয়ার খেতাব বাতিলে জটিলতা দেখছেন না আইনমন্ত্রী 

জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিলে আইনি কোন জটিলতা দেখছেন না আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বঙ্গবন্ধু হত্যায় কার কী ভূমিকা আছে, তা দালিলিক প্রমাণসহ প্রস্তাব করা হলে খেতাব বাতিলসহ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭২তম সভায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের এই সুপারিশ করা হয়েছে গত মঙ্গলবার।

এ বিষয়ে গতকাল রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে করোনা টিকা নেয়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘খেতাব বাতিলের ক্ষেত্রে কোন আইনি জটিলতা নেই। যদি কেউ মুক্তিযোদ্ধা হন তাহলে তার মুক্তিযোদ্ধা খেতাব থাকা স্বাভাবিক। যদি এমন হয় যে, মুক্তিযোদ্ধা নাম ধারণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নষ্ট করেছেন, তার কি খেতাব থাকার কোন অধিকার আছে? এই প্রশ্ন আমি দেশবাসীর কাছে রেখে গেলাম।’

এ বিষয়ে জামুকার মহাপরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম রুহেল সংবাদকে বলেন, ‘জামুকার বৈঠকের সিদ্ধান্তের কার্যপত্র বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হবে। সেখান থেকে গেজেট প্রকাশের পর তা বাস্তবায়ন করা হবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়সহ যাদের সুপারিশ নেয়া প্রয়োজনে সব করা হবে। খেতাব বাতিল হলে তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য আর কোন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।’

জামুকার বৈঠকের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত এই চার খুনির খেতাব বাতিলের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামুকার সদস্য শাজাহান খান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের খেতাব বাতিলের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের খেতাবও বাতিলে প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবের সঙ্গে জামুকার চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক অন্য সদস্যরা একমত পোষণ করেন। এর আগে সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদকও প্রত্যাহার করা হয়।

এ বিষয়ে গতকাল গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জিয়াউর রহমানসহ যে পাঁচজনের রাষ্ট্রীয় খেতাব জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা রাজনৈতিক কারণে নয়। দালিলিক প্রমাণ থাকায় এমন আলোচনা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত উপকমিটির পরবর্তী বৈঠকে বঙ্গবন্ধু হত্যায় কার কী ভূমিকা আছে, তা দালিলিক প্রমাণসহ প্রস্তাব করা হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। খেতাব বাতিলের এমন নজির শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর অন্য দেশেও আছে। অনেকের কর্মকাণ্ডের জন্য সম্মানসূচক খেতাব প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বৈঠকে খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান, মাহবুবুল আলম চাষীসহ এ রকম আরও অনেকের নাম নিয়েই কথা হয়েছে। তাদের কার কী ভূমিকা, বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততা কী, তার দালিলিক প্রমাণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী সভায় দালিলিক প্রমাণসহ প্রস্তাবিত হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

জামুকার সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডিত চার পলাতক খুনির খেতাব স্থগিতের জন্য হাই কোর্ট একটি আদেশ দিয়েছিল গত বছরের শেষ দিকে। এরমধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শরিফুল হক ডালিমের নামের সঙ্গে ‘বীর উত্তম’, নূর চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ ও মোসলেহ উদ্দিনের নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ উপাধি রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়া আত্মস্বীকৃত এই চার খুনির খেতাব বাতিলের বিষয়টি জামুকার সভায় উত্থাপন করা হয়। বৈঠকে শাজাহান খানের প্রস্তাবের সঙ্গে অন্য সদস্যরা একমত হয়ে জিয়াউর রহমানের খেতাবও বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। পরে শাজাহান খানকে আহ্বায়ক করে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়।

এর আগে ২০১৬ সালে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার করে জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এছাড়া গত জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু খুনি সেনাবাহিনীর বরখাস্ত রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান ওরফে মোসলেম উদ্দিন খানসহ ৫২ জন মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭০তম সভার সুপারিশের আলোকে তাদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে গত ৫ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মোসলেহ উদ্দিনসহ পাঁচজন পালিয়ে আছেন। এদের মধ্যে চারজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীরত্বের খেতাব পেয়েছিলেন। হাইকোর্ট এক আদেশে তাদের সেই খেতাব স্থগিত করার সুপারিশ করা হয় জামুকার ৭২তম বৈঠকে।

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৮ মাঘ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

জিয়ার খেতাব বাতিলে জটিলতা দেখছেন না আইনমন্ত্রী 

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিলে আইনি কোন জটিলতা দেখছেন না আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বঙ্গবন্ধু হত্যায় কার কী ভূমিকা আছে, তা দালিলিক প্রমাণসহ প্রস্তাব করা হলে খেতাব বাতিলসহ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭২তম সভায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের এই সুপারিশ করা হয়েছে গত মঙ্গলবার।

এ বিষয়ে গতকাল রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে করোনা টিকা নেয়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘খেতাব বাতিলের ক্ষেত্রে কোন আইনি জটিলতা নেই। যদি কেউ মুক্তিযোদ্ধা হন তাহলে তার মুক্তিযোদ্ধা খেতাব থাকা স্বাভাবিক। যদি এমন হয় যে, মুক্তিযোদ্ধা নাম ধারণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নষ্ট করেছেন, তার কি খেতাব থাকার কোন অধিকার আছে? এই প্রশ্ন আমি দেশবাসীর কাছে রেখে গেলাম।’

এ বিষয়ে জামুকার মহাপরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম রুহেল সংবাদকে বলেন, ‘জামুকার বৈঠকের সিদ্ধান্তের কার্যপত্র বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হবে। সেখান থেকে গেজেট প্রকাশের পর তা বাস্তবায়ন করা হবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়সহ যাদের সুপারিশ নেয়া প্রয়োজনে সব করা হবে। খেতাব বাতিল হলে তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য আর কোন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।’

জামুকার বৈঠকের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত এই চার খুনির খেতাব বাতিলের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামুকার সদস্য শাজাহান খান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের খেতাব বাতিলের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের খেতাবও বাতিলে প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবের সঙ্গে জামুকার চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক অন্য সদস্যরা একমত পোষণ করেন। এর আগে সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদকও প্রত্যাহার করা হয়।

এ বিষয়ে গতকাল গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জিয়াউর রহমানসহ যে পাঁচজনের রাষ্ট্রীয় খেতাব জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা রাজনৈতিক কারণে নয়। দালিলিক প্রমাণ থাকায় এমন আলোচনা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত উপকমিটির পরবর্তী বৈঠকে বঙ্গবন্ধু হত্যায় কার কী ভূমিকা আছে, তা দালিলিক প্রমাণসহ প্রস্তাব করা হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। খেতাব বাতিলের এমন নজির শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর অন্য দেশেও আছে। অনেকের কর্মকাণ্ডের জন্য সম্মানসূচক খেতাব প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বৈঠকে খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান, মাহবুবুল আলম চাষীসহ এ রকম আরও অনেকের নাম নিয়েই কথা হয়েছে। তাদের কার কী ভূমিকা, বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততা কী, তার দালিলিক প্রমাণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী সভায় দালিলিক প্রমাণসহ প্রস্তাবিত হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

জামুকার সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডিত চার পলাতক খুনির খেতাব স্থগিতের জন্য হাই কোর্ট একটি আদেশ দিয়েছিল গত বছরের শেষ দিকে। এরমধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শরিফুল হক ডালিমের নামের সঙ্গে ‘বীর উত্তম’, নূর চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ ও মোসলেহ উদ্দিনের নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ উপাধি রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়া আত্মস্বীকৃত এই চার খুনির খেতাব বাতিলের বিষয়টি জামুকার সভায় উত্থাপন করা হয়। বৈঠকে শাজাহান খানের প্রস্তাবের সঙ্গে অন্য সদস্যরা একমত হয়ে জিয়াউর রহমানের খেতাবও বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। পরে শাজাহান খানকে আহ্বায়ক করে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়।

এর আগে ২০১৬ সালে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার করে জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এছাড়া গত জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু খুনি সেনাবাহিনীর বরখাস্ত রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান ওরফে মোসলেম উদ্দিন খানসহ ৫২ জন মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭০তম সভার সুপারিশের আলোকে তাদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে গত ৫ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মোসলেহ উদ্দিনসহ পাঁচজন পালিয়ে আছেন। এদের মধ্যে চারজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীরত্বের খেতাব পেয়েছিলেন। হাইকোর্ট এক আদেশে তাদের সেই খেতাব স্থগিত করার সুপারিশ করা হয় জামুকার ৭২তম বৈঠকে।