দ্বিতীয় টেস্ট শুরু আজ

চাপে থাকা টাইগারদের ওপর ভর করেছে ইনজুরি

ক্রিকেটকে কেন গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা বলা হয়, তার সর্বশেষ উদাহরণ চট্টগ্রাম টেস্ট। ওই টেস্টের টানা চারদিন দাপটের সঙ্গে এগিয়ে থেকেও শেষদিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় পরাজিত হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রথম টেস্টে শেষদিনের রোমাঞ্চে সফরকারীদের জয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের মাটিতে দাপট দেখানো বাংলাদেশ দল এখন অনেকটাই চাপের মুখে। বলা যায় সিরিজ শুরুর সময়ে স্বাগতিকদের যতটা ফেভারিট ভাবা হচ্ছিল, আগামীকাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে (সকাল সাড়ে ৯টায়) শুরু হতে যাওয়া ম্যাচের আগে ঠিক ততোটাই বোধ হয় পিছিয়ে। চট্টগ্রাম টেস্টে পরাজয়ের সঙ্গে যোগ হয় ইনজুরিতে সাকিব আল হাসানের দল থেকে ছিটকে পড়া।

সফরে আসা ক্যারিবিয়ান দল শেরেবাংলায় খেলতে নামবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। চট্টগ্রামের শেষদিনে স্বাগতিক দলকে পরাজিত করার নায়ক কাইল মায়ার্সের অপরাজিত ২১০ রানের ইনিংসটা ছিল টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয়বারের মতো ডাবল সেঞ্চুরির ঘটনা। তাও আবার অভিষিক্ত এক ক্রিকেটারের ব্যাটে, যার জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের পিচ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাই ছিল না। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ক্যারিবিয়ান দলে সুযোগ পাওয়া আরেক অভিষিক্ত বোলারের ৮৬ রানের ইনিংসটায় ছিল টেস্ট মেজাজের পরিপক্কতার ছোঁয়া। সাগরিকার স্পিন সহায়ক ধীরগতির পিচে তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে টাইগার ব্যাটিং লাইনের উপর ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের তোপও উৎসাহ যোগাবে সফরকারীদের।

শিষ্যদের সাফল্যের পরও সতর্ক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। তিনি মনে করছেন, সাফল্যের শুরু হয়েছে মাত্র। কেন না, অতীতে বহুবার জয়ের কাছাকাছি গিয়েও শিষ্যরা শেষ হাসিটা হাসতে পারেনি। সিমন্স সতর্কতা যেমন সত্যি, ঠিক ততটাই সত্যি ক্লাইভ লয়েডের চিঠি পেয়ে উজ্জীবিত অনভিজ্ঞ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দলের কষ্টসাধ্য টেস্ট জয়। ধৈর্য আর মনোবলের পরীক্ষায় উতরে যাওয়া ক্যারিবিয়ান দলের আত্মবিশ্বাসের পারদ যে অনেক উঁচুতে, সে বিষয়ে আপাতত কোন সংশয় নেই।

ঠিক উল্টোচিত্র বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে। দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে পারছেন না বর্তমানে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ইনজুরির মিছিলে যোগ দিয়েছেন টাইগার ওপেনার সাদমান ইসলামও। সাকিবের বদলি হিসেবে সৌম্য সরকারের নাম ঘোষণার পর তার কোভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়ে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তবে, সাদমানের শূন্যস্থান কে পূরণ করবেন, তা জানা যায়নি।

সাকিব-সাদমানের শূন্যস্থান পূরণ নিয়েই ভাবলে চলছে না বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে। ঘরের মাঠে স্পিনিং উইকেট বানিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশলটা চট্টগ্রামে কাজে লাগেনি। শেরেবাংলার উইকেট স্পিনারদের হয়তো অনেক বেশি সহায়তা করবে, কিন্তু শুধু স্পিনার নিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজানো আদৌ যুক্তিযুক্ত কিনা, সেই প্রশ্নও সামনে এসেছে। চট্টগ্রাম টেস্টে মিরাজ দুই ইনিংসে আট উইকেটের পতন ঘটালেও তাইজুল বা নাঈম সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। সাকিবের অনুপস্থিতিতে দলের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার বিষয়টা স্পষ্ট। ডাক পেলেই মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত হয়েই আছেন সৌম্য, মিথুন, ইয়াসির ও সাইফ হাসানের মতো শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানরা। আবার বোলিং ডিপার্টমেন্টে জায়গা পাওয়ার জন্য প্রস্তুত তাসকিন, আবু জায়েদ, এবাদত ও হাসান মাহমুদ। অবশ্য এদের মধ্যে কেবল সৌম্য সরকারই ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে দলের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারেন। সব মিলিয়ে এলোমেলো অবস্থা।

চট্টগ্রাম টেস্টে জয়ী হওয়া ক্যারিবিয়ান দলটায় পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই ।

ক্লাইভ লয়েডের চিঠিতে উজ্জীবিত ক্যারিবিয়ান দলের চট্টগ্রাম টেস্ট জয়ের নায়ক কাইল মায়ার্স বলেছেন, তিনি ক্রিকেটের একজন ছাত্র, তিনি শেখার মধ্যেই আছেন। ক্রিকেটের এই মনোযোগী ছাত্রটি মিরপুর টেস্টে ঠিকঠাক মতো শেখা বিষয়গুলো মাঠে প্রয়োগ করতে পারলে বাংলাদেশের বোলিং ডিপার্টমেন্টের জন্য দুঃসময় অপেক্ষা করছে। আবার সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে মেহেদি মিরাজ কতটা দায়িত্ব নিতে পারবেন, তার জন্য অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

টাইগারদের টেস্ট দলের অধিনায়ক মোমিনুল হক চট্টগ্রাম টেস্টে পরাজয়ের পর অধিনায়কদের বহুবার বলা পুরানো কথা ‘হারলেও অনেক ইতিবাচক বিষয় শিখেছি’ আওড়ে গেছেন গড়গড় করে। চট্টগ্রাম টেস্টের ফলাফল ঢাকা টেস্টে উল্টে দিতে পারলেই বোঝা যাবে, আসলেই ইতিবাচক কিছু শিখেছে বাংলাদেশ দল।

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৮ মাঘ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

দ্বিতীয় টেস্ট শুরু আজ

চাপে থাকা টাইগারদের ওপর ভর করেছে ইনজুরি

বিশেষ প্রতিনিধি

image

ক্রিকেটকে কেন গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা বলা হয়, তার সর্বশেষ উদাহরণ চট্টগ্রাম টেস্ট। ওই টেস্টের টানা চারদিন দাপটের সঙ্গে এগিয়ে থেকেও শেষদিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় পরাজিত হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রথম টেস্টে শেষদিনের রোমাঞ্চে সফরকারীদের জয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের মাটিতে দাপট দেখানো বাংলাদেশ দল এখন অনেকটাই চাপের মুখে। বলা যায় সিরিজ শুরুর সময়ে স্বাগতিকদের যতটা ফেভারিট ভাবা হচ্ছিল, আগামীকাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে (সকাল সাড়ে ৯টায়) শুরু হতে যাওয়া ম্যাচের আগে ঠিক ততোটাই বোধ হয় পিছিয়ে। চট্টগ্রাম টেস্টে পরাজয়ের সঙ্গে যোগ হয় ইনজুরিতে সাকিব আল হাসানের দল থেকে ছিটকে পড়া।

সফরে আসা ক্যারিবিয়ান দল শেরেবাংলায় খেলতে নামবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। চট্টগ্রামের শেষদিনে স্বাগতিক দলকে পরাজিত করার নায়ক কাইল মায়ার্সের অপরাজিত ২১০ রানের ইনিংসটা ছিল টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয়বারের মতো ডাবল সেঞ্চুরির ঘটনা। তাও আবার অভিষিক্ত এক ক্রিকেটারের ব্যাটে, যার জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের পিচ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাই ছিল না। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ক্যারিবিয়ান দলে সুযোগ পাওয়া আরেক অভিষিক্ত বোলারের ৮৬ রানের ইনিংসটায় ছিল টেস্ট মেজাজের পরিপক্কতার ছোঁয়া। সাগরিকার স্পিন সহায়ক ধীরগতির পিচে তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে টাইগার ব্যাটিং লাইনের উপর ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের তোপও উৎসাহ যোগাবে সফরকারীদের।

শিষ্যদের সাফল্যের পরও সতর্ক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। তিনি মনে করছেন, সাফল্যের শুরু হয়েছে মাত্র। কেন না, অতীতে বহুবার জয়ের কাছাকাছি গিয়েও শিষ্যরা শেষ হাসিটা হাসতে পারেনি। সিমন্স সতর্কতা যেমন সত্যি, ঠিক ততটাই সত্যি ক্লাইভ লয়েডের চিঠি পেয়ে উজ্জীবিত অনভিজ্ঞ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দলের কষ্টসাধ্য টেস্ট জয়। ধৈর্য আর মনোবলের পরীক্ষায় উতরে যাওয়া ক্যারিবিয়ান দলের আত্মবিশ্বাসের পারদ যে অনেক উঁচুতে, সে বিষয়ে আপাতত কোন সংশয় নেই।

ঠিক উল্টোচিত্র বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে। দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে পারছেন না বর্তমানে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ইনজুরির মিছিলে যোগ দিয়েছেন টাইগার ওপেনার সাদমান ইসলামও। সাকিবের বদলি হিসেবে সৌম্য সরকারের নাম ঘোষণার পর তার কোভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়ে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তবে, সাদমানের শূন্যস্থান কে পূরণ করবেন, তা জানা যায়নি।

সাকিব-সাদমানের শূন্যস্থান পূরণ নিয়েই ভাবলে চলছে না বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে। ঘরের মাঠে স্পিনিং উইকেট বানিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশলটা চট্টগ্রামে কাজে লাগেনি। শেরেবাংলার উইকেট স্পিনারদের হয়তো অনেক বেশি সহায়তা করবে, কিন্তু শুধু স্পিনার নিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজানো আদৌ যুক্তিযুক্ত কিনা, সেই প্রশ্নও সামনে এসেছে। চট্টগ্রাম টেস্টে মিরাজ দুই ইনিংসে আট উইকেটের পতন ঘটালেও তাইজুল বা নাঈম সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। সাকিবের অনুপস্থিতিতে দলের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার বিষয়টা স্পষ্ট। ডাক পেলেই মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত হয়েই আছেন সৌম্য, মিথুন, ইয়াসির ও সাইফ হাসানের মতো শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানরা। আবার বোলিং ডিপার্টমেন্টে জায়গা পাওয়ার জন্য প্রস্তুত তাসকিন, আবু জায়েদ, এবাদত ও হাসান মাহমুদ। অবশ্য এদের মধ্যে কেবল সৌম্য সরকারই ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে দলের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারেন। সব মিলিয়ে এলোমেলো অবস্থা।

চট্টগ্রাম টেস্টে জয়ী হওয়া ক্যারিবিয়ান দলটায় পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই ।

ক্লাইভ লয়েডের চিঠিতে উজ্জীবিত ক্যারিবিয়ান দলের চট্টগ্রাম টেস্ট জয়ের নায়ক কাইল মায়ার্স বলেছেন, তিনি ক্রিকেটের একজন ছাত্র, তিনি শেখার মধ্যেই আছেন। ক্রিকেটের এই মনোযোগী ছাত্রটি মিরপুর টেস্টে ঠিকঠাক মতো শেখা বিষয়গুলো মাঠে প্রয়োগ করতে পারলে বাংলাদেশের বোলিং ডিপার্টমেন্টের জন্য দুঃসময় অপেক্ষা করছে। আবার সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে মেহেদি মিরাজ কতটা দায়িত্ব নিতে পারবেন, তার জন্য অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

টাইগারদের টেস্ট দলের অধিনায়ক মোমিনুল হক চট্টগ্রাম টেস্টে পরাজয়ের পর অধিনায়কদের বহুবার বলা পুরানো কথা ‘হারলেও অনেক ইতিবাচক বিষয় শিখেছি’ আওড়ে গেছেন গড়গড় করে। চট্টগ্রাম টেস্টের ফলাফল ঢাকা টেস্টে উল্টে দিতে পারলেই বোঝা যাবে, আসলেই ইতিবাচক কিছু শিখেছে বাংলাদেশ দল।