ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১০

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস-ট্রাক সংঘর্ষে শিশুসহ ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে দুর্ঘটনায় পতিত বাসের মধ্য থেকে। আর একজন মারা গেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এছাড়াও ওই বাসের আহত ৩০ জন যাত্রীকে কালীগঞ্জ ও যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। আহত, নিহতদের অধিকাংশই অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষার্থী।

স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার, কালীগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস, বারোবাজার হাইওয়ে পুলিশের কর্মীরা ও স্থানীয় লোকজন প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার বারোবাজার তেলপাম্পের সামনে। নিহতদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ, ২ জন মহিলা, ১টি শিশু রয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কালীগঞ্জ হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, ইতোমধ্যে ৫ জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন, চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদার আবদুর রশিদের কন্যা রেসমা খাতুন (২৬), একই জেলার নাগদাগ গ্রামের জান্নাতুল বিশ্বাসের ছেলে ওলিউল আলম শুভ (২৬) ও কালীগঞ্জের সুন্দরপুর গ্রামের ইছাহক ম-লের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (২৬) একই উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের রণজিত দাসের ছেলে সোনাতন দাস (২৬) ঝিনাইদহের নাথকুন্ডু গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে ইউনুছ আলী (২৬)। তারা সকলেই মাস্টার্স পরীক্ষার্থী ছিলেন। বাকিদের শনাক্তের কাজ চলছে। ঘটনাস্থলে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার দিনভর উদ্ধার ও লাশ শনাক্তের কাজে সহযোগিতা করছেন। এর আগে ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে একটি পিকআপ ভ্যানে মৃতদেহগুলো কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয় এমপি আনার। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথও ছুটে এসেছেন কালীগঞ্জ হাসপাতালে। মৃতদেহ শনাক্তের কাজ এখনও চলছে। দুর্ঘটনার পর সড়কের সব ধরনের যান চলাচল প্রায় ২ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ড. মামুনুর রশিদ জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী মাগুরা রোডের একটি বাস যার নাম্বার ঢাকা মেট্রো ব- (১১০২১৪) ঝিনাইদহের উদ্দেশে যাচ্ছিল। বাসটি ঝিনাইদহ যশোরের মাঝখানে বারোবাজার তেল পাম্পের কাছে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ সময় দ্রুতগামী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের উপরেই আড়াআড়িভাবে উল্টে পড়ে। এ সময় বাসের সব যাত্রীই রক্তাক্ত আহত হয়। আহতদের চিৎকারে একাবাসী এগিয়ে আসে। এরপর খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসের মধ্য থেকে এ পর্যন্ত ৩০/৩৫ জনকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ ও যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। বাসটির মধ্য থেকে মোট ৯ জন আর হাসপাতালে মারাগেছেন অজ্ঞাত ১ জন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ মাস্টার্স পরীক্ষা ছিল। কাজেই নিহত আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। এলাকাবাসীর দাবি দীর্ঘদিন এ সড়কে চলাচলরত অনেক যাত্রীবাহীবাস বেপরোয়াভাবে চালিয়ে যাত্রী বহন করে আসছে। যে কারণে প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। যার কোন প্রতিকার নেই।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহাফুজুর রহমান মিয়া জানান, হাসপাতালে রেখে লাশ শনাক্তের কাজ চলছে। তবে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। এ পর্যন্ত ৫ জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্তের কাজ এখনও চলছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার জানান, খবর পেয়েই আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। আমি দেখেছি মানুষের আহাজারি। আহতদের আকুতি। আমি নিজে ফায়ার সার্ভিসসহ এলাকার মানুষের সাহায্যে দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এরপর সঙ্গে থেকে মৃতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসে শনাক্ত ও লাশ হস্তান্তের কাজ চালাচ্ছি। তিনি বলেন, এমন বীভৎস ঘটনায় এলাকার নারী-পুরুষ আহত যাত্রীদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল। সর্বশেষ মৃতদেহ শনাক্তের জন্য হাসপাতালে থেকে সাহায্য করছি।

আহাজারী, আর্তনাদে, বাতাস ভারি হয়ে উঠছে

মহাসড়কের উপরেই উল্টে পড়া যাত্রী ভরা বাস। ভিতরে আহাজারী বাঁচাও, বাঁচাও সঙ্গে কান্নার রোল। আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষ বাঁচাতে দৌড়ে আসছেন সব বয়সী মানুষ। বিপদগ্রস্তরা তাদের রক্তের কেউ না। তারপরও যেন কত আপনজন তাদের। গাড়ির ভিতরের বীভৎসতা আর কান্না দেখে তারাও অনেকে অঝারে কাঁদছেন। যে যার মতো এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন। মুহূর্তে পৌঁছে গেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনার। তিনিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। নিজেই উঠে গেলেন বাসের মধ্যে। বের করছেন আহতদের। পাঠাচ্ছেন হাসপাতালে। সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। এ যেন মানবিক সাহায্য। মানুষ বাঁচানোই যেন ব্রত। এমন ঘটনা ঢাকা -খুলনা মহাসড়কের ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বারো বাজারের তেলপাম্পের সামনে। গতকাল বিকেলে যাত্রীবাহী বাস- ট্রাক সংঘর্ষে বাস উল্টে শিশুসহ এ পর্যন্ত ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও ওই বাসের আহত ৩০ জন যাত্রীকে কালীগঞ্জ ও যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। আহত নিহতদের অধিকাংশই মাস্টার্স পরীক্ষার্থী। তারা পরীক্ষা দিয়ে ওই বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলার সাদিকপুর গ্রামের সাজেদুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার, কালীগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস, বারোবাজার হাইওয়ে পুলিশের কর্মীরা ও স্থানীয় লোকজন প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। ঘটনাটি ঘটে গতকাল বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার বারোবাজার তেলপাম্পের সামনে। মানুষের শরীরের রক্তে লাল হয়েছে ঘটনাস্থল। মানুষের এমন বিপদ জীবনে কোনদিন দেখেননি। আমি গিয়ে উদ্ধারে অংশ নিয়ে কাজ করেছি আর অঝোরে কেঁদেছি। আরও কেঁদেছি স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রশাসন, আর এলাকাবাসীর সাহায্য দেখে। সর্বশেষ নিহতদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ২ জন মহিলা ১টি শিশু ছিল। এমন ভাষ্য, ঘটনাস্থলে থাকা কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ড. মামুন অর রশিদেরও। তিনি বলেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

কালীগঞ্জ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ৫ জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন, চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদার আবদুর রশিদের কন্যা রেসমা খাতুন (২৬), একই জেলার নাগদাগ গ্রামের জান্নাতুল বিশ্বাসের ছেলে ওলিউল আলম শুভ (২৬) ও কালীগঞ্জের সুন্দরপুর গ্রামের ইছাহক মন্ডলের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (২৬) একই উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের রনজিত দাসের ছেলে সোনাতন দাস (২৬) ঝিনাইদহের নাথকুন্ডু গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে ইউনুছ আলী (২৬)। তারা সবাই মাস্টার্স পরীক্ষার্থী ছিলেন। বাকিদের শনাক্তের কাজ চলছে। ঘটনাস্থলে স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার দিনভর উদ্ধার ও লাশ শনাক্তের কাজে সহযোগীতা করছেন। এর আগে ঘটনাস্থল থেকে তিনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে একটি পিকআপ ভ্যানে মৃতদেহগুলো কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয় সাংসদ আনার। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথও ছুটে এসেছেন কালীগঞ্জ হাসপাতালে। মৃতদেহ শনাক্তের কাজ এখনও চলছে। দুর্ঘটনার পর সড়কের সব ধরনের যান চলাচল প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী বন্ধ ছিল।

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৮ মাঘ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১০

সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

image

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস-ট্রাক সংঘর্ষে শিশুসহ ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে দুর্ঘটনায় পতিত বাসের মধ্য থেকে। আর একজন মারা গেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এছাড়াও ওই বাসের আহত ৩০ জন যাত্রীকে কালীগঞ্জ ও যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। আহত, নিহতদের অধিকাংশই অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষার্থী।

স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার, কালীগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস, বারোবাজার হাইওয়ে পুলিশের কর্মীরা ও স্থানীয় লোকজন প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার বারোবাজার তেলপাম্পের সামনে। নিহতদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ, ২ জন মহিলা, ১টি শিশু রয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কালীগঞ্জ হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, ইতোমধ্যে ৫ জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন, চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদার আবদুর রশিদের কন্যা রেসমা খাতুন (২৬), একই জেলার নাগদাগ গ্রামের জান্নাতুল বিশ্বাসের ছেলে ওলিউল আলম শুভ (২৬) ও কালীগঞ্জের সুন্দরপুর গ্রামের ইছাহক ম-লের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (২৬) একই উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের রণজিত দাসের ছেলে সোনাতন দাস (২৬) ঝিনাইদহের নাথকুন্ডু গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে ইউনুছ আলী (২৬)। তারা সকলেই মাস্টার্স পরীক্ষার্থী ছিলেন। বাকিদের শনাক্তের কাজ চলছে। ঘটনাস্থলে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার দিনভর উদ্ধার ও লাশ শনাক্তের কাজে সহযোগিতা করছেন। এর আগে ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে একটি পিকআপ ভ্যানে মৃতদেহগুলো কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয় এমপি আনার। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথও ছুটে এসেছেন কালীগঞ্জ হাসপাতালে। মৃতদেহ শনাক্তের কাজ এখনও চলছে। দুর্ঘটনার পর সড়কের সব ধরনের যান চলাচল প্রায় ২ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ড. মামুনুর রশিদ জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী মাগুরা রোডের একটি বাস যার নাম্বার ঢাকা মেট্রো ব- (১১০২১৪) ঝিনাইদহের উদ্দেশে যাচ্ছিল। বাসটি ঝিনাইদহ যশোরের মাঝখানে বারোবাজার তেল পাম্পের কাছে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ সময় দ্রুতগামী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের উপরেই আড়াআড়িভাবে উল্টে পড়ে। এ সময় বাসের সব যাত্রীই রক্তাক্ত আহত হয়। আহতদের চিৎকারে একাবাসী এগিয়ে আসে। এরপর খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসের মধ্য থেকে এ পর্যন্ত ৩০/৩৫ জনকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ ও যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। বাসটির মধ্য থেকে মোট ৯ জন আর হাসপাতালে মারাগেছেন অজ্ঞাত ১ জন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ মাস্টার্স পরীক্ষা ছিল। কাজেই নিহত আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। এলাকাবাসীর দাবি দীর্ঘদিন এ সড়কে চলাচলরত অনেক যাত্রীবাহীবাস বেপরোয়াভাবে চালিয়ে যাত্রী বহন করে আসছে। যে কারণে প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। যার কোন প্রতিকার নেই।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহাফুজুর রহমান মিয়া জানান, হাসপাতালে রেখে লাশ শনাক্তের কাজ চলছে। তবে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। এ পর্যন্ত ৫ জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্তের কাজ এখনও চলছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার জানান, খবর পেয়েই আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। আমি দেখেছি মানুষের আহাজারি। আহতদের আকুতি। আমি নিজে ফায়ার সার্ভিসসহ এলাকার মানুষের সাহায্যে দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এরপর সঙ্গে থেকে মৃতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসে শনাক্ত ও লাশ হস্তান্তের কাজ চালাচ্ছি। তিনি বলেন, এমন বীভৎস ঘটনায় এলাকার নারী-পুরুষ আহত যাত্রীদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল। সর্বশেষ মৃতদেহ শনাক্তের জন্য হাসপাতালে থেকে সাহায্য করছি।

আহাজারী, আর্তনাদে, বাতাস ভারি হয়ে উঠছে

মহাসড়কের উপরেই উল্টে পড়া যাত্রী ভরা বাস। ভিতরে আহাজারী বাঁচাও, বাঁচাও সঙ্গে কান্নার রোল। আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষ বাঁচাতে দৌড়ে আসছেন সব বয়সী মানুষ। বিপদগ্রস্তরা তাদের রক্তের কেউ না। তারপরও যেন কত আপনজন তাদের। গাড়ির ভিতরের বীভৎসতা আর কান্না দেখে তারাও অনেকে অঝারে কাঁদছেন। যে যার মতো এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন। মুহূর্তে পৌঁছে গেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনার। তিনিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। নিজেই উঠে গেলেন বাসের মধ্যে। বের করছেন আহতদের। পাঠাচ্ছেন হাসপাতালে। সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। এ যেন মানবিক সাহায্য। মানুষ বাঁচানোই যেন ব্রত। এমন ঘটনা ঢাকা -খুলনা মহাসড়কের ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বারো বাজারের তেলপাম্পের সামনে। গতকাল বিকেলে যাত্রীবাহী বাস- ট্রাক সংঘর্ষে বাস উল্টে শিশুসহ এ পর্যন্ত ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও ওই বাসের আহত ৩০ জন যাত্রীকে কালীগঞ্জ ও যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। আহত নিহতদের অধিকাংশই মাস্টার্স পরীক্ষার্থী। তারা পরীক্ষা দিয়ে ওই বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলার সাদিকপুর গ্রামের সাজেদুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার, কালীগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস, বারোবাজার হাইওয়ে পুলিশের কর্মীরা ও স্থানীয় লোকজন প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। ঘটনাটি ঘটে গতকাল বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার বারোবাজার তেলপাম্পের সামনে। মানুষের শরীরের রক্তে লাল হয়েছে ঘটনাস্থল। মানুষের এমন বিপদ জীবনে কোনদিন দেখেননি। আমি গিয়ে উদ্ধারে অংশ নিয়ে কাজ করেছি আর অঝোরে কেঁদেছি। আরও কেঁদেছি স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রশাসন, আর এলাকাবাসীর সাহায্য দেখে। সর্বশেষ নিহতদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ২ জন মহিলা ১টি শিশু ছিল। এমন ভাষ্য, ঘটনাস্থলে থাকা কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ড. মামুন অর রশিদেরও। তিনি বলেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

কালীগঞ্জ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ৫ জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন, চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদার আবদুর রশিদের কন্যা রেসমা খাতুন (২৬), একই জেলার নাগদাগ গ্রামের জান্নাতুল বিশ্বাসের ছেলে ওলিউল আলম শুভ (২৬) ও কালীগঞ্জের সুন্দরপুর গ্রামের ইছাহক মন্ডলের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (২৬) একই উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের রনজিত দাসের ছেলে সোনাতন দাস (২৬) ঝিনাইদহের নাথকুন্ডু গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে ইউনুছ আলী (২৬)। তারা সবাই মাস্টার্স পরীক্ষার্থী ছিলেন। বাকিদের শনাক্তের কাজ চলছে। ঘটনাস্থলে স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার দিনভর উদ্ধার ও লাশ শনাক্তের কাজে সহযোগীতা করছেন। এর আগে ঘটনাস্থল থেকে তিনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে একটি পিকআপ ভ্যানে মৃতদেহগুলো কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয় সাংসদ আনার। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথও ছুটে এসেছেন কালীগঞ্জ হাসপাতালে। মৃতদেহ শনাক্তের কাজ এখনও চলছে। দুর্ঘটনার পর সড়কের সব ধরনের যান চলাচল প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী বন্ধ ছিল।