হিমালয়ের হিমবাহ দুর্যোগ সতর্ক করা হয়েছিল আগেই

ভারতের উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় পাহাড়ি ঢলে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১। আরও নিখোঁজ আছেন ১৬৫ জন। আরো অনেক মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। হিমালয় পর্বতে পাহাড়ি ধস অথবা হিমবাহ থেকে সৃষ্ট বন্যায় প্রথমে একটি ছোট বাধ ভাসিয়ে নেয়। সেই বাধের ধ্বংসাবশেষসহ সেই ঢল আরও শক্তিশালী হয়ে আঘাত হানে আরেক নির্মাণাধীন বাধে। সেটাকেও গুড়িয়ে দিয়ে আরও ভারি সেই ঢল এখন সেখানে মহাপ্রলয় ঘটিয়ে চলেছে।

পাহাড়ি ধসের কারণে বরফ গলে নাকি বরফ গলার কারণে সৃষ্ট পাহাড়ি ধসের কারণে এই ঢল নেমেছে তা নিয়ে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এ ধরনের দুর্ঘটনার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে অনেক জায়গাতেই হিমালয় পর্বতের বরফ গলে গেছে।

ইন্দোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির হিমবাহ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফারুক আজম আলজাজিরাকে জানান এসব জায়গায় যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৬ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ২০ ডিগ্রি থাকত, সেখানে তাপমাত্রা বেড়ে মাইনাস ২ ডিগ্রিতে চলে এসেছে।

২০১৯ এ প্রকাশিত সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, হিমালয়ের পর্বতের বরফ ২৫ বছর আগের তুলনায় এখন দ্বিগুণ গতিতে গলছে। ইতোমধ্যেইে হিমালয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের জীবনে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দুর্যোগের মুখে অনেককেই স্থানান্তরিত হতে হয়েছে। আশঙ্কা, আরও প্রভাব পড়বে। তা সত্ত্বেও ভারত সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে।

অথচ যে নির্মাণাধীন বাধ প্রকল্পটি ভেসে গেল, সেটার ব্যাপারে ভারতের সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ দল সেই ২০১৪ সালেই সতর্ক করে রেখেছিল সরকারকে। উপগ্রহ থেকে পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করে হিমালয় পর্বতমালার চূড়ায় জমে থাকা বরফের পরিস্থিতি ও তা গলে যাওয়ার সম্ভাবনা, ভূমিধস এবং এ ধরনের ঢলের বিষয়ে সেসময় সতর্ক করেছিল তারা। ওই বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য, পিপল’স সায়েন্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক রবি চোপড়া বলেন, ‘সরকারকে স্পষ্টভাবেই সতর্ক করা হয়েছিল, তারপরও তারা শোনেনি।’

উত্তরাখণ্ডের রাজ্য সরকার বলছে, প্রতিবছর বিদ্যুৎ কিনতে ১৪ কোটি ডলার গুণতে হয় তাদের। সৌরশক্তি বা বায়ুশক্তি বিকল্প হতে পারতো। তাদের কথায় কর্ণপাত না করে জলবিদ্যুতের জন্য ওই বাধ নির্মাণ করছিল তারা। এতে যে সেখানকার অধিবাসীরা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ থেকে বঞ্চিত হলো তাই নয়, এর ফলে গোটা হিমালয় অঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্য আরও হুমকির মুখে পড়লো।

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৮ মাঘ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

হিমালয়ের হিমবাহ দুর্যোগ সতর্ক করা হয়েছিল আগেই

সংবাদ ডেস্ক |

ভারতের উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় পাহাড়ি ঢলে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১। আরও নিখোঁজ আছেন ১৬৫ জন। আরো অনেক মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। হিমালয় পর্বতে পাহাড়ি ধস অথবা হিমবাহ থেকে সৃষ্ট বন্যায় প্রথমে একটি ছোট বাধ ভাসিয়ে নেয়। সেই বাধের ধ্বংসাবশেষসহ সেই ঢল আরও শক্তিশালী হয়ে আঘাত হানে আরেক নির্মাণাধীন বাধে। সেটাকেও গুড়িয়ে দিয়ে আরও ভারি সেই ঢল এখন সেখানে মহাপ্রলয় ঘটিয়ে চলেছে।

পাহাড়ি ধসের কারণে বরফ গলে নাকি বরফ গলার কারণে সৃষ্ট পাহাড়ি ধসের কারণে এই ঢল নেমেছে তা নিয়ে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এ ধরনের দুর্ঘটনার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে অনেক জায়গাতেই হিমালয় পর্বতের বরফ গলে গেছে।

ইন্দোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির হিমবাহ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফারুক আজম আলজাজিরাকে জানান এসব জায়গায় যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৬ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ২০ ডিগ্রি থাকত, সেখানে তাপমাত্রা বেড়ে মাইনাস ২ ডিগ্রিতে চলে এসেছে।

২০১৯ এ প্রকাশিত সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, হিমালয়ের পর্বতের বরফ ২৫ বছর আগের তুলনায় এখন দ্বিগুণ গতিতে গলছে। ইতোমধ্যেইে হিমালয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের জীবনে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দুর্যোগের মুখে অনেককেই স্থানান্তরিত হতে হয়েছে। আশঙ্কা, আরও প্রভাব পড়বে। তা সত্ত্বেও ভারত সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে।

অথচ যে নির্মাণাধীন বাধ প্রকল্পটি ভেসে গেল, সেটার ব্যাপারে ভারতের সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ দল সেই ২০১৪ সালেই সতর্ক করে রেখেছিল সরকারকে। উপগ্রহ থেকে পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করে হিমালয় পর্বতমালার চূড়ায় জমে থাকা বরফের পরিস্থিতি ও তা গলে যাওয়ার সম্ভাবনা, ভূমিধস এবং এ ধরনের ঢলের বিষয়ে সেসময় সতর্ক করেছিল তারা। ওই বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য, পিপল’স সায়েন্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক রবি চোপড়া বলেন, ‘সরকারকে স্পষ্টভাবেই সতর্ক করা হয়েছিল, তারপরও তারা শোনেনি।’

উত্তরাখণ্ডের রাজ্য সরকার বলছে, প্রতিবছর বিদ্যুৎ কিনতে ১৪ কোটি ডলার গুণতে হয় তাদের। সৌরশক্তি বা বায়ুশক্তি বিকল্প হতে পারতো। তাদের কথায় কর্ণপাত না করে জলবিদ্যুতের জন্য ওই বাধ নির্মাণ করছিল তারা। এতে যে সেখানকার অধিবাসীরা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ থেকে বঞ্চিত হলো তাই নয়, এর ফলে গোটা হিমালয় অঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্য আরও হুমকির মুখে পড়লো।