বহিষ্কারের পরও বিদ্রোহীরা সরেনি অস্বস্তিকর অবস্থায় নৌকার প্রার্থী

বরিশালের বানারীপাড়া ও মুলাদী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী মাঠ অনুকূলে রাখতে দুই বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীসহ এ পর্যন্ত ১৪ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকার কথা বলেছেন। তাদের প্রচার-প্রচারণায় বাঁধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন নৌকা প্রতীকের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি এ দুটি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়েছেন বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল হক মিন্টু (নারিকেল গাছ) ও মুলাদী উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম খান (মোবাইল ফোন)। গত মঙ্গলবার রাতে জেলা কমিটির সম্পাদকের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের দলীয় পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।

তাদের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করার অভিযোগে আরও বহিস্কৃত হয়েছেন বানারীপাড়া পৌর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মাহফুজুল হক মাসুম, ১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি হাবিবুর রহমান, ছায়েদুর রহমান, মুলাদী উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আ. রব মুন্সী, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আলমগীর হোসেন হাওলাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহউদ্দিন হাওলাদার এবং আওয়ামী লীগ নেতা মো. মশিউর রহমান টিপু, মিজানুর রহমান, মোসলেম উদ্দিন বয়াতি, দেলোয়ার হোসেন, এমএ আজিজ ও আনোয়ার হোসেন তালুকদার। উল্লেখিত ১৪ জনকে চূড়ান্তভাবে দল থেকে বহিস্কার করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুই পৌরসভাতেই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের একটি অংশ স্বতন্ত্রপ্রার্থীর পক্ষে এবং বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা নামমাত্র প্রচারণায় থাকায় নৌকা প্রতীকের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। স্থানীয় বিএনপিতে কোন্দলে নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ দলীয় প্রার্থীর পাশে না থাকায় এই অংশটির ভোটও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বানারীপাড়ার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জিয়াউল হক বলেন, তার পক্ষে প্রচারণায় নামলে পোস্টার-লিফলেট ছিনিয়ে নেয় নৌকার কর্মীরা। তিনি নিজেও নিরাপত্তার অভাবে প্রচারণায় নামতে পারছেন না। মুলাদীর স্বতন্ত্র প্রার্থী দিদারুল আহসান খান অভিযোগ করেন, তার কর্মীদের মাঠে নামতে দিচ্ছেন না নৌকার কর্মীরা। প্রচার মাইক ভাঙচুর করেছে, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা এবং কয়েক কর্মীকে মারধর করে আহত করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মুলাদীতে নৌকার প্রার্থী শফিকুজ্জামান রুবেল বলেছেন, আওয়ামী লীগের সব কর্মী তার সঙ্গে আছেন। মুলাদীতে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার কারণে ভোটাররাও আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করবেন। বানারীপাড়ার মেয়র  প্রার্থী সুভাষ চন্দ্রশীল বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ বেশ ভালো। স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি অবগত নন।

এদিকে দুই পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা হচ্ছেন বানারীপাড়ায় রিয়াজ মৃধা ও মুলাদীতে অধ্যাপক আল মামুন। তবে এ দুই পৌরসভাতে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে চোখে পড়ার কোন প্রচারণা নেই। বিএনপির প্রার্থী রিয়াজ মৃধা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি প্রচারণায় নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এলাকায় বহিরাগতরা অবস্থান করছে। একই অভিযোগ মুলাদী বিএনপির প্রার্থীর।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বলেন, তিনি কয়েকটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে আমলে নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকেও অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রার্থীদের অভিযোগের মূল বিষয় হলো বহিরাগত প্রবেশ। ভোটের আগ মুহূর্তে মাইকিং করে এদের সরিয়ে দেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৮ মাঘ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বরিশালে দুই পৌর নির্বাচন

বহিষ্কারের পরও বিদ্রোহীরা সরেনি অস্বস্তিকর অবস্থায় নৌকার প্রার্থী

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

বরিশালের বানারীপাড়া ও মুলাদী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী মাঠ অনুকূলে রাখতে দুই বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীসহ এ পর্যন্ত ১৪ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকার কথা বলেছেন। তাদের প্রচার-প্রচারণায় বাঁধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন নৌকা প্রতীকের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি এ দুটি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়েছেন বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল হক মিন্টু (নারিকেল গাছ) ও মুলাদী উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম খান (মোবাইল ফোন)। গত মঙ্গলবার রাতে জেলা কমিটির সম্পাদকের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের দলীয় পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।

তাদের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করার অভিযোগে আরও বহিস্কৃত হয়েছেন বানারীপাড়া পৌর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মাহফুজুল হক মাসুম, ১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি হাবিবুর রহমান, ছায়েদুর রহমান, মুলাদী উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আ. রব মুন্সী, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আলমগীর হোসেন হাওলাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহউদ্দিন হাওলাদার এবং আওয়ামী লীগ নেতা মো. মশিউর রহমান টিপু, মিজানুর রহমান, মোসলেম উদ্দিন বয়াতি, দেলোয়ার হোসেন, এমএ আজিজ ও আনোয়ার হোসেন তালুকদার। উল্লেখিত ১৪ জনকে চূড়ান্তভাবে দল থেকে বহিস্কার করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুই পৌরসভাতেই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের একটি অংশ স্বতন্ত্রপ্রার্থীর পক্ষে এবং বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা নামমাত্র প্রচারণায় থাকায় নৌকা প্রতীকের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। স্থানীয় বিএনপিতে কোন্দলে নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ দলীয় প্রার্থীর পাশে না থাকায় এই অংশটির ভোটও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বানারীপাড়ার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জিয়াউল হক বলেন, তার পক্ষে প্রচারণায় নামলে পোস্টার-লিফলেট ছিনিয়ে নেয় নৌকার কর্মীরা। তিনি নিজেও নিরাপত্তার অভাবে প্রচারণায় নামতে পারছেন না। মুলাদীর স্বতন্ত্র প্রার্থী দিদারুল আহসান খান অভিযোগ করেন, তার কর্মীদের মাঠে নামতে দিচ্ছেন না নৌকার কর্মীরা। প্রচার মাইক ভাঙচুর করেছে, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা এবং কয়েক কর্মীকে মারধর করে আহত করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মুলাদীতে নৌকার প্রার্থী শফিকুজ্জামান রুবেল বলেছেন, আওয়ামী লীগের সব কর্মী তার সঙ্গে আছেন। মুলাদীতে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার কারণে ভোটাররাও আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করবেন। বানারীপাড়ার মেয়র  প্রার্থী সুভাষ চন্দ্রশীল বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ বেশ ভালো। স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি অবগত নন।

এদিকে দুই পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা হচ্ছেন বানারীপাড়ায় রিয়াজ মৃধা ও মুলাদীতে অধ্যাপক আল মামুন। তবে এ দুই পৌরসভাতে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে চোখে পড়ার কোন প্রচারণা নেই। বিএনপির প্রার্থী রিয়াজ মৃধা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি প্রচারণায় নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এলাকায় বহিরাগতরা অবস্থান করছে। একই অভিযোগ মুলাদী বিএনপির প্রার্থীর।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বলেন, তিনি কয়েকটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে আমলে নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকেও অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রার্থীদের অভিযোগের মূল বিষয় হলো বহিরাগত প্রবেশ। ভোটের আগ মুহূর্তে মাইকিং করে এদের সরিয়ে দেয়া হবে।