রংপুরে এলজিইডির দুই প্রকৌশলী কারাগারে

ঘুষ দাবি ও সরকারের ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ক্ষতিসাধনের মামলায় রংপুরে এলজিইডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী কাওছার আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল তারা দু’জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং স্পেশাল জজ শাহেনুর এ আদেশ দেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, রংপুর এলজিইডির অধীনে প্রায় ৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের দুটি টেন্ডারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রবিউল ইসলাম বুলবুল সর্বনিম্ন দরপত্র দাতা বিবেচিত হবার পরেও শতকরা দুই ভাগ হারে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে না পাওয়ায় অন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। এতে করে সরকারের ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় ঠিকাদার রবিউল আদালতে অভিযোগ দায়ের করলে বিচারক মামলাটি তদন্ত করার জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। দুদকের রংপুর অফিসের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম তদন্ত শেষে এলজিইডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন ও সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী কাওছার আলমসহ (বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত) ৪ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।

সরকার পক্ষের আইনজীবী পিপি আবদুল মালেক অ্যাডভোকেট জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রবিউল ইসলাম ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রংপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর আহ্বান করা টেন্ডার মতে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দশ লাখ টাকার সিকিউরিটি মানি টেন্ডার দাখিল করেন। যার প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এবং একই বছরের ৪ মার্চ আরও একটি টেন্ডারে ৬ লাখ টাকা সিকিউরিটি মানিসহ টেন্ডার দাখিল করেন। ওই টেন্ডারের প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

দুটি টেন্ডারেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রবিউল সর্বনিম্ন দরপত্রদাতা বিবেচিত হন। এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেনের কাছে কার্যাদেশ দেবার আহ্বান জানালে নির্বাহী প্রকৌশলী সহকারী প্রকৌশলী আসামি কাওছার আলমের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এরপর দুই আসামি সহকারী প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করলে তিনি শতকরা দুই ভাগ হারে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা না দিলে কার্যাদেশ দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। ঠিকাদার রবিউল আলম ঘুষ দিতে রাজি না হলে সর্বনিস্ন দরপত্রদাতা হওয়া সত্ত্বেও তাকে কার্যাদেশ না দিয়ে উচ্চমূল্যে দাখিল করা এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। এতে সরকারের ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় বাদী একই বছরের ৭ মে জেলা জজ আদালতে নালিশি মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি তদন্ত করার জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। দুদকের রংপুর অফিসের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম তদন্ত শেষে এলজিইডির দুই প্রকৌশলীসহ ৪ জনের নামে আদালতে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন।

দুদক আইনজীবী হারুনর রশীদ অ্যাডভোকেট জানান, ঘুষ দাবি করে না পাওয়ায় এলজিইডি সর্বনিম্ন দরপত্রদাতা বলে বিবেচিত হবার পরেও বাদীকে কার্যাদেশ প্রদান করেন নাই। দুদক তদন্তে সেটা প্রমাণিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৮ মাঘ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ঘুষ দাবির মামলা

রংপুরে এলজিইডির দুই প্রকৌশলী কারাগারে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

ঘুষ দাবি ও সরকারের ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ক্ষতিসাধনের মামলায় রংপুরে এলজিইডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী কাওছার আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল তারা দু’জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং স্পেশাল জজ শাহেনুর এ আদেশ দেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, রংপুর এলজিইডির অধীনে প্রায় ৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের দুটি টেন্ডারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রবিউল ইসলাম বুলবুল সর্বনিম্ন দরপত্র দাতা বিবেচিত হবার পরেও শতকরা দুই ভাগ হারে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে না পাওয়ায় অন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। এতে করে সরকারের ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় ঠিকাদার রবিউল আদালতে অভিযোগ দায়ের করলে বিচারক মামলাটি তদন্ত করার জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। দুদকের রংপুর অফিসের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম তদন্ত শেষে এলজিইডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন ও সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী কাওছার আলমসহ (বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত) ৪ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।

সরকার পক্ষের আইনজীবী পিপি আবদুল মালেক অ্যাডভোকেট জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রবিউল ইসলাম ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রংপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর আহ্বান করা টেন্ডার মতে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দশ লাখ টাকার সিকিউরিটি মানি টেন্ডার দাখিল করেন। যার প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এবং একই বছরের ৪ মার্চ আরও একটি টেন্ডারে ৬ লাখ টাকা সিকিউরিটি মানিসহ টেন্ডার দাখিল করেন। ওই টেন্ডারের প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

দুটি টেন্ডারেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রবিউল সর্বনিম্ন দরপত্রদাতা বিবেচিত হন। এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেনের কাছে কার্যাদেশ দেবার আহ্বান জানালে নির্বাহী প্রকৌশলী সহকারী প্রকৌশলী আসামি কাওছার আলমের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এরপর দুই আসামি সহকারী প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করলে তিনি শতকরা দুই ভাগ হারে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা না দিলে কার্যাদেশ দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। ঠিকাদার রবিউল আলম ঘুষ দিতে রাজি না হলে সর্বনিস্ন দরপত্রদাতা হওয়া সত্ত্বেও তাকে কার্যাদেশ না দিয়ে উচ্চমূল্যে দাখিল করা এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। এতে সরকারের ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় বাদী একই বছরের ৭ মে জেলা জজ আদালতে নালিশি মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি তদন্ত করার জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। দুদকের রংপুর অফিসের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম তদন্ত শেষে এলজিইডির দুই প্রকৌশলীসহ ৪ জনের নামে আদালতে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন।

দুদক আইনজীবী হারুনর রশীদ অ্যাডভোকেট জানান, ঘুষ দাবি করে না পাওয়ায় এলজিইডি সর্বনিম্ন দরপত্রদাতা বলে বিবেচিত হবার পরেও বাদীকে কার্যাদেশ প্রদান করেন নাই। দুদক তদন্তে সেটা প্রমাণিত হয়েছে।