কর-জিডিপি রেশিও ১৭ শতাংশে নিতে চান অর্থমন্ত্রী

দেশের উন্নয়ন এগিয়ে নিতে কর-জিডিপি রেশিও ১৬ থেকে ১৭ শতাংশে উন্নীত করতে হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এজন্য ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন হলেও আমরা সেই পর্যায়ে যেতে পারিনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ২০১৯-২০ কর বছরের সেরা করদাতাদের সম্মাননা ও ট্যাক্স কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সেরা করদাতাদের সম্মাননার মধ্য দিয়ে আগামীতে আরও করদাতা ও করের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আগে কর নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ভয়ভীতি ছিল, যা এখন অনেকটা দূর হয়েছে। কর সংগ্রহের সিস্টেম আরও উন্নত করা দরকার। এটা করতে পারলে জনগণ করের আওতায় চলে আসবে। দেশের মানুষ কর দিতে চায়। আমরা সব জায়গায় পৌঁছাতে পারি না। সমন্বয় করতে পারলে করের আওতায় বাড়বে। এ প্রজন্ম হচ্ছে রেভিনিউ জেনারেশন। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনায় আমাদের কর জিডিপি অনুপাত এখনও অনেক কম। আমাদের অন্তত ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ কর জিডিপি হওয়া উচিত। এজন্য রাজস্ব বোর্ডকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় যেতে হবে। তাহলে যেসব খাত থেকে কর পাই তা আরও বেড়ে যাবে। নতুন নতুন খাত বের হয়ে আসবে। দেরি না করে কর ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করুন। সেক্ষেত্রে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে রাজস্ব বোর্ডকে। প্রত্যক্ষ কর বেড়েছে। আমাদের আরও বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে করের হার না বাড়িয়ে আওতা বাড়াতে হবে। রেট না কমালে করের আওতা বাড়বে না। মোট কথা খাত বৃদ্ধি করতে হবে। সেটা করতে পারলে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।

সবাইকে কর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিজে কর দেবেন, অন্যকেও কর প্রদানে উৎসাহিত করবেন। আমাদের অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। আরও মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এতকিছু করা সাহস আসে করদাতাদের কাছ থেকে। এজন্য করের আওতায় বৃদ্ধি করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

এবারে ৩৬ টি ক্যাটাগরিতে ঢাকাসহ সারাদেশে মোট ৬৬৫ জনকে সেরা করদাতা হিসেবে মনোনীত করে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ১৪১ জনকে ট্যাক্স কার্ড প্রদান করে এনবিআর। ২০১৯-২০ কর বছরে ট্যাক্স কার্ড পেয়েছে ব্যক্তি পর্যায়ে ৭৬ জন, কোম্পানি- ৫৩ এবং অন্যান্য ১২টি। ২০১৯-২০ কর বছরে সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ে ৫২৪ জন ও ঢাকায় ১৪১ জন মনোনীত করা হয়েছে। সেরা ১৪১ জনের মধ্যে কোম্পানি ও ব্যক্তি পর্যায়ের মোট ১০ জনকে সশরীরে সম্মাননা স্মারক ও ট্যাক্স কার্ড তুলে দেয়া হয়।

পাঁচটি প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে রয়েছে- গ্রামীণফোন, আকিজ গ্রুপ, বাংলাদেশ আমেরিকান ট্যোবাকো, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক ও ইউনিলিভার লিমটেড। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে স্মারক ও ট্যাক্স কার্ড গ্রহণ করেন সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, রুবাইয়া ফারজানা হোসেন, হোসনে আরা হোসেন, লাইলা হোসেন ও হাজী মো. কাউস মিয়া। বাকি ১৩১টি ট্যাক্স কার্ডপ্রাপ্তরা করোনার কারণে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

ট্যাক্সকার্ড পাওয়া ব্যক্তি করদাতা, কোম্পানি বা অন্যান্য শ্রেণির করদাতারা ট্যাক্স কার্ডধারী হিসেবে বিবেচিত হবেন। এছাড়া, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন। যেকোনো ভ্রমণে বিমান, রেল ও জলপথে সরকারি যানবাহনে টিকিটপ্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন। ট্যাক্স কার্ডধারীর স্ত্রী-স্বামী, নির্ভরশীল ছেলেমেয়ে ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন। বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেলে বুকিং প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন।

অনুষ্ঠানে করোনায় মারা যাওয়া এনবিআরের ৮ কর্মকর্তার পরিবারের হাতে সমবেদনা স্মারক তুলে দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, কর আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হলে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি কর আহরণকারী কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতেও কাজ করতে হবে এনবিআরকে।

শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৯ মাঘ ১৪২৭, ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

কর-জিডিপি রেশিও ১৭ শতাংশে নিতে চান অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

দেশের উন্নয়ন এগিয়ে নিতে কর-জিডিপি রেশিও ১৬ থেকে ১৭ শতাংশে উন্নীত করতে হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এজন্য ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন হলেও আমরা সেই পর্যায়ে যেতে পারিনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ২০১৯-২০ কর বছরের সেরা করদাতাদের সম্মাননা ও ট্যাক্স কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সেরা করদাতাদের সম্মাননার মধ্য দিয়ে আগামীতে আরও করদাতা ও করের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আগে কর নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ভয়ভীতি ছিল, যা এখন অনেকটা দূর হয়েছে। কর সংগ্রহের সিস্টেম আরও উন্নত করা দরকার। এটা করতে পারলে জনগণ করের আওতায় চলে আসবে। দেশের মানুষ কর দিতে চায়। আমরা সব জায়গায় পৌঁছাতে পারি না। সমন্বয় করতে পারলে করের আওতায় বাড়বে। এ প্রজন্ম হচ্ছে রেভিনিউ জেনারেশন। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনায় আমাদের কর জিডিপি অনুপাত এখনও অনেক কম। আমাদের অন্তত ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ কর জিডিপি হওয়া উচিত। এজন্য রাজস্ব বোর্ডকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় যেতে হবে। তাহলে যেসব খাত থেকে কর পাই তা আরও বেড়ে যাবে। নতুন নতুন খাত বের হয়ে আসবে। দেরি না করে কর ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করুন। সেক্ষেত্রে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে রাজস্ব বোর্ডকে। প্রত্যক্ষ কর বেড়েছে। আমাদের আরও বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে করের হার না বাড়িয়ে আওতা বাড়াতে হবে। রেট না কমালে করের আওতা বাড়বে না। মোট কথা খাত বৃদ্ধি করতে হবে। সেটা করতে পারলে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।

সবাইকে কর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিজে কর দেবেন, অন্যকেও কর প্রদানে উৎসাহিত করবেন। আমাদের অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। আরও মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এতকিছু করা সাহস আসে করদাতাদের কাছ থেকে। এজন্য করের আওতায় বৃদ্ধি করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

এবারে ৩৬ টি ক্যাটাগরিতে ঢাকাসহ সারাদেশে মোট ৬৬৫ জনকে সেরা করদাতা হিসেবে মনোনীত করে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ১৪১ জনকে ট্যাক্স কার্ড প্রদান করে এনবিআর। ২০১৯-২০ কর বছরে ট্যাক্স কার্ড পেয়েছে ব্যক্তি পর্যায়ে ৭৬ জন, কোম্পানি- ৫৩ এবং অন্যান্য ১২টি। ২০১৯-২০ কর বছরে সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ে ৫২৪ জন ও ঢাকায় ১৪১ জন মনোনীত করা হয়েছে। সেরা ১৪১ জনের মধ্যে কোম্পানি ও ব্যক্তি পর্যায়ের মোট ১০ জনকে সশরীরে সম্মাননা স্মারক ও ট্যাক্স কার্ড তুলে দেয়া হয়।

পাঁচটি প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে রয়েছে- গ্রামীণফোন, আকিজ গ্রুপ, বাংলাদেশ আমেরিকান ট্যোবাকো, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক ও ইউনিলিভার লিমটেড। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে স্মারক ও ট্যাক্স কার্ড গ্রহণ করেন সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, রুবাইয়া ফারজানা হোসেন, হোসনে আরা হোসেন, লাইলা হোসেন ও হাজী মো. কাউস মিয়া। বাকি ১৩১টি ট্যাক্স কার্ডপ্রাপ্তরা করোনার কারণে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

ট্যাক্সকার্ড পাওয়া ব্যক্তি করদাতা, কোম্পানি বা অন্যান্য শ্রেণির করদাতারা ট্যাক্স কার্ডধারী হিসেবে বিবেচিত হবেন। এছাড়া, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন। যেকোনো ভ্রমণে বিমান, রেল ও জলপথে সরকারি যানবাহনে টিকিটপ্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন। ট্যাক্স কার্ডধারীর স্ত্রী-স্বামী, নির্ভরশীল ছেলেমেয়ে ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন। বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেলে বুকিং প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন।

অনুষ্ঠানে করোনায় মারা যাওয়া এনবিআরের ৮ কর্মকর্তার পরিবারের হাতে সমবেদনা স্মারক তুলে দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, কর আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হলে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি কর আহরণকারী কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতেও কাজ করতে হবে এনবিআরকে।