৫ম দিন সাড়ে ৬ গুণ বেড়েছে

টিকা নিলেন ৫ লাখ ৪২ হাজার ৩০৯ জন

দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচির পঞ্চম দিনে করোনার টিকা নেয়ার হার প্রথম দিনের তুলনায় সাড়ে ৬ গুণ বেড়েছে। দিন যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ‘অন-স্পট’ নিবন্ধনের জন্য আসা মানুষের ভিড়। তবে আপাতত ‘অন-স্পট’ নিবন্ধন করে টিকাদান বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গতকাল সারাদেশে কোভিড-১৯ টিকা নিয়েছেন দুই লাখ চার হাজার ৫৪০ জন। এর মধ্যে রাজধানীতেই টিকা নিয়েছেন ২৪ হাজার ৪৫৩ জন। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, মগবাজারের নগর মাতৃসদন কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, শতশত মানুষের ভিড়। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগাম ‘নিবন্ধন এসএমএস’র চাহিদা অনুযায়ী সব টিকাকেন্দ্রেই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকা সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ‘অন-স্পট’ অর্থাৎ তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকা নিতে আগ্রহীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় টিকাদান কর্মীরা সবাইকে তা দিতে পারছেন না। এতে টিকা না পাওয়া ব্যক্তিরা নানা রকম ঝামেলা করছেন। কেন্দ্রেগুলোতে ভিড় সামলাতে পারছেন না কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ভ্যাকসিন (টিকা) নিয়েছেন পাঁচ লাখ ৪২ হাজার ৩০৯ জন। গতকাল টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে ৮৬ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রথম দিন ৩১ হাজার ১৬০ জন, দ্বিতীয় দিন ৪৬ হাজার ৫০৯ জন, তৃতীয় দিন এক লাখ এক হাজার ৮২ জন এবং চতুর্থ দিন এক লাখ ৫৮ হাজার ৪৫১ জন করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

টিকাকেন্দ্রে নিবন্ধন বন্ধ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করে টিকা নেয়ার সুবিধা আপাতত বন্ধ থাকছে। এখন থেকে যারা নিবন্ধন করে আসবেন, শুধু তাদেরই টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিকাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিবন্ধন না করে অনেকে টিকা নিতে আসছেন। এতে বিভিন্ন কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড় তৈরি হচ্ছে। এখন থেকে যারা নিবন্ধন করে আসবেন, শুধু তাদেরই টিকা দেয়া হবে। ভবিষ্যতে যদি টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে তখন আবারও জানানো হবে।’

গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষ করোনার টিকা নেয়ার জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের (www.surokkha.gov.bd) মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপরই সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন শুরু হয়। আর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

ইতোমধ্যে তিন লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যারা অন-স্পট রেজিস্ট্রেশন করেছেন, তাদের সংখ্যাই বেশি। আর যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, তারাই ঢুকতে পারছেন না। বয়স্ক লোকেরা কেন্দ্রে যাচ্ছেন, তাদের কষ্ট হচ্ছে। যারা ভ্যাকসিন দিচ্ছেন- ডাক্তার ও নার্স তাদেরও কষ্ট হচ্ছে। আমরা এই পরিস্থিতি চলতে দিতে চাই না।’

দেশজুড়ে টিকা দেয়ার জন্য গ্রামাঞ্চলের এবং যাদের স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের সুবিধা নেই, তাদের জন্য কাছের টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নেয়ার সুযোগ ছিল।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে, তখন আবারও জানানো হবে।’

মানুষের টিকা নেয়ার আগ্রহ অনেক বেড়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এখন দেখছি যে, সব জায়গায় আগে ভিড় কম ছিল। এখন অনেক ভিড়। অনেক লোক যাচ্ছে, মানুষের কনফিডেন্স বাড়ছে। ভ্যাকসিন নিয়েও নানা কথাবার্তা ছিল। মানুষের সব কথাবার্তা ভুল প্রমাণিত করে, তোয়াক্কা না করে, এখন সবাই ভ্যাকসিনের ওপরে আস্থা নিয়ে ভ্যাকসিন নিতে যাচ্ছেন।’

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠ কার্যক্রম ‘পেপারলেস’ করার ঘোষণা দিতে রাজধানীর ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আলী নূর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুও উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৯ মাঘ ১৪২৭, ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

৫ম দিন সাড়ে ৬ গুণ বেড়েছে

টিকা নিলেন ৫ লাখ ৪২ হাজার ৩০৯ জন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে গতকাল পঞ্চম দিন টিকা গ্রহীতাদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। আগারগাঁও নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের চিত্র -সংবাদ

দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচির পঞ্চম দিনে করোনার টিকা নেয়ার হার প্রথম দিনের তুলনায় সাড়ে ৬ গুণ বেড়েছে। দিন যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ‘অন-স্পট’ নিবন্ধনের জন্য আসা মানুষের ভিড়। তবে আপাতত ‘অন-স্পট’ নিবন্ধন করে টিকাদান বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গতকাল সারাদেশে কোভিড-১৯ টিকা নিয়েছেন দুই লাখ চার হাজার ৫৪০ জন। এর মধ্যে রাজধানীতেই টিকা নিয়েছেন ২৪ হাজার ৪৫৩ জন। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, মগবাজারের নগর মাতৃসদন কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, শতশত মানুষের ভিড়। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগাম ‘নিবন্ধন এসএমএস’র চাহিদা অনুযায়ী সব টিকাকেন্দ্রেই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকা সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ‘অন-স্পট’ অর্থাৎ তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকা নিতে আগ্রহীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় টিকাদান কর্মীরা সবাইকে তা দিতে পারছেন না। এতে টিকা না পাওয়া ব্যক্তিরা নানা রকম ঝামেলা করছেন। কেন্দ্রেগুলোতে ভিড় সামলাতে পারছেন না কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ভ্যাকসিন (টিকা) নিয়েছেন পাঁচ লাখ ৪২ হাজার ৩০৯ জন। গতকাল টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে ৮৬ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রথম দিন ৩১ হাজার ১৬০ জন, দ্বিতীয় দিন ৪৬ হাজার ৫০৯ জন, তৃতীয় দিন এক লাখ এক হাজার ৮২ জন এবং চতুর্থ দিন এক লাখ ৫৮ হাজার ৪৫১ জন করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

টিকাকেন্দ্রে নিবন্ধন বন্ধ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করে টিকা নেয়ার সুবিধা আপাতত বন্ধ থাকছে। এখন থেকে যারা নিবন্ধন করে আসবেন, শুধু তাদেরই টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিকাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিবন্ধন না করে অনেকে টিকা নিতে আসছেন। এতে বিভিন্ন কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড় তৈরি হচ্ছে। এখন থেকে যারা নিবন্ধন করে আসবেন, শুধু তাদেরই টিকা দেয়া হবে। ভবিষ্যতে যদি টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে তখন আবারও জানানো হবে।’

গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষ করোনার টিকা নেয়ার জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের (www.surokkha.gov.bd) মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপরই সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন শুরু হয়। আর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

ইতোমধ্যে তিন লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যারা অন-স্পট রেজিস্ট্রেশন করেছেন, তাদের সংখ্যাই বেশি। আর যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, তারাই ঢুকতে পারছেন না। বয়স্ক লোকেরা কেন্দ্রে যাচ্ছেন, তাদের কষ্ট হচ্ছে। যারা ভ্যাকসিন দিচ্ছেন- ডাক্তার ও নার্স তাদেরও কষ্ট হচ্ছে। আমরা এই পরিস্থিতি চলতে দিতে চাই না।’

দেশজুড়ে টিকা দেয়ার জন্য গ্রামাঞ্চলের এবং যাদের স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের সুবিধা নেই, তাদের জন্য কাছের টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নেয়ার সুযোগ ছিল।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে, তখন আবারও জানানো হবে।’

মানুষের টিকা নেয়ার আগ্রহ অনেক বেড়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এখন দেখছি যে, সব জায়গায় আগে ভিড় কম ছিল। এখন অনেক ভিড়। অনেক লোক যাচ্ছে, মানুষের কনফিডেন্স বাড়ছে। ভ্যাকসিন নিয়েও নানা কথাবার্তা ছিল। মানুষের সব কথাবার্তা ভুল প্রমাণিত করে, তোয়াক্কা না করে, এখন সবাই ভ্যাকসিনের ওপরে আস্থা নিয়ে ভ্যাকসিন নিতে যাচ্ছেন।’

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠ কার্যক্রম ‘পেপারলেস’ করার ঘোষণা দিতে রাজধানীর ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আলী নূর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুও উপস্থিত ছিলেন।