অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ

রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে গ্যাসের দৃশ্যমান অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ গ্যাস লাইন বহাল থাকার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরও কাটা হচ্ছে না অনেক লাইন। এর পেছনে তিতাসসহ রাষ্ট্রীয় অন্যান্য গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততারও অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয় আমলে নিয়ে দ্রুত সব অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির ১৭তম বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার গতকাল রাতে এ বিষয়ে সংবাদকে বলেন, ‘গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নিয়ে কমিটিতে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। দৈনিক ‘সংবাদ’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমরা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দিয়েছি। সেখানে স্পষ্ঠ দেখা যাচ্ছে, একটি বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে গ্যাসের অবৈধ লাইন টানা হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও নওগাঁ-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন,

‘তিতাসগ্যাস কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ করছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে বরখাস্থ করা হয়েছে।’ বাস্তবতা হচ্ছে অবৈধ সংযোগ কমছে না, বরং বাড়ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। কমিটি মনে করে ‘এ বিষয়ে যতটা গুরুত্ব দেয়া দরকার, তা করা হচ্ছে না।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ গ্যাস সংযোগের পেছনে বিভিন্ন সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত থাকার প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে আসে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির অলোচনায় অংশ নিয়ে এ ধরনের কাজে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন।

২০ বছরের গ্যাসের বকেয়া বিল কত?

গত বিশ বছরে গ্যাসের বিল কত বকেয়া পড়েছে, এর তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপনের পাশপাশি দ্রুততম সময়ে এ খাতে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।

গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে ধীরগতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে একশ্রেণীর লোকজনের সুবিধা কমে যাবে, যার কারণে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজে গতি আসছে না।’

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল ১৭তম বৈঠকে বিগত ১৫তম বৈঠকের কার্যবিবরণী সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের চলমান এবং পাইপ লাইনে থাকা প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি এবং তদসংশ্লিষ্ট বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং অনুমোদিত চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত সম্পন্নকরণে সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মো. আবু জাহির, মো. নূরুল ইসলাম তালুকদার, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর, মোছা. খালেদা খানম, বেগম নার্গিস রহমান এবং মো. নুরুজ্জামান বিশ্বাস বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৯ মাঘ ১৪২৭, ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সংসদীয় কমিটির উদ্বেগ

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে গ্যাসের দৃশ্যমান অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ গ্যাস লাইন বহাল থাকার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরও কাটা হচ্ছে না অনেক লাইন। এর পেছনে তিতাসসহ রাষ্ট্রীয় অন্যান্য গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততারও অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয় আমলে নিয়ে দ্রুত সব অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির ১৭তম বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার গতকাল রাতে এ বিষয়ে সংবাদকে বলেন, ‘গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নিয়ে কমিটিতে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। দৈনিক ‘সংবাদ’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমরা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দিয়েছি। সেখানে স্পষ্ঠ দেখা যাচ্ছে, একটি বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে গ্যাসের অবৈধ লাইন টানা হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও নওগাঁ-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন,

‘তিতাসগ্যাস কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ করছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে বরখাস্থ করা হয়েছে।’ বাস্তবতা হচ্ছে অবৈধ সংযোগ কমছে না, বরং বাড়ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। কমিটি মনে করে ‘এ বিষয়ে যতটা গুরুত্ব দেয়া দরকার, তা করা হচ্ছে না।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ গ্যাস সংযোগের পেছনে বিভিন্ন সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত থাকার প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে আসে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির অলোচনায় অংশ নিয়ে এ ধরনের কাজে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন।

২০ বছরের গ্যাসের বকেয়া বিল কত?

গত বিশ বছরে গ্যাসের বিল কত বকেয়া পড়েছে, এর তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপনের পাশপাশি দ্রুততম সময়ে এ খাতে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।

গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে ধীরগতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে একশ্রেণীর লোকজনের সুবিধা কমে যাবে, যার কারণে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজে গতি আসছে না।’

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল ১৭তম বৈঠকে বিগত ১৫তম বৈঠকের কার্যবিবরণী সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের চলমান এবং পাইপ লাইনে থাকা প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি এবং তদসংশ্লিষ্ট বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং অনুমোদিত চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত সম্পন্নকরণে সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মো. আবু জাহির, মো. নূরুল ইসলাম তালুকদার, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর, মোছা. খালেদা খানম, বেগম নার্গিস রহমান এবং মো. নুরুজ্জামান বিশ্বাস বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।