বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২

ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর চেয়ে স্যাটেলাইট-২ মহাকাশে পাঠানো অনেক সহজ হবে। বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের বেলায় অনেক কিছু মাথায় রাখতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হলো কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। দেশের জন্য আবহাওয়া, জলবায়ুর তথ্য দিতে পারবে, জিআইএস তথ্য দিতে পারবে- এমন স্যাটেলাইট পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমান সরকার কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে কিন্তু কমিউনিকেশনই একমাত্র কাজ নয়। আবহাওয়াসহ অনেক কিছু আমাকে স্যাটেলাইট দিয়ে করতে হবে। যে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এত ভালো সে দেশে একটিমাত্র স্যাটেলাইট নির্ভরযোগ্য নয়।

সরকারের টার্গেট এই মেয়াদেই দ্বিতীয় স্যাটেলাইট পাঠানো। দীর্ঘ সময় পড়ে আছে। বড় সুবিধা হলো প্রথম স্যাটেলাইটের মতো বিভিন্ন ফ্যাসিলিটিস নতুন করে তৈরি করতে হবে না। কোম্পানি তৈরি করতে হবে না, গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করতে হবে না, অরবিটাল স্লট ভাড়া করতে হবে না। ফলে কাজটা অনেক সহজ হবে। অরবিটাল স্লট যেখানে আছে সেখানে পাশাপাশি দুটি স্যাটেলাইট রাখা যাবে। এই মুহূর্তে ডিজিটাল সার্ভে, জরিপ করতে গেলে স্যাটেলাইট প্রয়োজন হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের জন্য আলাদা করে কোন অরবিটাল স্লট কিনতে বা ভাড়া নিতে হবে না। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যে স্লটে (অরবিটাল স্লট ১১৯.১ ডিগ্রি) উৎক্ষেপণ করা হয়েছে সেখানে দুটি স্যাটেলাইট প্রতিস্থাপন করা যাবে। ফলে স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের কাজটি প্রথমটির চেয়ে দ্রুত হতে পারে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২-এর জন্য আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) কাছে আরও চারটি স্লট চেয়ে আবেদন করে রেখেছে বাংলাদেশ। ৬৯, ৭৪ ও ১০২ ডিগ্রি পূর্বে দুটিসহ চারটির জন্য আইটিইউর কাছে আবেদন করা হয়। বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে ১১৯.১ ডিগ্রিতে অবস্থান করছে।

স্যাটেলাইটটি সার্কভুক্ত দেশের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরঘিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের অংশবিশেষ কাভার করে। যদিও ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানে এর কাভারেজ শক্তিশালী। এসব কারণে ছয়টি দেশকে বাণিজ্যের জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর কোন বিকল্প না থাকায় অনেকেই এর প্রতি আগহী হবে না। যারা স্যাটেলাইটের সেবা নিতে আগ্রহী তারা সব সময় সেবার বিকল্প চায়। দুর্যোগকালীন যেন বিকল্প সেবা দেয়া সম্ভব হয় সেটা মাথায় রেখেই দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হলে দুটিরই তখন বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়বে। দেশের প্রথম বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ একটি ‘জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন’ স্যাটেলাইট হওয়ায় কেবল যোগাযোগের কাজে লাগছে। আবহাওয়া, সামরিক বা নিরাপত্তাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বাণিজ্যিক সম্প্রচারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আশপাশের ১৫টি দেশে সেবা দিতে সক্ষম। বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল সংযুক্তির সক্ষমতা তৈরির জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ জাতীয় জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও একটি নতুন যুগে পদার্পণ করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ওপর নির্ভর করে আমরা চর ও দ্বীপসহ দুর্গম অঞ্চলের ডিজিটাল কানেকটিভিটি তৈরি করেছে। বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার অব্যাহত রাখা হচ্ছে। রাখা হচ্ছে দেশের দুর্গম এলাকায় টেলিমেডিসিন কার্যক্রম। ভবিষ্যতের বাড়তি চাহিদা মোটানোর কথাও ভাবতে হবে। স্যাটেলাইটে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার বাইরে উপগ্রহের মাধ্যমে যাতে নতুন সেবা দেয়া যায়। ইতোমধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

স্যাটেলাইট খামারগুলো ডিজিটাল মাপ তৈরি করে। ফলে কৃষকদের মাটির গুণাগুণ, ফসলের ফলন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতি বছরই বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হচ্ছেন। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সড়কের খুঁতগুলো বের করতে পারি। নগরায়নের কাজে অনেক উপকারে আসে। এখন পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে নানাবিধ পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়। ঘরে বসেই এদের অবস্থান ট্র্যাক করতে স্যাটেলাইট আমাদের সাহায্য করে; বাতাসের বেগ এবং বায়ু দূষণের পরিমাণ নির্ণয়ে স্যাটেলাইট আমাদের সাহায্য করে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার কাজে স্যাটেলাইট সবচেয়ে বেশি কাজে আসে। এছাড়া সূর্য, সৌরঝড়, উল্কাপাত, উল্কাদের গতি-প্রকৃতি এবং সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহগুলো পর্যেবক্ষণ করে। সৌরজগতের বাইরের নক্ষত্র, গ্রহ, গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণ করা আমাদের এ মহাজগৎ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে সাহায্য করে। অনেক ধরনের স্যাটেলাইটই আছে।

জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের ভূপৃষ্ঠ থেকে দূরত্ব যেখানে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার, পোলার স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে এই দূরত্ব মাত্র ৮৫০ কি.মি.। ফলে এটি আরও অনেক ভালোভাবে পৃথিবীর বায়ুম-ল ও ভূপৃষ্ঠ স্ক্যান করতে পারে এবং আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে আরও নিখুঁতভাবে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট, যা প্রথমে ২০১৮ সালের ১০ মে তারিখে লঞ্চ করার কথা ছিল, যেটা কারিগরি সমস্যার কারণে সম্ভব হয়নি; যে কোনো স্যাটেলাইট পাঠানোর ক্ষেত্রে যেটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। পরের দিন, অর্থাৎ ১১ মে সফলভাবে স্যাটেলাইটটি মহাশূন্যে প্রেরণ করা হয়।

বাংলাদেশ থেকে পাঠানো প্রথম স্যাটেলাইট হচ্ছে ‘ব্র্যাক অন্বেষা’, সেটা একটা পোলার ন্যানো-স্যাটেলাইট; যেটা পাঠানো হয়েছে ৩ জুন, ২০১৭ তারিখে। তবে বঙ্গবন্ধু-১ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম জিওস্টেশনারি কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইট। মজার ব্যাপার হচ্ছে- ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ এবং বঙ্গবন্ধু-১, দুটোই স্পেস-এক্স নামক সংস্থার মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। স্যাটেলাইট দুনিয়ায় আমাদের প্রবেশ আরো আগে হলেও কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইটের জগতে আমরা প্রবেশ করেছি বঙ্গবন্ধু-১ এর মাধ্যমে। এটা কী চমৎকার এবং অসাধারণ অনুভূতির একটা ব্যাপার না যে, নিজের দেশের কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইট জগতে পদার্পণের মুহূর্তের সাক্ষী হতে পেরেছি আমরা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ মহাকাশে পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে; যার উপকারিতা এ দেশের মানুষ উপভোগ করবে। যেমন- ১) সীমান্ত এলাকা পরিবেষ্টিত প্রহরা পরিদর্শন বিষয়, ২) টেলিমেডিসিন সুবিধা, ৩) আবহাওয়া, পূর্বাভাস এবং ৪) সমগ্র বাহিনীর কার্যক্রম।

[লেখক : পরিচালক, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড

শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৯ মাঘ ১৪২৭, ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২

ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর চেয়ে স্যাটেলাইট-২ মহাকাশে পাঠানো অনেক সহজ হবে। বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের বেলায় অনেক কিছু মাথায় রাখতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হলো কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। দেশের জন্য আবহাওয়া, জলবায়ুর তথ্য দিতে পারবে, জিআইএস তথ্য দিতে পারবে- এমন স্যাটেলাইট পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমান সরকার কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে কিন্তু কমিউনিকেশনই একমাত্র কাজ নয়। আবহাওয়াসহ অনেক কিছু আমাকে স্যাটেলাইট দিয়ে করতে হবে। যে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এত ভালো সে দেশে একটিমাত্র স্যাটেলাইট নির্ভরযোগ্য নয়।

সরকারের টার্গেট এই মেয়াদেই দ্বিতীয় স্যাটেলাইট পাঠানো। দীর্ঘ সময় পড়ে আছে। বড় সুবিধা হলো প্রথম স্যাটেলাইটের মতো বিভিন্ন ফ্যাসিলিটিস নতুন করে তৈরি করতে হবে না। কোম্পানি তৈরি করতে হবে না, গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করতে হবে না, অরবিটাল স্লট ভাড়া করতে হবে না। ফলে কাজটা অনেক সহজ হবে। অরবিটাল স্লট যেখানে আছে সেখানে পাশাপাশি দুটি স্যাটেলাইট রাখা যাবে। এই মুহূর্তে ডিজিটাল সার্ভে, জরিপ করতে গেলে স্যাটেলাইট প্রয়োজন হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের জন্য আলাদা করে কোন অরবিটাল স্লট কিনতে বা ভাড়া নিতে হবে না। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যে স্লটে (অরবিটাল স্লট ১১৯.১ ডিগ্রি) উৎক্ষেপণ করা হয়েছে সেখানে দুটি স্যাটেলাইট প্রতিস্থাপন করা যাবে। ফলে স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের কাজটি প্রথমটির চেয়ে দ্রুত হতে পারে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২-এর জন্য আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) কাছে আরও চারটি স্লট চেয়ে আবেদন করে রেখেছে বাংলাদেশ। ৬৯, ৭৪ ও ১০২ ডিগ্রি পূর্বে দুটিসহ চারটির জন্য আইটিইউর কাছে আবেদন করা হয়। বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে ১১৯.১ ডিগ্রিতে অবস্থান করছে।

স্যাটেলাইটটি সার্কভুক্ত দেশের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরঘিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের অংশবিশেষ কাভার করে। যদিও ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানে এর কাভারেজ শক্তিশালী। এসব কারণে ছয়টি দেশকে বাণিজ্যের জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর কোন বিকল্প না থাকায় অনেকেই এর প্রতি আগহী হবে না। যারা স্যাটেলাইটের সেবা নিতে আগ্রহী তারা সব সময় সেবার বিকল্প চায়। দুর্যোগকালীন যেন বিকল্প সেবা দেয়া সম্ভব হয় সেটা মাথায় রেখেই দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হলে দুটিরই তখন বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়বে। দেশের প্রথম বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ একটি ‘জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন’ স্যাটেলাইট হওয়ায় কেবল যোগাযোগের কাজে লাগছে। আবহাওয়া, সামরিক বা নিরাপত্তাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বাণিজ্যিক সম্প্রচারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আশপাশের ১৫টি দেশে সেবা দিতে সক্ষম। বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল সংযুক্তির সক্ষমতা তৈরির জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ জাতীয় জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও একটি নতুন যুগে পদার্পণ করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ওপর নির্ভর করে আমরা চর ও দ্বীপসহ দুর্গম অঞ্চলের ডিজিটাল কানেকটিভিটি তৈরি করেছে। বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার অব্যাহত রাখা হচ্ছে। রাখা হচ্ছে দেশের দুর্গম এলাকায় টেলিমেডিসিন কার্যক্রম। ভবিষ্যতের বাড়তি চাহিদা মোটানোর কথাও ভাবতে হবে। স্যাটেলাইটে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার বাইরে উপগ্রহের মাধ্যমে যাতে নতুন সেবা দেয়া যায়। ইতোমধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

স্যাটেলাইট খামারগুলো ডিজিটাল মাপ তৈরি করে। ফলে কৃষকদের মাটির গুণাগুণ, ফসলের ফলন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতি বছরই বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হচ্ছেন। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সড়কের খুঁতগুলো বের করতে পারি। নগরায়নের কাজে অনেক উপকারে আসে। এখন পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে নানাবিধ পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়। ঘরে বসেই এদের অবস্থান ট্র্যাক করতে স্যাটেলাইট আমাদের সাহায্য করে; বাতাসের বেগ এবং বায়ু দূষণের পরিমাণ নির্ণয়ে স্যাটেলাইট আমাদের সাহায্য করে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার কাজে স্যাটেলাইট সবচেয়ে বেশি কাজে আসে। এছাড়া সূর্য, সৌরঝড়, উল্কাপাত, উল্কাদের গতি-প্রকৃতি এবং সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহগুলো পর্যেবক্ষণ করে। সৌরজগতের বাইরের নক্ষত্র, গ্রহ, গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণ করা আমাদের এ মহাজগৎ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে সাহায্য করে। অনেক ধরনের স্যাটেলাইটই আছে।

জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের ভূপৃষ্ঠ থেকে দূরত্ব যেখানে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার, পোলার স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে এই দূরত্ব মাত্র ৮৫০ কি.মি.। ফলে এটি আরও অনেক ভালোভাবে পৃথিবীর বায়ুম-ল ও ভূপৃষ্ঠ স্ক্যান করতে পারে এবং আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে আরও নিখুঁতভাবে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট, যা প্রথমে ২০১৮ সালের ১০ মে তারিখে লঞ্চ করার কথা ছিল, যেটা কারিগরি সমস্যার কারণে সম্ভব হয়নি; যে কোনো স্যাটেলাইট পাঠানোর ক্ষেত্রে যেটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। পরের দিন, অর্থাৎ ১১ মে সফলভাবে স্যাটেলাইটটি মহাশূন্যে প্রেরণ করা হয়।

বাংলাদেশ থেকে পাঠানো প্রথম স্যাটেলাইট হচ্ছে ‘ব্র্যাক অন্বেষা’, সেটা একটা পোলার ন্যানো-স্যাটেলাইট; যেটা পাঠানো হয়েছে ৩ জুন, ২০১৭ তারিখে। তবে বঙ্গবন্ধু-১ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম জিওস্টেশনারি কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইট। মজার ব্যাপার হচ্ছে- ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ এবং বঙ্গবন্ধু-১, দুটোই স্পেস-এক্স নামক সংস্থার মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। স্যাটেলাইট দুনিয়ায় আমাদের প্রবেশ আরো আগে হলেও কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইটের জগতে আমরা প্রবেশ করেছি বঙ্গবন্ধু-১ এর মাধ্যমে। এটা কী চমৎকার এবং অসাধারণ অনুভূতির একটা ব্যাপার না যে, নিজের দেশের কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইট জগতে পদার্পণের মুহূর্তের সাক্ষী হতে পেরেছি আমরা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ মহাকাশে পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে; যার উপকারিতা এ দেশের মানুষ উপভোগ করবে। যেমন- ১) সীমান্ত এলাকা পরিবেষ্টিত প্রহরা পরিদর্শন বিষয়, ২) টেলিমেডিসিন সুবিধা, ৩) আবহাওয়া, পূর্বাভাস এবং ৪) সমগ্র বাহিনীর কার্যক্রম।

[লেখক : পরিচালক, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড