বিশ্ববাজারে স্বাভাবিক হচ্ছে জ্বালানি তেলের দাম

মহামারীর আগের অবস্থা ফিরে আসছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ মাসে সর্বোচ্চে। জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম এরই মধ্যে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার ছাড়িয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পণ্যটির মূল্যের এ ঊর্ধ্বগতি আরও কিছুদিন বজায় থাকবে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। রয়টার্স।

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এখন করোনা মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পথ থেকে বাধাবিঘœও এখন অনেকটাই দূর হয়েছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন এরই মধ্যে করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক পুঁজিবাজারও এখন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে গত এক বছরের দুঃসময় কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

আইসিই ফিউচার্স ইউরোপ এক্সচেঞ্জে ব্রেন্টের দাম বেড়েছে ব্যারেলে ১ ডলার ২২ সেন্ট। এপ্রিলে সরবরাহ চুক্তিতে সোমবার সাপ্তাহিক লেনদেনের প্রথম দিনে পণ্যটির বাজার স্থির হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার ৫৬ সেন্টে, যা দিনের সর্বশেষ মূল্য হিসেবে গত বছরের ১৪ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এর আগে দিনব্যাপী লেনদেনের এক পর্যায়ে পণ্যটি প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার ৬৩ সেন্ট দামেও বিক্রি হয়েছিল। সারা দিনের লেনদেনে পণ্যটির সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ১ শতাংশ।

একইভাবে মার্চে সরবরাহ চুক্তিতে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম বেড়েছে ব্যারেলে ১ ডলার ১২ সেন্ট। আগের দিনের চেয়ে ২ শতাংশ বেড়ে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) এদিন পণ্যটির বাজার স্থির হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৫৭ ডলার ৯৭ সেন্টে। ডাও জোনস মার্কেট ডাটার তথ্য অনুযায়ী, দিনের সর্বশেষ মূল্য হিসাবে এটি গত বছরের ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।

গতকালও ঊর্ধ্বমুখী ধারাতেই দিন শুরু করেছিল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার। এর আগে গত সপ্তাহে ডব্লিউটিআইয়ের দাম বেড়েছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে ব্রেন্টের সাপ্তাহিক দরবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গে�াবাল ইকোনমিস্ট কাইলিন বার্চ বলেন, অপরিশোধিত জ্বালানি বাজারের বর্তমান ঊর্ধ্বগতির পেছনে বেশকিছু প্রভাবক কাজ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আর্থিক বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যকার উৎসাহ। সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, বাইডেন প্রশাসন দ্বিতীয় অর্থনৈতিক প্রণোদনা বিল পাস করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে চীনের অর্থনীতিতেও দেখা যাচ্ছে ব্যাপক চাঙ্গা ভাব। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন ২০২১ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির দ্রুত পুনরুদ্ধার নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।

অন্যদিকে জার্মানিভিত্তিক কমার্জব্যাংকের হেড অব কমোডিটিস রিসার্চ ইউজেন ওয়েইনবার্গ এক নোটে বলেন, আইসিই ফিউচার্স ইউরোপ এক্সচেঞ্জে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন ব্রেন্ট নিয়ে গত বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি আশাবাদী।

তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিএমসি মার্কেটসের প্রধান বাজার বিশ্লেষক মাইকেল হসন মনে করছেন, জ্বালানি তেলের বর্তমান ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকলে সামনের দিনগুলোয় পণ্যটির ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতির সুফল নিতে ওপেক প্লাস (উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দরপতন ঠেকাতে ওপেক ও এর বাইরের দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত সাময়িক জোট) থেকে কোনো দেশ বেরিয়ে যদি উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে, তাহলেও বাজারে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩০ মাঘ ১৪২৭, ৩০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বিশ্ববাজারে স্বাভাবিক হচ্ছে জ্বালানি তেলের দাম

সংবাদ ডেস্ক |

মহামারীর আগের অবস্থা ফিরে আসছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ মাসে সর্বোচ্চে। জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম এরই মধ্যে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার ছাড়িয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পণ্যটির মূল্যের এ ঊর্ধ্বগতি আরও কিছুদিন বজায় থাকবে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। রয়টার্স।

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এখন করোনা মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পথ থেকে বাধাবিঘœও এখন অনেকটাই দূর হয়েছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন এরই মধ্যে করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক পুঁজিবাজারও এখন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে গত এক বছরের দুঃসময় কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

আইসিই ফিউচার্স ইউরোপ এক্সচেঞ্জে ব্রেন্টের দাম বেড়েছে ব্যারেলে ১ ডলার ২২ সেন্ট। এপ্রিলে সরবরাহ চুক্তিতে সোমবার সাপ্তাহিক লেনদেনের প্রথম দিনে পণ্যটির বাজার স্থির হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার ৫৬ সেন্টে, যা দিনের সর্বশেষ মূল্য হিসেবে গত বছরের ১৪ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এর আগে দিনব্যাপী লেনদেনের এক পর্যায়ে পণ্যটি প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার ৬৩ সেন্ট দামেও বিক্রি হয়েছিল। সারা দিনের লেনদেনে পণ্যটির সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ১ শতাংশ।

একইভাবে মার্চে সরবরাহ চুক্তিতে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম বেড়েছে ব্যারেলে ১ ডলার ১২ সেন্ট। আগের দিনের চেয়ে ২ শতাংশ বেড়ে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) এদিন পণ্যটির বাজার স্থির হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৫৭ ডলার ৯৭ সেন্টে। ডাও জোনস মার্কেট ডাটার তথ্য অনুযায়ী, দিনের সর্বশেষ মূল্য হিসাবে এটি গত বছরের ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।

গতকালও ঊর্ধ্বমুখী ধারাতেই দিন শুরু করেছিল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার। এর আগে গত সপ্তাহে ডব্লিউটিআইয়ের দাম বেড়েছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে ব্রেন্টের সাপ্তাহিক দরবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গে�াবাল ইকোনমিস্ট কাইলিন বার্চ বলেন, অপরিশোধিত জ্বালানি বাজারের বর্তমান ঊর্ধ্বগতির পেছনে বেশকিছু প্রভাবক কাজ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আর্থিক বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যকার উৎসাহ। সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, বাইডেন প্রশাসন দ্বিতীয় অর্থনৈতিক প্রণোদনা বিল পাস করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে চীনের অর্থনীতিতেও দেখা যাচ্ছে ব্যাপক চাঙ্গা ভাব। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন ২০২১ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির দ্রুত পুনরুদ্ধার নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।

অন্যদিকে জার্মানিভিত্তিক কমার্জব্যাংকের হেড অব কমোডিটিস রিসার্চ ইউজেন ওয়েইনবার্গ এক নোটে বলেন, আইসিই ফিউচার্স ইউরোপ এক্সচেঞ্জে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন ব্রেন্ট নিয়ে গত বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি আশাবাদী।

তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিএমসি মার্কেটসের প্রধান বাজার বিশ্লেষক মাইকেল হসন মনে করছেন, জ্বালানি তেলের বর্তমান ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকলে সামনের দিনগুলোয় পণ্যটির ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতির সুফল নিতে ওপেক প্লাস (উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দরপতন ঠেকাতে ওপেক ও এর বাইরের দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত সাময়িক জোট) থেকে কোনো দেশ বেরিয়ে যদি উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে, তাহলেও বাজারে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।