ক্যালিপসো ছন্দে দিশেহারা বাংলাদেশ

স্কোর : উইন্ডিজ ১ম ইনিংস ৪০৯ বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ১০৫/৪

সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ তথা কাইল মায়ার্সের কাছে চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনে বিস্ময়করভাবে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ দল। সফরে আসা যে ক্যারিবিয়ান দলটাকে বলা হচ্ছিল ভাঙাচোরা, সেই দলটা টাইগারদের কাছে ওডিআই সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যেভাবে জয় তুলে নিয়েছে, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে পরাজিত হওয়ার পর বাংলাদেশের অধিনায়ক মোমিনুল হক বলেছিলেন, ‘ইতিবাচক’ অনেক অর্জন আছে। সেইসব ‘অর্জন’-এর ছিটেফোটাও দেখা যাচ্ছে না শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চলমান দ্বিতীয় টেস্টে। প্রথম দিনটা ক্যারিবিয়ানদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়তে পারলেও গতকালের দ্বিতীয় দিনটা ছিল একেবারেই হতাশার। বলা যায় ক্যালিপসো ছন্দে দিশেহারা টাইগার বাহিনী। প্রথম দিনে তোলা ২২৩ রানকে ৪০৯-এ নিয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংস শেষ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৭৫ রান তুলেই চার ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ দল দিন শেষ করেছে ১০৫ রানে। টপ অর্ডারকে সাজঘরে পাওয়া স্বগতিক দল এখনও পিছিয়ে ৩০৪ রানে। কাজেই ফলোঅনের চোখ রাঙানি নিয়ে আজ ম্যাচের তৃতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নামার সময়ে মুশফিক-মিঠুনের ওপর চাপটা কেমন থাকবে, তা সহজেই অনুমেয়।

চট্টগ্রাম টেস্টের শেষদিনে যেমন বাংলাদেশের বোলারদের অসহায় অবস্থায় দেখা গেছে, ঠিক তেমনটাই দেখা গেছে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনে। রাহি প্রথম দিনের খেলা শেষে ক্যারিবিয়ানদের তিনশ’ রানের মধ্যে আটকে দেয়ার কথা বলেছিলেন। অথচ সফরকারীরা টেল এন্ডারদের নিয়ে পার করেছে চারশ’র কোটা। আবার টপ অর্ডারের আসা যাওয়ার মিছিল মনে করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ দলের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করা দিনগুলো।

দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে ৫ উইকেটে তোলা ২২৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিং শুরু করেছিল উইন্ডিজ। কাইল মায়ার্স না থাকলেও ছিলেন এনক্রুমা বোনার। তিনি এবং তার সঙ্গী উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান জসুয়া ডা সিলভা রান করেন ৯০-এর কোটায়। টেলেন্ডার জোসেফও জমা দেন ৮২ রান। ক্যালিপসো ছন্দের ব্যাটিংয়ের সামনে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েন টাইগারদের বোলার ফিল্ডাররা। দিনের শুরু থেকেই দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থাকা ক্যারিবিয়ান দল সকালে হারায় এনক্রুমা বোনারকে (৯০)। সেঞ্চুরি মিস করা বোনারের ইনিংসে ছিল ৭টি বাউন্ডারি। তাকে ফিরিয়ে ১৫০তম আন্তর্জাতিক উইকেটের দেখা পান মেহেদি হাসান মিরাজ। বোনারের বিদায়ে ভাঙে জসুয়া ডা সিলভার সঙ্গে ৮৮ রানের জুটি। এরপর উইকেটে এসে জাঁকিয়ে বসেন আলজারি জোসেফ। জসুয়া-জোসেফের জুটিটা ১১৮ রান তোলার পর তাইজুলের স্পিনে ভেঙে যায়। ফেরেন জসুয়া ডা সিলভা (৯২)। আবু জায়েদ রাহি ১০৮ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় ৮২ রান করা আলজারি জোসেফকে লিটন দাসের গ্লাভসবন্দী করার সময় ক্যারিবিয়ান দলের স্কোর আট উইকেটে ৩৯৬ রান। শেষ দুই ব্যাটসম্যান আর ১৩ রান তোলার পর অল আউট হয় ক্যারিবিয়ান দল। বিশাল রানের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংস খেলতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। নির্বাচকরা কেন সৌম্যকে টেস্ট দলের বাইরে রাখেন, তার প্রমাণ দিয়ে রানের খাতা না খুলেই ফেরেন সাকিবের ইনজুরির সুযোগে দীর্ঘদিন পর টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকার। প্রথম ওভারের শেষ বলেই শ্যান গ্যাব্রিয়েলের শিকারে পরিণত হন তিনি। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাসের জানান দেয়া নাজমুল হোসেন শান্ত (৪) ফেরেন গ্যাব্রিয়েলের বলে এনক্রুমা বোনারের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ১১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে অথৈ সমুদ্রে পড়া স্বাগতিক দলের ইনিংসটা মেরামতির চেষ্টাই করেছিলেন তামিম ইকবাল ও অধিনায়ক মোমিনুল হক। পার্টনারশিপটা ৫৮ রান হতেই বিশালদেহী ক্যারিবিয়ান স্পিনার রাকিম কর্নওয়ালের বল উইকেটকিপার জসুয়া ডা সিলভার গ্লাভসে জমা দিয়ে ফেরেন ৩৯ বলে ২১ রান করা মোমিনুল। দলীয় ৬৯ রানে তৃতীয় উইকেট হিসেবে অধিনায়কের বিদায়ের পর যেখানে তামিম ইকবালের ধৈর্য ধরা প্রয়োজন ছিল, সেখানে তিনি ব্যাট চালালেন টি-২০ মেজাজে। ফলাফল কেমার রোচের জায়গায় ক্যারিবিয়ান একাদশে আসা আলজারি জোসেফের বলে মোসলের হাতে ক্যাচ। শেষ হয় তার ৫২ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কার ৪৪ রানের ইনিংস। এই অবস্থা (৭৫ রানে চার উইকেট হারানো) থেকে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন মুশফিকু রহিম আর মোহাম্মদ মিঠুন। দিনের শেষভাগে উইকেট পতন ঠেকিয়ে এই দু’জন ৩৪ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন আছেন। মুশফিক ৬১ বলে ২৭ আর মিঠুন ৬১ বলে মাত্র ৬ রান অপরাজিত থেকে দিন শেষ করার সময় ৪ উইকেটে ১০৫ রান টাইগারদের স্কোরবোর্ডে।

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩০ মাঘ ১৪২৭, ৩০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ক্যালিপসো ছন্দে দিশেহারা বাংলাদেশ

স্কোর : উইন্ডিজ ১ম ইনিংস ৪০৯ বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ১০৫/৪

বিশেষ প্রতিনিধি

image

ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শট বলের সদ্ব্যবহার করেন মুশফিক। দিন শেষে নটআউট থাকেন ৪৪ রানে -বিসিবি

সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ তথা কাইল মায়ার্সের কাছে চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনে বিস্ময়করভাবে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ দল। সফরে আসা যে ক্যারিবিয়ান দলটাকে বলা হচ্ছিল ভাঙাচোরা, সেই দলটা টাইগারদের কাছে ওডিআই সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যেভাবে জয় তুলে নিয়েছে, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে পরাজিত হওয়ার পর বাংলাদেশের অধিনায়ক মোমিনুল হক বলেছিলেন, ‘ইতিবাচক’ অনেক অর্জন আছে। সেইসব ‘অর্জন’-এর ছিটেফোটাও দেখা যাচ্ছে না শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চলমান দ্বিতীয় টেস্টে। প্রথম দিনটা ক্যারিবিয়ানদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়তে পারলেও গতকালের দ্বিতীয় দিনটা ছিল একেবারেই হতাশার। বলা যায় ক্যালিপসো ছন্দে দিশেহারা টাইগার বাহিনী। প্রথম দিনে তোলা ২২৩ রানকে ৪০৯-এ নিয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংস শেষ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৭৫ রান তুলেই চার ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ দল দিন শেষ করেছে ১০৫ রানে। টপ অর্ডারকে সাজঘরে পাওয়া স্বগতিক দল এখনও পিছিয়ে ৩০৪ রানে। কাজেই ফলোঅনের চোখ রাঙানি নিয়ে আজ ম্যাচের তৃতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নামার সময়ে মুশফিক-মিঠুনের ওপর চাপটা কেমন থাকবে, তা সহজেই অনুমেয়।

চট্টগ্রাম টেস্টের শেষদিনে যেমন বাংলাদেশের বোলারদের অসহায় অবস্থায় দেখা গেছে, ঠিক তেমনটাই দেখা গেছে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনে। রাহি প্রথম দিনের খেলা শেষে ক্যারিবিয়ানদের তিনশ’ রানের মধ্যে আটকে দেয়ার কথা বলেছিলেন। অথচ সফরকারীরা টেল এন্ডারদের নিয়ে পার করেছে চারশ’র কোটা। আবার টপ অর্ডারের আসা যাওয়ার মিছিল মনে করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ দলের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করা দিনগুলো।

দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে ৫ উইকেটে তোলা ২২৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিং শুরু করেছিল উইন্ডিজ। কাইল মায়ার্স না থাকলেও ছিলেন এনক্রুমা বোনার। তিনি এবং তার সঙ্গী উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান জসুয়া ডা সিলভা রান করেন ৯০-এর কোটায়। টেলেন্ডার জোসেফও জমা দেন ৮২ রান। ক্যালিপসো ছন্দের ব্যাটিংয়ের সামনে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েন টাইগারদের বোলার ফিল্ডাররা। দিনের শুরু থেকেই দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থাকা ক্যারিবিয়ান দল সকালে হারায় এনক্রুমা বোনারকে (৯০)। সেঞ্চুরি মিস করা বোনারের ইনিংসে ছিল ৭টি বাউন্ডারি। তাকে ফিরিয়ে ১৫০তম আন্তর্জাতিক উইকেটের দেখা পান মেহেদি হাসান মিরাজ। বোনারের বিদায়ে ভাঙে জসুয়া ডা সিলভার সঙ্গে ৮৮ রানের জুটি। এরপর উইকেটে এসে জাঁকিয়ে বসেন আলজারি জোসেফ। জসুয়া-জোসেফের জুটিটা ১১৮ রান তোলার পর তাইজুলের স্পিনে ভেঙে যায়। ফেরেন জসুয়া ডা সিলভা (৯২)। আবু জায়েদ রাহি ১০৮ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় ৮২ রান করা আলজারি জোসেফকে লিটন দাসের গ্লাভসবন্দী করার সময় ক্যারিবিয়ান দলের স্কোর আট উইকেটে ৩৯৬ রান। শেষ দুই ব্যাটসম্যান আর ১৩ রান তোলার পর অল আউট হয় ক্যারিবিয়ান দল। বিশাল রানের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংস খেলতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। নির্বাচকরা কেন সৌম্যকে টেস্ট দলের বাইরে রাখেন, তার প্রমাণ দিয়ে রানের খাতা না খুলেই ফেরেন সাকিবের ইনজুরির সুযোগে দীর্ঘদিন পর টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকার। প্রথম ওভারের শেষ বলেই শ্যান গ্যাব্রিয়েলের শিকারে পরিণত হন তিনি। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাসের জানান দেয়া নাজমুল হোসেন শান্ত (৪) ফেরেন গ্যাব্রিয়েলের বলে এনক্রুমা বোনারের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ১১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে অথৈ সমুদ্রে পড়া স্বাগতিক দলের ইনিংসটা মেরামতির চেষ্টাই করেছিলেন তামিম ইকবাল ও অধিনায়ক মোমিনুল হক। পার্টনারশিপটা ৫৮ রান হতেই বিশালদেহী ক্যারিবিয়ান স্পিনার রাকিম কর্নওয়ালের বল উইকেটকিপার জসুয়া ডা সিলভার গ্লাভসে জমা দিয়ে ফেরেন ৩৯ বলে ২১ রান করা মোমিনুল। দলীয় ৬৯ রানে তৃতীয় উইকেট হিসেবে অধিনায়কের বিদায়ের পর যেখানে তামিম ইকবালের ধৈর্য ধরা প্রয়োজন ছিল, সেখানে তিনি ব্যাট চালালেন টি-২০ মেজাজে। ফলাফল কেমার রোচের জায়গায় ক্যারিবিয়ান একাদশে আসা আলজারি জোসেফের বলে মোসলের হাতে ক্যাচ। শেষ হয় তার ৫২ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কার ৪৪ রানের ইনিংস। এই অবস্থা (৭৫ রানে চার উইকেট হারানো) থেকে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন মুশফিকু রহিম আর মোহাম্মদ মিঠুন। দিনের শেষভাগে উইকেট পতন ঠেকিয়ে এই দু’জন ৩৪ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন আছেন। মুশফিক ৬১ বলে ২৭ আর মিঠুন ৬১ বলে মাত্র ৬ রান অপরাজিত থেকে দিন শেষ করার সময় ৪ উইকেটে ১০৫ রান টাইগারদের স্কোরবোর্ডে।