ব্ল্যাকমেইলের কারণে খুন

দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সজীব হাসানের সঙ্গে শাহনাজ পারভীনের পরকীয়া সম্পর্ক। সম্প্রতি সজীব প্রেমিকা শাহনাজের কাছ থেকে টাকা দাবি করে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। টাকা না দিলে তাদের সম্পর্কের কথা শাহনাজের স্বামীকে জানিয়ে দিবে বলে বার বার হুমকি দিতে থাকে সজীব। তার এমন ব্ল্যাকমেইলের কারণে সজীবকে হত্যা করে শাহনাজ। পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের কাছ থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার শাহনাজকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেছেন। মামলা নং ১৪।

ওয়ারী বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, সজীব ও শাহনাজের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। স্বামীবাগের বাসাটি শাহনাজকে স্ত্রী দেখিয়েই ভাড়া নিয়েছিলেন সজীব। শাহনাজ তার স্বামীর বাসা থেকে চার দিন আগে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে সজীবের বাসায় উঠে। সজীব ওইসব স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করতে চায় এবং মোটা অঙ্কের টাকাও দাবি করে। কিন্তু শাহনাজ স্বর্ণালঙ্কার বিক্রিতে বাধা দেয়। তাছাড়া সজীবের সঙ্গে থাকতে গিয়ে শাহনাজ বুঝতে পারে, অন্য মেয়েদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক রয়েছে। সজীবের মুখ্য উদ্দেশ্য শাহনাজের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার। তাই স্বর্ণ বিক্রিতে বাধা ও টাকা দিতে অস্বীকার করায় এদের সম্পর্কের কথা শাহজের স্বামী জসিমকে জানিয়ে দিবে বলে হুমকি দিতে থাকে সজীব।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিসি বলেন, ঘটনার দিন সকালে এসব বিষয় নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে সজীব শাহনাজকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। পরে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরি শাহনাজের হাতে চলে আসে। তখন ছুরি মারলে সজীব মারা যান। হত্যার পর রান্নাঘর থেকে বঁটি এনে সজীবের মরদেহ পাঁচ টুকরো করেন শাহনাজ। এ সময় নিজের হাতও কেটে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল দুপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে লাশ নিতে এসে নিহতের খালু ও মামলার বাদী নজরুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে খবর পেয়ে তিনি ঢাকায় আসেন। এসে সজীবের লাশ দেখতে পান এবং পুলিশ থেকে পুরো ঘটনাটি জানতে পারেন। পরে ওই দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়া সজীব ঢাকায় কোথায় থাকত, কি করত তা তারা আগে জানতেন না বলে জানান তিনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, শাহনাজের স্বামীর জিডির পর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে শাহনাজের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সজীবের বাসায় যায় পুলিশ। সেখানে শাহনাজকে পাওয়ার পাশাপাশি সজীবের মরদেহ মেলে। এক কক্ষের বাসায় সজীব একাই থাকতেন। তিনি সায়েদাবাদে শ্যামলী বাসের একটি কাউন্টারে কাজ করতেন। এছাড়া শাহনানের বুটিকসের ব্যবসায়ও সহযোগিতা করে আসছিলেন। এসআই জানান, মামলায় শাহনাজকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে প্রেরণ করা হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তবে সজীবকে একাই হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন শাহনাজ। এরপরও হত্যার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কিনা, সেটা তদন্ত করা হচ্ছে।

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩০ মাঘ ১৪২৭, ৩০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

পাঁচ টুকরা লাশের রহস্য উদ্ঘাটন

ব্ল্যাকমেইলের কারণে খুন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সজীব হাসানের সঙ্গে শাহনাজ পারভীনের পরকীয়া সম্পর্ক। সম্প্রতি সজীব প্রেমিকা শাহনাজের কাছ থেকে টাকা দাবি করে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। টাকা না দিলে তাদের সম্পর্কের কথা শাহনাজের স্বামীকে জানিয়ে দিবে বলে বার বার হুমকি দিতে থাকে সজীব। তার এমন ব্ল্যাকমেইলের কারণে সজীবকে হত্যা করে শাহনাজ। পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের কাছ থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার শাহনাজকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেছেন। মামলা নং ১৪।

ওয়ারী বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, সজীব ও শাহনাজের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। স্বামীবাগের বাসাটি শাহনাজকে স্ত্রী দেখিয়েই ভাড়া নিয়েছিলেন সজীব। শাহনাজ তার স্বামীর বাসা থেকে চার দিন আগে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে সজীবের বাসায় উঠে। সজীব ওইসব স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করতে চায় এবং মোটা অঙ্কের টাকাও দাবি করে। কিন্তু শাহনাজ স্বর্ণালঙ্কার বিক্রিতে বাধা দেয়। তাছাড়া সজীবের সঙ্গে থাকতে গিয়ে শাহনাজ বুঝতে পারে, অন্য মেয়েদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক রয়েছে। সজীবের মুখ্য উদ্দেশ্য শাহনাজের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার। তাই স্বর্ণ বিক্রিতে বাধা ও টাকা দিতে অস্বীকার করায় এদের সম্পর্কের কথা শাহজের স্বামী জসিমকে জানিয়ে দিবে বলে হুমকি দিতে থাকে সজীব।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিসি বলেন, ঘটনার দিন সকালে এসব বিষয় নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে সজীব শাহনাজকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। পরে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরি শাহনাজের হাতে চলে আসে। তখন ছুরি মারলে সজীব মারা যান। হত্যার পর রান্নাঘর থেকে বঁটি এনে সজীবের মরদেহ পাঁচ টুকরো করেন শাহনাজ। এ সময় নিজের হাতও কেটে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল দুপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে লাশ নিতে এসে নিহতের খালু ও মামলার বাদী নজরুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে খবর পেয়ে তিনি ঢাকায় আসেন। এসে সজীবের লাশ দেখতে পান এবং পুলিশ থেকে পুরো ঘটনাটি জানতে পারেন। পরে ওই দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়া সজীব ঢাকায় কোথায় থাকত, কি করত তা তারা আগে জানতেন না বলে জানান তিনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, শাহনাজের স্বামীর জিডির পর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে শাহনাজের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সজীবের বাসায় যায় পুলিশ। সেখানে শাহনাজকে পাওয়ার পাশাপাশি সজীবের মরদেহ মেলে। এক কক্ষের বাসায় সজীব একাই থাকতেন। তিনি সায়েদাবাদে শ্যামলী বাসের একটি কাউন্টারে কাজ করতেন। এছাড়া শাহনানের বুটিকসের ব্যবসায়ও সহযোগিতা করে আসছিলেন। এসআই জানান, মামলায় শাহনাজকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে প্রেরণ করা হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তবে সজীবকে একাই হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন শাহনাজ। এরপরও হত্যার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কিনা, সেটা তদন্ত করা হচ্ছে।