৩৫ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের

দেশের অন্যতম শীর্ষ জীবন বীমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির মামলা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। সম্প্রতি ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে এই মামলা হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স নানা ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারকে ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযানে বিষয়টি ধরা পড়লে ওই পাঁচ বছরের সুদ ও জরিমানাসহ মোট পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এই বিপুল পরিমাণ পাওনা আদায়ের জন্য মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় ভ্যাট গোয়েন্দাদের দল তদন্তের অংশ হিসেবে দলিলাদি দাখিলের জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে তলব করে। সম্প্রতি অধিদপ্তদরের সহকারী পরিচালক সায়মা পারভীনের নেতৃত্বে একটি দল ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরের হিসাব পরীক্ষা করে।

ডেল্টা লাইফ কর্তৃক দাখিলকৃত বার্ষিক সিএ রিপোর্ট, প্রতিবেদন, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানের জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিলাদি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আড়াআড়ি যাচাই করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য বীমার ওপর ৪০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রাপ্য ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ২১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে। এর মাধ্যমে ৯ কোটি ৮০ লাখ ৮২ হাজার টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে। ভ্যাট আইন অনুযায়ী এই ফাঁকির ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে, তাতে সুদ হিসাবে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

তদন্ত অনুসারে এই সময়ের মধ্যে সিএ ফার্মের রিপোর্ট অনুযায়ী উৎসে কর হিসাবে পরিশোধ করেছে ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি ধরা পড়েছে। ফাঁকি দেয়া এই ভ্যাটের অর্থের ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ আরোপিত হয়। তাতে সুদ হিসাবে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির স্থান ও স্থাপনার ভাড়া কর হিসাবে ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা পরিশোধ দেখায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ফাঁকি দিয়েছে। এই ফাঁকির ওপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে। তাতে সুদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩১ মাঘ ১৪২৭, ৩১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

৩৫ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

দেশের অন্যতম শীর্ষ জীবন বীমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির মামলা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। সম্প্রতি ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে এই মামলা হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স নানা ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারকে ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযানে বিষয়টি ধরা পড়লে ওই পাঁচ বছরের সুদ ও জরিমানাসহ মোট পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এই বিপুল পরিমাণ পাওনা আদায়ের জন্য মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় ভ্যাট গোয়েন্দাদের দল তদন্তের অংশ হিসেবে দলিলাদি দাখিলের জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে তলব করে। সম্প্রতি অধিদপ্তদরের সহকারী পরিচালক সায়মা পারভীনের নেতৃত্বে একটি দল ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরের হিসাব পরীক্ষা করে।

ডেল্টা লাইফ কর্তৃক দাখিলকৃত বার্ষিক সিএ রিপোর্ট, প্রতিবেদন, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানের জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিলাদি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আড়াআড়ি যাচাই করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য বীমার ওপর ৪০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রাপ্য ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ২১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে। এর মাধ্যমে ৯ কোটি ৮০ লাখ ৮২ হাজার টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে। ভ্যাট আইন অনুযায়ী এই ফাঁকির ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে, তাতে সুদ হিসাবে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

তদন্ত অনুসারে এই সময়ের মধ্যে সিএ ফার্মের রিপোর্ট অনুযায়ী উৎসে কর হিসাবে পরিশোধ করেছে ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি ধরা পড়েছে। ফাঁকি দেয়া এই ভ্যাটের অর্থের ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ আরোপিত হয়। তাতে সুদ হিসাবে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির স্থান ও স্থাপনার ভাড়া কর হিসাবে ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা পরিশোধ দেখায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ফাঁকি দিয়েছে। এই ফাঁকির ওপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে। তাতে সুদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।