বাংলাদেশের আমদানি সিদ্ধান্তে সর্বোচ্চ চূড়ায় এশিয়ায় চালের দাম

ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের (এফএও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের চাল আমদানীর সিদ্ধান্তে এশিয়ায় সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠেছে চালের দাম। প্রতিবেশী ভারতের কাছে থেকে বাংলাদেশের চাল আমদানি নীতি বৈশ্বিকভাবে চালের দাম বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ। বাংলাদেশের চাল আমদানির সিদ্ধান্তে গত জানুয়ারিতে সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছায় চালের মূল্য। রয়টার্স।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম বিশ্বের শীর্ষ তিন চাল রপ্তানিকারক দেশ। এশিয়া ও আফ্রিকার ক্রেতাদের কাছে চালের প্রধান আমদানি উৎস এ তিন দেশ। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব পড়েছে দেশগুলোর চাল রপ্তানিতে। তবে গত সপ্তাহে ভারত ও থাইল্যান্ডের বাজারে পণ্যটির দাম বেড়েছে। ভারতে চালের দাম ২০১৮ সালের মে মাসের পর সর্বোচ্চে উঠেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডে গত ডিসেম্বরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।

কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে নানামুখী সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক চালের বাজার। একদিকে ক্রমবর্ধমান চাহিদা, অন্যদিকে সরবরাহ সীমিত হয়ে আসা খাদ্যপণ্যটির বাজার ভারসাম্য বিঘিœত করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরবরাহ সংকট। পণ্যবাহী কনটেইনার ও কার্গো সংকটের কারণে ভারত ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সমুদ্রপথে চাল রফতানি বিলম্বিত হচ্ছে। এসবের প্রভাব পড়েছে চালের দামে। যে কারণে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোতে ক্রমে খাদ্যপণ্যটির দাম বাড়ছে।

ভারত শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ। চলতি সপ্তাহে দেশটিতে চালের রপ্তাতানি মূল্য তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। এর প্রধান কারণ দেশটি থেকে এশিয়া ও আফ্রিকার ক্রেতাদের চাল ক্রয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া। চলতি সপ্তাহে ভারতে রপ্তানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল প্রতি টন ৪০২ থেকে ৪০৮ ডলারে বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহের সঙ্গে অপরিবর্তনীয় রয়েছে। তবে ভারতে টনপ্রতি চালের এ মূল্য ২০১৮ সালের মে মাসের পর সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশভিত্তিক একজন রপ্তানিকারক জানান, ভারতে রফতানিযোগ্য চালের মূল্য গত দুই সপ্তাহ ধরেই ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এশিয়া ও আফ্রিকার ক্রেতা দেশগুলো এখনো ভারত থেকে চাল ক্রয় অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বজুড়ে শস্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ভারতের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবার গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে চাল রফতানির কার্যক্রম শুরু করেছে, যা চলতি বছর ভারত থেকে পণ্যটির রপ্তাতানি এক-পঞ্চমাংশ বৃদ্ধি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের (এফএও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিগগিরই এসব চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে চাল রপ্তানি করবে ভারত।

অন্যদিকে থাইল্যান্ডে রপ্তানিযোগ্য চালের দাম আগে থেকেই বাড়তির দিকে ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির রপ্তানি মূল্য আরো একধাপ বেড়েছে। ফিলিপাইন ব্যক্তি পর্যায়ের ক্রেতা এবং মালয়েশিয়া ও জাপান সরকারের ক্রয়াদেশের কারণে থাইল্যান্ড থেকে চাল রপ্তানি প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরেছে। সর্বশেষ দুই সপ্তাহে ভারতে অপরিবর্তিত থাকলেও থাইল্যান্ডে রপ্তানিযোগ্য চালের দাম বেড়েছে। চাল রপ্তানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় থাইল্যান্ডের অবস্থান দ্বিতীয়। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটির বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৫২৮-৫৩৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে তা টনপ্রতি ৫১৮ ডলারে বিক্রি হয়েছিল।

প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে সংকটময় সময় পার করছেন থাইল্যান্ডের চাল ব্যবসায়ীরা। কমে এসেছে ধান-চাল সরবরাহ। মূলত এ কারণে দেশটির বাজারে রপ্তানিযোগ্য চালের দাম ক্রমে বাড়তির দিকে রয়েছে।

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩১ মাঘ ১৪২৭, ৩১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বাংলাদেশের আমদানি সিদ্ধান্তে সর্বোচ্চ চূড়ায় এশিয়ায় চালের দাম

image

ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের (এফএও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের চাল আমদানীর সিদ্ধান্তে এশিয়ায় সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠেছে চালের দাম। প্রতিবেশী ভারতের কাছে থেকে বাংলাদেশের চাল আমদানি নীতি বৈশ্বিকভাবে চালের দাম বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ। বাংলাদেশের চাল আমদানির সিদ্ধান্তে গত জানুয়ারিতে সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছায় চালের মূল্য। রয়টার্স।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম বিশ্বের শীর্ষ তিন চাল রপ্তানিকারক দেশ। এশিয়া ও আফ্রিকার ক্রেতাদের কাছে চালের প্রধান আমদানি উৎস এ তিন দেশ। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব পড়েছে দেশগুলোর চাল রপ্তানিতে। তবে গত সপ্তাহে ভারত ও থাইল্যান্ডের বাজারে পণ্যটির দাম বেড়েছে। ভারতে চালের দাম ২০১৮ সালের মে মাসের পর সর্বোচ্চে উঠেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডে গত ডিসেম্বরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।

কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে নানামুখী সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক চালের বাজার। একদিকে ক্রমবর্ধমান চাহিদা, অন্যদিকে সরবরাহ সীমিত হয়ে আসা খাদ্যপণ্যটির বাজার ভারসাম্য বিঘিœত করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরবরাহ সংকট। পণ্যবাহী কনটেইনার ও কার্গো সংকটের কারণে ভারত ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সমুদ্রপথে চাল রফতানি বিলম্বিত হচ্ছে। এসবের প্রভাব পড়েছে চালের দামে। যে কারণে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোতে ক্রমে খাদ্যপণ্যটির দাম বাড়ছে।

ভারত শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ। চলতি সপ্তাহে দেশটিতে চালের রপ্তাতানি মূল্য তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। এর প্রধান কারণ দেশটি থেকে এশিয়া ও আফ্রিকার ক্রেতাদের চাল ক্রয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া। চলতি সপ্তাহে ভারতে রপ্তানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল প্রতি টন ৪০২ থেকে ৪০৮ ডলারে বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহের সঙ্গে অপরিবর্তনীয় রয়েছে। তবে ভারতে টনপ্রতি চালের এ মূল্য ২০১৮ সালের মে মাসের পর সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশভিত্তিক একজন রপ্তানিকারক জানান, ভারতে রফতানিযোগ্য চালের মূল্য গত দুই সপ্তাহ ধরেই ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এশিয়া ও আফ্রিকার ক্রেতা দেশগুলো এখনো ভারত থেকে চাল ক্রয় অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বজুড়ে শস্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ভারতের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবার গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে চাল রফতানির কার্যক্রম শুরু করেছে, যা চলতি বছর ভারত থেকে পণ্যটির রপ্তাতানি এক-পঞ্চমাংশ বৃদ্ধি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের (এফএও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিগগিরই এসব চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে চাল রপ্তানি করবে ভারত।

অন্যদিকে থাইল্যান্ডে রপ্তানিযোগ্য চালের দাম আগে থেকেই বাড়তির দিকে ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির রপ্তানি মূল্য আরো একধাপ বেড়েছে। ফিলিপাইন ব্যক্তি পর্যায়ের ক্রেতা এবং মালয়েশিয়া ও জাপান সরকারের ক্রয়াদেশের কারণে থাইল্যান্ড থেকে চাল রপ্তানি প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরেছে। সর্বশেষ দুই সপ্তাহে ভারতে অপরিবর্তিত থাকলেও থাইল্যান্ডে রপ্তানিযোগ্য চালের দাম বেড়েছে। চাল রপ্তানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় থাইল্যান্ডের অবস্থান দ্বিতীয়। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটির বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৫২৮-৫৩৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে তা টনপ্রতি ৫১৮ ডলারে বিক্রি হয়েছিল।

প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে সংকটময় সময় পার করছেন থাইল্যান্ডের চাল ব্যবসায়ীরা। কমে এসেছে ধান-চাল সরবরাহ। মূলত এ কারণে দেশটির বাজারে রপ্তানিযোগ্য চালের দাম ক্রমে বাড়তির দিকে রয়েছে।