বিষাক্ত রাসায়নিকে পাকছে অপুষ্ট টমেটো

সবজিতে প্রসিদ্ধ মেহেরপুরের গাংনীতে প্রকাশ্যেই কেমিকেল দিয়ে পাকানো হচ্ছে অপুষ্ট টমেটো। ক্ষেত থেকে তোলা অপুষ্ট টমোটো কেমিকেলের গুণে হয়ে যাচ্ছে লাল টুকটুকে। এতে আকৃষ্ট হয়ে বেশি দামে কিনছেন ক্রেতারা। হাট বাজারে যত্রযত্র এগুলো বিক্রি হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কেমিকেল মেশানো টমেটো খেয়ে ভোক্তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান চিকিৎসকরা। তবে প্রশাসন বলছে, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গাংনী উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৭৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ করা হয়। শীতকালীন সবজির মধ্যে টমেটোর প্রতি এক আলাদা আগ্রহ রয়েছে ভোক্তাদের। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বিশেষ করে যোগ হচ্ছে টমেটোর সালাদ। আর এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও চাষি। টমেটো পুষ্ট হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে তোলা হচ্ছে। আর কেমিকেল দিয়ে গায়ের রং তৈরি করা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে পাকা টমেটোর মতই। রোদের মধ্যে টমেটো রেখে নির্দিষ্ট কেমিকেল স্প্রে করা হচ্ছে প্রতিদিন। তারপর খড়কুটা দিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ জাগ রাখার পর রং আসে এবং তারপরই বিক্রি করা হচ্ছে হাট বাজারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনিতে টমেটো জাগে দেয়ার আগে বিষাক্ত নয় সামান্য পরিমাণ কেমিকেল দেয়া হচ্ছে। বেশি একটি ক্ষতিকর নয়। আর চাষিরা বলছে, বাজারে টমেটোর চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরা টমেটো কিনে জাগ দিয়ে পাকিয়ে তা বাজারে বিক্রি করছেন।

টমেটো কিনতে আসা বামন্দি বাজারের তানভির জানান, অনেকেই টমেটোর রং দেখে পাকা মনে করে কিনে নিচ্ছেন কেমিকেল মেশানো টমেটো। সব জায়গাতেই একই অবস্থা। তাই সচেতন ক্রেতারা কাঁচা টমেটো কিনতে আগ্রহী। সচেতন ক্রেতারা এগুলো এড়িয়ে গেলেও বেশিরভাগ মানুষ এগুলোর প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসারকে এম শাহাবুদ্দীন বলেন, গাংনী উপজেলায় বেশ কয়েকটি জাতের টমেটো উৎপাদিত হয়। ইতোমধ্যে বাজারে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের টমেটো। কয়েকদিন যাবত টমেটোয় কেমিকেল স্প্রে করা ও কেমিকেল দিয়ে টমেটো পাকানোর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম রিয়াজুল আলম জানান, কেমিকেল দিয়ে পাকানো এ সবজি খেয়ে সাময়িক নানা অসুবিধার পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো দূরারোগ্য ব্যাধিও হতে পারে। এখনই এর ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মেহেরপুর শাখার সভাপতি রফিকুল আলম বলেন এই অসাধু পন্থায় প্রতারিত করা হচ্ছে ক্রেতাদের। তিনি স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন এর বিরুদ্ধে ফলদায়ক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দিলেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ।

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩১ মাঘ ১৪২৭, ৩১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বিষাক্ত রাসায়নিকে পাকছে অপুষ্ট টমেটো

প্রতিনিধি, মেহেরপুর

image

সবজিতে প্রসিদ্ধ মেহেরপুরের গাংনীতে প্রকাশ্যেই কেমিকেল দিয়ে পাকানো হচ্ছে অপুষ্ট টমেটো। ক্ষেত থেকে তোলা অপুষ্ট টমোটো কেমিকেলের গুণে হয়ে যাচ্ছে লাল টুকটুকে। এতে আকৃষ্ট হয়ে বেশি দামে কিনছেন ক্রেতারা। হাট বাজারে যত্রযত্র এগুলো বিক্রি হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কেমিকেল মেশানো টমেটো খেয়ে ভোক্তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান চিকিৎসকরা। তবে প্রশাসন বলছে, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গাংনী উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৭৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ করা হয়। শীতকালীন সবজির মধ্যে টমেটোর প্রতি এক আলাদা আগ্রহ রয়েছে ভোক্তাদের। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বিশেষ করে যোগ হচ্ছে টমেটোর সালাদ। আর এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও চাষি। টমেটো পুষ্ট হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে তোলা হচ্ছে। আর কেমিকেল দিয়ে গায়ের রং তৈরি করা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে পাকা টমেটোর মতই। রোদের মধ্যে টমেটো রেখে নির্দিষ্ট কেমিকেল স্প্রে করা হচ্ছে প্রতিদিন। তারপর খড়কুটা দিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ জাগ রাখার পর রং আসে এবং তারপরই বিক্রি করা হচ্ছে হাট বাজারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনিতে টমেটো জাগে দেয়ার আগে বিষাক্ত নয় সামান্য পরিমাণ কেমিকেল দেয়া হচ্ছে। বেশি একটি ক্ষতিকর নয়। আর চাষিরা বলছে, বাজারে টমেটোর চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরা টমেটো কিনে জাগ দিয়ে পাকিয়ে তা বাজারে বিক্রি করছেন।

টমেটো কিনতে আসা বামন্দি বাজারের তানভির জানান, অনেকেই টমেটোর রং দেখে পাকা মনে করে কিনে নিচ্ছেন কেমিকেল মেশানো টমেটো। সব জায়গাতেই একই অবস্থা। তাই সচেতন ক্রেতারা কাঁচা টমেটো কিনতে আগ্রহী। সচেতন ক্রেতারা এগুলো এড়িয়ে গেলেও বেশিরভাগ মানুষ এগুলোর প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসারকে এম শাহাবুদ্দীন বলেন, গাংনী উপজেলায় বেশ কয়েকটি জাতের টমেটো উৎপাদিত হয়। ইতোমধ্যে বাজারে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের টমেটো। কয়েকদিন যাবত টমেটোয় কেমিকেল স্প্রে করা ও কেমিকেল দিয়ে টমেটো পাকানোর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম রিয়াজুল আলম জানান, কেমিকেল দিয়ে পাকানো এ সবজি খেয়ে সাময়িক নানা অসুবিধার পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো দূরারোগ্য ব্যাধিও হতে পারে। এখনই এর ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মেহেরপুর শাখার সভাপতি রফিকুল আলম বলেন এই অসাধু পন্থায় প্রতারিত করা হচ্ছে ক্রেতাদের। তিনি স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন এর বিরুদ্ধে ফলদায়ক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দিলেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ।