ভোট ব্যস্ততায় ঢিলেঢালা পৌর বর্জ্য অপসারণ!

সৈয়দপুর পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে শহরের বর্জ্য (ময়লা-আবর্জনা) ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এ নির্বাচনে সব কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত থাকায় বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম মনোযোগ হারিয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গাছাড়াভাব বিরাজ করায় গোটা শহরে বর্জ্য অপসারণ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। অথচ এ কাজে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হলেও পৌর পরিষদের কঠোরতার অভাবে বর্জ্য অপসারণ কার্যতঃ ঢিলাঢালাভাবে চলছে। ভুক্তভোগী শহরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৈয়দপুর পৌরসভার দ্বিতীয় ধাপের স্থগিত নির্বাচন আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণার পর থেকে শিথিল হয়ে পড়েছে বর্জ্য অপসারণ কাজ। নির্বাচনে পৌর পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মেয়রসহ সব কাউন্সিলররা প্রার্থী হওয়ায় এমন বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। কাউন্সিলররা ভোট ব্যাংক ঠিক রাখতে এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্চ করছেন না। ফলে শক্ত তদারকির অভাবে শহরের পাড়া-মহল্লাসহ সর্বত্র সয়লাব হয়ে উঠছে ময়লা-আবর্জনায়। এ কাজে নিয়োজিত পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও কর্মঘন্টা ফাঁকি দিয়ে দিন পার করছে। সরেজমিনে শহরের মার্কেট ও পাড়া-মহল্লা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ এলাকার সড়ক ও আল-গলিতে ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমে আছে। সড়কে দিনের পর দিন পড়ে থাকতে দেখা যায় নানা রকমের বর্জ্য। এলাকাবাসীরা জানান, আগে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সকাল-দুপুর-রাত নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করত। বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা নিয়ে যেত প্রতিদিন। কিন্তু নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর পর থেকে সব ঢিলাঢালা হয়ে গেছে। কাউন্সিলরদের অভিযোগ করেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না, এখন সবকিছু চলছে দায়সারাভাবে।

শহরের ১নং ওয়ার্ডের নতুন হাটের বাসিন্দা মো. শহিদুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এখানে দীর্ঘদিন থেকে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন কাজ করা হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে বর্জ্য তোলার গাড়ির দেখা মিললেও শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয় না। একইভাবে ৯নং ওয়ার্ডের হাতিখানা এলাকার বাসিন্দা মো. আরমান জানান, আগে ময়লা পরিষ্কার যে ভাগ করা হয় এখন তা করা হচ্ছে না। এলাকার সর্বত্র এখন ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। ডাস্টবিন থেকে ময়লা তোলা হয় না। এতে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। শহরের ৬নং ওয়ার্ডের চাকরিজীবী এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কাউন্সিলররা প্রার্থী হয়ে উন্নয়নের নানা কথা বললেও পাড়া-মহল্লার বর্জ্য অপসারণে উদাসিন। এলাকায় নিয়মিত পরিচ্ছন্ন কাজ হচ্ছে না। অথচ এ নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। ফলে নিত্যদিন ময়লা-আবর্জনা নিয়ে আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বর্জ্য অপসারণ কাজের অবনতি হয়েছে। অথচ এ কাজে প্রতি মাসে পৌরসভার লাখ লাখ ব্যয় হচ্ছে, কিন্তু সুফল পাচ্ছি না আমরা। শহরের বাঁশবাড়ী মিস্ত্রীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, পৌরসভা সঠিকভাবে বর্জ্য অপসারণ করছে না। দিনের পর দিন বর্জ্য পড়ে থাকছে। বর্জ্য অপসারণে চলছে অব্যবস্থাপনা। ময়লা-আবর্জনা মাড়িয়ে এলাকাবাসীকে পথ চলতে হচ্ছে। আগে এমন সমস্যা ছিলো না, নির্বাচন শুরুর পর থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। একইভাবে মার্কেটের একাধিক দোকানির অভিযোগ, ব্যস্ততম সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা রাখায় জনদুর্ভোগ বাড়ছে। সঠিকভাবে বর্জ্য নেয়া হচ্ছে না। এতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যা হচ্ছে। পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শহরে প্রতিদিন প্রায় ২০ টন বর্জ্য জমা হয়। এসব বর্জ্য ওয়ার্ডভিত্তিক বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে গাড়ি করে বর্জ্য অপসারণ করা হয়। পাড়া-মহল্লার ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের জন্য ময়লা বহনের ভ্যান রয়েছে। এসব ভ্যান বিভিন্ন পয়েন্টে ময়লা জমা করে, এরপর তা অপসারণ করা হয়। বর্জ্য অপসারণে পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে ৬টি গাড়ি এবং প্রায় ৩০০ জনবল ব্যবহৃত হয়।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে, সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আইয়ুব আলী জানান, শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও বর্জ্য অপসারণের কাজ সঠিকভাবেই চলছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে কোন গাফিলতি করা হচ্ছে না। অনিয়মের কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তারপরও কোন অভিযোগ মিললে সঙ্গে সঙ্গে তা সমাধান করা হচ্ছে। আসন্ন পৌর নির্বাচনের কারণে বর্জ্য অপসারণ ঢিলেঢালাভাবে চলছে এমন অভিযোগের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি, কাজে কোন ব্যত্যয় হচ্ছে না।

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩১ মাঘ ১৪২৭, ৩১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ভোট ব্যস্ততায় ঢিলেঢালা পৌর বর্জ্য অপসারণ!

কাজী জাহিদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

image

সৈয়দপুর পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে শহরের বর্জ্য (ময়লা-আবর্জনা) ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এ নির্বাচনে সব কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত থাকায় বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম মনোযোগ হারিয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গাছাড়াভাব বিরাজ করায় গোটা শহরে বর্জ্য অপসারণ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। অথচ এ কাজে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হলেও পৌর পরিষদের কঠোরতার অভাবে বর্জ্য অপসারণ কার্যতঃ ঢিলাঢালাভাবে চলছে। ভুক্তভোগী শহরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৈয়দপুর পৌরসভার দ্বিতীয় ধাপের স্থগিত নির্বাচন আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণার পর থেকে শিথিল হয়ে পড়েছে বর্জ্য অপসারণ কাজ। নির্বাচনে পৌর পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মেয়রসহ সব কাউন্সিলররা প্রার্থী হওয়ায় এমন বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। কাউন্সিলররা ভোট ব্যাংক ঠিক রাখতে এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্চ করছেন না। ফলে শক্ত তদারকির অভাবে শহরের পাড়া-মহল্লাসহ সর্বত্র সয়লাব হয়ে উঠছে ময়লা-আবর্জনায়। এ কাজে নিয়োজিত পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও কর্মঘন্টা ফাঁকি দিয়ে দিন পার করছে। সরেজমিনে শহরের মার্কেট ও পাড়া-মহল্লা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ এলাকার সড়ক ও আল-গলিতে ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমে আছে। সড়কে দিনের পর দিন পড়ে থাকতে দেখা যায় নানা রকমের বর্জ্য। এলাকাবাসীরা জানান, আগে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সকাল-দুপুর-রাত নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করত। বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা নিয়ে যেত প্রতিদিন। কিন্তু নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর পর থেকে সব ঢিলাঢালা হয়ে গেছে। কাউন্সিলরদের অভিযোগ করেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না, এখন সবকিছু চলছে দায়সারাভাবে।

শহরের ১নং ওয়ার্ডের নতুন হাটের বাসিন্দা মো. শহিদুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এখানে দীর্ঘদিন থেকে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন কাজ করা হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে বর্জ্য তোলার গাড়ির দেখা মিললেও শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয় না। একইভাবে ৯নং ওয়ার্ডের হাতিখানা এলাকার বাসিন্দা মো. আরমান জানান, আগে ময়লা পরিষ্কার যে ভাগ করা হয় এখন তা করা হচ্ছে না। এলাকার সর্বত্র এখন ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। ডাস্টবিন থেকে ময়লা তোলা হয় না। এতে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। শহরের ৬নং ওয়ার্ডের চাকরিজীবী এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কাউন্সিলররা প্রার্থী হয়ে উন্নয়নের নানা কথা বললেও পাড়া-মহল্লার বর্জ্য অপসারণে উদাসিন। এলাকায় নিয়মিত পরিচ্ছন্ন কাজ হচ্ছে না। অথচ এ নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। ফলে নিত্যদিন ময়লা-আবর্জনা নিয়ে আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বর্জ্য অপসারণ কাজের অবনতি হয়েছে। অথচ এ কাজে প্রতি মাসে পৌরসভার লাখ লাখ ব্যয় হচ্ছে, কিন্তু সুফল পাচ্ছি না আমরা। শহরের বাঁশবাড়ী মিস্ত্রীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, পৌরসভা সঠিকভাবে বর্জ্য অপসারণ করছে না। দিনের পর দিন বর্জ্য পড়ে থাকছে। বর্জ্য অপসারণে চলছে অব্যবস্থাপনা। ময়লা-আবর্জনা মাড়িয়ে এলাকাবাসীকে পথ চলতে হচ্ছে। আগে এমন সমস্যা ছিলো না, নির্বাচন শুরুর পর থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। একইভাবে মার্কেটের একাধিক দোকানির অভিযোগ, ব্যস্ততম সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা রাখায় জনদুর্ভোগ বাড়ছে। সঠিকভাবে বর্জ্য নেয়া হচ্ছে না। এতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যা হচ্ছে। পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শহরে প্রতিদিন প্রায় ২০ টন বর্জ্য জমা হয়। এসব বর্জ্য ওয়ার্ডভিত্তিক বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে গাড়ি করে বর্জ্য অপসারণ করা হয়। পাড়া-মহল্লার ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের জন্য ময়লা বহনের ভ্যান রয়েছে। এসব ভ্যান বিভিন্ন পয়েন্টে ময়লা জমা করে, এরপর তা অপসারণ করা হয়। বর্জ্য অপসারণে পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে ৬টি গাড়ি এবং প্রায় ৩০০ জনবল ব্যবহৃত হয়।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে, সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আইয়ুব আলী জানান, শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও বর্জ্য অপসারণের কাজ সঠিকভাবেই চলছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে কোন গাফিলতি করা হচ্ছে না। অনিয়মের কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তারপরও কোন অভিযোগ মিললে সঙ্গে সঙ্গে তা সমাধান করা হচ্ছে। আসন্ন পৌর নির্বাচনের কারণে বর্জ্য অপসারণ ঢিলেঢালাভাবে চলছে এমন অভিযোগের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি, কাজে কোন ব্যত্যয় হচ্ছে না।