ঢাকা টেস্ট : তৃতীয় দিনে হঠাৎ আলোর ঝলকানি

স্কোর : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪০৯ ও ৪১/৩, বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ২৯৬

ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর ঝলক দেখিয়েছেন টাইগাররা। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে তোলা ৪০৯ রানের জবাব দিতে নেমে মাত্র ৭৫ রানে টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ দলকে ফলো অন থেকে বাঁচিয়েছে মুশফিক-লিটন-মিরাজের হাফ সেঞ্চুরি। শুধু কী তাই? তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে অল আউট হওয়ার আগে বাংলাদেশ দল পেয়েছে ২৯৬ রানের সংগ্রহ। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবিয়ান দলের ওপর ঘূর্ণি বলের মায়া বিস্তার করেছেন তাইজুল-নাইম- মিরাজ। মাত্র ৪১ রান তুলতেই ফিরেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন ব্যাটসম্যান। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে পাওয়া ১১৩ রানের লিডটাকে ১৫৪ তে নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেছে ক্যারিবিয়ানরা।

চট্টগ্রাম টেস্টে নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হওয়া রাকিম কর্নওয়াল মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করে বুঝিয়েছেন, তাকে দলে অযথাই রাখা হয়নি। আবার বাংলাদেশের তিন স্পিনার তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে ক্যারিবিয়ানদের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আজ ম্যাচের চতুর্থ দিনে স্পিনবিষে ক্যারিবিয়ানদের নীল করার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। যদিও ক্রিজে আছে ইনফর্ম এনক্রুমা বোনার, সেই সঙ্গে ব্যাট-প্যাড নিয়ে সকালেই হয়তো প্রস্তুত থাকবেন অভিষেক টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো কাইল মায়ার্স।

মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানরত ম্যাচে দ্বিতীয় দিন শেষে শুক্রবার ৪ উইকেটে ১০৫ রান তোলা বাংলাদেশ দলের দুই অপরাজিত মুশফিকুর রহিম ২৭ ও মোহাম্মদ মিঠুন ৬ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের ব্যাটিং শুরু করেছিলেন।

তৃতীয় দিনের শুরু থেকে মুশফিক-মিঠুন ছিলেন সতর্ক। ফলো-অন এড়ানোই মূল লক্ষ্য ছিল তাদের। ৪৪তম ওভারে ৮৯তম বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক।

কিন্তু জুটিটাকে আর বড় হতে দেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার রাকিম কর্নওয়াল। দিনের দশম ওভারের প্রথম বলেই টাইমিং-এর হেরফেরে শর্ট মিড-উইকেটে সফরকারীদলের অধিনায়ক ক্রেগ ব্র্যাথওয়েটকে ক্যাচ দেন মিঠুন। ফলে ১৪০ মিনিটে ৮৭ বলে মিঠুনের ১৫ রানের লড়াকু ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। মিঠুনকে হারানোর পর কর্নওয়ালের করা ৫০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে অযথা রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শর্ট কাভারে কাইল মায়ার্সের হাতে ধরা পড়েন মুশফিক। মুশফিকের আউটে দলীয় ১৫৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ফলো-অনের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।

সেই শঙ্কাটা দূর কাটে লিটন- মিরাজের ব্যাটে। প্রথম সেশনে দুটো উইকেট হারানো টাইগাররা ৬ উইকেটে ১৮১ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায়। বিরতির পর ৭০তম ওভারের শেষ বলে ফলো-অনের লজ্জা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেন লিটন-মিরাজ জুটি। ৭৬তম ওভারের প্রথম দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান লিটন। এরপর হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন প্রথম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান মিরাজ।

লিটন-মিরাজের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় সেশনটি ভালোয় ভালোয় কাটিয়ে ৬ উইকেটে ২৭২ রানে টাইগাররা চা-বিরতিতে যাওয়ার সময় লিটন ৬৬ ও মিরাজ ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।

বিরতির থেকে ফেরার পর আবারও পুরানো চেহারায় ফেরে বাংলাদেশ। ৯২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটনকে (৭১) লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন কর্নওয়াল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি লিটন। সপ্তম উইকেটে ২৫৫ বলে ১২৬ রান যোগ করেন লিটন-মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রান বাংলাদেশের।

একই ওভারের পঞ্চম বলে নাইম হাসানকে খালি হাতে বিদায় দেন কর্নওয়াল। এতে ইনিংস পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয় বিশালদেহী এই স্পিনারের। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকার করলেন কর্নওয়াল।

কর্নওয়ালের সাফল্যের পর মিরাজের (৫৭) বিদায় নিশ্চিত করেন পেসার শ্যানন গাব্রিয়েল। ৬টি চারে ১৪০ বলে ৫৭ রান করেন মিরাজ।

মাত্র ২ রানের ব্যবধানে (২৮১ থেকে ২৮৩ রানের মধ্যে) তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ৩শর নিচে গুটিয়ে যাবার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। সেটি রুখতে শেষ উইকেটে চেষ্টা করেছিলেন তাইজুল ইসলাম ও আবু জায়েদ। কিন্তু জায়েদকে শিকার করে বাংলাদেশকে ২৯৬ রানে থামান পেসার আলজারি জোসেফ। ১৩ রানে অপরাজিত থেকে যান তাইজুল।

বাংলাদেশের ইনিংস শেষে দ্বিতীয়বারের মতো ব্যাট করতে নেমে বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্রেগ ব্র্যাথওয়েটকে (৬) নাইম ও শ্যান মোসলেকে (৭) এক অঙ্কের কোটায় ফেরান। আরেক স্পিনার তাইজুলে বলে স্ট্যাম্প হারান জন ক্যাম্পবেলকে (১৮) রানে বোল্ড করেন তিনি।

এরপর দিনের বাকি সময়ে বিপদ ছাড়া কাটিয়ে দেন এনক্রুমার বোনার ও নাইটওয়াচম্যান জোমেল ওয়ারিকান। বোনার ৮ ও ওয়ারিকান ২ রানে অপরাজিত আছেন।

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩১ মাঘ ১৪২৭, ৩১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ঢাকা টেস্ট : তৃতীয় দিনে হঠাৎ আলোর ঝলকানি

স্কোর : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪০৯ ও ৪১/৩, বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ২৯৬

বিশেষ প্রতিনিধি

image

বাংলাদেশ ইনিংসের সফল জুটি লিটন দাস ও মেহদী মিরাজ। সপ্তম উইকেটে তারা যোগ করেন মূল্যবান ১২৬ রান -বিবিসি

ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর ঝলক দেখিয়েছেন টাইগাররা। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে তোলা ৪০৯ রানের জবাব দিতে নেমে মাত্র ৭৫ রানে টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ দলকে ফলো অন থেকে বাঁচিয়েছে মুশফিক-লিটন-মিরাজের হাফ সেঞ্চুরি। শুধু কী তাই? তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে অল আউট হওয়ার আগে বাংলাদেশ দল পেয়েছে ২৯৬ রানের সংগ্রহ। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবিয়ান দলের ওপর ঘূর্ণি বলের মায়া বিস্তার করেছেন তাইজুল-নাইম- মিরাজ। মাত্র ৪১ রান তুলতেই ফিরেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন ব্যাটসম্যান। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে পাওয়া ১১৩ রানের লিডটাকে ১৫৪ তে নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেছে ক্যারিবিয়ানরা।

চট্টগ্রাম টেস্টে নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হওয়া রাকিম কর্নওয়াল মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করে বুঝিয়েছেন, তাকে দলে অযথাই রাখা হয়নি। আবার বাংলাদেশের তিন স্পিনার তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে ক্যারিবিয়ানদের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আজ ম্যাচের চতুর্থ দিনে স্পিনবিষে ক্যারিবিয়ানদের নীল করার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। যদিও ক্রিজে আছে ইনফর্ম এনক্রুমা বোনার, সেই সঙ্গে ব্যাট-প্যাড নিয়ে সকালেই হয়তো প্রস্তুত থাকবেন অভিষেক টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো কাইল মায়ার্স।

মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানরত ম্যাচে দ্বিতীয় দিন শেষে শুক্রবার ৪ উইকেটে ১০৫ রান তোলা বাংলাদেশ দলের দুই অপরাজিত মুশফিকুর রহিম ২৭ ও মোহাম্মদ মিঠুন ৬ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের ব্যাটিং শুরু করেছিলেন।

তৃতীয় দিনের শুরু থেকে মুশফিক-মিঠুন ছিলেন সতর্ক। ফলো-অন এড়ানোই মূল লক্ষ্য ছিল তাদের। ৪৪তম ওভারে ৮৯তম বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক।

কিন্তু জুটিটাকে আর বড় হতে দেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার রাকিম কর্নওয়াল। দিনের দশম ওভারের প্রথম বলেই টাইমিং-এর হেরফেরে শর্ট মিড-উইকেটে সফরকারীদলের অধিনায়ক ক্রেগ ব্র্যাথওয়েটকে ক্যাচ দেন মিঠুন। ফলে ১৪০ মিনিটে ৮৭ বলে মিঠুনের ১৫ রানের লড়াকু ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। মিঠুনকে হারানোর পর কর্নওয়ালের করা ৫০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে অযথা রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শর্ট কাভারে কাইল মায়ার্সের হাতে ধরা পড়েন মুশফিক। মুশফিকের আউটে দলীয় ১৫৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ফলো-অনের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।

সেই শঙ্কাটা দূর কাটে লিটন- মিরাজের ব্যাটে। প্রথম সেশনে দুটো উইকেট হারানো টাইগাররা ৬ উইকেটে ১৮১ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায়। বিরতির পর ৭০তম ওভারের শেষ বলে ফলো-অনের লজ্জা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেন লিটন-মিরাজ জুটি। ৭৬তম ওভারের প্রথম দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান লিটন। এরপর হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন প্রথম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান মিরাজ।

লিটন-মিরাজের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় সেশনটি ভালোয় ভালোয় কাটিয়ে ৬ উইকেটে ২৭২ রানে টাইগাররা চা-বিরতিতে যাওয়ার সময় লিটন ৬৬ ও মিরাজ ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।

বিরতির থেকে ফেরার পর আবারও পুরানো চেহারায় ফেরে বাংলাদেশ। ৯২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটনকে (৭১) লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন কর্নওয়াল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি লিটন। সপ্তম উইকেটে ২৫৫ বলে ১২৬ রান যোগ করেন লিটন-মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রান বাংলাদেশের।

একই ওভারের পঞ্চম বলে নাইম হাসানকে খালি হাতে বিদায় দেন কর্নওয়াল। এতে ইনিংস পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয় বিশালদেহী এই স্পিনারের। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকার করলেন কর্নওয়াল।

কর্নওয়ালের সাফল্যের পর মিরাজের (৫৭) বিদায় নিশ্চিত করেন পেসার শ্যানন গাব্রিয়েল। ৬টি চারে ১৪০ বলে ৫৭ রান করেন মিরাজ।

মাত্র ২ রানের ব্যবধানে (২৮১ থেকে ২৮৩ রানের মধ্যে) তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ৩শর নিচে গুটিয়ে যাবার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। সেটি রুখতে শেষ উইকেটে চেষ্টা করেছিলেন তাইজুল ইসলাম ও আবু জায়েদ। কিন্তু জায়েদকে শিকার করে বাংলাদেশকে ২৯৬ রানে থামান পেসার আলজারি জোসেফ। ১৩ রানে অপরাজিত থেকে যান তাইজুল।

বাংলাদেশের ইনিংস শেষে দ্বিতীয়বারের মতো ব্যাট করতে নেমে বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্রেগ ব্র্যাথওয়েটকে (৬) নাইম ও শ্যান মোসলেকে (৭) এক অঙ্কের কোটায় ফেরান। আরেক স্পিনার তাইজুলে বলে স্ট্যাম্প হারান জন ক্যাম্পবেলকে (১৮) রানে বোল্ড করেন তিনি।

এরপর দিনের বাকি সময়ে বিপদ ছাড়া কাটিয়ে দেন এনক্রুমার বোনার ও নাইটওয়াচম্যান জোমেল ওয়ারিকান। বোনার ৮ ও ওয়ারিকান ২ রানে অপরাজিত আছেন।