ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী ফাখরিজাদেহকে যেভাবে হত্যা করেছিল মোসাদ

ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যায় ইসরাইয়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ জড়িত ছিল বলে দাবি করেছে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত বিশ্বের প্রাচীনতম ইহুদি পত্রিকা জুইশ ক্রনিকলস। পত্রিকাটি বলছে, ফাখরিজাদেহকে হত্যার আগে এমন নজরদারি চালানো হয়েছিল, যাতে ফাখরিজাদেহের নিঃশ্বাসের শব্দও টের পেত মোসাদের গোয়েন্দারা।

জুইশ ক্রনিকল তাদের এক প্রতিবেদনে বলা বলছে, তেহরানের উপকণ্ঠে মহসেন ফাখরিজাদেকে হত্যায় অংশ নেন মোসাদের ২০ গোয়েন্দা। প্রায় এক টন ওজনের একটি দূর নিয়ন্ত্রিত বন্দুকের সাহায্যে তাকে হত্যা করা হয়। ইসরায়েলের একটি গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলছে, ইরানের পরমাণু কেন্দ্র থেকে গোপন নথি হাতে পাওয়ার পরই মহসেনকে হত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল। ইরান পরমাণু বোমা বানাতে পারলে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকত মহসেন ফাখরিজাদের। মহসেন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত বছরের ২৭ নভেম্বর একদল আততায়ীর হামলায় নিহত হন তিনি। ইরান দাবি করে আসছিল, এ হামলার পেছনে ইসরায়েল জড়িত। তবে এখন পর্যন্ত হামলার দায় স্বীকার করেনি এ ইহুদি রাষ্ট্রটি। গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জুইশ ক্রনিকলস তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রায় আট মাস ধরে প্রস্তুতি নেয়ার পর মহসেন ফাখরিজাদেহকে উদ্দেশ করে হামলা চালায় মোসাদের গোয়েন্দারা। আততায়ী দলটিতে ইরানের কয়েকজন নাগরিকও ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৯ বছর বয়সী ফাখরিজাদেহকে হত্যায় ১৩টি বুলেট খরচ করে মোসাদ। এর সবকটিই নিখুঁতভাবে তার মাথায় বিদ্ধ হয়। মোসাদ জানিয়েছে, ফাখরিজাদে ছাড়া ওই হামলায় অন্য কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হননি। হামলার সময় তার স্ত্রী ও ১২ জন দেহরক্ষীও গাড়িবহরে ছিলেন।

জুইশ ক্রনিকলসকে গোয়েন্দা সূত্রটি জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাতে ‘অত্যন্ত নিখুঁত’ হামলা চালাতে সক্ষম বন্দুক ব্যবহার করা হয়েছিল। এর প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশ প্রায় আট মাস ধরে ইরানে গোপনে পাচার করা হয়েছিল।

হামলার আগে এক টন ওজনের বন্দুকটিকে একটি নিশান গাড়ির ওপরে স্থাপন করা হয়। এরপর রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে দূর থেকে ফাখরিজাদেহর গাড়ির ওপর গুলি চালানো হয়। তিনি মারা গেছেন নিশ্চিত হওয়ার পরই বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিশান গাড়িটিকে উড়িয়ে দেয় ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। এরপরই সেখান থেকে সটকে পড়ে তারা। ফাখরিজাদেহকে হত্যার পর ইরান দাবি করছিল, তাকে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রের সাহায্যে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি কিছু গণমাধ্যম দাবি করেছিল, হত্যায় ৬২ বন্দুকধারী অংশ নিয়েছিল। জুইশ ক্রনিকলের প্রতিবেদনে এমন দাবিকেও নাকচ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এটি এখন প্রমাণিত যে, ইরানের ভূমিতেই দীর্ঘ কয়েক মাস প্রস্তুতি নিয়ে তাদের শীর্ষ বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে মোসাদ। জুইশ ক্রনিকল এটিও দাবি করেছে, ফাখরিজাদেহকে হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা না থাকলেও অভিযানের ব্যাপারে জানত দেশটি। পত্রিকাটির মতে, ইরানের বিরোধী পক্ষকে দমনেই সরকার শক্তি খরচে ব্যস্ত থাকায় দেশটির মাটিতে এমন অভিযান চালাতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল।

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩১ মাঘ ১৪২৭, ৩১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী ফাখরিজাদেহকে যেভাবে হত্যা করেছিল মোসাদ

image

তেহরানে এক অনুষ্ঠানে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও পরমাণু বিজ্ঞানী মহসেন ফাখরিজাদেহ -এএফপি

ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যায় ইসরাইয়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ জড়িত ছিল বলে দাবি করেছে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত বিশ্বের প্রাচীনতম ইহুদি পত্রিকা জুইশ ক্রনিকলস। পত্রিকাটি বলছে, ফাখরিজাদেহকে হত্যার আগে এমন নজরদারি চালানো হয়েছিল, যাতে ফাখরিজাদেহের নিঃশ্বাসের শব্দও টের পেত মোসাদের গোয়েন্দারা।

জুইশ ক্রনিকল তাদের এক প্রতিবেদনে বলা বলছে, তেহরানের উপকণ্ঠে মহসেন ফাখরিজাদেকে হত্যায় অংশ নেন মোসাদের ২০ গোয়েন্দা। প্রায় এক টন ওজনের একটি দূর নিয়ন্ত্রিত বন্দুকের সাহায্যে তাকে হত্যা করা হয়। ইসরায়েলের একটি গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলছে, ইরানের পরমাণু কেন্দ্র থেকে গোপন নথি হাতে পাওয়ার পরই মহসেনকে হত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল। ইরান পরমাণু বোমা বানাতে পারলে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকত মহসেন ফাখরিজাদের। মহসেন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত বছরের ২৭ নভেম্বর একদল আততায়ীর হামলায় নিহত হন তিনি। ইরান দাবি করে আসছিল, এ হামলার পেছনে ইসরায়েল জড়িত। তবে এখন পর্যন্ত হামলার দায় স্বীকার করেনি এ ইহুদি রাষ্ট্রটি। গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জুইশ ক্রনিকলস তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রায় আট মাস ধরে প্রস্তুতি নেয়ার পর মহসেন ফাখরিজাদেহকে উদ্দেশ করে হামলা চালায় মোসাদের গোয়েন্দারা। আততায়ী দলটিতে ইরানের কয়েকজন নাগরিকও ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৯ বছর বয়সী ফাখরিজাদেহকে হত্যায় ১৩টি বুলেট খরচ করে মোসাদ। এর সবকটিই নিখুঁতভাবে তার মাথায় বিদ্ধ হয়। মোসাদ জানিয়েছে, ফাখরিজাদে ছাড়া ওই হামলায় অন্য কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হননি। হামলার সময় তার স্ত্রী ও ১২ জন দেহরক্ষীও গাড়িবহরে ছিলেন।

জুইশ ক্রনিকলসকে গোয়েন্দা সূত্রটি জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাতে ‘অত্যন্ত নিখুঁত’ হামলা চালাতে সক্ষম বন্দুক ব্যবহার করা হয়েছিল। এর প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশ প্রায় আট মাস ধরে ইরানে গোপনে পাচার করা হয়েছিল।

হামলার আগে এক টন ওজনের বন্দুকটিকে একটি নিশান গাড়ির ওপরে স্থাপন করা হয়। এরপর রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে দূর থেকে ফাখরিজাদেহর গাড়ির ওপর গুলি চালানো হয়। তিনি মারা গেছেন নিশ্চিত হওয়ার পরই বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিশান গাড়িটিকে উড়িয়ে দেয় ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। এরপরই সেখান থেকে সটকে পড়ে তারা। ফাখরিজাদেহকে হত্যার পর ইরান দাবি করছিল, তাকে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রের সাহায্যে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি কিছু গণমাধ্যম দাবি করেছিল, হত্যায় ৬২ বন্দুকধারী অংশ নিয়েছিল। জুইশ ক্রনিকলের প্রতিবেদনে এমন দাবিকেও নাকচ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এটি এখন প্রমাণিত যে, ইরানের ভূমিতেই দীর্ঘ কয়েক মাস প্রস্তুতি নিয়ে তাদের শীর্ষ বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে মোসাদ। জুইশ ক্রনিকল এটিও দাবি করেছে, ফাখরিজাদেহকে হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা না থাকলেও অভিযানের ব্যাপারে জানত দেশটি। পত্রিকাটির মতে, ইরানের বিরোধী পক্ষকে দমনেই সরকার শক্তি খরচে ব্যস্ত থাকায় দেশটির মাটিতে এমন অভিযান চালাতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল।