বিজিএমইএ নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ তৈরি হলেও প্রতিপক্ষকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখোনো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বাধীনতা পরিষদের প্যানেল লিডার মো. জাহাঙ্গীর আলম। গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিজিএমইএ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত নির্বাচনে অনেক জাল ভোট পড়েছিল। ভোটার না এলেও তার ভোট কাস্ট হয়েছিল। সে সময় আমার স্ত্রীকে এজেন্ট করেছিলাম কিন্তু তাকে বের করে দেয়া হয়েছিল। তবে জাল ভোট পড়লেও পোশাকখাতের বৃহত্তর স্বার্থের জন্য আমরা সে নির্বাচনটি মেনে নিয়েছিলাম। তবে এবারের নির্বাচনেও এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রয়েছে। এবার নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। আমাদের প্যানেল নির্বাচনে থাকবে। ঢাকার ২৬ পদে আমাদের প্রার্থী রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকেও আমাদের প্রার্থী লড়বে। আশা করি, পুরো প্যানেল নিয়ে নির্বাচন করব।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পৃথিবী থেকে কবে বিদায় হবে, আদৌ বিদায় হবে কিনা, এর প্রভাবমুক্ত হয়ে বিশ্ববাজার কবে স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত। এমন বাস্তবতায় পোশাক খাত থেকে ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় অর্জন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এসব ব্যর্থতার দায় কেবল করোনাভাইরাসের না। আমরা মনে করি না নেতৃত্বহীনতা, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, আইনি সংস্কার করতে না পারায় অনেক গার্মেন্টস বন্ধের কারণ হয়ে থাকবে।

বিজয়ী হলে পোশাক খাতে কয়েকটি কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন বিজিএমইএ নির্বাচনের এই প্রার্থী। তিনি বলেন, আমরা মনে করি বিজিএমইএ ইউডি ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রডাক্ট কস্ট বিশ্লেষণ করে ন্যূনতম সিএম-এর নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে। এ কাজটি করতে পারলে আবারও শিল্প বিকাশ হবে, আমরা এটা করতে চাই।

দ্বিতীয়ত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য স্বতন্ত্র নিরাপত্তা মানদ- তৈরি করা হবে। তৃতীয়ত, শ্রম আইনের ধারাগুলো সংশোধন করে যুগোপযোগী শিল্পবান্ধব শ্রমনীতি তৈরি করা হবে। চতুর্থত, প্রত্যেক বায়ারের জন্য ইউনিফাইড কোড অব প্যাকটিস তৈরি করা হবে।

পঞ্চমত, নতুন বাজার সম্প্রসারণে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে আরএমজি উইং খোলা হবে এবং এই উইং থেকে পণ্যের ব্রান্ডিং, বায়ার সম্পর্কে তথ্য দেয়া এবং বায়ারের সঙ্গে কোন মতবিরোধ হলে তার সমাধানে উদ্যোগী হওয়া। ষষ্ঠত, ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, বন্ড লাইসেন্স, পরিবেশ লাইসেন্সসহ অন্য সব লাইসেন্সের মেয়াদ কমপক্ষে তিন বছর করা।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৩ সালে সাধারণ সদস্যদের সরাসরি ভোটে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত হয়েছিল। পরের বার সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম দুই মেয়াদের জন্য সমঝোতা করে। সেই সমঝোতার প্রথম দফায় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে সম্মিলিত পরিষদের সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি হয়। সেই কমিটি নানা অজুহাত দেখিয়ে ৪৩ মাস দায়িত্ব পালন করে। পরের মেয়াদে সমঝোতার কমিটি করার উদ্যোগ নেয় দুই জোট। তবে বাগড়া দেয় স্বাধীনতা পরিষদ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের শুরুতে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। সে সময় নির্বাচন থেকে তাদের সরিয়ে দিতে নানামুখী চেষ্টাও করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা পরিষদ খ-িত প্যানেলে প্রার্থী দেয়। সে কারণে ঢাকায় নিয়ম রক্ষার ভোট হয়েছিল। তবে স্বাধীনতা পরিষদের কেউ সেই নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। আগামী নির্বাচনের জন্য সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার বা সভাপতি প্রার্থী হতে যাচ্ছেন জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান। ফোরামের প্যানেল লিডার হচ্ছেন হান্নান গ্রুপের চেয়ারম্যান এ বি এম সামসুদ্দিন। বর্তমান সভাপতি রুবানা হকও নির্বাচন করবেন। অন্যদিকে স্বাধীনতা পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম জোটটির নেতৃত্ব দেবেন।

সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২ ফাল্গুন ১৪২৭ ২ রজব ১৪৪২

বিজিএমইএ নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ তৈরি হলেও প্রতিপক্ষকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখোনো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বাধীনতা পরিষদের প্যানেল লিডার মো. জাহাঙ্গীর আলম। গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিজিএমইএ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত নির্বাচনে অনেক জাল ভোট পড়েছিল। ভোটার না এলেও তার ভোট কাস্ট হয়েছিল। সে সময় আমার স্ত্রীকে এজেন্ট করেছিলাম কিন্তু তাকে বের করে দেয়া হয়েছিল। তবে জাল ভোট পড়লেও পোশাকখাতের বৃহত্তর স্বার্থের জন্য আমরা সে নির্বাচনটি মেনে নিয়েছিলাম। তবে এবারের নির্বাচনেও এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রয়েছে। এবার নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। আমাদের প্যানেল নির্বাচনে থাকবে। ঢাকার ২৬ পদে আমাদের প্রার্থী রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকেও আমাদের প্রার্থী লড়বে। আশা করি, পুরো প্যানেল নিয়ে নির্বাচন করব।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পৃথিবী থেকে কবে বিদায় হবে, আদৌ বিদায় হবে কিনা, এর প্রভাবমুক্ত হয়ে বিশ্ববাজার কবে স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত। এমন বাস্তবতায় পোশাক খাত থেকে ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় অর্জন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এসব ব্যর্থতার দায় কেবল করোনাভাইরাসের না। আমরা মনে করি না নেতৃত্বহীনতা, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, আইনি সংস্কার করতে না পারায় অনেক গার্মেন্টস বন্ধের কারণ হয়ে থাকবে।

বিজয়ী হলে পোশাক খাতে কয়েকটি কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন বিজিএমইএ নির্বাচনের এই প্রার্থী। তিনি বলেন, আমরা মনে করি বিজিএমইএ ইউডি ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রডাক্ট কস্ট বিশ্লেষণ করে ন্যূনতম সিএম-এর নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে। এ কাজটি করতে পারলে আবারও শিল্প বিকাশ হবে, আমরা এটা করতে চাই।

দ্বিতীয়ত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য স্বতন্ত্র নিরাপত্তা মানদ- তৈরি করা হবে। তৃতীয়ত, শ্রম আইনের ধারাগুলো সংশোধন করে যুগোপযোগী শিল্পবান্ধব শ্রমনীতি তৈরি করা হবে। চতুর্থত, প্রত্যেক বায়ারের জন্য ইউনিফাইড কোড অব প্যাকটিস তৈরি করা হবে।

পঞ্চমত, নতুন বাজার সম্প্রসারণে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে আরএমজি উইং খোলা হবে এবং এই উইং থেকে পণ্যের ব্রান্ডিং, বায়ার সম্পর্কে তথ্য দেয়া এবং বায়ারের সঙ্গে কোন মতবিরোধ হলে তার সমাধানে উদ্যোগী হওয়া। ষষ্ঠত, ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, বন্ড লাইসেন্স, পরিবেশ লাইসেন্সসহ অন্য সব লাইসেন্সের মেয়াদ কমপক্ষে তিন বছর করা।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৩ সালে সাধারণ সদস্যদের সরাসরি ভোটে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত হয়েছিল। পরের বার সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম দুই মেয়াদের জন্য সমঝোতা করে। সেই সমঝোতার প্রথম দফায় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে সম্মিলিত পরিষদের সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি হয়। সেই কমিটি নানা অজুহাত দেখিয়ে ৪৩ মাস দায়িত্ব পালন করে। পরের মেয়াদে সমঝোতার কমিটি করার উদ্যোগ নেয় দুই জোট। তবে বাগড়া দেয় স্বাধীনতা পরিষদ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের শুরুতে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। সে সময় নির্বাচন থেকে তাদের সরিয়ে দিতে নানামুখী চেষ্টাও করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা পরিষদ খ-িত প্যানেলে প্রার্থী দেয়। সে কারণে ঢাকায় নিয়ম রক্ষার ভোট হয়েছিল। তবে স্বাধীনতা পরিষদের কেউ সেই নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। আগামী নির্বাচনের জন্য সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার বা সভাপতি প্রার্থী হতে যাচ্ছেন জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান। ফোরামের প্যানেল লিডার হচ্ছেন হান্নান গ্রুপের চেয়ারম্যান এ বি এম সামসুদ্দিন। বর্তমান সভাপতি রুবানা হকও নির্বাচন করবেন। অন্যদিকে স্বাধীনতা পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম জোটটির নেতৃত্ব দেবেন।