সোশ্যাল মিডিয়ার কাছে নতিস্বীকার করেছে মূলধারার গণমাধ্যম

আফসান চৌধুরী

গতানুগতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে পর্যাপ্ত বিকাশ ঘটাতে পারে না বা শ্লথ হয়ে যায়, সেখানে বিকল্প পন্থার আবির্ভাব ঘটে। দেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যারা মতামতের প্রকাশ দেখতে চায় বা নিজের মতের প্রকাশ চায়, সোশ্যাল মিডিয়া তাদের কাছে প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে। মানুষ এখানে তাদের অভিযোগ জানাচ্ছে, বা সাহায্যের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। কনভেনশনাল মতপ্রকাশের ক্ষেত্রগুলো সঙ্কুচিত হয়ে আসায় সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রটা বাড়ছে। এটা এখন প্রায় সমান্তরাল বিশ্ব হয়ে উঠেছে।

পেইড আর প্রিন্ট মিডিয়ার অবনতি গত দশকে শুরু হয়েছে। একটা প্রিন্ট মিডিয়া চালুর জন্য যে উচ্চপর্যায়ের বিনিয়োগের দরকার পড়ে, সেখানে প্রচুর ধনশালী ছাড়া অন্যদের পক্ষে সেটা চালু করা সম্ভব নয়। কিন্তু যারা মাঝারি শ্রেণীর ধনশালী এবং কিছু প্রভাব রয়েছে, তারা অনলাইন মিডিয়াতে বিনিয়োগ করেছিল। এখন স্বল্পমূল্যের অনলাইন মিডিয়া অনেক মানুষকে আকর্ষণ করেছে, যাদের মধ্যে চরম ধনী মানুষরাও রয়েছেন।

অনলাইন মিডিয়ার সাথে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া, যেখানে একটি অপরটির ভোক্তা ও উৎপাদনকারী হিসেবে ভূমিকা রাখছে। আর এখানে শুধু অনলাইন আর প্রিন্ট মিডিয়াই নেই বরং টিভি আর রেডিও-ও রয়েছে।

করোনাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, কারণ মানুষ কাগজকে সংক্রামক মনে করছে এবং এটা স্পর্শ করা এড়িয়ে চলতে চাচ্ছে। কোভিড-১৯ কেন্দ্রিক তথ্যের ব্যাপারে গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রিন্ট বা পেইড মিডিয়ার চেয়ে মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর বেশি নির্ভর করছে।

বিজ্ঞাপনদাতারা এক সময় প্রিন্ট মিডিয়াতে তাদের বিজ্ঞাপনগুলো বড় আকারে প্রকাশ করতে পছন্দ করতো কিন্তু ভোক্তাদের আচরণের সাথে সাথে ডিজিটাল স্পেসের ব্যবহারও বদলে গেছে। ডিজিটাল মিডিয়ায় ভালোমানের বিজ্ঞাপন দেয়া এবং সেগুলো দেখার মাত্রা বেশি হওয়ায় বাজার অর্থনীতিতে একটা পরিবর্তন ঘটেছে এবং ডিজিটাল মিডিয়া আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি মানুষের এখন স্মার্টফোন রয়েছে। অর্থনীতি ঐতিহ্যের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং পুরনো মিডিয়াগুলো পেছনে হারিয়ে যাচ্ছে।

মাল্টিমিডিয়া ও মাল্টি-স্ট্রিম পণ্য থেকেও ডিজিটাল স্পেসে একটা বড় ধাক্কা এসেছে। ভোক্তারা এখন শুধু অনলাইন সংবাদপত্র পড়ছেই না বরং একইসাথে ইউটিউব দেখছে, ফেসবুক লাইভ, অনলাইন টিভি, ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদি দেখছে। সে কারণে অনলাইনে শুধু যে তথ্যই বেশি তা নয়, বরং সেখানে ভোক্তাও অনেক বেশি।

ডিজিটাল মিডিয়ার আধিপত্য এখন নিশ্চিত হয়ে গেছে। দুটো ঘটনায় সেটা উঠে এসেছেÑ একটা আকবরের ঘটনা আরেকটি ইউটিউবের ঘটনা।

এএসআই আকবর

সোশ্যাল মিডিয়া রায়হানের ঘটনাটির দিকে মনোযোগ দিয়েছে এবং ঘটনাটি মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। রায়হান সিলেটের একজন বাসিন্দা, যাকে এএসআই আকবর পুলিশ কাস্টডিতে পিটিয়ে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডটি এত বড় হয়ে ওঠে যে, পুলিশ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয় এবং কর্তৃপক্ষ গ্রেফতারের চেষ্টা করলে আকবর পালিয়ে যায়।

গত বছর ৮ নভেম্বর এএসআই আকবরকে গ্রেফতার দেখানো হয় কিছুটা রহস্যজনক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তোলা হয়Ñ কোথায় সে লুকিয়ে ছিল এবং কীভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু মনোযোগ দেয় কে গ্রেফতার করেছে তার দিকে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ দাবি করেছিল যে, তারা তাকে গ্রেফতার করেছে; কিন্তু স্মার্টফোনের একটি ভিডিওতে ভিন্ন ঘটনা দেখা যায়, যেটা ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তার অবস্থান থেকে পিছু হটে। ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে যে, আকবরকে সীমান্ত এলাকাতে একটা গাড়িতে করে নিয়ে আসা হয় এবং স্থানীয় জনগণ সম্ভবত খাসিয়া আদিবাসীরা তাকে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে।

সম্ভবত এর অর্থ হলোÑ তিনি ভারতে লুকিয়ে ছিলেন কিন্তু তাকে হয় জোর করে আশ্রয়ছাড়া করা হয়েছে অথবা জোর করে বের করে দেয়া হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শিগগিরই জানানো হলো যে, তার ভারতীয় আশ্রয়দাতাকে ঘুষ দেয়া হয়েছে; যাতে তিনি তাকে ধরিয়ে দেন এবং পরে তাকে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আরেকটি ভাষ্যে বলা হয়েছে যে, রহিম নামের একজন তাকে হস্তান্তর করেছে। আকবর তাকে ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু সে সেটা নেয়নি। বেশ কিছু ব্যক্তি এরই মধ্যে রহিমের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে।

সোশ্যাল মিডিয়া যেটা করেছে, সেটা হলো তারা দেখিয়ে দিয়েছে যে, পুলিশের বক্তব্য সঠিক ছিল না। সেটা ছিল বিভ্রান্তিকর। আকবরকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এরই মধ্যে প্রচারিত হয়েছে যে, আকবরকে ধরার জন্য বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে সাহায্য চেয়েছিল। বেশ কিছু সময় ধরে ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ শিরোনামগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ কিছু মূলধারার গণমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিও ক্লিপটিকে ভিত্তি করে সংবাদ প্রচার করেছে, যেটা সোশ্যাল মিডিয়ার আধিপত্যের বিষয়টিকে প্রমাণ করেছে।

ইউটিউবের ঘটনা

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসরত কিছু বাংলাদেশি প্রায় প্রতিদিন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ধারাভাষ্য প্রচার করছে। এরা হলেনÑ ইলিয়াস, কনক সরোয়ার এবং মেজর (অব.) দেলোয়ার। কনক আর ইলিয়াস বাংলাদেশের সাংবাদিক, যারা এখন নির্বাসনে আছেন। আর দেলোয়ার হলেন সাবেক সেনাসদস্য। তারা ইউটিউবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ এবং ভারতের বিরুদ্ধে যথেষ্ট উগ্র বক্তব্য প্রচার করেন। দেলোয়ার কমবেশি সেনাবাহিনীকে বিদ্রোহ করার জন্য উসকানি দিয়েছেন। প্রতিটি ব্রডকাস্টে তারা নিয়মিত পাঁচ লাখ থেকে এক মিলিয়ন পর্যন্ত দর্শক পেয়ে থাকেন। অনেকেই তাদের দর্শকদের বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ঘনিষ্ঠ বলে মনে করেন।

ইউটিউব ব্রডকাস্টাররা যথেষ্ট সিরিয়াস এবং তাদের দাবি নাকচের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন পথ আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে খোলা নেই। কিছু আওয়ামীপন্থি অ্যাক্টিভিস্ট এই ব্রডকাস্টারদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতার জন্য পাল্টা প্রচারণার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। তাদের দাবি অনুসারে, এই ব্রডকাস্টাররা জামায়াত ও বিএনপির সমর্থক।

এখানে যে বাস্তবতাটা উঠে এসেছে, সেটা হলোÑ সোশ্যাল মিডিয়াকে কেউ অগ্রাহ্য করতে পারছে না, এমনকি যেখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ অনেক বেশি বা মূলধারার গণমাধ্যম যেখানে নমনীয়। পুরনো মিডিয়া এখন কী করবে সেটা নিশ্চিত নয়, কিন্তু নতুন মিডিয়ার প্রভাব এখন নিশ্চিত বাড়বে।

[লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক]

সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২ ফাল্গুন ১৪২৭ ২ রজব ১৪৪২

সোশ্যাল মিডিয়ার কাছে নতিস্বীকার করেছে মূলধারার গণমাধ্যম

আফসান চৌধুরী

image

গতানুগতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে পর্যাপ্ত বিকাশ ঘটাতে পারে না বা শ্লথ হয়ে যায়, সেখানে বিকল্প পন্থার আবির্ভাব ঘটে। দেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যারা মতামতের প্রকাশ দেখতে চায় বা নিজের মতের প্রকাশ চায়, সোশ্যাল মিডিয়া তাদের কাছে প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে। মানুষ এখানে তাদের অভিযোগ জানাচ্ছে, বা সাহায্যের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। কনভেনশনাল মতপ্রকাশের ক্ষেত্রগুলো সঙ্কুচিত হয়ে আসায় সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রটা বাড়ছে। এটা এখন প্রায় সমান্তরাল বিশ্ব হয়ে উঠেছে।

পেইড আর প্রিন্ট মিডিয়ার অবনতি গত দশকে শুরু হয়েছে। একটা প্রিন্ট মিডিয়া চালুর জন্য যে উচ্চপর্যায়ের বিনিয়োগের দরকার পড়ে, সেখানে প্রচুর ধনশালী ছাড়া অন্যদের পক্ষে সেটা চালু করা সম্ভব নয়। কিন্তু যারা মাঝারি শ্রেণীর ধনশালী এবং কিছু প্রভাব রয়েছে, তারা অনলাইন মিডিয়াতে বিনিয়োগ করেছিল। এখন স্বল্পমূল্যের অনলাইন মিডিয়া অনেক মানুষকে আকর্ষণ করেছে, যাদের মধ্যে চরম ধনী মানুষরাও রয়েছেন।

অনলাইন মিডিয়ার সাথে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া, যেখানে একটি অপরটির ভোক্তা ও উৎপাদনকারী হিসেবে ভূমিকা রাখছে। আর এখানে শুধু অনলাইন আর প্রিন্ট মিডিয়াই নেই বরং টিভি আর রেডিও-ও রয়েছে।

করোনাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, কারণ মানুষ কাগজকে সংক্রামক মনে করছে এবং এটা স্পর্শ করা এড়িয়ে চলতে চাচ্ছে। কোভিড-১৯ কেন্দ্রিক তথ্যের ব্যাপারে গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রিন্ট বা পেইড মিডিয়ার চেয়ে মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর বেশি নির্ভর করছে।

বিজ্ঞাপনদাতারা এক সময় প্রিন্ট মিডিয়াতে তাদের বিজ্ঞাপনগুলো বড় আকারে প্রকাশ করতে পছন্দ করতো কিন্তু ভোক্তাদের আচরণের সাথে সাথে ডিজিটাল স্পেসের ব্যবহারও বদলে গেছে। ডিজিটাল মিডিয়ায় ভালোমানের বিজ্ঞাপন দেয়া এবং সেগুলো দেখার মাত্রা বেশি হওয়ায় বাজার অর্থনীতিতে একটা পরিবর্তন ঘটেছে এবং ডিজিটাল মিডিয়া আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি মানুষের এখন স্মার্টফোন রয়েছে। অর্থনীতি ঐতিহ্যের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং পুরনো মিডিয়াগুলো পেছনে হারিয়ে যাচ্ছে।

মাল্টিমিডিয়া ও মাল্টি-স্ট্রিম পণ্য থেকেও ডিজিটাল স্পেসে একটা বড় ধাক্কা এসেছে। ভোক্তারা এখন শুধু অনলাইন সংবাদপত্র পড়ছেই না বরং একইসাথে ইউটিউব দেখছে, ফেসবুক লাইভ, অনলাইন টিভি, ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদি দেখছে। সে কারণে অনলাইনে শুধু যে তথ্যই বেশি তা নয়, বরং সেখানে ভোক্তাও অনেক বেশি।

ডিজিটাল মিডিয়ার আধিপত্য এখন নিশ্চিত হয়ে গেছে। দুটো ঘটনায় সেটা উঠে এসেছেÑ একটা আকবরের ঘটনা আরেকটি ইউটিউবের ঘটনা।

এএসআই আকবর

সোশ্যাল মিডিয়া রায়হানের ঘটনাটির দিকে মনোযোগ দিয়েছে এবং ঘটনাটি মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। রায়হান সিলেটের একজন বাসিন্দা, যাকে এএসআই আকবর পুলিশ কাস্টডিতে পিটিয়ে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডটি এত বড় হয়ে ওঠে যে, পুলিশ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয় এবং কর্তৃপক্ষ গ্রেফতারের চেষ্টা করলে আকবর পালিয়ে যায়।

গত বছর ৮ নভেম্বর এএসআই আকবরকে গ্রেফতার দেখানো হয় কিছুটা রহস্যজনক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তোলা হয়Ñ কোথায় সে লুকিয়ে ছিল এবং কীভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু মনোযোগ দেয় কে গ্রেফতার করেছে তার দিকে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ দাবি করেছিল যে, তারা তাকে গ্রেফতার করেছে; কিন্তু স্মার্টফোনের একটি ভিডিওতে ভিন্ন ঘটনা দেখা যায়, যেটা ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তার অবস্থান থেকে পিছু হটে। ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে যে, আকবরকে সীমান্ত এলাকাতে একটা গাড়িতে করে নিয়ে আসা হয় এবং স্থানীয় জনগণ সম্ভবত খাসিয়া আদিবাসীরা তাকে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে।

সম্ভবত এর অর্থ হলোÑ তিনি ভারতে লুকিয়ে ছিলেন কিন্তু তাকে হয় জোর করে আশ্রয়ছাড়া করা হয়েছে অথবা জোর করে বের করে দেয়া হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শিগগিরই জানানো হলো যে, তার ভারতীয় আশ্রয়দাতাকে ঘুষ দেয়া হয়েছে; যাতে তিনি তাকে ধরিয়ে দেন এবং পরে তাকে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আরেকটি ভাষ্যে বলা হয়েছে যে, রহিম নামের একজন তাকে হস্তান্তর করেছে। আকবর তাকে ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু সে সেটা নেয়নি। বেশ কিছু ব্যক্তি এরই মধ্যে রহিমের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে।

সোশ্যাল মিডিয়া যেটা করেছে, সেটা হলো তারা দেখিয়ে দিয়েছে যে, পুলিশের বক্তব্য সঠিক ছিল না। সেটা ছিল বিভ্রান্তিকর। আকবরকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এরই মধ্যে প্রচারিত হয়েছে যে, আকবরকে ধরার জন্য বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে সাহায্য চেয়েছিল। বেশ কিছু সময় ধরে ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ শিরোনামগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ কিছু মূলধারার গণমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিও ক্লিপটিকে ভিত্তি করে সংবাদ প্রচার করেছে, যেটা সোশ্যাল মিডিয়ার আধিপত্যের বিষয়টিকে প্রমাণ করেছে।

ইউটিউবের ঘটনা

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসরত কিছু বাংলাদেশি প্রায় প্রতিদিন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ধারাভাষ্য প্রচার করছে। এরা হলেনÑ ইলিয়াস, কনক সরোয়ার এবং মেজর (অব.) দেলোয়ার। কনক আর ইলিয়াস বাংলাদেশের সাংবাদিক, যারা এখন নির্বাসনে আছেন। আর দেলোয়ার হলেন সাবেক সেনাসদস্য। তারা ইউটিউবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ এবং ভারতের বিরুদ্ধে যথেষ্ট উগ্র বক্তব্য প্রচার করেন। দেলোয়ার কমবেশি সেনাবাহিনীকে বিদ্রোহ করার জন্য উসকানি দিয়েছেন। প্রতিটি ব্রডকাস্টে তারা নিয়মিত পাঁচ লাখ থেকে এক মিলিয়ন পর্যন্ত দর্শক পেয়ে থাকেন। অনেকেই তাদের দর্শকদের বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ঘনিষ্ঠ বলে মনে করেন।

ইউটিউব ব্রডকাস্টাররা যথেষ্ট সিরিয়াস এবং তাদের দাবি নাকচের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন পথ আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে খোলা নেই। কিছু আওয়ামীপন্থি অ্যাক্টিভিস্ট এই ব্রডকাস্টারদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতার জন্য পাল্টা প্রচারণার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। তাদের দাবি অনুসারে, এই ব্রডকাস্টাররা জামায়াত ও বিএনপির সমর্থক।

এখানে যে বাস্তবতাটা উঠে এসেছে, সেটা হলোÑ সোশ্যাল মিডিয়াকে কেউ অগ্রাহ্য করতে পারছে না, এমনকি যেখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ অনেক বেশি বা মূলধারার গণমাধ্যম যেখানে নমনীয়। পুরনো মিডিয়া এখন কী করবে সেটা নিশ্চিত নয়, কিন্তু নতুন মিডিয়ার প্রভাব এখন নিশ্চিত বাড়বে।

[লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক]