লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল
মাগুরার শালিখা উপজেলার বরইচারা গ্রামে ১৯৩২ সালের ৪ এপ্রিল বিরেন্দ্রনাথ রায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাত ১১টায় নিজবাড়ি বরইচারা গ্রামে সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে যান। ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তার পিতার নাম প্রিয়নাথ রায় ও মাতা জ্ঞানদা রায়। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে বিরেন্দ্রনাথ রায় ছিলেন সবার বড়। হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও শত অভাব-অনটনের মধ্যেও গ্রামবাংলার সাড়া জাগানো লোকসংগীতকে তিনি হারিয়ে যেতে দেননি। অভাবের সংসারে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে ভাবনহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন। যে বয়সে তিনি স্কুলে লেখাপড়া করবেন ঠিক সেই বয়সে তিনি হাতে তুলে নিয়েছিলেন শিল্প সাধনার কলম। লিখতে থাকেন মানুষের আনন্দ উপভোগের জন্য অষ্টক গান ও জনপ্রিয় যাত্রাপালার বই। নিজ হাতে গড়ে তোলেন একাধিক অষ্টক গান ও যাত্রাপালার দল।
তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে- চণ্ডিদাস রজকিনী, মানভঞ্জন, সীতা হরন, সুজন মাঝিসহ ৩২টি অষ্টক পালা গানের বই। যাত্রাপালা গানের বইয়ের মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী, বেদের মেয়ে জ্যোস্না, তুলসীবনের বাঘ।
এক সময়ে ১ টাকায় কেনা ৩২ পর্দার একটি হারমোনি দিয়ে শুরু করেছিলেন তার লেখনীর গান গাওয়া। গান রচনা ও গাওয়ার পাশাপাশি তিনি হোমিও চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে গেছেন। ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি তার অষ্টক গান ও যাত্রাপালার বইয়ের অর্জন হিসেবে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট ও নগদ ৫২ হাজার টাকা প্রদান করে।
বীরেন্দ্রনাথ রায়ের পরিবারের লোকজন বলেন, লেখকের অনেক অষ্টক গান ও যাত্রাপালার পাণ্ডুুলিপি কয়েক বছর আগে মাগুরা সদরের আসবা গ্রামের বিকাশ নামের জনৈক এক ব্যক্তি বিরেন্দ্রনাথ রায়ের নামে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় নিয়ে যায়। কিন্তু কোনদিন তা প্রকাশও করেনি ফেরতও দেননি। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি প্রকাশ পেত। এতে বাংলার লোকসাহিত্যের ভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ হতো।
[লেখক-সাংবাদিক]
laxmanaicc@gmail.com
সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২ ফাল্গুন ১৪২৭ ২ রজব ১৪৪২
লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল
মাগুরার শালিখা উপজেলার বরইচারা গ্রামে ১৯৩২ সালের ৪ এপ্রিল বিরেন্দ্রনাথ রায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাত ১১টায় নিজবাড়ি বরইচারা গ্রামে সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে যান। ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তার পিতার নাম প্রিয়নাথ রায় ও মাতা জ্ঞানদা রায়। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে বিরেন্দ্রনাথ রায় ছিলেন সবার বড়। হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও শত অভাব-অনটনের মধ্যেও গ্রামবাংলার সাড়া জাগানো লোকসংগীতকে তিনি হারিয়ে যেতে দেননি। অভাবের সংসারে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে ভাবনহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন। যে বয়সে তিনি স্কুলে লেখাপড়া করবেন ঠিক সেই বয়সে তিনি হাতে তুলে নিয়েছিলেন শিল্প সাধনার কলম। লিখতে থাকেন মানুষের আনন্দ উপভোগের জন্য অষ্টক গান ও জনপ্রিয় যাত্রাপালার বই। নিজ হাতে গড়ে তোলেন একাধিক অষ্টক গান ও যাত্রাপালার দল।
তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে- চণ্ডিদাস রজকিনী, মানভঞ্জন, সীতা হরন, সুজন মাঝিসহ ৩২টি অষ্টক পালা গানের বই। যাত্রাপালা গানের বইয়ের মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী, বেদের মেয়ে জ্যোস্না, তুলসীবনের বাঘ।
এক সময়ে ১ টাকায় কেনা ৩২ পর্দার একটি হারমোনি দিয়ে শুরু করেছিলেন তার লেখনীর গান গাওয়া। গান রচনা ও গাওয়ার পাশাপাশি তিনি হোমিও চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে গেছেন। ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি তার অষ্টক গান ও যাত্রাপালার বইয়ের অর্জন হিসেবে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট ও নগদ ৫২ হাজার টাকা প্রদান করে।
বীরেন্দ্রনাথ রায়ের পরিবারের লোকজন বলেন, লেখকের অনেক অষ্টক গান ও যাত্রাপালার পাণ্ডুুলিপি কয়েক বছর আগে মাগুরা সদরের আসবা গ্রামের বিকাশ নামের জনৈক এক ব্যক্তি বিরেন্দ্রনাথ রায়ের নামে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় নিয়ে যায়। কিন্তু কোনদিন তা প্রকাশও করেনি ফেরতও দেননি। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি প্রকাশ পেত। এতে বাংলার লোকসাহিত্যের ভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ হতো।
[লেখক-সাংবাদিক]
laxmanaicc@gmail.com