পৌরভোটে ধাপে ধাপে কমছে বিএনপির জয়ের হার

চলমান পৌরসভা নির্বাচনে ধাপে ধাপে বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের জয়লাভের হার কমছে। চতুর্থ ধাপে দেশের ৫৪টি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে শুধু সাতক্ষীরায় জয় পেয়েছে বিএনপি। এখানে নৌকার দ্বিগুণ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী। এছাড়া এ ধাপে অধিকাংশ পৌরসভায় ভোটের ফলাফলে বিএনপির করুণ অবস্থা। অনেক পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

তৃতীয় ধাপে মেয়র পদে ৬৩টি পৌরসভার মধ্যে বিএনপি জয় পেয়েছিল ৩টিতে, দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভার মধ্যে ৪টিতে এবং প্রথম ধাপে ২৪টির মধ্যে বিএনপি বিজয়ী হয় ২টি পৌরসভায়।

ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুরু থেকে পর্যায়ক্রমে বিএনপির জয়ের হার কমেছে। প্রথম ধাপে বিএনপির জয়ের হার ছিল ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং চতুর্থ ধাপে এ হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

চতুর্থ ধাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মো. তাকজিল খলিফা কাজল। তিনি পেয়েছেন ১৫ হাজার ১৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মো. জয়নাল আবেদীন আব্দু পেয়েছেন ৭৭৮ ভোট। মোট ‘কাস্ট’ হওয়া ভোটের এক-অষ্টমাংশের কম ভোট কোন প্রার্থী পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিধান রয়েছে। আইন অনুয়ায়ী, এখানে ধানের শীষের প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

বাগেরহাট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খান হাবিবুর রহমান ১৯ হাজার ২৩৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম বিএনপির মো. সাইদ নিয়াজ হোসেন শৈবাল পেয়েছেন ৩৫৯ ভোট। এখানেও ধানের শীষের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

কচুয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাজমুল আলম স্বপন ১০ হাজার ২১২ ভোট পেয়ে মেয়র হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আহসান হাবীব প্রাঞ্জল মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে এক হাজার ৫১ ভোট পেয়েছেন। আর ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে ৬৪৭ ভোট পেয়েছেন হুমায়ূন কবীর প্রধান। এখানেও বিএনপির জামানত বাজেয়াপ্ত।

জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভায় নৌকার প্রার্থী রাবেয়া সুলতানা ৯ হাজার ১৭৭টি ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী সাজ্জাদুর রহমান সোহেল পেয়েছেন ৮০০ ভোট। এখানে জামানত হারাবে ধানের শীষ।

এই অবস্থা চতুর্থ ধাপের বেশিরভাগ পৌরসভায়। দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে এই নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে হবে- এমন ধারণা প্রচলিত থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বেশকিছু পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন।

শোচনীয় পরাজয়ের নেপথ্য কারণ হিসেবে বিএনপির অভিযোগ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব স্থানে কেন্দ্র দখল থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের ভোটে বাধা, হুমকি, জোর করে সিল মারাসহ নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে যত ধরনের অপকর্ম করা প্রয়োজন, সবই করছে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযোগ পেয়েও নিশ্চুপ রয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগের দাবি, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে। জনসমর্থন হারিয়ে বিএনপি আবোল-তাবোল বকছে।

এদিকে নির্বাচন কমিশন চলমান পৌরভোটের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সন্তোষ প্রকাশ করলেও কমিশনের এক সদস্য মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘প্রায় সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে আমরা তৃপ্তি বোধ করি। আসলে এখন নির্বাচনগুলো ‘এককেন্দ্রিক’ হয়ে যাচ্ছে। আচরণধি লঙ্ঘন ও হানাহানি বর্তমানে নির্বাচনের অনুসঙ্গ হয়ে গেছে। কোন অনভিপ্রেত ঘটনাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মিলে একটি অবিচ্ছিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া যথাযোগ্য সংস্কার না করার কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এখন গভীর খাদের কিনারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের উদ্যোগ কেন কার্যকর হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক।’

মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩ ফাল্গুন ১৪২৭ ৩ রজব ১৪৪২

পৌরভোটে ধাপে ধাপে কমছে বিএনপির জয়ের হার

ফয়েজ আহমেদ তুষার

চলমান পৌরসভা নির্বাচনে ধাপে ধাপে বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের জয়লাভের হার কমছে। চতুর্থ ধাপে দেশের ৫৪টি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে শুধু সাতক্ষীরায় জয় পেয়েছে বিএনপি। এখানে নৌকার দ্বিগুণ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী। এছাড়া এ ধাপে অধিকাংশ পৌরসভায় ভোটের ফলাফলে বিএনপির করুণ অবস্থা। অনেক পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

তৃতীয় ধাপে মেয়র পদে ৬৩টি পৌরসভার মধ্যে বিএনপি জয় পেয়েছিল ৩টিতে, দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভার মধ্যে ৪টিতে এবং প্রথম ধাপে ২৪টির মধ্যে বিএনপি বিজয়ী হয় ২টি পৌরসভায়।

ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুরু থেকে পর্যায়ক্রমে বিএনপির জয়ের হার কমেছে। প্রথম ধাপে বিএনপির জয়ের হার ছিল ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং চতুর্থ ধাপে এ হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

চতুর্থ ধাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মো. তাকজিল খলিফা কাজল। তিনি পেয়েছেন ১৫ হাজার ১৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মো. জয়নাল আবেদীন আব্দু পেয়েছেন ৭৭৮ ভোট। মোট ‘কাস্ট’ হওয়া ভোটের এক-অষ্টমাংশের কম ভোট কোন প্রার্থী পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিধান রয়েছে। আইন অনুয়ায়ী, এখানে ধানের শীষের প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

বাগেরহাট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খান হাবিবুর রহমান ১৯ হাজার ২৩৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম বিএনপির মো. সাইদ নিয়াজ হোসেন শৈবাল পেয়েছেন ৩৫৯ ভোট। এখানেও ধানের শীষের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

কচুয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাজমুল আলম স্বপন ১০ হাজার ২১২ ভোট পেয়ে মেয়র হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আহসান হাবীব প্রাঞ্জল মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে এক হাজার ৫১ ভোট পেয়েছেন। আর ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে ৬৪৭ ভোট পেয়েছেন হুমায়ূন কবীর প্রধান। এখানেও বিএনপির জামানত বাজেয়াপ্ত।

জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভায় নৌকার প্রার্থী রাবেয়া সুলতানা ৯ হাজার ১৭৭টি ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী সাজ্জাদুর রহমান সোহেল পেয়েছেন ৮০০ ভোট। এখানে জামানত হারাবে ধানের শীষ।

এই অবস্থা চতুর্থ ধাপের বেশিরভাগ পৌরসভায়। দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে এই নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে হবে- এমন ধারণা প্রচলিত থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বেশকিছু পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন।

শোচনীয় পরাজয়ের নেপথ্য কারণ হিসেবে বিএনপির অভিযোগ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব স্থানে কেন্দ্র দখল থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের ভোটে বাধা, হুমকি, জোর করে সিল মারাসহ নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে যত ধরনের অপকর্ম করা প্রয়োজন, সবই করছে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযোগ পেয়েও নিশ্চুপ রয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগের দাবি, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে। জনসমর্থন হারিয়ে বিএনপি আবোল-তাবোল বকছে।

এদিকে নির্বাচন কমিশন চলমান পৌরভোটের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সন্তোষ প্রকাশ করলেও কমিশনের এক সদস্য মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘প্রায় সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে আমরা তৃপ্তি বোধ করি। আসলে এখন নির্বাচনগুলো ‘এককেন্দ্রিক’ হয়ে যাচ্ছে। আচরণধি লঙ্ঘন ও হানাহানি বর্তমানে নির্বাচনের অনুসঙ্গ হয়ে গেছে। কোন অনভিপ্রেত ঘটনাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মিলে একটি অবিচ্ছিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া যথাযোগ্য সংস্কার না করার কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এখন গভীর খাদের কিনারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের উদ্যোগ কেন কার্যকর হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক।’