আবার পরিকল্পনায় পরিবর্তন ৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ

সম্মুখসারির যোদ্ধাদের প্রথম ডোজ দেয়ার পর প্রান্তিক পর্যায়ে অর্র্থাৎ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সম্মুখসারির (ফ্রন্টলাইনার) যোদ্ধাদের করোনার টিকার প্রথম ডোজ শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সময়ও পিছিয়ে আট সপ্তাহ (দুই মাস) নির্ধারণ করেছে অধিদপ্তর। বর্তমানে ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকরা টিকা পেতে নিবন্ধন করতে পারছেন, খুব শীঘ্রই বয়সসীমা আরেক ধাপ কমছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দু’জন পরিচালক গতকাল সংবাদকে জানিয়েছেন।

প্রায় ৭০ লাখ মানুষকে টিকাদানের অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে, যারা করোনা প্রতিরোধে সম্মুখসারিতে ছিলেন। সরকারের কাছে থাকা ৭০ লাখ ডোজ ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র ভ্যাকসিনের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত এক সপ্তাহে ১১ লাখ ৩২ হাজারের বেশি ডোজ প্রয়োগ হয়েছে। এ হিসাবে সরকারের সংরক্ষণে এখনও ৫৯ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। আর ২২ ফেব্রুয়ারি টিকার দ্বিতীয় চালান (২০ থেকে ৩০ লাখ ডোজ) দেশে আসছে।

টিকা পেতে গতকালও প্রায় তিন লাখ মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন পরিচালক গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘আগের দিনও প্রায় তিন লাখ মানুষ নিবন্ধন করেছেন। আর এখন দৈনিক দুই লাখের কাছিকাছি টিকা দেয়া হচ্ছে, যাদের বড় অংশই ফ্রন্টলাইনার। সব মিলিয়ে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ মানুষ টিকা পেতে অনলাইনে (www.surokkha.gov.bd) নিবন্ধন করেছেন।

প্রান্তিক পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি কবে নাগাদ শুরু হতে পারে, জানতে চাইলে করোনা টিকা ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কোর কমিটির সদস্য এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে আমরা মূলত ফ্রন্টলাইনারদের টিকা দিচ্ছি। এখন যাদের টিকা দেয়া হচ্ছে তাদের ১৫ থেকে ৩০ মিনিট চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণেও রাখা হচ্ছে, প্রান্তিক পর্যায়ে হয়তো পর্যবেক্ষণে রাখা যাবে না, চিকিৎসা ব্যবস্থারও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি করতে গেলে অনেক চিকিৎসকের প্রয়োজন।’

পুরো টিকা কার্যক্রম সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ হচ্ছে জানিয়ে ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কারও শরীরে গুরুতর কোন পাশর্^প্রতিক্রিয়া হয়নি। এটা ভালো দিক। আরও কিছুদিন এটা দেখা হবে। এরপর ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লাভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ১৮ বছর পর্যন্ত সবাইকে টিকা দেয়া হবে।’

গণকর্মসূচির ৮ম দিনে ২ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ জনকে টিকাদান দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচির ৮ম দিনে গতকাল ভ্যাকসিন নিয়েছেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৪৭ হাজার ১৫৫ জন এবং নারী ৭৯ হাজার ৫২৩ জন। গতকাল রাজধানীতে টিকা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৫৫ জন। গতকাল মোট টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে ২৯ জন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার উপসর্গ বা অ্যাডভার্স ইভেন্ট ফলোইং ইমিউনাইজেশন (এইএফআই) রিপোর্ট করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক এমআইএস ও লাইন

পরিকল্পনায় : পৃষ্ঠা : ১১ ক : ৫

পরিকল্পনায় : পরিবর্তন

(১ম পৃষ্ঠার পর)

ডিরেক্টর এইচআইএস অ্যান্ড ই-হেলথ অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‘অন স্পট’ অর্র্থাৎ সরাসরি কেন্দ্রে নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকাদান বন্ধ রাখার পর দুইদিন টিকাদানের সংখ্যা কিছুটা কমছিল। গতকাল আবার বেড়ে গেছে, যা আটদিনে মধ্যে সর্বোচ্চ।

সারাদেশে গতকাল পর্যন্ত মোট টিকা নিয়েছেন ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ জন। এরমধ্যে পুরুষ সাত লাখ ৭৩ হাজার ৬২৪ জন এবং নারী তিন লাখ ৫৯ হাজার ৮৭ জন। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এইএফআই রিপোর্ট করেছেন ৪৫৫ জন।

ঢাকায় সবচেয়ে বেশি, ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম

ঢাকা মহানগরের ৪৬টি হাসপাতালে গতকাল টিকা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৫৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৯ হাজার ৭১৪ জন আর নারী নয় হাজার ৩৪১ জন। গতকাল ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকা নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে, এক হাজার ৪৮৪ জন।

এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে টিকা নিয়েছেন এক লাখ ৪৭ হাজার ৫০২ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৪৭৬ জন এবং নারী ৪৭ হাজার ২৬ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৬২ হাজার ৭৩৩ জন, ময়মনসিংহে নয় হাজার ৪৫৫ জন, চট্টগ্রামে ৫২ হাজার ৭৪৪ জন, রাজশাহীতে ২৪ হাজার ৬০জন, রংপুরে ২১ হাজার ৬১৮ জন, খুলনায় ২৭ হাজার ৭১০ জন, বরিশালে ১২ হাজার ১৩১ জন এবং সিলেট বিভাগে ১৬ হাজার ২২৭ জন টিকা নিয়েছেন।

বিভাগীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোট টিকা গ্রহীতার মধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ তিন লাখ দুই হাজার ৭০৫ জন, ময়মনসিংহে ৫০ হাজার ৭৩০ জন, চট্টগ্রামে দুই লাখ ৭০ হাজার ৯৫৯ জন, রাজশাহীতে এক লাখ ২৮হাজার ৭৬৩ জন, রংপুরে এক লাখ ছয় হাজার ৬৩৪ জন, খুলনায় এক লাখ ২৮ হাজার ১৫৯ জন, বরিশালে ৫১ হাজার ৫২৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ৯৩ হাজার ২৩৮ জন টিকা নিয়েছেন।

গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। পরদিন ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর সরকারি পাঁচটি হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। গণটিকা কর্মসূচির প্রথম দিন টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন।

আট সপ্তাহ পরই দ্বিতীয় ডোজ

দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত ফের বদল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চার সপ্তাহের পরিবর্তে আট সপ্তাহ পর করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, ‘প্রথম ডোজের চার সপ্তাহ পর ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে চার সপ্তাহ নয়, আট সপ্তাহ পর তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে।’

এখন পর্যন্ত যারা করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজের জন্য চার সপ্তাহের ব্যবধানে তারিখ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘যাদের চার সপ্তাহ পরের তারিখ দেয়া হয়েছে, তাদের এসএমএসের মাধ্যমে নতুন তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে।’

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার সময়ের এই পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘পরামর্শক কমিটি, ওয়ার্ল্ড ভ্যাকসিনেশন কমিটি, ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন- সবাই মিলে পরামর্শ দিয়েছে যে, এটা আট সপ্তাহ পরে হলে ভালো হয়। এ কারণে আমরা দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সময় পরিবর্তন করেছি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ‘কোভিড-১৯ টিকাদান পরিকল্পনা’ চূড়ান্ত করার সময় বলেছিল, প্রথম থেকে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার সময়ের পার্থক্য হবে চার সপ্তাহ। ওই সময় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এর সমালোচনা করলে সময়ের ব্যবধান আট সপ্তাহ করা হয়। পরবর্তীতে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে ৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়, দুই ডোজের সময়ের পার্থক্য হবে চার সপ্তাহ।

টিকার দ্বিতীয় চালান আসছে ২২ ফেব্রুয়ারি

চুক্তির আওতায় কেনা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় চালান আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি দেশে আসবে বলে জানিয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন।

তিনি গতকাল ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রায় তিন কোটি ডোজ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ। এই টিকা আমদানির কাজ পেয়েছে বাংলাদেশে সেরামের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। গত ২৫ জানুয়ারি দেশে প্রথম চালানে ৫০ লাখ টিকা আসে বাংলাদেশে।

দ্বিতীয় চালানে ২০ থেকে ৩০ লাখ ডোজ টিকা আনা হবে জানিয়ে নাজমুল হাসান বলেন, ‘দ্বিতীয় চালান এই মাসেই আসবে। ২১ থেকে ২৫ তারিখের কথা বলেছিলাম। ২২ তারিখেই চলে আসবে আশা করছি। প্রত্যেক মাসে তাই হবে।’

চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা থাকলেও এবার কম আসছে কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন একটু কম আসবে। সঠিক পরিমাণটা বলতে পারছি না। তবে ২০-৩০ লাখের মতো আসবে। আমাদের ডিমান্ডের ওপর নির্ভর করবে। আমাদের কাছে অলরেডি ৬৫ লাখ আছে। টিকা নিয়ে ক্রাইসিস হওয়ার কোন সুযোগ নাই।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হাসান পাপন জানান, সরকারিভাবেই যেহেতু পর্যাপ্ত টিকা আসছে, তাই এখনই বেসরকারিভাবে টিকা আনার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই।

সেরাম থেকে কেনার পাশাপাশি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন প্লাটফর্ম ‘কোভ্যাক্স’ থেকেও সোয়া কোটি ডোজ টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ। সে টিকা জুন নাগাদ আসবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩ ফাল্গুন ১৪২৭ ৩ রজব ১৪৪২

আবার পরিকল্পনায় পরিবর্তন ৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ

image

সম্মুখসারির যোদ্ধাদের প্রথম ডোজ দেয়ার পর প্রান্তিক পর্যায়ে অর্র্থাৎ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সম্মুখসারির (ফ্রন্টলাইনার) যোদ্ধাদের করোনার টিকার প্রথম ডোজ শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সময়ও পিছিয়ে আট সপ্তাহ (দুই মাস) নির্ধারণ করেছে অধিদপ্তর। বর্তমানে ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকরা টিকা পেতে নিবন্ধন করতে পারছেন, খুব শীঘ্রই বয়সসীমা আরেক ধাপ কমছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দু’জন পরিচালক গতকাল সংবাদকে জানিয়েছেন।

প্রায় ৭০ লাখ মানুষকে টিকাদানের অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে, যারা করোনা প্রতিরোধে সম্মুখসারিতে ছিলেন। সরকারের কাছে থাকা ৭০ লাখ ডোজ ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র ভ্যাকসিনের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত এক সপ্তাহে ১১ লাখ ৩২ হাজারের বেশি ডোজ প্রয়োগ হয়েছে। এ হিসাবে সরকারের সংরক্ষণে এখনও ৫৯ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। আর ২২ ফেব্রুয়ারি টিকার দ্বিতীয় চালান (২০ থেকে ৩০ লাখ ডোজ) দেশে আসছে।

টিকা পেতে গতকালও প্রায় তিন লাখ মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন পরিচালক গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘আগের দিনও প্রায় তিন লাখ মানুষ নিবন্ধন করেছেন। আর এখন দৈনিক দুই লাখের কাছিকাছি টিকা দেয়া হচ্ছে, যাদের বড় অংশই ফ্রন্টলাইনার। সব মিলিয়ে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ মানুষ টিকা পেতে অনলাইনে (www.surokkha.gov.bd) নিবন্ধন করেছেন।

প্রান্তিক পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি কবে নাগাদ শুরু হতে পারে, জানতে চাইলে করোনা টিকা ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কোর কমিটির সদস্য এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে আমরা মূলত ফ্রন্টলাইনারদের টিকা দিচ্ছি। এখন যাদের টিকা দেয়া হচ্ছে তাদের ১৫ থেকে ৩০ মিনিট চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণেও রাখা হচ্ছে, প্রান্তিক পর্যায়ে হয়তো পর্যবেক্ষণে রাখা যাবে না, চিকিৎসা ব্যবস্থারও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি করতে গেলে অনেক চিকিৎসকের প্রয়োজন।’

পুরো টিকা কার্যক্রম সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ হচ্ছে জানিয়ে ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কারও শরীরে গুরুতর কোন পাশর্^প্রতিক্রিয়া হয়নি। এটা ভালো দিক। আরও কিছুদিন এটা দেখা হবে। এরপর ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লাভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ১৮ বছর পর্যন্ত সবাইকে টিকা দেয়া হবে।’

গণকর্মসূচির ৮ম দিনে ২ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ জনকে টিকাদান দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচির ৮ম দিনে গতকাল ভ্যাকসিন নিয়েছেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৪৭ হাজার ১৫৫ জন এবং নারী ৭৯ হাজার ৫২৩ জন। গতকাল রাজধানীতে টিকা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৫৫ জন। গতকাল মোট টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে ২৯ জন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার উপসর্গ বা অ্যাডভার্স ইভেন্ট ফলোইং ইমিউনাইজেশন (এইএফআই) রিপোর্ট করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক এমআইএস ও লাইন

পরিকল্পনায় : পৃষ্ঠা : ১১ ক : ৫

পরিকল্পনায় : পরিবর্তন

(১ম পৃষ্ঠার পর)

ডিরেক্টর এইচআইএস অ্যান্ড ই-হেলথ অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‘অন স্পট’ অর্র্থাৎ সরাসরি কেন্দ্রে নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকাদান বন্ধ রাখার পর দুইদিন টিকাদানের সংখ্যা কিছুটা কমছিল। গতকাল আবার বেড়ে গেছে, যা আটদিনে মধ্যে সর্বোচ্চ।

সারাদেশে গতকাল পর্যন্ত মোট টিকা নিয়েছেন ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ জন। এরমধ্যে পুরুষ সাত লাখ ৭৩ হাজার ৬২৪ জন এবং নারী তিন লাখ ৫৯ হাজার ৮৭ জন। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এইএফআই রিপোর্ট করেছেন ৪৫৫ জন।

ঢাকায় সবচেয়ে বেশি, ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম

ঢাকা মহানগরের ৪৬টি হাসপাতালে গতকাল টিকা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৫৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৯ হাজার ৭১৪ জন আর নারী নয় হাজার ৩৪১ জন। গতকাল ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকা নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে, এক হাজার ৪৮৪ জন।

এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে টিকা নিয়েছেন এক লাখ ৪৭ হাজার ৫০২ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৪৭৬ জন এবং নারী ৪৭ হাজার ২৬ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৬২ হাজার ৭৩৩ জন, ময়মনসিংহে নয় হাজার ৪৫৫ জন, চট্টগ্রামে ৫২ হাজার ৭৪৪ জন, রাজশাহীতে ২৪ হাজার ৬০জন, রংপুরে ২১ হাজার ৬১৮ জন, খুলনায় ২৭ হাজার ৭১০ জন, বরিশালে ১২ হাজার ১৩১ জন এবং সিলেট বিভাগে ১৬ হাজার ২২৭ জন টিকা নিয়েছেন।

বিভাগীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোট টিকা গ্রহীতার মধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ তিন লাখ দুই হাজার ৭০৫ জন, ময়মনসিংহে ৫০ হাজার ৭৩০ জন, চট্টগ্রামে দুই লাখ ৭০ হাজার ৯৫৯ জন, রাজশাহীতে এক লাখ ২৮হাজার ৭৬৩ জন, রংপুরে এক লাখ ছয় হাজার ৬৩৪ জন, খুলনায় এক লাখ ২৮ হাজার ১৫৯ জন, বরিশালে ৫১ হাজার ৫২৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ৯৩ হাজার ২৩৮ জন টিকা নিয়েছেন।

গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। পরদিন ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর সরকারি পাঁচটি হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। গণটিকা কর্মসূচির প্রথম দিন টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন।

আট সপ্তাহ পরই দ্বিতীয় ডোজ

দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত ফের বদল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চার সপ্তাহের পরিবর্তে আট সপ্তাহ পর করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, ‘প্রথম ডোজের চার সপ্তাহ পর ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে চার সপ্তাহ নয়, আট সপ্তাহ পর তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে।’

এখন পর্যন্ত যারা করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজের জন্য চার সপ্তাহের ব্যবধানে তারিখ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘যাদের চার সপ্তাহ পরের তারিখ দেয়া হয়েছে, তাদের এসএমএসের মাধ্যমে নতুন তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে।’

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার সময়ের এই পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘পরামর্শক কমিটি, ওয়ার্ল্ড ভ্যাকসিনেশন কমিটি, ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন- সবাই মিলে পরামর্শ দিয়েছে যে, এটা আট সপ্তাহ পরে হলে ভালো হয়। এ কারণে আমরা দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সময় পরিবর্তন করেছি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ‘কোভিড-১৯ টিকাদান পরিকল্পনা’ চূড়ান্ত করার সময় বলেছিল, প্রথম থেকে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার সময়ের পার্থক্য হবে চার সপ্তাহ। ওই সময় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এর সমালোচনা করলে সময়ের ব্যবধান আট সপ্তাহ করা হয়। পরবর্তীতে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে ৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়, দুই ডোজের সময়ের পার্থক্য হবে চার সপ্তাহ।

টিকার দ্বিতীয় চালান আসছে ২২ ফেব্রুয়ারি

চুক্তির আওতায় কেনা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় চালান আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি দেশে আসবে বলে জানিয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন।

তিনি গতকাল ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রায় তিন কোটি ডোজ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ। এই টিকা আমদানির কাজ পেয়েছে বাংলাদেশে সেরামের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। গত ২৫ জানুয়ারি দেশে প্রথম চালানে ৫০ লাখ টিকা আসে বাংলাদেশে।

দ্বিতীয় চালানে ২০ থেকে ৩০ লাখ ডোজ টিকা আনা হবে জানিয়ে নাজমুল হাসান বলেন, ‘দ্বিতীয় চালান এই মাসেই আসবে। ২১ থেকে ২৫ তারিখের কথা বলেছিলাম। ২২ তারিখেই চলে আসবে আশা করছি। প্রত্যেক মাসে তাই হবে।’

চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা থাকলেও এবার কম আসছে কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন একটু কম আসবে। সঠিক পরিমাণটা বলতে পারছি না। তবে ২০-৩০ লাখের মতো আসবে। আমাদের ডিমান্ডের ওপর নির্ভর করবে। আমাদের কাছে অলরেডি ৬৫ লাখ আছে। টিকা নিয়ে ক্রাইসিস হওয়ার কোন সুযোগ নাই।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হাসান পাপন জানান, সরকারিভাবেই যেহেতু পর্যাপ্ত টিকা আসছে, তাই এখনই বেসরকারিভাবে টিকা আনার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই।

সেরাম থেকে কেনার পাশাপাশি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন প্লাটফর্ম ‘কোভ্যাক্স’ থেকেও সোয়া কোটি ডোজ টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ। সে টিকা জুন নাগাদ আসবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।