আল-জাজিরা রিটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরার বাংলাদেশে সম্প্রচার বন্ধের বিষয়ে শুনানিতে ছয় অ্যামিকাস কিউরির (আদালত-বন্ধু) মধ্যে পাঁচজনই রিটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। শুনানিতে একজন অ্যামিকাস কিউরি বলেন, সম্প্রতি আল-জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ নামে ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কোন যোগসূত্র দেখাতে পারেনি। এছাড়া এ জন্য রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার কোন যৌক্তিকতাও নেই বলেও মতামত দেন তিনি। তাই রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। তবে একজন বলেছেন, সরকার প্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে। তাই আদালত একটি আদেশ দিতে পারেন।

গতকাল ছয়জন অ্যামিকাস কিউরির মতামত শেষ হয়েছে। আগামী বুধবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আদালত। বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করা হয়। সম্প্রতি আল জাজিরার প্রচারিত তথ্যচিত্র ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রসঙ্গে বেলা ১১টা থেকে অ্যামিকাস কিউরিদের মধ্যে এজে মোহাম্মদ আলী, কামালুল আলম, ফিদা এম কামালসহ একে একে ছয়জন বক্তব্য দেন।

শুনানির শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী সরকার চাইলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারত। সরকার তো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং রিটকারীর এখানে সংক্ষুব্ধ হওয়ার কিছুই নেই। তাই রিটের গ্রহণযোগ্যতা নেই।

আইনজীবী কামালুল আলম বলেন, ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কোন যোগসূত্র দেখাতে পারলেন না। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা হলে রাষ্ট্রকেই বিতর্কিত করা হয়।

কামালুল আলম বলেন, রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়।

অপর তিন অ্যামিকাস কিউরি ফিদা এম কামাল, প্রবীর নিয়োগী ও ড. শাহদীন মালিক রিট গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দেন।

তবে রিটের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু বলেন, এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের সুনাম নষ্ট করা হয়েছে। দেশে বিদেশে বাংলাদেশকে ছোট করতে একটি চক্র এ কাজ করেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর সম্মান নষ্ট করা হয়েছে। আদালত চাইলে একটি আদেশ দিতে পারেন। আর সাংবিধানিক অধিকারবলে রিটকারী রিট করেছেন।

আল জাজিরায় গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। ভিডিও-সংবলিত ওই ডকুমেন্টারি বিভ্রান্তিকর, বিদ্বেষমূলক ও মানহানিকর উল্লেখ করে দেশে আল জাজিরার সম্প্রচার ও ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এনামুল কবির ইমন। রিটে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স ম্যান’ প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে অপসারণ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্যপ্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

রিটের গ্রহণযোগ্যতাসহ পাঁচটি বিষয়ে মতামত দিতে ১০ ফেব্রুয়ারি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছয়জন আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। অ্যামিকাস কিউরি হলে আদালতের আইনি সহায়তাকারী। রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার দিক, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে কোন আদেশ দেয়া হলে বিদেশি কোনো টিভি চ্যানেলের ক্ষেত্রে তা কার্যকর করা যাবে কি না, কোন আইনি নোটিশ ছাড়া রিট (ম্যান্ডামাস) চলে কি না, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে আল জাজিরার তথ্যচিত্রটি সব মাধ্যম থেকে বন্ধ করার কোন নির্দেশনা দেয়ার প্রয়োজন আছে কি না, ১ ফেব্রুয়ারি তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর এত দেরিতে রিট করার প্রেক্ষাপটে কোন নির্দেশ দেয়ার প্রয়োজন আছে কি না এসব বিষয়ে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পক্ষে ছিলেন খোন্দকার রেজা ই রাকিব, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩ ফাল্গুন ১৪২৭ ৩ রজব ১৪৪২

আল-জাজিরা রিটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরার বাংলাদেশে সম্প্রচার বন্ধের বিষয়ে শুনানিতে ছয় অ্যামিকাস কিউরির (আদালত-বন্ধু) মধ্যে পাঁচজনই রিটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। শুনানিতে একজন অ্যামিকাস কিউরি বলেন, সম্প্রতি আল-জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ নামে ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কোন যোগসূত্র দেখাতে পারেনি। এছাড়া এ জন্য রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার কোন যৌক্তিকতাও নেই বলেও মতামত দেন তিনি। তাই রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। তবে একজন বলেছেন, সরকার প্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে। তাই আদালত একটি আদেশ দিতে পারেন।

গতকাল ছয়জন অ্যামিকাস কিউরির মতামত শেষ হয়েছে। আগামী বুধবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আদালত। বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করা হয়। সম্প্রতি আল জাজিরার প্রচারিত তথ্যচিত্র ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রসঙ্গে বেলা ১১টা থেকে অ্যামিকাস কিউরিদের মধ্যে এজে মোহাম্মদ আলী, কামালুল আলম, ফিদা এম কামালসহ একে একে ছয়জন বক্তব্য দেন।

শুনানির শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী সরকার চাইলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারত। সরকার তো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং রিটকারীর এখানে সংক্ষুব্ধ হওয়ার কিছুই নেই। তাই রিটের গ্রহণযোগ্যতা নেই।

আইনজীবী কামালুল আলম বলেন, ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কোন যোগসূত্র দেখাতে পারলেন না। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা হলে রাষ্ট্রকেই বিতর্কিত করা হয়।

কামালুল আলম বলেন, রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়।

অপর তিন অ্যামিকাস কিউরি ফিদা এম কামাল, প্রবীর নিয়োগী ও ড. শাহদীন মালিক রিট গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দেন।

তবে রিটের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু বলেন, এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের সুনাম নষ্ট করা হয়েছে। দেশে বিদেশে বাংলাদেশকে ছোট করতে একটি চক্র এ কাজ করেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর সম্মান নষ্ট করা হয়েছে। আদালত চাইলে একটি আদেশ দিতে পারেন। আর সাংবিধানিক অধিকারবলে রিটকারী রিট করেছেন।

আল জাজিরায় গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। ভিডিও-সংবলিত ওই ডকুমেন্টারি বিভ্রান্তিকর, বিদ্বেষমূলক ও মানহানিকর উল্লেখ করে দেশে আল জাজিরার সম্প্রচার ও ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এনামুল কবির ইমন। রিটে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স ম্যান’ প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে অপসারণ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্যপ্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

রিটের গ্রহণযোগ্যতাসহ পাঁচটি বিষয়ে মতামত দিতে ১০ ফেব্রুয়ারি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছয়জন আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। অ্যামিকাস কিউরি হলে আদালতের আইনি সহায়তাকারী। রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার দিক, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে কোন আদেশ দেয়া হলে বিদেশি কোনো টিভি চ্যানেলের ক্ষেত্রে তা কার্যকর করা যাবে কি না, কোন আইনি নোটিশ ছাড়া রিট (ম্যান্ডামাস) চলে কি না, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে আল জাজিরার তথ্যচিত্রটি সব মাধ্যম থেকে বন্ধ করার কোন নির্দেশনা দেয়ার প্রয়োজন আছে কি না, ১ ফেব্রুয়ারি তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর এত দেরিতে রিট করার প্রেক্ষাপটে কোন নির্দেশ দেয়ার প্রয়োজন আছে কি না এসব বিষয়ে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পক্ষে ছিলেন খোন্দকার রেজা ই রাকিব, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।