আরও ২০১৪ রোহিঙ্গা ভাসানচরে

উন্নত জীবনের আশায় চতুর্থ দফায় প্রথম অংশে ভাসানচরে পৌঁছেছে আরও ২ হাজার ১৪ জন রোহিঙ্গা। গতকাল সকাল ৬টা থেকে রোহিঙ্গারা নৌবাহিনীর জাহাজে উঠা শুরু করেন।

সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্প থেকে নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজে তারা রওনা দেন। দুপুর ১টার পরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাহাজগুলো ভাসানচরে পৌঁছে।

নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্প (প্রকল্প-৩) উপ-পরিচালক কমান্ডার মো. আনোয়ারুল কবির মুঠোফোনে বলেন, চতুর্থ দফার প্রথমদিনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পাঁচটি জাহাজ ২ হাজার ১৪ জন রোহিঙ্গা দুপুরে ভাসানচরে পৌঁছেছে। নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস সন্দ্বীপ, ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউনিট (এলসিইউ) ১, ২, ৩ ও ৪ নামের জাহাজে করে তারা ভাসানচরে পৌঁছায়।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে থেকে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তাদের স্ব-স্ব ঘর বুঝিয়ে দেয়ার কাজ চলছে।

গতকাল সকালে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে ১৩টি বাসে করে ৬৪৭ জন রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্পে আনা হয়। বিকেলে আরও হাজারখানিক রোহিঙ্গা কক্সবাজার থেকে এ ট্রানিজট ক্যাম্পে আনার কথা রয়েছে। সেখানে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকালে তাদেরকে জাহাজে তোলা হবে। আজ চতুর্থ দফায় দ্বিতীয় অংশেও আরও প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্য রওনা হবেন।

তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আমড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কমান্ডিং অফিসার এসপি মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম তারিক।

এর আগে আরও ৩ দফায় রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে পাঠানো হয়েছিল।

রোহিঙ্গা নেতা বয়োবৃদ্ধ শরীফ জানান, আমি কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পের একটি ব্লকের নেতা ছিলাম। আমার পাঁচ সদস্যের পরিবার। পরিবারের অপরাপর সদস্যরা আগেই ভাসানচরে চলে গেছে। সবাইকে পাঠিয়ে আমি সর্বশেষ যাচ্ছি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ জন, ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় ১ হাজার ৮০৪ জন, ২৯ জানুয়ারি তৃতীয় দফার প্রথমদিন ১ হাজার ৭৭৮ জন ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফার দ্বিতীয়দিন ১ হাজার ৪৬৪ জন ও আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফার প্রথমদিন ২ হাজার ১৪ জনসহ এ পর্যন্ত ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়েছে ৮ হাজার ৭০২ জনকে। তার আগে ২০২০ সালের মে মাসে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে উদ্ধার করার পর ভাসানচর নিয়ে যায় সরকার।

ভাসানচরের আশ্রয় শিবিরে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেই লক্ষ্যে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবির থেকে স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক এসব রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে হস্তান্তর করা হচ্ছে ।

এদিকে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সরকারি একটি সংস্থার কর্মকর্তা বলছেন, স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক এমন প্রায় ২৩ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্য থেকে চতুর্থ দফায় হস্তান্তরের জন্য প্রায় ৪ হাজার জনকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এসব রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন শিবির থেকে ট্রাক ও বাসে করে তুলে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে জড়ো করা হচ্ছে ।

স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। এই হিসাব ২০২০ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে থেকে সরকার ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয়।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩ ফাল্গুন ১৪২৭ ৩ রজব ১৪৪২

আরও ২০১৪ রোহিঙ্গা ভাসানচরে

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

image

ভাসানচরে চতুর্থ দফায় রোহিঙ্গাদের প্রথম দল 

উন্নত জীবনের আশায় চতুর্থ দফায় প্রথম অংশে ভাসানচরে পৌঁছেছে আরও ২ হাজার ১৪ জন রোহিঙ্গা। গতকাল সকাল ৬টা থেকে রোহিঙ্গারা নৌবাহিনীর জাহাজে উঠা শুরু করেন।

সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্প থেকে নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজে তারা রওনা দেন। দুপুর ১টার পরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাহাজগুলো ভাসানচরে পৌঁছে।

নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্প (প্রকল্প-৩) উপ-পরিচালক কমান্ডার মো. আনোয়ারুল কবির মুঠোফোনে বলেন, চতুর্থ দফার প্রথমদিনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পাঁচটি জাহাজ ২ হাজার ১৪ জন রোহিঙ্গা দুপুরে ভাসানচরে পৌঁছেছে। নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস সন্দ্বীপ, ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউনিট (এলসিইউ) ১, ২, ৩ ও ৪ নামের জাহাজে করে তারা ভাসানচরে পৌঁছায়।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে থেকে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তাদের স্ব-স্ব ঘর বুঝিয়ে দেয়ার কাজ চলছে।

গতকাল সকালে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে ১৩টি বাসে করে ৬৪৭ জন রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্পে আনা হয়। বিকেলে আরও হাজারখানিক রোহিঙ্গা কক্সবাজার থেকে এ ট্রানিজট ক্যাম্পে আনার কথা রয়েছে। সেখানে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকালে তাদেরকে জাহাজে তোলা হবে। আজ চতুর্থ দফায় দ্বিতীয় অংশেও আরও প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্য রওনা হবেন।

তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আমড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কমান্ডিং অফিসার এসপি মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম তারিক।

এর আগে আরও ৩ দফায় রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে পাঠানো হয়েছিল।

রোহিঙ্গা নেতা বয়োবৃদ্ধ শরীফ জানান, আমি কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পের একটি ব্লকের নেতা ছিলাম। আমার পাঁচ সদস্যের পরিবার। পরিবারের অপরাপর সদস্যরা আগেই ভাসানচরে চলে গেছে। সবাইকে পাঠিয়ে আমি সর্বশেষ যাচ্ছি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ জন, ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় ১ হাজার ৮০৪ জন, ২৯ জানুয়ারি তৃতীয় দফার প্রথমদিন ১ হাজার ৭৭৮ জন ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফার দ্বিতীয়দিন ১ হাজার ৪৬৪ জন ও আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফার প্রথমদিন ২ হাজার ১৪ জনসহ এ পর্যন্ত ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়েছে ৮ হাজার ৭০২ জনকে। তার আগে ২০২০ সালের মে মাসে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে উদ্ধার করার পর ভাসানচর নিয়ে যায় সরকার।

ভাসানচরের আশ্রয় শিবিরে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেই লক্ষ্যে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবির থেকে স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক এসব রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে হস্তান্তর করা হচ্ছে ।

এদিকে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সরকারি একটি সংস্থার কর্মকর্তা বলছেন, স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক এমন প্রায় ২৩ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্য থেকে চতুর্থ দফায় হস্তান্তরের জন্য প্রায় ৪ হাজার জনকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এসব রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন শিবির থেকে ট্রাক ও বাসে করে তুলে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে জড়ো করা হচ্ছে ।

স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। এই হিসাব ২০২০ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে থেকে সরকার ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয়।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।