মায়ানমারে রাজপথে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি

মায়ানমারে রাজপথে নামা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। আন্দোলনকারীরা দেশটিতে সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাস্তায় মিছিল করছিল। আল-জাজিরা

দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ কাচিনে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। তবে এতে কোনও হতাহতের সংবাদ পাওয়া যায়নি।

এদিকে মায়ানমারের বড় কয়েকটি শহরের সাঁজোয়া যান নিয়ে টহল দিচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। জোর ধারণা, সামরিক ক্যুর বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সামরিক জান্তারা।

স্থানীয় সময় রাত একটা থেকে বেশিরভাগ জায়গায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ। গত সপ্তাহেও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। অং সান সু চিসহ ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেতাদের গ্রেপ্তার করে ১ ফেব্রুয়ারি মায়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এর বিরুদ্ধে চলছে জোরালো আন্দোলন।

ক্যু বিরোধী বিক্ষোভের নবম দিনে উত্তরাঞ্চল কাচিন রাজ্যে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছুড়েছে। দমন-নিপীড়ন চলছে অন্যান্য অঞ্চলেও।

এসব ধরপাকড়ের কঠোর সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি জানিয়েছে, মায়ানমারের জনগণের বিরুদ্ধে সেনারা ‘যুদ্ধ ঘোষণা করছে’। মায়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রু টুইটারে লিখেছেন, অবস্থাটা এমন যে, মায়ানমারের জেনারেলরা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। গভীর রাতে অভিযান, ব্যাপক গ্রেপ্তার, আরও অধিকার ছিনিয়ে নেয়া, আবার ইন্টারনেট বন্ধ, কমিউনিটির মাঝে সেনা মোতায়েন-এগুলো কঠোর অবস্থানের লক্ষণ। মনোযোগ দিয়ে শুনুন জেনারেলরা : আপনাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণ থেকে বিরত থেকে সংযম দেখানোর জন্য আমরা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ করছেন। মায়ানমারের টেলিকম অপারেটররা জানান, রাত থেকে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয় তবে ২৪ ঘণ্টা পর তা আবার সচল হয়।

নেপিদোর একটি হাসপাতালের চিকিৎসক বিবিসিকে বলেন, সামরিক বাহিনী রাতে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাত আটটা থেকে ভোররাত চারটা পর্যন্ত বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মতো জরুরি প্রয়োজনে যাদের বের হতে হবে, তাদের পুলিশ ও সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করতে পারে। এসব নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’ ওই চিকিৎসক জানান, আগের দিন সেনাবাহিনী বেড়া কেটে বিভিন্ন বাসায় ঢুকে মানুষকে আটক করেছে। গত নভেম্বর মাসে মায়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের পর থেকেই এনএলডি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। নির্বাচনে এনএলডি সরকার গঠনের মতো আসন পেলেও জালিয়াতির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী।

মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩ ফাল্গুন ১৪২৭ ৩ রজব ১৪৪২

মায়ানমারে রাজপথে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি

image

মায়ানমারে রাজপথে নামা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। আন্দোলনকারীরা দেশটিতে সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাস্তায় মিছিল করছিল। আল-জাজিরা

দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ কাচিনে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। তবে এতে কোনও হতাহতের সংবাদ পাওয়া যায়নি।

এদিকে মায়ানমারের বড় কয়েকটি শহরের সাঁজোয়া যান নিয়ে টহল দিচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। জোর ধারণা, সামরিক ক্যুর বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সামরিক জান্তারা।

স্থানীয় সময় রাত একটা থেকে বেশিরভাগ জায়গায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ। গত সপ্তাহেও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। অং সান সু চিসহ ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেতাদের গ্রেপ্তার করে ১ ফেব্রুয়ারি মায়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এর বিরুদ্ধে চলছে জোরালো আন্দোলন।

ক্যু বিরোধী বিক্ষোভের নবম দিনে উত্তরাঞ্চল কাচিন রাজ্যে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছুড়েছে। দমন-নিপীড়ন চলছে অন্যান্য অঞ্চলেও।

এসব ধরপাকড়ের কঠোর সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি জানিয়েছে, মায়ানমারের জনগণের বিরুদ্ধে সেনারা ‘যুদ্ধ ঘোষণা করছে’। মায়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রু টুইটারে লিখেছেন, অবস্থাটা এমন যে, মায়ানমারের জেনারেলরা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। গভীর রাতে অভিযান, ব্যাপক গ্রেপ্তার, আরও অধিকার ছিনিয়ে নেয়া, আবার ইন্টারনেট বন্ধ, কমিউনিটির মাঝে সেনা মোতায়েন-এগুলো কঠোর অবস্থানের লক্ষণ। মনোযোগ দিয়ে শুনুন জেনারেলরা : আপনাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণ থেকে বিরত থেকে সংযম দেখানোর জন্য আমরা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ করছেন। মায়ানমারের টেলিকম অপারেটররা জানান, রাত থেকে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয় তবে ২৪ ঘণ্টা পর তা আবার সচল হয়।

নেপিদোর একটি হাসপাতালের চিকিৎসক বিবিসিকে বলেন, সামরিক বাহিনী রাতে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাত আটটা থেকে ভোররাত চারটা পর্যন্ত বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মতো জরুরি প্রয়োজনে যাদের বের হতে হবে, তাদের পুলিশ ও সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করতে পারে। এসব নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’ ওই চিকিৎসক জানান, আগের দিন সেনাবাহিনী বেড়া কেটে বিভিন্ন বাসায় ঢুকে মানুষকে আটক করেছে। গত নভেম্বর মাসে মায়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের পর থেকেই এনএলডি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। নির্বাচনে এনএলডি সরকার গঠনের মতো আসন পেলেও জালিয়াতির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী।