ঋতুরাজ বসন্ত

বিদায় নিয়েছে শীত। এসেছে বসন্ত। বসন্ত আসলে আমাদের দেশ বাংলাদেশে একটা হৈ-রৈ ডাক পড়ে যায়। ঋতুরাজ এসেছে, বসন্ত এসেছে বলে আমরা বসন্ত উৎসবের আয়োজন করি। বসন্তবরণ উৎসব এখন আমাদের দেশে ঐতিহ্যের একটি অংশ হয়ে গেছে।

বসন্ত আসলে কবিদের ঋতু বা ঋতুরাজ। এই ঋতুতে গাছের পাতা ঝরে যায়, যদিও কিছু কিছু গাছে নবপত্রপল্ববের দেখা মিলে, পাতাবিহীন গাছকে চুলবিহীন মুণ্ডুওয়ালার মতোই ন্যাড়া লাগে। আর ধুলো এই ঋতুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আমাদের চারিদিকে বসন্তের মতো ধুলোয় ধূসরিত পরিবেশ অন্য কোনো ঋতুতে এতো দেখা যায় না।

বসন্তের ফুলও তেমন নেই। এমনকি আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার সম্পর্কও বর্ষা কিংবা শরতের সঙ্গে। যদিও বসন্তে পলাশ, শিমুল ফুল ফুটে কিন্তু কৃষ্ণচূড়া বা শাপলা ফুলের মতো আমাদের মন কাড়ে না।

তারপরও আমরা বসন্ত নিয়ে খুব বেশি কথা বলি। এমনকি বসন্তকে বরণের জন্য আমরা আয়োজন করি জাঁকজমকপূর্ণ বসন্তবরণ উৎসব। এটা আমরা কেন করি! তার কারণ কবিরা বসন্তকে নিয়ে লেখালেখি করে এটাকে বিখ্যাত করে গেছেন।

বাঙালিরা ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিকপ্রিয়। কবিরা যেহেতু সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অংশ, তাই কবিদের কবিতা আমাদের আকর্ষণ করে।

আর কেনইবা আকর্ষণ করবে না- কবিদের মতো শব্দকে এতো সুন্দর করে ছন্দোবদ্ধ বাক্যে প্রকাশ কেই বা আমরা করতে পারি?

বসন্তের অনেক কিছুই ভালো লাগে। যেমন-কোকিলের কুহু-কুহু ডাক, ধুলোবালি, এমনকি পাতাবিহীন গাছ, প্রকৃতির রুক্ষ স্বভাব। তবে তারচেয়েও বেশি মুগ্ধ হই যখন কবিদের কবিতায় পড়ি- বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে/আমাদের মধুর মিলন রটাতে।

কিংবা-বাতাসে কম্পিত, ফুলভারে অবনত এবং জ্বলন্ত আগুনের মতো দ্বীপ্তিমান/পলাশের বনে সমাচ্ছন্ন এই পৃথিবী/বসন্তে রক্তবসনা নববধূর মতো শোভা পায়। অথবা-কুহু কুহু কুহু কোকিল কুহরে/শ্রবণে-শ্রবণে বিয়োগীর প্রাণ হারে। বা পড়ি- হেন মনে জ্ঞান হয় সকলে মিলিয়া কয়/ ঋতুরাজ বসন্তের জয়।

তখন এসব পাঠ করতে ভালো লাগে। ছন্দে- ছন্দে মুগ্ধতা বাড়ে। প্রতিটা ছন্দের মাঝে বসন্তের প্রতি ভালোলাগা অনুভব হয়।

অনুভব করি মিলনের। মিলনের অপর নাম ভালোবাসা। ভালোবাসা থাকলেই মানুষে-মানুষে মিলন হয়। বোধ হয়- কবিরা অন্যান্য ঋতুর চেয়ে বসন্তকে বেশি মূল্যায়ন করেছেন মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা বা মিলনের জন্যই।

বসন্তকে ভালো না লাগার ১০০টা কারণ থাকতে পারে তবুও বসন্তই অধিকাংশ মানুষের প্রিয় ঋতু, কবিদের ঋতুরাজ। কেননা এই ঋতুকে ঋতুরাজ বা বন্দনা করার মতো এমন দুইটি বৈশিষ্ট্য আছে যা মানুষকে স্বস্তি দেয়- শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক এমনকি অর্থনৈতিকভাবেও। আর তা হলো শীতের বিদায় আর ভালোবাসা দিবসের আগমন। কনকনে শীতের যে তাণ্ডব তা বসন্ত এসেই মানুষকে রেহাই দেয়। আর ভালোবাসা ছাড়া মানবজন্ম বৃথা। আর বসন্তকালেই ভালোবাসা দিবস উদ্্যাপন করা হয়। বিভিন্ন কৌশলে ভালোবাসাকে মানুষ প্রকাশ করে এই ঋতুতেই।

হামিদা আব্বাসী

বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৪ ফাল্গুন ১৪২৭ ৪ রজব ১৪৪২

ঋতুরাজ বসন্ত

image

বিদায় নিয়েছে শীত। এসেছে বসন্ত। বসন্ত আসলে আমাদের দেশ বাংলাদেশে একটা হৈ-রৈ ডাক পড়ে যায়। ঋতুরাজ এসেছে, বসন্ত এসেছে বলে আমরা বসন্ত উৎসবের আয়োজন করি। বসন্তবরণ উৎসব এখন আমাদের দেশে ঐতিহ্যের একটি অংশ হয়ে গেছে।

বসন্ত আসলে কবিদের ঋতু বা ঋতুরাজ। এই ঋতুতে গাছের পাতা ঝরে যায়, যদিও কিছু কিছু গাছে নবপত্রপল্ববের দেখা মিলে, পাতাবিহীন গাছকে চুলবিহীন মুণ্ডুওয়ালার মতোই ন্যাড়া লাগে। আর ধুলো এই ঋতুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আমাদের চারিদিকে বসন্তের মতো ধুলোয় ধূসরিত পরিবেশ অন্য কোনো ঋতুতে এতো দেখা যায় না।

বসন্তের ফুলও তেমন নেই। এমনকি আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার সম্পর্কও বর্ষা কিংবা শরতের সঙ্গে। যদিও বসন্তে পলাশ, শিমুল ফুল ফুটে কিন্তু কৃষ্ণচূড়া বা শাপলা ফুলের মতো আমাদের মন কাড়ে না।

তারপরও আমরা বসন্ত নিয়ে খুব বেশি কথা বলি। এমনকি বসন্তকে বরণের জন্য আমরা আয়োজন করি জাঁকজমকপূর্ণ বসন্তবরণ উৎসব। এটা আমরা কেন করি! তার কারণ কবিরা বসন্তকে নিয়ে লেখালেখি করে এটাকে বিখ্যাত করে গেছেন।

বাঙালিরা ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিকপ্রিয়। কবিরা যেহেতু সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অংশ, তাই কবিদের কবিতা আমাদের আকর্ষণ করে।

আর কেনইবা আকর্ষণ করবে না- কবিদের মতো শব্দকে এতো সুন্দর করে ছন্দোবদ্ধ বাক্যে প্রকাশ কেই বা আমরা করতে পারি?

বসন্তের অনেক কিছুই ভালো লাগে। যেমন-কোকিলের কুহু-কুহু ডাক, ধুলোবালি, এমনকি পাতাবিহীন গাছ, প্রকৃতির রুক্ষ স্বভাব। তবে তারচেয়েও বেশি মুগ্ধ হই যখন কবিদের কবিতায় পড়ি- বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে/আমাদের মধুর মিলন রটাতে।

কিংবা-বাতাসে কম্পিত, ফুলভারে অবনত এবং জ্বলন্ত আগুনের মতো দ্বীপ্তিমান/পলাশের বনে সমাচ্ছন্ন এই পৃথিবী/বসন্তে রক্তবসনা নববধূর মতো শোভা পায়। অথবা-কুহু কুহু কুহু কোকিল কুহরে/শ্রবণে-শ্রবণে বিয়োগীর প্রাণ হারে। বা পড়ি- হেন মনে জ্ঞান হয় সকলে মিলিয়া কয়/ ঋতুরাজ বসন্তের জয়।

তখন এসব পাঠ করতে ভালো লাগে। ছন্দে- ছন্দে মুগ্ধতা বাড়ে। প্রতিটা ছন্দের মাঝে বসন্তের প্রতি ভালোলাগা অনুভব হয়।

অনুভব করি মিলনের। মিলনের অপর নাম ভালোবাসা। ভালোবাসা থাকলেই মানুষে-মানুষে মিলন হয়। বোধ হয়- কবিরা অন্যান্য ঋতুর চেয়ে বসন্তকে বেশি মূল্যায়ন করেছেন মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা বা মিলনের জন্যই।

বসন্তকে ভালো না লাগার ১০০টা কারণ থাকতে পারে তবুও বসন্তই অধিকাংশ মানুষের প্রিয় ঋতু, কবিদের ঋতুরাজ। কেননা এই ঋতুকে ঋতুরাজ বা বন্দনা করার মতো এমন দুইটি বৈশিষ্ট্য আছে যা মানুষকে স্বস্তি দেয়- শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক এমনকি অর্থনৈতিকভাবেও। আর তা হলো শীতের বিদায় আর ভালোবাসা দিবসের আগমন। কনকনে শীতের যে তাণ্ডব তা বসন্ত এসেই মানুষকে রেহাই দেয়। আর ভালোবাসা ছাড়া মানবজন্ম বৃথা। আর বসন্তকালেই ভালোবাসা দিবস উদ্্যাপন করা হয়। বিভিন্ন কৌশলে ভালোবাসাকে মানুষ প্রকাশ করে এই ঋতুতেই।

হামিদা আব্বাসী