পাপুলের সাজার রায়ের কপি স্পিকারের হাতে

বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

অর্থ ও মানবপাচারের দায়ে কুয়েতের আদালতে সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের মামলার রায়ের কপি সরকারের কাছে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। গতকাল রাজধানীর পূর্বাচলে ফেইসবুকভিত্তিক নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উই-এর দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাপুলের রায়টা আমরা পেয়েছি। আরবি এবং ইংরেজি ভাষায় ৬১ পেইজের রায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্পিকারের কাছে এগুলো পৌঁছে দিয়েছি। এখন তারা বিধি মোতাবেক অ্যাকশন নেবেন। পাপুলের রায় ঠিক কতো তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

রায় কবে হাতে পেয়েছেন জানতে চাইলে মোমেন বলেন, আমরা ভারডিক্টটা হাতে পেলাম। আমাদের দেশের মতো কুয়েতেও ভারডিক্ট আসতে অনেক দেরি হয়। এজন্য আমরাও পেরেশানিতে ছিলাম। মিডিয়া প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, স্পিকারও প্রায়ই ফোন করেন এটা নিয়ে। এজন্য রায়টা যেন তাড়াতাড়ি পেতে পারি সেজন্য রাষ্ট্রদূতকে বলে রেখেছিলাম। মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের। এই রায়ের ভিত্তিতে সংসদে পাপুলের কী পরিণতি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার বলে লাভ নেই। বিধি মোতাবেক তারা কাজ করবে।

উনি আমাদের কাছে কোন আইনি সহায়তা চাননি। উনি ওখানে ব্যবসায়ী হিসেবে থাকেন। আমাদের কোন লাল পাসপোর্ট নিয়ে যাননি। উনার নিজেরই প্রয়োজনীয় স্টাবলিশমেন্ট রয়েছে। উনি ওখানকার রেসিডেন্ট, ব্যবসায়ী উনি ছিলেন। অর্থ ও মানবপাচার এবং ঘুষ দেয়ার অভিযোগে গত বছর জুনে কুয়েতে গ্রেপ্তার হন লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য পাপুল। গত ২৮ জানুয়ারি তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। বাংলাদেশের কোন আইনপ্রণেতার এভাবে বিদেশে দণ্ডিত হওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোন আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না। পাপুলের বিষয়ে এই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।

সম্প্রতি তিনি জানান, সংবিধানে যা বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে সংসদকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সংসদের কাছে রেকর্ড পৌঁছলে ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ আসন শূন্য ঘোষণা করবে। আন্ষ্ঠুানিকভাবে তথ্য পাওয়ার পর সংবিধান ও কার্যপ্রাণালী বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীও জানিয়েছিলেন।

সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন পাপুল। তার মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেয়ার কাজ করলেও কুয়েতে অন্যান্য ব্যবসার কাজও বাগিয়ে ছিলেন তিনি। কুয়েতে তার বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পাপুল। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে পাপুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনে কুয়েতি প্রসিকিউশন। সেই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দণ্ডিত হয়েছেন তিনি।

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৭ ফাল্গুন ১৪২৭ ৭ রজব ১৪৪২

পাপুলের সাজার রায়ের কপি স্পিকারের হাতে

বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

অর্থ ও মানবপাচারের দায়ে কুয়েতের আদালতে সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের মামলার রায়ের কপি সরকারের কাছে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। গতকাল রাজধানীর পূর্বাচলে ফেইসবুকভিত্তিক নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উই-এর দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাপুলের রায়টা আমরা পেয়েছি। আরবি এবং ইংরেজি ভাষায় ৬১ পেইজের রায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্পিকারের কাছে এগুলো পৌঁছে দিয়েছি। এখন তারা বিধি মোতাবেক অ্যাকশন নেবেন। পাপুলের রায় ঠিক কতো তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

রায় কবে হাতে পেয়েছেন জানতে চাইলে মোমেন বলেন, আমরা ভারডিক্টটা হাতে পেলাম। আমাদের দেশের মতো কুয়েতেও ভারডিক্ট আসতে অনেক দেরি হয়। এজন্য আমরাও পেরেশানিতে ছিলাম। মিডিয়া প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, স্পিকারও প্রায়ই ফোন করেন এটা নিয়ে। এজন্য রায়টা যেন তাড়াতাড়ি পেতে পারি সেজন্য রাষ্ট্রদূতকে বলে রেখেছিলাম। মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের। এই রায়ের ভিত্তিতে সংসদে পাপুলের কী পরিণতি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার বলে লাভ নেই। বিধি মোতাবেক তারা কাজ করবে।

উনি আমাদের কাছে কোন আইনি সহায়তা চাননি। উনি ওখানে ব্যবসায়ী হিসেবে থাকেন। আমাদের কোন লাল পাসপোর্ট নিয়ে যাননি। উনার নিজেরই প্রয়োজনীয় স্টাবলিশমেন্ট রয়েছে। উনি ওখানকার রেসিডেন্ট, ব্যবসায়ী উনি ছিলেন। অর্থ ও মানবপাচার এবং ঘুষ দেয়ার অভিযোগে গত বছর জুনে কুয়েতে গ্রেপ্তার হন লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য পাপুল। গত ২৮ জানুয়ারি তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। বাংলাদেশের কোন আইনপ্রণেতার এভাবে বিদেশে দণ্ডিত হওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোন আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না। পাপুলের বিষয়ে এই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।

সম্প্রতি তিনি জানান, সংবিধানে যা বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে সংসদকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সংসদের কাছে রেকর্ড পৌঁছলে ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ আসন শূন্য ঘোষণা করবে। আন্ষ্ঠুানিকভাবে তথ্য পাওয়ার পর সংবিধান ও কার্যপ্রাণালী বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীও জানিয়েছিলেন।

সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন পাপুল। তার মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেয়ার কাজ করলেও কুয়েতে অন্যান্য ব্যবসার কাজও বাগিয়ে ছিলেন তিনি। কুয়েতে তার বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পাপুল। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে পাপুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনে কুয়েতি প্রসিকিউশন। সেই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দণ্ডিত হয়েছেন তিনি।