করোনায়ও কক্সবাজার বান্দরবানে পর্যটকদের ঢল

করোনায় প্রথম ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে এসেছেন লাখো পর্যটক। এ কারণে ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও কটেজের সব কক্ষই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এসব হোটেল মোটেল ছাড়াও বিমান ও বাসের কোন টিকেট নেই। টিকেট নেই সেন্টামার্টিন ভ্রমণে নিয়োজিত জাহাজগুলোতেও। সব অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। তাই হোটেল-মোটেলগুলোতে ঠাঁই মিলছে না পর্যটকদের। অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিধি নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মাইকিং করে সর্তকবানী দেয়া হচ্ছে। আশানুরূপ পর্যটকের আগমনে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা দারুণ খুশি।

গতকাল কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র সমবেত হয়েছে প্রায় ২ লাখ পর্যটক। আজ এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত সপ্তাহখানেক আগে থেকে আগাম বুকিং হয়ে আছে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। এসব হোটেল-রিসোর্টে দেড় লাখ মানুষের রাত যাপনের সুযোগ থাকলেও বাকি পর্যটকরা কোথায় রাত্রি যাপন করবেন তা নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। ফাগুনের তপ্তরোদ ও সন্ধ্যার শীতল হাওয়ার স্পর্শ নিতে লোকারণ্য সৈকতের বালিয়াড়ি ও হোটেল-মোটেল জোনের অলিগলি। এতে তিল ধারণের যেন ঠাঁই নেই কক্সবাজারে।

টইটম্বুর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে সৈকত পাড়ে। গোসল করাকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষার্থে সর্তক অবস্থায় রয়েছে লাইফগার্ড কর্মীরা। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে পর্যটকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে কক্সবাজার শহরের ৪ শতাধিক আবাসিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টে প্রায় কয়েক লাখ পর্যটক এসেছে। করোনার ভীতি হ্রাস পাওয়ায় মৌসুমের শেষ দিকে কক্সবাজারে আরও ১০ লাখ পর্যটক আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে ছুটির দিনগুলোতে বাড়ে দর্শনার্র্থী সমাগম। দীর্ঘসময় ঘরে বন্দী থাকার পর করোনার ভীতি হ্রাস পাওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা ভিড় করছে সমুদ্র সৈকত পাড়, হিমছড়ি পাহাড়ি ঝর্ণায়, পাথুরে বিচ ইনানী, দরিয়ানগর, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, সেন্টমার্টিন ও ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কসহ জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে দেশি-বিদেশি পর্যটক আগমন চোখে পড়ার মতো। এ বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমনে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে

সৈকত এলাকার ফটোগ্রাফার, জেডস্কি ও বিচ বাইক চালকদের। একই সঙ্গে জমজমাট ব্যবসা শুরু হয়েছে বার্মিজ মার্কেটগুলোতে। ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়ে পণ্যের কেনাবেচায় সরগরম হয়ে উঠেছে শপিংমলগুলো।

কক্সবাজারের তারকামানের হোটেল সি-গালের এজিএম মোহাম্মদ আরেফিন জানান, শীত মৌসুম শেষ হয়েছে। ফাগুনের পর থেকে মিষ্টি রোদ পাওয়া দুষ্কর। ফাগুনের শুরুতে টানা তিনদিনের ছুটি পেয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে এসেছে। যার কারণে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট আগাম বুকিং ছিল। এতে আমরা দারুণ উপভোগ করছি।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, এ করোনাকালে আশানুরূপ পর্যটক আগমনে আমরা খুশি। তিনি জানান, করোনার ভীতি হ্রাস পাওয়ায় পর্যটন মৌসুমে বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে আসছে। পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা হয়রানি রোধে আমরা কাজ করছি।

কলাতলীর হোটেল সি নাইটের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, হোটেল-মোটেলে যে পরিমাণ ধারণ ক্ষমতা তার চেয়েও লোকসমাগম বেশি বলে মনে হচ্ছে এবার। রুম বুকিং করে যারা এসেছেন, তারা ছাড়া বাকিরা ভোগান্তিতে পড়তে পারে বলে মনে হচ্ছে। কারণ দেড় লক্ষাধিক লোক থাকার আয়োজন থাকলেও সৈকত শহর কক্সবাজারে ৪-৫ লাখের অধিক পর্যটকের আগমন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

সি সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ সৈকতে এসেছে। ঢেউয়ের তালে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সববয়সের পর্যটক। অনেকে বিপদসীমার বাইরেও চলে যায়। তাদের কিনারায় আনতে এবং নিরাপদ থাকতে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে।

কক্সবাজার চেম্বারের দেয়া তথ্যমতে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার শহর, ইনানী ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীসহ জেলার বিভিন্ন নান্দনিক স্থানে এ ৩ দিনে ভ্রমণে আসছে প্রায় ৫ লাখেরও বেশি পর্যটক। এসব এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাকালে অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে পারলে পর্যটনের চলমান অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে পারব। এতে কক্সবাজার পর্যটন ব্যবসায় আবারও নতুন করে আলোর মুখ দেখছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটক নিরাপত্তায় সৈকত ও আশপাশে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ রেসকিউ টিম, ইভটিজিং কন্ট্রোল টিম, ড্রিংকিং জোন, দ্রুত চিকিৎসাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সৈকতে বিচ বাইক নিয়েও রয়েছে টহল। রয়েছে ৩টি বেসরকারি লাইফ গার্ড সংস্থার অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষিত লাইফগার্ড কর্মী। কন্ট্রোল রুম, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ পুরো সৈকত পুলিশের নজরদারির আওতায় রয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকদের অনাকাক্সিক্ষত হয়রানি রোধে, পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশেও পুলিশের নারী সদস্য সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ড. মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের সেবা দিতে প্রশাসন সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে। সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্য সেবা কেন্দ্র। পর্যটকদের করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতামূলক মাইকিং ও প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত।

উল্লেখ্য, অবশেষ করোনার ধাক্কা কাটিয়ে কক্সবাজার পর্যটন ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা গত ৬ মাস ধরে করোনা মহামারীর কারণে পর্যটন ব্যবসায় বিপুল অঙ্কের লোকসানে পড়েছিলেন। বর্তমানে পর্যটন মৌসুমে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসতে শুরু করায় ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছেন ব্যবসায়ীরা।

বান্দরবান প্রতিনিধি মো. শাফায়েত হোসেন জানায়, তিনদিনের টানা সরকারি ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে পর্যটন জেলা বান্দরবানে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বৃষ্টি না থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে ছিল ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা। জেলার অন্যতম পর্যটন স্পট ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে এখন পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়। এক সাপ্তাহ আগে থেকে বান্দরবানের হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে যায়। লম্বা সরকারি ছুটিতে যান্ত্রিক জীবনের একটু ক্লান্তি দূর করতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কার মধ্যেও বিনোদনের খোঁজে মানুষ ছুটে আসছেন পাহাড়ের মনোরম প্রাকৃতিক লীলাভূমি বান্দরবানে। বান্দরবানে পর্যটকদের জন্য বিনোদনের জন্য রয়েছে মেঘলা, প্রান্তিক লেক, নীলগীরী, নাফাখুম, রুমা রিঝুকঝনা, শৈলপ্রভাত, চিম্বুকসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ পর্যটন স্পট। টানা ছুটি ছাড়াও গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত ছয় ঋতুর সব সময় বান্দরবানের বিনোদনকেন্দ্রে মানুষের আগমন ঘটে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে বিশেষ দিন ছাড়া বান্দরবানে তেমন পর্যটকের আনোগোনা দেখা যায় না। শুক্রবার-শনি-রোববার টানা তিনদিন সরকরি ছুটি থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর পর্যটকের ঢল নেমেছে।

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৭ ফাল্গুন ১৪২৭ ৭ রজব ১৪৪২

করোনায়ও কক্সবাজার বান্দরবানে পর্যটকদের ঢল

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

image

বান্দরবান : পর্যটকের ভিড়ে হোটেল-মোটেলে রুম সংকট -সংবাদ

করোনায় প্রথম ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে এসেছেন লাখো পর্যটক। এ কারণে ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও কটেজের সব কক্ষই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এসব হোটেল মোটেল ছাড়াও বিমান ও বাসের কোন টিকেট নেই। টিকেট নেই সেন্টামার্টিন ভ্রমণে নিয়োজিত জাহাজগুলোতেও। সব অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। তাই হোটেল-মোটেলগুলোতে ঠাঁই মিলছে না পর্যটকদের। অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিধি নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মাইকিং করে সর্তকবানী দেয়া হচ্ছে। আশানুরূপ পর্যটকের আগমনে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা দারুণ খুশি।

গতকাল কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র সমবেত হয়েছে প্রায় ২ লাখ পর্যটক। আজ এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত সপ্তাহখানেক আগে থেকে আগাম বুকিং হয়ে আছে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। এসব হোটেল-রিসোর্টে দেড় লাখ মানুষের রাত যাপনের সুযোগ থাকলেও বাকি পর্যটকরা কোথায় রাত্রি যাপন করবেন তা নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। ফাগুনের তপ্তরোদ ও সন্ধ্যার শীতল হাওয়ার স্পর্শ নিতে লোকারণ্য সৈকতের বালিয়াড়ি ও হোটেল-মোটেল জোনের অলিগলি। এতে তিল ধারণের যেন ঠাঁই নেই কক্সবাজারে।

টইটম্বুর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে সৈকত পাড়ে। গোসল করাকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষার্থে সর্তক অবস্থায় রয়েছে লাইফগার্ড কর্মীরা। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে পর্যটকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে কক্সবাজার শহরের ৪ শতাধিক আবাসিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টে প্রায় কয়েক লাখ পর্যটক এসেছে। করোনার ভীতি হ্রাস পাওয়ায় মৌসুমের শেষ দিকে কক্সবাজারে আরও ১০ লাখ পর্যটক আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে ছুটির দিনগুলোতে বাড়ে দর্শনার্র্থী সমাগম। দীর্ঘসময় ঘরে বন্দী থাকার পর করোনার ভীতি হ্রাস পাওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা ভিড় করছে সমুদ্র সৈকত পাড়, হিমছড়ি পাহাড়ি ঝর্ণায়, পাথুরে বিচ ইনানী, দরিয়ানগর, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, সেন্টমার্টিন ও ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কসহ জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে দেশি-বিদেশি পর্যটক আগমন চোখে পড়ার মতো। এ বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমনে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে

সৈকত এলাকার ফটোগ্রাফার, জেডস্কি ও বিচ বাইক চালকদের। একই সঙ্গে জমজমাট ব্যবসা শুরু হয়েছে বার্মিজ মার্কেটগুলোতে। ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়ে পণ্যের কেনাবেচায় সরগরম হয়ে উঠেছে শপিংমলগুলো।

কক্সবাজারের তারকামানের হোটেল সি-গালের এজিএম মোহাম্মদ আরেফিন জানান, শীত মৌসুম শেষ হয়েছে। ফাগুনের পর থেকে মিষ্টি রোদ পাওয়া দুষ্কর। ফাগুনের শুরুতে টানা তিনদিনের ছুটি পেয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে এসেছে। যার কারণে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট আগাম বুকিং ছিল। এতে আমরা দারুণ উপভোগ করছি।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, এ করোনাকালে আশানুরূপ পর্যটক আগমনে আমরা খুশি। তিনি জানান, করোনার ভীতি হ্রাস পাওয়ায় পর্যটন মৌসুমে বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে আসছে। পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা হয়রানি রোধে আমরা কাজ করছি।

কলাতলীর হোটেল সি নাইটের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, হোটেল-মোটেলে যে পরিমাণ ধারণ ক্ষমতা তার চেয়েও লোকসমাগম বেশি বলে মনে হচ্ছে এবার। রুম বুকিং করে যারা এসেছেন, তারা ছাড়া বাকিরা ভোগান্তিতে পড়তে পারে বলে মনে হচ্ছে। কারণ দেড় লক্ষাধিক লোক থাকার আয়োজন থাকলেও সৈকত শহর কক্সবাজারে ৪-৫ লাখের অধিক পর্যটকের আগমন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

সি সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ সৈকতে এসেছে। ঢেউয়ের তালে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সববয়সের পর্যটক। অনেকে বিপদসীমার বাইরেও চলে যায়। তাদের কিনারায় আনতে এবং নিরাপদ থাকতে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে।

কক্সবাজার চেম্বারের দেয়া তথ্যমতে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার শহর, ইনানী ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীসহ জেলার বিভিন্ন নান্দনিক স্থানে এ ৩ দিনে ভ্রমণে আসছে প্রায় ৫ লাখেরও বেশি পর্যটক। এসব এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাকালে অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে পারলে পর্যটনের চলমান অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে পারব। এতে কক্সবাজার পর্যটন ব্যবসায় আবারও নতুন করে আলোর মুখ দেখছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটক নিরাপত্তায় সৈকত ও আশপাশে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ রেসকিউ টিম, ইভটিজিং কন্ট্রোল টিম, ড্রিংকিং জোন, দ্রুত চিকিৎসাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সৈকতে বিচ বাইক নিয়েও রয়েছে টহল। রয়েছে ৩টি বেসরকারি লাইফ গার্ড সংস্থার অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষিত লাইফগার্ড কর্মী। কন্ট্রোল রুম, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ পুরো সৈকত পুলিশের নজরদারির আওতায় রয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকদের অনাকাক্সিক্ষত হয়রানি রোধে, পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশেও পুলিশের নারী সদস্য সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ড. মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের সেবা দিতে প্রশাসন সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে। সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্য সেবা কেন্দ্র। পর্যটকদের করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতামূলক মাইকিং ও প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত।

উল্লেখ্য, অবশেষ করোনার ধাক্কা কাটিয়ে কক্সবাজার পর্যটন ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা গত ৬ মাস ধরে করোনা মহামারীর কারণে পর্যটন ব্যবসায় বিপুল অঙ্কের লোকসানে পড়েছিলেন। বর্তমানে পর্যটন মৌসুমে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসতে শুরু করায় ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছেন ব্যবসায়ীরা।

বান্দরবান প্রতিনিধি মো. শাফায়েত হোসেন জানায়, তিনদিনের টানা সরকারি ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে পর্যটন জেলা বান্দরবানে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বৃষ্টি না থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে ছিল ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা। জেলার অন্যতম পর্যটন স্পট ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে এখন পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়। এক সাপ্তাহ আগে থেকে বান্দরবানের হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে যায়। লম্বা সরকারি ছুটিতে যান্ত্রিক জীবনের একটু ক্লান্তি দূর করতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কার মধ্যেও বিনোদনের খোঁজে মানুষ ছুটে আসছেন পাহাড়ের মনোরম প্রাকৃতিক লীলাভূমি বান্দরবানে। বান্দরবানে পর্যটকদের জন্য বিনোদনের জন্য রয়েছে মেঘলা, প্রান্তিক লেক, নীলগীরী, নাফাখুম, রুমা রিঝুকঝনা, শৈলপ্রভাত, চিম্বুকসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ পর্যটন স্পট। টানা ছুটি ছাড়াও গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত ছয় ঋতুর সব সময় বান্দরবানের বিনোদনকেন্দ্রে মানুষের আগমন ঘটে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে বিশেষ দিন ছাড়া বান্দরবানে তেমন পর্যটকের আনোগোনা দেখা যায় না। শুক্রবার-শনি-রোববার টানা তিনদিন সরকরি ছুটি থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর পর্যটকের ঢল নেমেছে।