দুর্নীতি ও উন্নয়ন সাংঘর্ষিক

একটি সভ্য দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, সভ্যতা, মূল্যবোধ আর উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হলো ঘুষ দুর্নীতি। উন্নয়ন ও দুর্নীতি পাশাপাশি চলতে পারে না। ঘুষ ও দুর্নীতি আয়-বৈষম্য তৈরি করে। দুর্নীতির প্রভাবে দেশের গতিশীল অর্থনীতিতে স্থবিরতা তৈরি হয়। ঘুষ দুর্নীতির মধ্য দিয়ে মানুষের নৈতিক বিপর্যয় ঘটে। দ্বন্দ্ব-সংঘাত, খুন, ছিনতাই, মাদকাসক্ত, ধর্ষণ, নির্যাতন, গুম প্রভৃতি অপরাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তবে এ কথা ঠিক যে, একটি দেশের সব মানুষ কিন্তু দুর্নীতি পরায়ণ বা দুর্নীতিবাজ নয়। দুর্নীতিবাজদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আমরা যখন নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে অন্যের অপরাধকে বড় করে তুলে ধরি তখন দুর্নীতিবাজরা প্রশ্রয় পায়, ঘুষখোররা উৎসাহিত হয়। আমাদের উন্নয়নকে গতিশীল এবং ত্বরান্বিত করতে হলে, দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে ঘুষ ও দুর্নীতি রোধ করতে হবে। দুর্নীতি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা রোধ করতে হতে হবে। তা না হলে দেশের উন্নয়ন, অর্থনীতি, শিল্প, শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য মুখ থুবড়ে পড়বে।

অর্থনৈতিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী দেশে থেকে প্রতি বছর বিদেশে পাচার হয় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারের সাফল্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির মধ্যে ভূমি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, ওয়াসা, খাদ্য, পুলিশ প্রসাশন, এলজিআরডি, এলজিইডি, বন্দর, রেল, বিআরটিসি, বিআরটিএ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির শীর্ষে। এই দুর্নীতি কার স্বার্থে? কতিপয় ব্যক্তি নাকি রাষ্ট্রের স্বার্থে? একটা বিষয় আমাদের মাথায় রাখা দরকার। অর্থাৎ যারা রাষ্ট্রের এই দুর্নীতি রোধ করবেন তাদের মনে রাখা দরকার ব্যক্তি কখনও রাষ্ট্রের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতাবান হতে পারে না। রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতাবান হয়। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, পাচার, ঋণখেলাপির কারণে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলে সেই রাষ্ট্র বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারে না। আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, লাখো শহিদের রক্তের দামে কেনা বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তারা যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখে নিজের জীবন দিয়েছেন, আমরা সেই সোনার বাংলা গড়তে চাই। কিন্তু রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কেউ যদি দুর্নীতির কোন বিষয় বা চিত্র নিয়ে বলেন এগুলো ছিচকে কাজ তাহলে পক্ষান্তরে অপরাধীরা এবং দুর্নীতিবাজরা আরও বড় অপরাধ এবং দুর্নীতির জন্য সায় পেয়ে যাচ্ছেন।

দুর্নীতির কারণে ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্র ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানে পরিণত হচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার কখনও দুর্নীতির দায় এড়াতে পারে না। দেশ এবং দেশের জনগণের স্বার্থে যে কোন মূল্যে ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, পাচার, ঋণখেলাপি রোধ করতে হবে। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, পাচার, ঋণখেলাপি রোধ করতে হলে সরকারের সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোতে স্বচ্চতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক পরিবশে সচল রাখতে হবে। দুর্নীতিবাজদের কালো তালিকাভুক্ত করে জনসম্মুখে তা উন্মোচন করে দিতে হবে। সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন আনতে হবে। আইন প্রয়োগের পথকে সবসময় সরল ও বাধাহীন রাখতে হবে। বিচার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখতে হবে এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করতে হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং তার উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সুধীর বরণ মাঝি

শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, চাঁদপুর

আরও খবর

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৭ ফাল্গুন ১৪২৭ ৭ রজব ১৪৪২

দুর্নীতি ও উন্নয়ন সাংঘর্ষিক

একটি সভ্য দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, সভ্যতা, মূল্যবোধ আর উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হলো ঘুষ দুর্নীতি। উন্নয়ন ও দুর্নীতি পাশাপাশি চলতে পারে না। ঘুষ ও দুর্নীতি আয়-বৈষম্য তৈরি করে। দুর্নীতির প্রভাবে দেশের গতিশীল অর্থনীতিতে স্থবিরতা তৈরি হয়। ঘুষ দুর্নীতির মধ্য দিয়ে মানুষের নৈতিক বিপর্যয় ঘটে। দ্বন্দ্ব-সংঘাত, খুন, ছিনতাই, মাদকাসক্ত, ধর্ষণ, নির্যাতন, গুম প্রভৃতি অপরাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তবে এ কথা ঠিক যে, একটি দেশের সব মানুষ কিন্তু দুর্নীতি পরায়ণ বা দুর্নীতিবাজ নয়। দুর্নীতিবাজদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আমরা যখন নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে অন্যের অপরাধকে বড় করে তুলে ধরি তখন দুর্নীতিবাজরা প্রশ্রয় পায়, ঘুষখোররা উৎসাহিত হয়। আমাদের উন্নয়নকে গতিশীল এবং ত্বরান্বিত করতে হলে, দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে ঘুষ ও দুর্নীতি রোধ করতে হবে। দুর্নীতি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা রোধ করতে হতে হবে। তা না হলে দেশের উন্নয়ন, অর্থনীতি, শিল্প, শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য মুখ থুবড়ে পড়বে।

অর্থনৈতিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী দেশে থেকে প্রতি বছর বিদেশে পাচার হয় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারের সাফল্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির মধ্যে ভূমি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, ওয়াসা, খাদ্য, পুলিশ প্রসাশন, এলজিআরডি, এলজিইডি, বন্দর, রেল, বিআরটিসি, বিআরটিএ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির শীর্ষে। এই দুর্নীতি কার স্বার্থে? কতিপয় ব্যক্তি নাকি রাষ্ট্রের স্বার্থে? একটা বিষয় আমাদের মাথায় রাখা দরকার। অর্থাৎ যারা রাষ্ট্রের এই দুর্নীতি রোধ করবেন তাদের মনে রাখা দরকার ব্যক্তি কখনও রাষ্ট্রের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতাবান হতে পারে না। রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতাবান হয়। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, পাচার, ঋণখেলাপির কারণে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলে সেই রাষ্ট্র বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারে না। আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, লাখো শহিদের রক্তের দামে কেনা বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তারা যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখে নিজের জীবন দিয়েছেন, আমরা সেই সোনার বাংলা গড়তে চাই। কিন্তু রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কেউ যদি দুর্নীতির কোন বিষয় বা চিত্র নিয়ে বলেন এগুলো ছিচকে কাজ তাহলে পক্ষান্তরে অপরাধীরা এবং দুর্নীতিবাজরা আরও বড় অপরাধ এবং দুর্নীতির জন্য সায় পেয়ে যাচ্ছেন।

দুর্নীতির কারণে ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্র ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানে পরিণত হচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার কখনও দুর্নীতির দায় এড়াতে পারে না। দেশ এবং দেশের জনগণের স্বার্থে যে কোন মূল্যে ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, পাচার, ঋণখেলাপি রোধ করতে হবে। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, পাচার, ঋণখেলাপি রোধ করতে হলে সরকারের সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোতে স্বচ্চতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক পরিবশে সচল রাখতে হবে। দুর্নীতিবাজদের কালো তালিকাভুক্ত করে জনসম্মুখে তা উন্মোচন করে দিতে হবে। সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন আনতে হবে। আইন প্রয়োগের পথকে সবসময় সরল ও বাধাহীন রাখতে হবে। বিচার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখতে হবে এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করতে হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং তার উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সুধীর বরণ মাঝি

শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, চাঁদপুর