আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। বাঙালি জাতির জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। ৬৯ বছর আগে এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, সেই বীর শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে রাজধানীসহ সারাদেশের শহীদ মিনারে প্রভাতফেরি নিয়ে যাবেন আবালবৃদ্ধবনিতা। হাতে পুষ্পার্ঘ্য, কণ্ঠে থাকবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...।’

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা যখন অন্যায়ভাবে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাঙালির ওপর চাপিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সারা পূর্ব বাংলা ফুঁসে উঠেছিল প্রতিবাদে, বিক্ষোভে। ঢাকার রাজপথ হয়ে উঠেছিল উত্তাল। পাকিস্তানি শাসকদের হুমকি-ধমকি, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভেঙে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পথে নেমে এসেছিল ছাত্র, শিক্ষক, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী অসংখ্য মানুষ। বসন্তের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তাদের বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া একটি মিছিলে গুলি চালানো হলো। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হলো দেশের মাটি। এক অভূতপূর্ব অধ্যায় সংযোজিত হলো মানব ইতিহাসে। সেই অনন্য ইতিহাসকে স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেসকো (জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা) ১৯৯৯ সালে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে বাঙালির আত্ম-অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের দিনটি সারা বিশ্বেই পালিত হয়ে আসছে।

করোনা মহামারীর কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহীদদের প্রতি আজ শ্রদ্ধা জানাবে। রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু হবে। এছাড়া কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগণ ও জাতিগোষ্ঠীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষায় বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে। তিনি বলেন, মহান ভাষা-আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষার দাবিতে গঠিত ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’-এর নেতৃত্ব দেন এবং কারাবরণ করেন। তিনি স্মরণ করেন তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সব ভাষা-সংগ্রামীকে, যাদের দূরদৃষ্টি, অসীম ত্যাগ, সাহসিকতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা-আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। স্মরণ করেন ২১ ফেব্রুয়রি জীবন-উৎসর্গকারী ভাষা শহীদ রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদদের। রাষ্ট্রপতি বলেন, ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং এরই ধারাবাহিকতায় আসে বাঙালির চিরকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বাংলাসহ বিশ্বের সব ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাঙালি মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা-আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তা, রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা করতে জীবন উৎসর্গকারী আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম, রফিকউদ্দিন আহমদ, শফিউর রহমানসহ বিশ্বের ভাষা-শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। বাংলাভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব ভাষা সৈনিকদের পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি বিশেষমহল বাংলাভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এবং বাঙালিসত্তার বিকাশে জাতির পিতার অবদানকে মুছে ফেলতে সবসময়ই তৎপর ছিল। জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা শাখার গোপন দলিল প্রকাশের মধ্য দিয়ে সেসব অপতৎপরতা রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ হতে সর্বোচ্চ ৫ জন প্রতিনিধি হিসেবে ও ব্যক্তিপর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ২ জন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। শহীদ মিনারের সব প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হবে। মাস্ক পরা ব্যতিরেকে কাউকে শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৮ ফাল্গুন ১৪২৭ ৮ রজব ১৪৪২

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ

image

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। বাঙালি জাতির জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। ৬৯ বছর আগে এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, সেই বীর শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে রাজধানীসহ সারাদেশের শহীদ মিনারে প্রভাতফেরি নিয়ে যাবেন আবালবৃদ্ধবনিতা। হাতে পুষ্পার্ঘ্য, কণ্ঠে থাকবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...।’

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা যখন অন্যায়ভাবে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাঙালির ওপর চাপিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সারা পূর্ব বাংলা ফুঁসে উঠেছিল প্রতিবাদে, বিক্ষোভে। ঢাকার রাজপথ হয়ে উঠেছিল উত্তাল। পাকিস্তানি শাসকদের হুমকি-ধমকি, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভেঙে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পথে নেমে এসেছিল ছাত্র, শিক্ষক, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী অসংখ্য মানুষ। বসন্তের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তাদের বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া একটি মিছিলে গুলি চালানো হলো। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হলো দেশের মাটি। এক অভূতপূর্ব অধ্যায় সংযোজিত হলো মানব ইতিহাসে। সেই অনন্য ইতিহাসকে স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেসকো (জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা) ১৯৯৯ সালে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে বাঙালির আত্ম-অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের দিনটি সারা বিশ্বেই পালিত হয়ে আসছে।

করোনা মহামারীর কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহীদদের প্রতি আজ শ্রদ্ধা জানাবে। রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু হবে। এছাড়া কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগণ ও জাতিগোষ্ঠীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষায় বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে। তিনি বলেন, মহান ভাষা-আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষার দাবিতে গঠিত ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’-এর নেতৃত্ব দেন এবং কারাবরণ করেন। তিনি স্মরণ করেন তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সব ভাষা-সংগ্রামীকে, যাদের দূরদৃষ্টি, অসীম ত্যাগ, সাহসিকতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা-আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। স্মরণ করেন ২১ ফেব্রুয়রি জীবন-উৎসর্গকারী ভাষা শহীদ রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদদের। রাষ্ট্রপতি বলেন, ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং এরই ধারাবাহিকতায় আসে বাঙালির চিরকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বাংলাসহ বিশ্বের সব ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাঙালি মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা-আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তা, রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা করতে জীবন উৎসর্গকারী আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম, রফিকউদ্দিন আহমদ, শফিউর রহমানসহ বিশ্বের ভাষা-শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। বাংলাভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব ভাষা সৈনিকদের পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি বিশেষমহল বাংলাভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এবং বাঙালিসত্তার বিকাশে জাতির পিতার অবদানকে মুছে ফেলতে সবসময়ই তৎপর ছিল। জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা শাখার গোপন দলিল প্রকাশের মধ্য দিয়ে সেসব অপতৎপরতা রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ হতে সর্বোচ্চ ৫ জন প্রতিনিধি হিসেবে ও ব্যক্তিপর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ২ জন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। শহীদ মিনারের সব প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হবে। মাস্ক পরা ব্যতিরেকে কাউকে শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।