আগামী মাসেই চূড়ান্ত হচ্ছে অনলাইন শপিং নীতিমালা

আগামী মাসেই চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে অনলাইন শপ বা ইকমার্স নীতিমালা। এই নীতিমালাকে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এটি চূড়ান্ত করার জন্য খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মত চাওয়া হয়েছে। মতামত দেয়ার পরই তা চূড়ান্ত নির্দেশিকা হিসেবে প্রকাশ করা হবে।

সারাবিশ্বে ইকমার্স, ডিজিটাল কমার্স বা অনলাইন শপের আকার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আকার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর সঙ্গে জড়িত অপরাধ বা ভোগান্তিও বাড়ছে। এই ভোগান্তি থেকে গ্রাহককে মুক্তি দিতে সরকার অনলাইন শপের নীতিমালা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। সেজন্য এই সেবার অসুবিধার দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নির্দেশিকার একটি খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয় মতামতের জন্য গত সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে পাঠিয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, ক্রেতা ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং বা নগদ- যেকোন মাধ্যমে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করলে এবং বিক্রেতা কোন কারণে নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে মূল্য পরিশোধের সাত দিনের মধ্যে ক্রেতার পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে। আর ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে কোন চার্জ (মাশুল) লাগলে তা মার্কেটপ্লেস বা বিক্রেতাকে বহন করতে হবে। মূল্য ফেরতের বিষয়টি ক্রেতাকে ফোন, ই-মেইল বা অন্য কোন মাধ্যমে জানাতে হবে। নির্ধারিত সময়ে অর্থ ফেরত না পেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে পারবেন ক্রেতা।

দেশে বর্তমানে ডিজিটাল ব্যবসা চলছে জাতীয় ডিজিটাল কমার্স (সংশোধিত) নীতিমালা, ২০২০-এর আওতায়। কিন্তু এর আওতায় কোন কোম্পানি কীভাবে পরিচালিত হবে, এখন সেই নির্দেশনা নেই। ফলে গোটা ডিজিটাল ব্যবসা খাত নিয়েই জটিলতা দেখা দিয়েছে। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও জমছে অভিযোগের পাহাড়।

খসড়ায় আরও বলা হয়, পণ্য বা সেবা কেনাবেচা, ফেরত ও পরিবর্তনের শর্ত বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বা মার্কেটপ্লেসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। পণ্য বা সেবা বিক্রি বা প্রসারের জন্য কোন ধরনের লটারি বা লটারিজাতীয় কোন ব্যবস্থাও নেয়া যাবে। কোন পণ্যের স্টক কত, তা-ও জানাতে হবে গ্রাহকদের। পণ্য স্টক করার জন্য বিক্রেতার নিজস্ব গুদামঘর থাকতে হবে। অন্য বিক্রেতার পণ্য নিজেদের ই-কমার্স সাইটে বিক্রি করলে কী পরিমাণ পণ্য মজুদ আছে, তার ওপর নির্ভর করেই ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ নিতে হবে। কোন তৃতীয় পক্ষের পণ্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করা হলে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ থাকতে হবে।

ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতা বা গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য নেয়। এ তথ্যের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, কী কী ধরনের তথ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সংগ্রহ করতে পারবে, তথ্য কোথায় সংরক্ষিত থাকবে, পরে সেগুলো কোথায় ব্যবহৃত হবে এসব বিষয়ে ক্রেতাদের পূর্বানুমতি নিতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহবিষয়ক শর্তগুলো ক্রেতারা যে দেখেছেন, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে চেক বক্স থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কোন ধরনের ভার্চুুয়াল ওয়ালেট তৈরি করা যাবে না এবং ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন পণ্য কেনার জন্য বাধ্য করা যাবে না।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, পণ্যের মূল্য পরিশোধের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য পৌঁছাতে হবে সরবরাহকারী বা সরবরাহের জন্য নিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের কাছে। ক্রেতাকে তা মোবাইলের খুদে বার্তা (এসএমএস) দিয়ে জানাতে হবে। ক্রেতার কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয়া হলে এবং ক্রেতা-বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে অগ্রিম নেয়ার ৫ দিন এবং ভিন্ন শহরের হলে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। যেসব পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি রয়েছে, সরবরাহের সময় সেগুলোর কার্ড ক্রেতাকে দিতে হবে। সেই কার্ডে উল্লেখ থাকতে হবে কত দিন এবং কোথা থেকে এই সেবা পাওয়া যাবে। ক্রেতারা যেন সহজে যেকোন বিষয়ে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন, সেজন্য ক্রেতাসংখ্যার আনুপাতিক হারে কাস্টমার কেয়ারে কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। যেকোন অভিযোগ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্রেতা যাতে সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সেজন্য পণ্যের মূল্য ও সব ধরনের করের কথা ওয়েবসাইটে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া মার্কেটপ্লেসে বিক্রয়যোগ্য পণ্য বা সেবার যথাযথ বিবরণ, মূল্য এবং পণ্য পৌঁছানোসহ অন্যান্য খরচের কথা সুস্পষ্টভাবে জানাতে হবে। এছাড়া অনলাইন শপ বা ডিজিটাল ইকমার্সের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্ট ব্যখ্যা দেয়া হয়েছে।

সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৯ ফাল্গুন ১৪২৭ ৯ রজব ১৪৪২

আগামী মাসেই চূড়ান্ত হচ্ছে অনলাইন শপিং নীতিমালা

image

আগামী মাসেই চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে অনলাইন শপ বা ইকমার্স নীতিমালা। এই নীতিমালাকে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এটি চূড়ান্ত করার জন্য খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মত চাওয়া হয়েছে। মতামত দেয়ার পরই তা চূড়ান্ত নির্দেশিকা হিসেবে প্রকাশ করা হবে।

সারাবিশ্বে ইকমার্স, ডিজিটাল কমার্স বা অনলাইন শপের আকার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আকার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর সঙ্গে জড়িত অপরাধ বা ভোগান্তিও বাড়ছে। এই ভোগান্তি থেকে গ্রাহককে মুক্তি দিতে সরকার অনলাইন শপের নীতিমালা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। সেজন্য এই সেবার অসুবিধার দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নির্দেশিকার একটি খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয় মতামতের জন্য গত সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে পাঠিয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, ক্রেতা ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং বা নগদ- যেকোন মাধ্যমে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করলে এবং বিক্রেতা কোন কারণে নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে মূল্য পরিশোধের সাত দিনের মধ্যে ক্রেতার পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে। আর ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে কোন চার্জ (মাশুল) লাগলে তা মার্কেটপ্লেস বা বিক্রেতাকে বহন করতে হবে। মূল্য ফেরতের বিষয়টি ক্রেতাকে ফোন, ই-মেইল বা অন্য কোন মাধ্যমে জানাতে হবে। নির্ধারিত সময়ে অর্থ ফেরত না পেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে পারবেন ক্রেতা।

দেশে বর্তমানে ডিজিটাল ব্যবসা চলছে জাতীয় ডিজিটাল কমার্স (সংশোধিত) নীতিমালা, ২০২০-এর আওতায়। কিন্তু এর আওতায় কোন কোম্পানি কীভাবে পরিচালিত হবে, এখন সেই নির্দেশনা নেই। ফলে গোটা ডিজিটাল ব্যবসা খাত নিয়েই জটিলতা দেখা দিয়েছে। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও জমছে অভিযোগের পাহাড়।

খসড়ায় আরও বলা হয়, পণ্য বা সেবা কেনাবেচা, ফেরত ও পরিবর্তনের শর্ত বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বা মার্কেটপ্লেসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। পণ্য বা সেবা বিক্রি বা প্রসারের জন্য কোন ধরনের লটারি বা লটারিজাতীয় কোন ব্যবস্থাও নেয়া যাবে। কোন পণ্যের স্টক কত, তা-ও জানাতে হবে গ্রাহকদের। পণ্য স্টক করার জন্য বিক্রেতার নিজস্ব গুদামঘর থাকতে হবে। অন্য বিক্রেতার পণ্য নিজেদের ই-কমার্স সাইটে বিক্রি করলে কী পরিমাণ পণ্য মজুদ আছে, তার ওপর নির্ভর করেই ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ নিতে হবে। কোন তৃতীয় পক্ষের পণ্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করা হলে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ থাকতে হবে।

ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতা বা গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য নেয়। এ তথ্যের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, কী কী ধরনের তথ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সংগ্রহ করতে পারবে, তথ্য কোথায় সংরক্ষিত থাকবে, পরে সেগুলো কোথায় ব্যবহৃত হবে এসব বিষয়ে ক্রেতাদের পূর্বানুমতি নিতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহবিষয়ক শর্তগুলো ক্রেতারা যে দেখেছেন, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে চেক বক্স থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কোন ধরনের ভার্চুুয়াল ওয়ালেট তৈরি করা যাবে না এবং ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন পণ্য কেনার জন্য বাধ্য করা যাবে না।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, পণ্যের মূল্য পরিশোধের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য পৌঁছাতে হবে সরবরাহকারী বা সরবরাহের জন্য নিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের কাছে। ক্রেতাকে তা মোবাইলের খুদে বার্তা (এসএমএস) দিয়ে জানাতে হবে। ক্রেতার কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয়া হলে এবং ক্রেতা-বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে অগ্রিম নেয়ার ৫ দিন এবং ভিন্ন শহরের হলে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। যেসব পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি রয়েছে, সরবরাহের সময় সেগুলোর কার্ড ক্রেতাকে দিতে হবে। সেই কার্ডে উল্লেখ থাকতে হবে কত দিন এবং কোথা থেকে এই সেবা পাওয়া যাবে। ক্রেতারা যেন সহজে যেকোন বিষয়ে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন, সেজন্য ক্রেতাসংখ্যার আনুপাতিক হারে কাস্টমার কেয়ারে কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। যেকোন অভিযোগ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্রেতা যাতে সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সেজন্য পণ্যের মূল্য ও সব ধরনের করের কথা ওয়েবসাইটে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া মার্কেটপ্লেসে বিক্রয়যোগ্য পণ্য বা সেবার যথাযথ বিবরণ, মূল্য এবং পণ্য পৌঁছানোসহ অন্যান্য খরচের কথা সুস্পষ্টভাবে জানাতে হবে। এছাড়া অনলাইন শপ বা ডিজিটাল ইকমার্সের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্ট ব্যখ্যা দেয়া হয়েছে।